ওমিক্রন

কিডনি রোগীদের ওপর কোভিড- ১৯ এর ভয়াবহ প্রভাব

শেয়ার করুন
ডাক্তার

স্বাস্থ্যঃ– কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে কিডনি রোগ অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি (একেআই), হেমাটুরিয়া বা প্রোটিনুরিয়া হিসাবে পরিচিত এবং এর ফলে মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি থাকে।

একেআই হেমোডাইনামিক পরিবর্তন ও সাইটোকাইন নিঃসরণের কারণে হয় নাকি ভাইরাসটি সরাসরি সাইটোটক্সিসিটির দিকে ধাবিত করে, তার স্পষ্ট প্রমাণ নেই। সারস-কোভ-২ সরাসরি কিডনি সংক্রমণ ঘটায় কিনা তা নিয়েও বিতর্ক থাকলেও, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের কিডনিতে ভাইরাসের মতো বস্তুর উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।

একেআই, কোভিডে আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন রোগীদের সামগ্রিক অসুস্থতার একটি অংশ হতে পারে। অধিকাংশ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মেটা-বিশ্লেষণে একেআই-এর ঘটনা ছিল ১৭ শতাংশ। প্রায় ৫ শতাংশ রোগীর কিডনি রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (কেআরটি) প্রয়োজন। সংখ্যালঘু রোগীদের মধ্যে গ্লোমেরুলার ফলে সৃষ্ট ক্ষত দেখা গিয়েছে। সবচেয়ে কমন হলো কোভিড-অ্যাসোসিয়েটেড নেফ্রোপ্যাথি (কোভান)।

আরও পড়ুন : হাড়ের ঘনত্ব দিন দিন কমে যাওয়ার উপসর্গ, কী করবেন? 

এছাড়া কিডনি ইনফার্কশনের সাথেও কোভিড-১৯ যুক্ত হতে পারে। অন্যদিকে, সারস-কোভ-২ সরাসরি কিডনি সংক্রমণ ঘটায় কিনা তা নিয়ে তো বিতর্ক আছেই। আইসিইউতে থাকা গুরুত্বর রোগী যারা এন্ড-স্টেজ কিডনি ডিজিজ (ইএসকেডি) বা একেআই-তে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে কন্টিনিউয়াস কিডনি রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (সিকেআরটি) ব্যবহৃত হয়।

হেমোডায়ালাইসিস বা সিকেআরটি মেশিন না থাকলে চিকিত্সকরা পেরিটোনাল ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে একেআই চিকিত্সা সম্পন্ন করতে পারেন।

এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম (এসিই) ইনহিবিটরস বা এনজিওটেনসিন রিসেপ্টর ব্লকারস (এআরবি) গ্রহণকারী রোগীদের এই চিকিত্সাগুলো চালিয়ে যাওয়া উচিত। এসিই ইনহিবিটরস বা এআরবি বন্ধ করলে কোভিডের তীব্রতা কমে যাওয়ার কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন : লাল মাংসে কি কোলন ক্যান্সার হয় জানেন?

ইএসকেডি আক্রান্ত রোগীরা বিশেষ করে বার্ধক্য এবং ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনের মতো কমোর্বিডিটিসের উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সির কারণে কোভিডের বাড়তি ঝুঁকিতে থাকেন। সাধারণ মানুষদের তুলনায় ইএসকেডি আক্রান্ত রোগী বিশেষ করে যারা ইন-সেন্টার হেমোডায়ালাইসিস গ্রহণ করছেন, তাদের কোভিড সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি হতে পারে। তাই অন্যান্যদের তুলনায় ডায়ালাইসিস গ্রহণকারী রোগীদের দ্রুত ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করা হয়।

যেসকল কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত রোগীরা প্রাথমিক পর্যায়ে কোভিড-১৯ এমআরএনএ ভ্যাকসিন কোর্স পেয়েছেন তাদের অন্তত ছয় মাস পর বুস্টার ডোজ গ্রহণ করা উচিত। 1ss জনসন/জ্যানসেন ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভ্যাকসিনের দুই মাস পরেই বুস্টার ডোজ গ্রহণ করা উত্তম। এছাড়া ডায়ালাইসিস ইউনিটে কর্মরত সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও দেখুন : মলত্যাগে ব্যথা ও রক্ত ক্ষরণ হলে কী করবেন?

COVID-19 কিডনি প্রতিস্থাপনকারী এবং সেইসাথে কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ বিভিন্ন প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে। সকল কিডনি দাতা ও গ্রহীতাদের পূর্ববর্তী অবস্থা, চেস্ট ইমেজিং এবং মাইক্রোবায়োলজিক পরীক্ষার মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা উচিৎ। ফুসফুস প্রতিস্থাপনকালে দাতা থেকে প্রাপ্ত সারস-কোভ-২ সংক্রমণের ঘটনা ঘটলেও, কিডনি প্রতিস্থাপনকালে এখনো তেমন কিছু হয়েছে বলে জানা যায়নি।

কিডনি প্রতিস্থাপনকারী গ্রহীতার কোভিডের ক্লিনিকাল উপসর্গগুলো পরিবর্তনশীল এবং অন্যান্য রোগীদের সাথেও মিল থাকে। তবে জ্বর কম দেখা গেলেও রোগের কোর্স তুলনামূলক গুরুতর কিনা তা জানা যায়নি। কিডনি প্রতিস্থাপন পরবর্তী কোভিড-১৯ চিকিত্সা পদ্ধতি (যেমন; অ্যান্টিভাইরাল ব্যবহার, সহায়ক যত্ন ইত্যাদি) সাধারণ রোগীদের মতোই। তবে সম্ভাব্য ড্রাগ-ড্রাগ ইন্টার‍্যাকশন এবং ইমিউনোসপ্রেসিভ প্রভাবের দিকে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন : কানের পর্দা ফেটে গেছে কিনা বুঝবেন কিভাবে

শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সকল প্রতিস্থাপনকারী গ্রহীতাই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। যদিও অন্যান্যদের তুলনায় কিডনি প্রতিস্থাপনকারী গ্রহীতাদের মধ্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ইমিউনোজেনিসিটি ও কার্যকারিতা কম। তবে বেশিরভাগ রোগীর জন্য ভ্যাকসিন গ্রহণ ঝুঁকির চেয়ে সুবিধাজনক বেশি। কিডনি প্রতিস্থাপন গ্রহীতাদেরও ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সকল স্বাস্থ্যবিধি (যেমন; মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায়, হাত ধোয়া ইত্যাদি) মেনে চলতে হবে। একটি সাব-অপ্টিমাল ইমিউন রেসপন্স এবং গবেষণা থেকে জানা যায়, গুরুতর রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার তুলনামূলক কম।

যদি সম্ভব হয়, তাহলে কিডনি প্রতিস্থাপনের অন্তত তিন মাস পর ভ্যাকসিন নেওয়া উত্তম। যেসব কিডনি প্রতিস্থাপনকারী গ্রহীতা সারস-কোভ-২ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন বা আসার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন, তারা প্রফিল্যাকটিক মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি চিকিত্সার জন্য নিতে পারেন।

ডা. দীলিপ এম বাবু: কনসালটেন্ট নেফ্রোলজিস্ট, ইয়াশোদা হসপিটালস, হায়দ্রাবাদ

One Comment to “কিডনি রোগীদের ওপর কোভিড- ১৯ এর ভয়াবহ প্রভাব”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *