খেলা

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আজ দক্ষিণ আফ্রিকা: বিকাল ৪ টা

শেয়ার করুন
মাহমুদুল্লাহ
মাহমুদুল্লাহ । ফাইল ছবি

টি২০ বিশ্বকাপে কাগজে-কলমে এখনও সেমির পথ খুঁজছে বাংলাদেশ। আশার কথা বলছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিড়াল বনে যাওয়া টাইগাররা কার্যত ব্যাগ এ্যান্ড ব্যাগেজ বাড়ির পথ ধরার অপেক্ষায়…! সুপার টুয়েলভে টানা তিন হারই কেবল নয়, মাঠ ও মাঠের বাইরের সার্বিক বিবেচনায় দেশের ক্রিকেটের কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে।

বোর্ডের (বিসিবি) বড় কর্তার সব কথায় এতদিন যারা সায় দিতেন, সামনে মাথা নোয়াতেন, সেই তারাও মনে করছেন, নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। কঠিন এই বাস্তবতা মাথায় নিয়ে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য অবশ্যই জয়। তার চেয়েও বড় লক্ষ্য নিজেদের প্রমাণ করা। মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজুর রহমানদের এটা করে দেখানো যে আফগানিস্তান, নামিবিয়ার চেয়ে তারা খারাপ নয়!

যেখানে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে সাকিব আল হাসানের হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি। তার জায়গায় আজ একাদশে দেখা যাবে শামীম হোসেন পাটোয়ারিকে। জানিয়েছেন প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। আবুধাবিতে খেলা শুরু বিকেল চারটায়। একই ভেন্যুতে রাত আটটায় দিনের আরেক ম্যাচে উড়তে থাকা পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে ছোট দল নামিবিয়া।

ইনজুরির কারণে আগে থেকেই নেই পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। অনুশীলনে পাওয়া চোট থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠেননি নুরুল হাসান সোহান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও তিনি ফিরতে পারছেন না। সব মিলিয়েই বিশ্বকাপ অভিষেকের সামনে দাঁড়িয়ে শামীম। ‘সাকিব না থাকা অবশ্যই বড় ধাক্কা। সে না খেললে একজন বোলার বা ব্যাটার কম নিয়ে খেলতে হয়। কিংবা অনিয়মিত বোলার নিয়ে খেলতে হয়। দলের ভারসাম্যের জন্য তাই বড় ক্ষতি।

পাশাপাশি, চাপের সময়ে তার নেতৃত্ব ও পুরো আবহে যে স্থিরতা সে দলে এনে দেয়, সেটিও পাওয়া যাবে না। তবে এটাই হয়তো সুযোগ করে দিচ্ছে নতুন কারও বিশ্বকাপে প্রথমবার মাঠে নামার। তরুণ একজন ক্রিকেটারের জন্য সেটি হবে ইতিবাচক দিক। আজকের ম্যাচ খেলার মতো ফিট হবে না সোহান। শামীম ও সৌম্য সরকার, আমাদের দুই ব্যাকআপ ব্যাটসম্যান, থাকবে একাদশে।’ বলেন ডোমিঙ্গো। বিশ্বকাপের শুরুতে সাকিব ও সাইফসহ নয় ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাইফের জায়গায় পেসার শরিফুল ইসলামকে খেলানো হয়।

ব্যাটিংয়ে গভীরতা ধরে রাখতে এবার ব্যাটসম্যান বাড়াচ্ছেন কোচ। সৌম্য ও লিটন তাই আরও সুযোগ পাচ্ছেন। বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ খেলে সৌম্যর রান ৫ ও ১৭। বোলিং করেননি কোনো ম্যাচেই। লিটন প্রথম ৫ ম্যাচ মিলিয়ে ৬৫ রান করার পর গত ম্যাচে তিনে নেমে করেন ৪৪ রান। তবে ৪৩ বল খেলেও শেষ পর্যন্ত ইনিংসকে গতি দিতে না পারা ও শেষ সময়ে আউট হওয়ার হতাশায় পুড়তে হয় তাকে।

কোভিড প্রটোকল অনুযায়ী হুট করেই নতুন কোনো ক্রিকেটারকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। তাই সব দলই অতিরিক্ত ২-৩ জন খেলোয়াড়কে আগে থেকেই স্ট্যান্ডবাই হিসেবে সঙ্গে রেখেছে।

বাংলাদেশ রুবেল হোসেন ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওমানে প্রথম রাউন্ড চলাকালেই বিপ্লবকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। বোর্ডের এত অর্থ, এরপরও কেন অতিরিক্ত একজন মাত্র ক্রিকেটার? এ নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। কারণ একাধিক ইনজুরির কারণে এখন দল গড়তেই হিমশিম অবস্থা। ম্যাচে ফেরা যাক।

সাকিবকে ছাড়াই আজ টানা তিন হারের বৃত্ত ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ,‘এখনও অনেক কিছু পাওয়ার আছে।

সেমি-ফাইনালের আশা হয়তো কিছুটা ক্ষীণ হয়ে গেছে। কিন্তু দুটি ম্যাচ আছে। আমরা যদি ম্যাচ দুটি জিততে পারি, দলের জন্য ভালো কিছু হবে। আমরা চেষ্টা করছি সবাই। মরিয়া হয়েই চেষ্টা করছি সবাই মিলে। মাঠে শতভাগ নিবেদন দেয়ার চেষ্টা করছি। ভুল হচ্ছে। তবে আমরা জয়ের জন্যই মাঠে নামব।’ বলেন অধিনায়ক।

সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। এরপর ইংল্যান্ডের কাছে হারে ৮ উইকেটে। তবে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩ রানে হার ছিল হৃদয়বিদারক। শ্রীলঙ্কা ও উইন্ডিজকে হারাতে পারলে সেমির দৌড়ে দারুণভাবে থাকত টাইগাররা। গাণিতিকভাবে বাংলাদেশে শেষ চারে ওঠার সুযোগ এখনও সম্ভব। কিন্তু এ জন্য একসাথে অনেক কিছু ঘটতে হবে, যার অনেক কিছুই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে নেই!

আরও পড়ুন: টানা দুই ম্যাচ হেরে কোণঠাসা ভারত, সেমিতে উঠতে লাগবে যে সমীকরণ

টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলে দু’টি করে জয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আবার ইংল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। গ্রæপ-১এ পারফর্মেন্সের বিচারে ইংল্যান্ড ভয়ঙ্কর দল, যেমনটা গ্রæপ-২এ পাকিস্তান।

এমন অবস্থায় গ্রæপ-১ থেকে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমির দৌড়ে টিকে থাকতে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের ম্যাচগুলোতে জিততে চাইবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। এ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ৬টি টি২০ খেলে কোনো জয় নেই বাংলাদেশের। টি২০ বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছে মাত্র একবার। ২০০৭ সালের প্রথম বিশ্বকাপে স্বাগতিক প্রোটিয়ার বিপক্ষে কেপটাউনে ৭ উইকেটে পরাজিত হয় বাংলাদেশ।

১৪ বছর পর আবারও দু’দলের সাক্ষাত হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ মঞ্চে। সর্বোপরি নিজেদের টি২০ ইতিহাসে ১১৮ ম্যাচ খেলে টাইগারদের জয় মাত্র ৪৩টিতে, হার ৭৩, পরিত্যক্ত ২। আর টি২০ বিশ^কাপে এ পর্যন্ত ৩০ ম্যাচ খেলে জয় ৭টি। এর সবই বাছাই অথবা বাছাইসম রাউন্ড ওয়ানে! দিনের অপর ম্যাচে আজ নিশ্চিত ফেবারিট বাবর আজমের পাকিস্তান।

যারা ভারত, নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানকে উড়িয়ে সেমিতে এক পা দিয়ে রেখেছে। আজ জিতলেই সেটি নিশ্চিত হয়ে যাবে। আর প্রথমবার টি২০ বিশ^কাপ খেলতে এসেই সুপার টুয়েলভে ওঠা জেরার্ড এরাসমাসের নামিবিয়ার লক্ষ্য চমক দেখানো।

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *