1 second school

টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে যাননি ১৭% মানুষ

ভ্যাকসিন নিবন্ধন

শেয়ার করুন

সংক্রমণ রোধে দুই ডোজ টিকা নেওয়া প্রয়োজন। সর্বশেষ ক্যাম্পেইনে দ্বিতীয় ডোজে আগ্রহ কম দেখা গেছে। একে ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।

টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে যাননি ১৭% মানুষ

করোনা টিকার বিশেষ ক্যাম্পেইনে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া মানুষের সংখ্যা কম দেখা গেছে। ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন ৬৬ লাখ ২৫ হাজার মানুষ। ২৮ অক্টোবর তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দিন ঠিক ছিল। ওই দিন দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৫৪ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ। সাড়ে ২৩ লাখ বা ১৭ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ নিতে যাননি।

এই বিপুলসংখ্যক মানুষ দ্বিতীয় ডোজ নিতে না আসায় টিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঠপর্যায়ে করোনা টিকার ব্যাপারে সরকারের প্রচার-প্রচারণার ঘাটতি আছে। টিকার ব্যাপারে সঠিক তথ্যও মানুষ পাচ্ছে না। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় টিকার ব্যাপারে হয়তো মানুষের আগ্রহও কমে যেতে বসেছে।

মোহাম্মদপুরের ওয়ালিউল বিশ্বাস করোনার টিকা নিয়েছেন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি৷ ২৭ মার্চ তার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার কথা ছিলো৷ কিন্তু নির্ধারিত তারিখে তিনি দ্বিতীয় ডোজ পাননি৷

তাকে বলা হয়েছে এক মাস নয়, দুই মাস পরেও দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেয়া যাবে৷ তারপর বলা হয়েছে তিন মাস৷ আগামী ২৫ মে সেই সময়ও শেষ হবে৷ কিন্তু টিকা পাবেন কীনা জানেন না তিনি৷ ওয়ালিউল বলেন, ‘‘আমি যদি তিন মাসেও দ্বিতীয় ডোজের টিকা না পাই তাহলে কী হবে? আমার প্রথম ডোজে  কোনো কাজ হবে কীনা বা আবার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে কীনা কিছুই বুঝতে পারছিনা৷ কোনো পরামর্শ দিচ্ছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷” তার মতো এমন অনিশ্চয়তায় এখন প্রথম ডোজ টিকা নেয়া ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ৷ তাদের অনেকেরই টিকা নেয়ার নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাচ্ছে৷

গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে করোনার অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা দেয়া শুরু হয়৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে এখন এই টিকা অবশিষ্ট আছে মাত্র নয় লাখ৷ দ্বিতীয় ডোজের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে অক্সফোর্ডের টিকা আনার চেষ্টা করছে সরকার৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র টিকা দিতে রাজি হয়েছে৷ তবে সেই টিকা কবে আসবে তা এখনো নিশ্চিত নয়৷

সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে টিকার ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণা কম হয়েছে। অনেক মানুষ জানেনই না তাঁদের কখন টিকা নিতে হবে। তাই বিরাটসংখ্যক মানুষ দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসেননি। দ্বিতীয়ত, করোনার প্রকোপ কমে আসার কারণে অনেকে হয়তো মনে করছেন, টিকার আর প্রয়োজন নেই।’

অপরদিকে প্রথম ডোজ টিকা নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন ১ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার ১৭ জন। অন্যদিকে নিবন্ধন করে টিকার অপেক্ষায় আছে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৭৬ হাজার ৭১৫ জন।

১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের টিকাদান শুরু হওয়ার কথা ১ নভেম্বর। এতে প্রয়োজন হবে বাড়তি জনবল। এ অবস্থায় এর আগে নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের টিকাদান আরও বিলম্বিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

কয়েক সপ্তাহ ধরে নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২ শতাংশের নিচে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও দুই অঙ্কের নিচে দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি৷ এরপর দ্বিতীয় ডোজ টিকাদেয়া শুর হয় ৮ এপ্রিল থেকে৷ কিন্তু এখন তা বন্ধ আছে৷

বিএসএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম জানান, সর্বোচ্চ চার মাসের (১৬ সপ্তাহ) মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে হবে৷ এরপর নিলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে না৷

এরপর আবার নতুন করে দুই ডোজই নিতে হবে৷ তবে দ্বিতীয় ডোজ না নিতে পারলে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না৷

তিনি আশা করেন, ‘‘এখনো সময় আছে হয়তো যুক্তরাষ্ট্র থেকে অক্সফোর্ডের টিকা এরমধ্যে পাওয়া যাবে৷ আর অক্সফোর্ড আর ফাইজারের টিকার মিক্সিং করার গবেষণা প্রায় সফল৷ এভাবে আরো হলে সংকট কেটে যাবে৷”

দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে জটিলতা

টিকাদানে গতি আনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়মিত টিকাদান ছাড়াও বিশেষ দুটি ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে। প্রথম ক্যাম্পেইন হয় ৭ আগস্ট। দ্বিতীয় ক্যাম্পেইন ছিল ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন ঘিরে।

ক্যাম্পেইনের সময় স্বাস্থ্য বিভাগ ৮০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর মোট ৭৮ লাখ ১১ হাজার ২১৬ জনকে তারা সিনোফার্মের প্রথম ডোজ টিকা দিয়েছিল। এর মধ্যে ২৮ সেপ্টেম্বর দিয়েছিল ৬৬ লাখ ২৫ হাজার ১২৩ জনকে।

ক্যাম্পেইনের সময় নিয়মিত করোনা টিকাকেন্দ্রের বাইরে দেশের ৪ হাজার ৬০০ ইউনিয়ন, ১ হাজার ৫৪টি পৌরসভার ওয়ার্ড ও ১২টি সিটি করপোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডে টিকার বুথ করা হয়।

সিনোফার্মের টিকার কার্যকারিতা রক্ষার জন্য প্রথম ডোজ নেওয়ার চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। সেই হিসেবে ২৮ অক্টোবর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দিন নির্ধারিত ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ-ও বলেছিল যে ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম ডোজ নেওয়া সবাই ২৮ অক্টোবর দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন। কিন্তু সবাই টিকা নিতে আসেননি। অর্থাৎ নির্ধারিত দিনে টিকা নিতে সাড়ে ২৩ লাখের বেশি মানুষ অনুপস্থিত ছিলেন।

এই অনুপস্থিতি ছিল সব জেলাতেই। যেমন ২৮ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলায় প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ৯০০ জন। ২৮ অক্টোবর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৮০ হাজার ৯০৩ জন। অর্থাৎ প্রায় ৬ শতাংশ মানুষ অনুপস্থিত ছিলেন। জাতীয়ভাবে তা ১৭ শতাংশের বেশি।

খুলনা জেলার দক্ষিণের একটি উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার কয়েকটি ইউনিয়নে নিয়মিত ইপিআই থাকায় সেসব ইউনিয়নে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়নি।

আজ শনিবার দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম বিভাগের একজন সিভিল সার্জন বলেছেন, দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানোতে বিলম্ব হয়েছে বা মানুষ বিলম্বে পেয়েছেন। তাই মানুষ ঠিক সময়ে আসেননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুটিন ইপিআই থাকায় অনেক স্থানে করোনার টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। আশা করি শনিবার সবাই দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে আসবেন।

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

Exit mobile version