কফি খেলে কি হয়
কফি খেলে কি হয়: জানেন কি কফি খেলে আসলে আমাদের শরীরে কি ঘটে? কোন কোন উপকার পেয়ে থাকি? কফি আমাদের শরীরের জন্য কতটা অপরিহার্য একটা উপাদান জানেন? না জানলে জেনে নিন এখনি।
kopi (কফি)
(ইংরেজি: Coffee শব্দ) এটা বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় পানীয়। পানির সাথে ফুটিয়ে “কফি বীজ” নামে পরিচিত এক ধরনের বীজ পুড়িয়ে গুঁড়ো মিশিয়ে কফি তৈরি করে। এই বীজ কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের মূলত বীজ। প্রায় ৭০টির মতো দেশে এই ফলের গাছ জন্মে।
কফি বীজ
যে বীজগুলো চোলাই করে কফি উৎপাদন করা হয় মূলত সেগুলো আসলে এক ধরনের ফলের রোস্ট করা বীজ, যে ফলগুলোকে কফি চেরি বলা হয়। এটাই পানির সাথে ফুটিয়ে “কফি বীজ” নামে পরিচিত এক ধরনের বীজ পুড়িয়ে গুঁড়ো মিশিয়ে কফি তৈরি করে।
কফি কত প্রকার
আসলে দুই ধরনের কফিই পান করা হয়, যার ওপরে কফি দ্রবণের স্বাদ অনেকটাই নির্ভর করে থাকে। প্রথমটি হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট মানের অ্যারাবিকা বিন, যাতে ক্যাফিন কিছুটা কম থাকে এবং এর দামও বেশি। দ্বিতীয়টিকে বলা হয় রোবাস্তা, এই বিনে ক্যাফিন বেশি থাকায় কিছুটা কড়া ফ্লেভারের হয়ে থাকে এবং এর দাম কিছুটা কম।
কফি চাষ
কফি গাছ দেখতে ঝোপের মত হয়। Rubiaceae পরিবারভুক্ত কফি মাঝারি উচ্চতার চিরসবুজ প্রকৃতির গাছ হয়। কফি প্রায় ৭০ টি দেশে উৎপাদিত হয়। বৃহত্তম কফি উৎপাদনকারী দেশগুলি মধ্যে হলো: ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং ভারত। বাংলাদেশেও চাষ হয় বান্দরবন, কক্সবাজার এমনকি নীলফামারীতেও কফি চাষ হচ্ছে যার মান অত্যন্ত ভালো হয়। আস্তে আস্তে আমাদের দেশেও কফি চাষ এ এগিয়ে যাবে।
কফির দাম
সর্বশেষ আপডেট 30 আগস্ট, 2024 পর্যন্ত কফির বর্তমান মূল্য প্রতি পাউন্ড $2.5550। আর বাংলাদেশে বিভিন্ন কম্পানি ভেদে দাম কম বেশি হয়ে থাকে। তবে এখানে অনুমান কিছু দেওয়া হলো।
- নেসলে কফি মেট (জার) ৪০০ গ্রাম মূল্য : ৬৫০/- টাকা
- নেসলে কফি মেট (প্যাকেট) ১০০০ গ্রাম মূল্য : ৯৮৫/- টাকা
ব্ল্যাক কফির দাম
এক প্যাকেট ব্ল্যাক আইভরি কফির দাম পড়বে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ এর এক কেজির দাম ২৬ হাজার টাকার কাছাকাছি হবে।
কফি পাউডার দাম
একই রকম সব দাম যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
১ কেজি কফির দাম
বাংলাদেশের হিসাবে বিভিন্ন কম্পানি ভেদে দামের পার্থক্য আছে। নেসলে কফি প্রাথ ১ কেজি ১০০০ টাকা । অপরদিকে ব্ল্যাক আইভরি ১ কেজি কফির দাম পড়বে বাংলাদেশি টাকায় ২৬ হাজার টাকা।
কোন কোম্পানির কফি ভালো
বাংলাদেশে ভালো মানের কফি বীন একমাত্র “নর্থ এন্ড কফি রোস্টার্স” এ পাওয়া যাবে। এটিই একমাত্র কফির দোকান যারা দেশেই, স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রণালী অনুসরণ করে কফি রোস্টিং করে থাকেন।
কফি কিভাবে সংগ্রহ করা হয়
চেরি ফলের বীজ কে ভাজা হয় এবং মিহি করে গুড়ো করা হয়। আরও বিভিন্ন পদ্ধতিতে কাজটা সঠিক ভাবে করা হয়।
কফি খেলে কি ওজন কমে
গবেষকেরায় দেখে গেছে ১৯৮৬ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিনটি সমন্বিত গবেষণা থেকে তথ্য ও সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে কফি খাওয়া ও দেহের ওজন বৃদ্ধি-হ্রাসের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বার করার চেষ্টা করেছে অনেক বার। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দিনে যদি চিনি ছাড়া (২ কাপের বেশি যা অস্বাস্থ্যকর) অতিরিক্ত এক কাপ কফি খেলে ৪ বছরে ০.১২ কেজি ওজন কমে।
মাকা কফি খাওয়ার নিয়ম
এটা সাধারণত খাবারের সাথে বা খাবারের পরে নেওয়া হয়। আপনি এটি সালাদে, স্মুদিতে, বা অন্যান্য খাবারে যোগ করে খেতে পারেন। প্রাথমিকভাবে, প্রতিদিন 1-2 চা চামচ মাকা পাউডার দিয়ে শুরু করা সবচেয়ে ভাল।
ব্রণ দূর করতে কফি
কফিতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল যৌগ ত্বকে ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। ত্বকের মৃত কোষ দূর করতেও সাহায্য করে। এতে ব্রণ এর সংখ্যা বা হওয়ার সম্ভবনা কমে যাবে।
কফি খাওয়ার উপকারিতা
- কফিতে থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, যা তাড়াতাড়ি মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া নতুন করে শরীরে মেদ জমার আশঙ্কাও কমায়।
- কফি শরীরের বিপাকীয় হার বাড়ায়। শারীরিক শক্তিও বাড়াতে সহায়তা করে এটি। এতে চট করে খিদে পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়।
- হজম ভালো করে থাকে। কোন কিছু খেলে হজম করতে সাহায্য করে।
- কালো কফি খেলে সারা দিন অনেক বেশি সক্রিয় থাকা যায়। কাজেও অনেক বেশি মন দেওয়া যায়। অতিরিক্ত পরিমাণ ক্যালোরি ঝরাতেও সাহায্য করে এই পানীয়। তাই শরীরচর্চা করার আগে কালো কফি খেতে পারেন।
-
উদ্বিগ্নতা বা চিন্তা করা থেকে দূরে রাখে।
- শরীরে অতিরিক্ত পানি জমলে তা বের করে দিতে পারে কফি। কফি খাওয়ার পর শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায়। এ কারণে কফিকে ‘ওয়াটার ওয়েট’ নিয়ন্ত্রকও বলা হয়।
-
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূর করে।
- অসুখ থেকে দূরে থাকে।
- শক্তি বৃদ্ধি করে।
সকালে কফি খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে কফি খাবেন না তবে হালকা কিছু খেয়ে কফি খাবেন। এতে ক্ষতি না হয় বরং উপকার হবে।
দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা
দুধ দিয়ে কফি খাওয়া আদতে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী গবেষণায় দেখা গিয়েছে। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধ দেওয়া এক কাপ কফি আমাদের শরীরে অ্যান্টি অনফ্লেমেটরি (Anti Inflammatory) উপাদান তৈরি করে থাকে। যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ইনফেকশনের হাত থেকে বাঁচায়। এজন্য শরীর সুস্থ রাখে।
কফি খাওয়ার অপকারিতা
- কফির বীজে ক্যাফেইন ও অন্যান্য অম্লীয় উপাদান থাকে যা পাকস্থলীর গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করে আলসার, গ্যাসট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে
- ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হবে।
- প্রতিদিন ২ কাপের বেশি কফি খাওয়ার অভ্যাস কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে।
- কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষম ব্যহত হতে পারে।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কফি দ্রুত শরীরে চাঙা ভাব ফিরিয়ে আনলেও তা মস্তিষ্কের ওপর চাপ তৈরি করে।
দিনে ৩ কাপ কফি পানে আয়ু বাড়াবে এমনটাই দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউরোপীয় ১০ টি দেশের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের ওপর এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা চালিয়ে এমন সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়, এক কাপ অতিরিক্ত কফি মানুষের আয়ু বাড়াতে পারে। হৃদরোগ এবং পাকস্থলীর রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে। এজন্য আমাদের কফি পানের সঠিক নিয়ম জানাটা অত্যন্ত জরুরি। সবকিছুর সঠিক নিয়ম আছে। কেউ যদি সঠিক নিয়মে পান না করে তাহলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমান বেশি হবে।
দিনে ৩ কাপ কফি পানের উপকারিতা-
তবে কফি খাওয়া নেশায় পরিণত হলে দেখা দিতে পারে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অত্যন্ত ভয়াবহ আকার একসময় ধারন করবে। এজন্য এগুলো এড়িয়ে চলুন।
আসুন জেনে নেই-
• সকালে খালি পেটে কফি খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে এই অ্যাসিড জমলে হজমে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
• কফির বীজে ক্যাফেইন ও অন্যান্য অম্লীয় উপাদান থাকে যা পাকস্থলীর গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করে আলসার, গ্যাসট্রিকের সমস্যাও বাড়িয়ে দিতে পারে।
• কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষম ব্যহত হতে পারে।
• কফি শরীরে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করলেও এটি স্নায়ুতন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে৷ দীর্ঘদিন ধরে একটানা প্রচুর পরিমাণে কফি পানে আমাদের স্বাভাবিক উদ্দীপনাও নষ্ট হতে পারে৷
দিনে তিন কাপ কফিতেই সন্তুষ্ট থাকুন। আর বাড়তি ওজনের চিন্তা থাকলে কফির সঙ্গে দুধ-চিনি যোগ না করে শুধু রং কফি পানের অভ্যাস করুন। চিনি অনেক ক্ষতিকর। অথ্যাৎ মিষ্টি জাতীয় জিনিস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। এতে শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে এমনি ক্যান্সারের ঝুকি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
আরও পড়ুন: সুগার রোগীর আদর্শ খাদ্য তালিকা
রোজ কফি খাওয়ার উপকারিতা হলো-
চিন্তা শক্তি উন্নত হয় এবং দক্ষতা উন্নত হয়। ডিমেনশিয়া এবং পারকিনসন্স রোগের ঝুঁকি কম থাকে। হতাশার ঝুঁকিও কমে যায়। মন ভালো থাকে এবং কাজে মনোযোগী আরও অনেক গুন বাড়িয়ে দেয়।
লিভারের ক্ষতি এবং কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কম থাকে।
উপসংহার: তাহলে কফি খেলে কি হয় দেখলেন তো? আশা করি সবকিছু বুঝতে পেরেছেন। সবার সুস্থ কামনা আশা করছি।
এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!