1 second school

চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ – প্রতিকার ও সঠিক চিকিৎসা জেনে নিন

চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ: 1ss

শেয়ার করুন

সূচনা-  চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসঘটিত রোগ যা এডিস মশার কারনে হয়ে থাকে। এটি সাধারণত উচ্চ জ্বর, প্রচণ্ড শরীর ও জয়েন্ট ব্যথার জন্য বেশ পরিচিত। ২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশে এই রোগের প্রকোপ বেশি পরিমান বেড়েছে, বিশেষ করে বর্ষাকালে হয়ে থাকে। যদিও চিকুনগুনিয়া সাধারণত প্রাণঘাতী নয়, তবে দীর্ঘস্থায়ী জয়েন্ট ব্যথা ও অন্যান্য জটিলতা এটা সৃষ্টি করতে পারে। এই পোস্টে আমরা চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো।

চিকুনগুনিয়া কি – What is Chikungunya

এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এটি মূলত চিকুনগুনিয়া ভাইরাস (CHIKV) দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। এই ভাইরাস আপনার শরীরে প্রবেশ করলে তখন আপনার জ্বর, প্রচণ্ড জয়েন্ট ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিবে। সাধারণত এটি জীবনঘাতী নয়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

চিকুনগুনিয়া কি
চিকুনগুনিয়া কি: 1ss

চিকুনগুনিয়া কিভাবে ছড়ায় ?

Chikungunya  এডিস মশার (Aedes aegypti ও Aedes albopictus) মাধ্যমে ছড়ায়। যখন কোনো এডিস মশা চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন তার শরীরে কামড়রের কারনে ভাইরাস প্রবেশ করে। এরপর সেই এডিস মশা যদি সুস্থ কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায়, তাহলে ভাইরাস তার শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে এবং সংক্রমণ ঘটাতে থাকে।

সংক্রমণের প্রধান কারণসমূহ হলো:

চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ – Chikungunya symptoms bangla

Chikungunya সংক্রমণের লক্ষণ সাধারণত ৩-৭ দিনের মধ্যে এটা প্রকাশ পায়। এর প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে হলো:

রোগের শুরুতেই ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগ শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন দিন পর জ্বর কমতে শুরু করলে ফুসকুড়ির আবির্ভাব হতে পারে।
অনিদ্রা হতে পারে।
Chikungunya symptoms bangla: 1ss

চিকুনগুনিয়া রোগের কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল

এটি মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে, বাংলাদেশ, ভারত, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি বেশি সংক্রমিত হয়।

নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়:

চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা – Chikungunya Test

 এটি নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিত টেস্ট গুলো করা হয়:

 এতে অনেক ক্ষেত্রে ২ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

চিকুনগুনিয়া চিকিৎসা – chikungunya treatment

এর কোনো সুনির্দিষ্ট কোন প্রতিষেধক টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল মেডিসিন নেই। তবে লক্ষণ উপশমের উপর ভিত্তি জন্য কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি করা হয়:

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথার ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। নিজে নিজে কোন ওষুধ না খাওয়াই ভাল।

চিকুনগুনিয়া রোগের প্রতিকার

এই রোগ প্রতিরোধে একমাত্র মশা নিয়ন্ত্রণ করাই প্রধান উপায়।

১. মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা:

২. ব্যক্তিগত প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

৩. ভ্রমণের সময় সতর্কতা:

যেহেতু এডিস মশা স্থির পানিতে ডিম পাড়ে তাই যেন বাড়ির আশেপাশে পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা: 1ss

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পার্থক্য

অনেক সময় চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু একসাথে গুলিয়ে ফেলা হয়, তবে এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে:

বিষয় চিকুনগুনিয়া ডেঙ্গু
জ্বরের ধরন উচ্চমাত্রার জ্বর ১০২°F থেকে ১০৪°F (৩৮.৯°C – ৪০°C) তীব্র জ্বর ১০২°F (৩৮.৯°C)
জয়েন্ট ব্যথা দীর্ঘদিন ব্যথা সাধারণত কম
র‍্যাশ ত্বকে pimple বা ফুসকুড়ি দেখা যায় অনেক সময় থাকে না
রক্তপাত সাধারণত এতে হয় মারাত্মক ক্ষেত্রে হতে পারে

চিকুনগুনিয়া হলে করণীয়

কিছু করণীয় দেওয়া হলো-

গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া হলে করণীয়

গর্ভাবস্থা হলে এ বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ ভাবে বিবেচনা করা হয়। সেই সাথে নিতে হবে ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ ও পদক্ষেপ। যে মহিলার জীবন চিকুনগুনিয়া হয়েছে তাকে মানসিক ভাবে শক্ত থাকতে হবে ও এক্ষেত্রে বেশি সিরিয়াস হওয়া যাবেনা এবং তাকে উপসর্গ ভেবে চিকিৎসা নিতে হবে।

গর্ভবতী মহিলাদের হলে বিশেষ সাবধান থাকবে হবে। বিশেষ করে এ জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে যেমন পানি, শরবত, জুস অথ্যাৎ তরল বিষয় যাতে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা সৃষ্টি না হয়। এখনকার আবহাওয়ার কারণে গর্ভবতী মহিলাদের অনেক ক্ষেতেও জ্বর অনেক বেশি হয়ে যায় এই সময়ে গর্ভাবস্থার জন্য প্যারাসিটামল (ডোটো) যা মা এবং সন্তানের জন্য সহনশীল সেটা গ্রহণ করতে হবে।

তারা জান্নাত
বিভাগীয় প্রধান, নারী ও প্রসূতি বিভাগ
মার্ক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

আরও পড়ুন-

এইচআইভি কি (HIV) : সংক্রমণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

অ্যাজমা কি – কারণ, লক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায়

PCOS Symptoms and Treatment – Manage Your Health Today

চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ সম্পর্কে FAQ

চিকুনগুনিয়া কোন মশার কামড়ে হয়

উত্তর: এডিস মশার (Aedes) কামড়ে হয়, বিশেষ করে এডিস এজিপ্টাই -Aedes aegypti এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস (Aedes albopictus) প্রজাতির মশা এই ভাইরাস বহন করে।

চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ কি কি?

উত্তর: চিকুনগুনিয়ার প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

হঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর
প্রচণ্ড জয়েন্ট বা মাংসপেশির ব্যথা
মাংসপেশির ব্যথা অনুভব হবে
চোখ জ্বালা ও চোখের পিছনে ব্যাথা করা।
ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা

চিকুনগুনিয়া কি ধরনের রোগ

উত্তর: চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনি ঘটিত রোগ, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে হয়। এটি চিকুনগুনিয়া ভাইরাস (CHIKV) দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং মূলত জ্বর ও জয়েন্টের তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে।

চিকুনগুনিয়া কি ছোঁয়াচে রোগ ?

উত্তর: না, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মাঝে সরাসরি ছড়ায় না। এটি শুধুমাত্র এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া কতটা বিপজ্জনক?

উত্তর: গর্ভবতী নারীদের জন্য চিকুনগুনিয়া অনেক বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে যদি হয়। যদি মা সংক্রমিত হন, তাহলে নবজাতক শিশুর হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তবে এটি খুবই বিরল।

চিকুনগুনিয়া চিকিৎসা কীভাবে করা হয়?

উত্তর: চিকুনগুনিয়ার জন্য এখনো কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক টিকা বা ওষুধ নেই। তবে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়:

জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল গ্রহণ করা হয়
প্রচুর পানি ও তরল শরবত পান করা
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
ব্যথা উপশমের জন্য উষ্ণ বা গরম সেঁক দেওয়া

চিকুনগুনিয়া রোগের ঔষধ

এর নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ায় প্রধানত লক্ষণ উপশমের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের উপায় কী

উত্তর:
এডিস মশার বিস্তার বন্ধ করা – টবে বা যেকোন জায়গায় জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখা
মশারি ব্যবহার করা – দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে
দেহ ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরা – লম্বা হাতা ওয়ালা জামা ও প্যান্ট পরতে হবে
মশার স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করা – মশা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্রিম বা স্প্রে ব্যবস্থা নেওয়া

চিকুনগুনিয়া হলে কি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হতে পারে?

উত্তর: বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে জয়েন্টের ব্যথা কয়েক মাস বা বছর পর্যন্ত ধরে থাকতে পারে, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এমন হয়।

চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হলে কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে?

উত্তর: সাধারণত হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে যদি গর্ভবতী নারী, শিশু, বয়স্ক বা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভোগেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চিকুনগুনিয়া হলে কি দ্বিতীয়বার হতে পারে?

উত্তর: সাধারণত হয়না, চিকুনগুনিয়ায় একবার আক্রান্ত হলে শরীরে প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) গড়ে ওঠে, ফলে সাধারণত দ্বিতীয়বার এই রোগ হয় না।

বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে ক্লিক করুন

পরিশেষে

চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ পোষ্টে সবকিছু তুলে ধরা হয়েছে। ডেঙ্গুজ্বরে সাধারণত চারবার পর্যন্ত হতে পারে। অপরদিকে চিকুনগুনিয়া একবার হলে সাধারণত আর হয় না। এছাড়া অনেক বিষয়েই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের মধ্যে বেশি কিছু সাদৃশ্য আছে। এ রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো এডিস মশা প্রতিরোধ। এজন্য এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করা এবং মশা নির্মূল করার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। সাবধানতাই একমাত্র এই রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। মনে রাখবেন এই রোগ দীর্ঘদিন যাবত থাকলে নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি মৃত্যু হতে পারে।

Exit mobile version