Site icon 1 second school

বিগ ব্যাং তত্ত্ব । পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য

বিগ ব্যাং তত্ত্ব

বিগ ব্যাং তত্ত্ব

শেয়ার করুন

বিগ ব্যাং (The Big Bang Theory)

পৃথিবীর জন্মরহস্য বা উৎপত্তি সম্পর্কিত ধারণা এবং সৌরজগতের সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং বিশ্বজগৎ সম্পর্কে যে পাঠগ্রহণ করা হয় তাকে
কসমোলজি (Cosmology) বা মহাজাগতিক বিদ্যা বলে। মহাবিশ্ব সৃষ্টির সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য মতবাদ হল বিগ ব্যাং তত্ত্ব,
যা রুশ বিজ্ঞানী ফ্রিডম্যান প্রথম অবতারণা করেন।
 ১৯২৯ সালে এডুইন হাবল বলেছিলেন যে — “ছায়াপথ বা গ্যালাক্সিগুলো ক্রমশই পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে,
অর্থাৎ, বিশ্ব পরিসর ক্রমশই স্ফীত হচ্ছে”। এই মন্তব্যের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফ্রিডম্যান বিগ ব্যাং তত্ত্বের অবতারণা করেন।
বিগ ব্যাং হল এমন একটি ঘটনা যা থেকে বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিককালে জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি রহস্য সংক্রান্ত তত্ত্বে এই বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমান থেকে প্রায় ১৩৭০ কোটি বছর আগে মহাবিশ্ব এক অতি ঘন ও উত্তপ্ত বিন্দুর মতো অবস্থা থেকে প্রচন্ড বিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে।
এক অকল্পনীয় ক্ষুদ্র বিন্দুর প্রকান্ড বিস্ফোরণের মাধ্যমে সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয় বলে এই মতবাদ বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব নামে পরিচিত।
স্টিফেন হকিং-এর মতে, মহাবিস্ফোরণের সেই মুহূর্তকে ‘সময়ের সূচনা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
শুরুর মুহূর্তে মহাবিশ্বের যাবতীয় পদার্থ এক অতি ক্ষুদ্র বিন্দুর মধ্যে কেন্দ্রীভূত ছিল যার উষ্ণতা ও ঘনত্ব ছিল অসীম।
প্রচন্ড উষ্ণতায় ছিল শুধু বিশুদ্ধ শক্তি ও ধূলির মতো কিছু কণা। তারপর মহাবিস্ফোরণের বহির্মুখী চাপে মহাবিশ্ব যতই সম্প্রসারিত হয়েছে তার ফলে ক্রমশ শীতল হয়েছে।
জন্ম মুহূর্তের ১ সেকেন্ডের ১ শতাংশের পর যখন মহাবিশ্বের উষ্ণতা ছিল ১০১১° কেলভিন তখন বিশ্বের গঠন ছিল একেবারেই সরল।
 
জন্মের ০.১১ সেকেন্ড পর যখন উষ্ণতা ৩০০ কোটি ডিগ্রি কেলভিন তখন তৈরী হয় পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্রকণাবিশিষ্ট উপপরমাণুর।
এই প্রসঙ্গে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের শক্তি ও বস্তুর সমতুল্যতার সমীকরণ উল্লেখ করা যেতে পারে।
সমীকরণটি হল : E = mc2 [যেখানে, E = বস্তুর রূপান্তরের ফলে সৃষ্ট শক্তি, m = বস্তুর ভর, c = আলোর গতিবেগ/সেকেন্ড]।
আলোর চেয়ে বেশী গতিশীল বস্তু না থাকায় ঐ চূড়ান্ত গতিবেগে বস্তুর রূপান্তর ঘটতে থাকে। বিস্ফোরণের কয়েক মিনিট পর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম
বস্তুকণা ক্রমশ ঘন হয়ে প্রোটন ও নিউট্রন গঠন করতে থাকে যা পরমাণুর মূল উপাদান। একটি পরমাণুর মধ্যে প্রোটনের সংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট হয় ভর।
যেহেতু হাইড্রোজেন কণার একটি প্রোটন ও একটি নিউট্রন থাকে, তাই সেক্ষেত্রে প্রথম হাইড্রোজেন সৃষ্টি হয়।
তারপর যখন ২ টি হাইড্রোজেন পরমাণুর বিক্রিয়ায় একটি হিলিয়াম পরমাণুর সৃষ্টি হয় তখন মহাবিশ্বের বয়স ৩ মিনিটেরও কম।
এরপর উষ্ণতা যখন ১০০ কোটি ডিগ্রি কেলভিন পৌঁছায় তখন অধিকাংশ ইলেকট্রন ও পজিট্রন কণা পারস্পরিক ধ্বংসলীলার মাধ্যমে রশ্মিতে পরিণত হয়।
অভিকর্ষীয় শক্তির কারণে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের সমন্বয় ঘটে ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় ও যে উষ্ণতার সৃষ্টি হয় তা অত্যন্ত উজ্জ্বল গ্যাসযুক্ত মেঘ তৈরী করে। এ
ই মেঘ থেকে কয়েকশো মিলিয়ন বছর পরে মহাবিশ্ব যত ঠান্ডা হয় তত নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সির সৃষ্টি করে।

