1 second school

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

শেয়ার করুন

বিজ্ঞানের উৎস:

বিজ্ঞান শব্দটির অর্থ হল বিশেষ জ্ঞান। অর্থাৎ নামের ব্যাখ্যা থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে পৃথিবীতে বিজ্ঞান অলৌকিক ইন্দ্রজাল কিংবা ভোজবাজির খেলা নয়। এ হলো বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর মধ্যে স্থিত বিভিন্ন উপাদানকে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা।

বিজ্ঞানের দান হিসেবে যে সমস্ত আবিষ্কার আমাদের প্রতিদিনকার জীবনের নিয়ত সরলীকরণ করে চলেছে তার পেছনে রয়েছে মানুষের প্রখর বুদ্ধিমত্তা এবং নানান প্রাকৃতিক উপাদানের মেলবন্ধন। এই দুইই বিজ্ঞানের প্রকৃত উৎস। মানব সভ্যতায় বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু পাথরে পাথর ঘষে সেই আগুন আবিষ্কার থেকে। তারপর থেকেই মানবজগৎ তথা সমগ্র পৃথিবীর জীবকুল বিজ্ঞানের খারাপ-ভালো উভয়প্রকার ফল ভোগ করে আসছে।

রোজকার জীবনে বিজ্ঞানের বিবর্তন:

সেই প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের প্রতিদিনকার জীবনে বিজ্ঞান অনস্বীকার্য অবদান রেখে চলেছে। সেই সময় প্রতিদিনকার খাবার সংগ্রহ থেকে শুরু করে আত্মরক্ষা আশ্রয় সবকিছুর জন্যই মানুষ সাধারণ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উপর নির্ভর করত। সময় যত এগিয়েছে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ততই পরিবর্তন ঘটেছে। খাদ্য সংগ্রহ কথা আশ্রয়ের মত প্রাথমিক প্রয়োজন মিটিয়ে মানুষ বিজ্ঞানকে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে জীবনের আরও বৃহত্তর ক্ষেত্রে।

আজকের যুগে মানুষ সেই প্রচেষ্টারই বহুমুখী পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে মাত্র। আজ আধুনিক জীবনের চরম উৎকর্ষের এবং অফুরন্ত ঐশ্বর্যের মূলে রয়েছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের অবদানে আমাদের জীবন আজ পরিপূর্ণ। প্রতিদিনকার জীবনে আধুনিক বিজ্ঞানের এই ব্যবহারিক প্রয়োগ আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস তথা মননকেও আমূল বদলে দিচ্ছে। কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হলে আমাদের জীবন অচল হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞানের দৈনন্দিন প্রভাব:

সকালে ঘুম ভাঙ্গানোর অ্যালার্ম, বিছানা ছেড়ে টুথ পেস্ট,গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না , অফিস যাওয়ার গাড়ী, কম্পিউটার, ক্যালকুলেটর, মোবাইল, টেলিভিশন, বাস, ট্রেন, এরোপ্লেন সবকিছুর সাথেই জড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞান। আমাদের জীবনকে সহজ থেকে আরো সহজতর এবং দ্রুত থেকে আরো দ্রুততর করে তোলার পথে বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। বিজ্ঞানহীন হয়ে মানব সভ্যতার অগ্রগতি এমনকি অস্তিত্ব রক্ষা; কোনটাই সম্ভব নয়।

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে সহজ সরল আরামদায়ক করে তুলেছে। অসহ্য গরমে তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, মানুষের সুবিদার্থে বিজ্ঞানীরা ঘুরিয়ে দিয়েছেন নদীর গতিপথ, উষ্ণ মরুকে তা করেছে শস্য শ্যামল। হাড় ভাঙা পরিশ্রমকে বিজ্ঞান অনেক সহজ করে দিয়েছে। আজকের কর্মব্যস্ত মানুষ বিজ্ঞান ছাড়া একপাও এগোতে পারে না। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

সভ্যতার সেই শুরুর দিন থেকেই চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান তার অবদান রেখে চলেছে। আর আজ প্রযুক্তি বিজ্ঞানের দানে চিকিৎসা ব্যবস্থায় চূড়ান্ত উন্নতি সাধিত হয়েছে। স্বভাবতই মানুষের গড় আয়ু আগের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগের প্রতিকারের জন্য মানুষ আজ ওঝার কাছে না দৌড়িয়ে হাসপাতালমুখী হয়েছে।

প্রতিনিয়ত গভীর গবেষণালব্ধ বিভিন্ন জীবনদায়ী ওষুধ মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে কৃত্রিম অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরের মতো বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আপৎকালীন মুহূর্তে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে চলেছে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলস্বরুপ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভ্যাকসিন নানাবিধ রোগকে পৃথিবী থেকে নির্মূল করতে সাহায্য করেছে। সর্বোপরি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাপক ব্যবহার চিকিৎসা ব্যবস্থাকে অনেক বেশি সহজ এবং যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বিজ্ঞান এবং তথ্য প্রযুক্তি:

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব আলোচনায় তথ্যপ্রযুক্তির উল্লেখ থাকবে না, এমনটা হতেই পারে না। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানের সম্ভবত সবচেয়ে যুগান্তকারী দানটি হল তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের প্রতিদিনকার জীবনকে আমূল বদলে দিয়েছে। মানুষের সামাজিক, পারিবারিক তথা প্রশাসনিক জীবন সহ সর্বক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

আর এই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে বিজ্ঞানের দুই উল্লেখযোগ্য ফসল: কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থা। জীবনধারণে অভ্যাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি তথা মননের ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তাছাড়া এই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।

খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও পুষ্টিতে বিজ্ঞানের ভূমিকা:

কৃষিতে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে পৃথিবীর বহুদেশ খাদ্য উৎপাদনে প্রায় স্বয়ম্ভরতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া বৈজ্ঞানিক প্রথায় খাদ্যদ্রব্যের পুষ্টি গুণ বাড়িয়ে দরিদ্র, রোগগ্রস্ত, শিশু ও বৃদ্ধদের পুষ্টিবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। কম খরচে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদনে বহু সংস্থা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

বিজ্ঞান বনাম মানুষ:

তবে বিজ্ঞানের প্রভাবে মানুষ আজ যন্ত্রমানবে পরিণত হয়েছে, তাকে অনুসরণ করে যন্ত্র নিয়ন্ত্রিত হয় না বরং যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সময়ের মানুষ চালিত হয়। জীবনকে সহজ ও সুখের করে তোলার জন্য মানুষের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা তাকে নতুন নতুন আবিষ্কার করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। পনেরোই যন্ত্রভিত্তিক জীবন আজ যান্ত্রিক জীবনে পরিণত হয়েছে।

ইলেকট্রনিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধনে রোবট ও কম্পিউটারের আবিষ্কার মানুষের জীবনধারার পটচিত্রকে আমুল বদলে দিয়েছে। ফলস্বরূপ প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পরিণত হয়েছে যন্ত্রের আজ্ঞাবহ দাসানুদাসে। এক মুহুর্ত আধুনিক প্রযুক্তির প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া মানুষ আজ অত্যন্ত অসহায়, নিরুপায় বোধ করে। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

বিজ্ঞানের ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা:

বিজ্ঞানের আবিষ্কার হয়েছিল মানুষের জীবনকে ভয় থেকে মুক্তি দিতে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ আজ সভ্যতাকে ধ্বংস করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। একদিকে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক মারণাস্ত্র, অন্যদিকে বিজ্ঞানের সহায়তায় কারখানায় তৈরি হচ্ছে জীবনধ্বংসী ভেজাল খাদ্য ও ওষুধ। পৃথিবীর শক্তিমান রাষ্ট্রগুলি অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমে বিশ্ববাসীকে সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। ফলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কায় মানুষ প্রহর গুণছে। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

উপসংহার:

সকলে মুখে বলে বিজ্ঞান সকলের জন্য। কিন্তু বিজ্ঞানের প্রভাবকে দৈনন্দিন জীবনে সকল মানুষের মধ্যে আজও ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। দরিদ্র সাধারণ মানুষ আজও বিজ্ঞানের নানান সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অনেক গ্রামীণ পরিবেশে আজও বিদ্যুৎ পৌছায়নি। অন্যদিকে, দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের আবিষ্কার স্বাচ্ছন্দ্য দিচ্ছে সত্য, কিন্তু তার অভিযান্ত্রিকতা মানুষের জীবনের স্বাভাবিক আনন্দকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই ক্রমে সকলে ‘যন্ত্রমানব’ হয়ে উঠছে।

 

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

Exit mobile version