আরও সম্পর্কে জানুন!

আকাশ কেন নীল দেখায়

সাগরের পানি নীল দেখায় কেন 

একটু সহজ করে ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
হ্যান্স লিপারসি সর্বপ্রথম ১৬০৮ সালে টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেন। তখন থেকে অনেক দূরের গ্রহ নক্ষত্র দেখা শুরু হয়। হাবল বিজ্ঞানী তিনিও
একটি টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেন, সেটি হাবল টেলিস্কোপ নামে পরিচিত। হাবল টেলিস্কোপ ১ম টেলিস্কোপের থেকে অনেক শক্তিশালী ছিল।
বিজ্ঞানী হাবল যখন টেলিস্ককোপ দিয়ে গ্রহ, উপগ্রহ,নক্ষত্র গুলো দেখেন তখন তিনি একটা জিনিস খেয়াল করেন।
তিনি দেখেন যে প্রতিনিয়ত নক্ষত্র গুলো পরষ্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তিনি এইটা নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলেন যে
সত্যিসত্যিই এগুলো ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। এই থেকে তিনি একটা মতবাদ দিলেন যে, এই মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
বিষয়টা একটু এলোমেলো মনে হচ্ছে তাই না? সহজ একটা উদাহরন দিচ্ছি।
মনে করেন, একটা বেলুনের উপর একটা ডট পেন দিয়ে আপনি কয়েকটা ডট দিলেন, এখন বেলুনটা কে ফুলানো হল,
দেখা যাবে বেলুনটা যত ফুলানো হচ্ছে ডট গুলো পরষ্পর থেকে তত দূরে সরে যাচ্ছে। বিজ্ঞানী হাবল ঠিক এই কথাটাই বলেছেন।
তবে তিনি বলেননি যে এই মহাবিশ্ব কতখানি সম্প্রসারিত হবে বা কবে এই সম্প্রসারন শেষ হবে।
হয়ত ভাবছেন এসবের সাথে বিগ ব্যাং এর সম্পর্ক কি? সম্পর্ক আছে।
আমরা জানি, জি ল্যামেটার হলেন বিগ ব্যাং তত্ত্বের প্রবক্তা এবং আইনস্টাইন তার গ্রন্থে বিগ ব্যাং তত্ত্বের ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
বিজ্ঞানী জি ল্যামেটার বললেন যে, যেহেতু এই মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৭২ বিলিয়ন বছর(১ বিলিয়ন=১০০কোটি) সেহেতু এত বছর ধরে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে
(টেলিস্কোপ আবিস্কারের জন্যই বুঝতে পেরে ছিলেন) । তাই যদি হয় তাহলে আমরা যদি আস্তে আস্তে পিছন দিকে যায় তাহলে পৃথিবী আস্তে আস্তে সংকুচিত হবে
এবং গ্রহ, নক্ষত্র গুলো কাছাকাছি আসতে থাকবে, এভাবে পিছনে যেতে থাকলে মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে হতে একসময় একটা বিন্দুতে পরিনত হবে এবং
এই মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুর ভর ঐ একটা বিন্দুর মধ্যেই থাকবে। ধারনা করা হয় যে, সৃষ্টির প্রথমেই এই মহাবিশ্ব একটা বিন্দুতে ছিল। প্রচন্ড ভর আর
তাপ ছিল এই বিন্দুতে। এই তাপের কারনে সেটি একসময় বিস্ফোরিত হয় এবং তা থেকেই সব গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র সব কিছু সৃষ্টি হয়। এটাই বিগ ব্যাং তত্ত্ব নামে পরিচিত।
বি: দ্র: বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়ে একটু সহজ করে বুঝানোর চেষ্টা করা হল। সব তথ্য গুলো বিভিন্ন সাইট থেকেই সংগ্রহ।

আশা করি এখন বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিস্কার হয়েছে। সবার সুস্থ কামনা আশা করছি। ধন্যবাদ

Exit mobile version