বাক্য

বাক্য কাকে বলে? গঠন ও অর্থ অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ। বিস্তারিত আলোচনা

শেয়ার করুন

বাংলা ব্যাকরণ

মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হলো ভাষা। যখনই তার মনের মধ্যে কোনো নতুন ভাবের উদয় হয় সেই মুহূর্তে সে কতকগুলি উপযুক্ত শব্দ নির্বাচন করে, সেগুলি পরপর সাজিয়ে, বাক্য তৈরি করে মনের ভাব প্রকাশ করে। ভাষার বৃহত্তম একক হল বাক্য। বাক্যের মাধ্যমেই ভাষার প্রকাশ ঘটে।

আজ আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব সেটি হলঃ বাক্য কাকে বলে? বাক্য কত প্রকার ও কি কি?

বাক্য কাকে বলে

যে পদ বা পদসমষ্টি দ্বারা বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়, তাকে বাক্য বলে। যেমন – পাখিরা আকাশে ওড়ে। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ” কোনো ভাষায় যে উক্তির স্বার্থকতা আছে এবং গঠনের দিক থেকে যা স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেরূপ একক উক্তিকে ব্যাকরণে বাক্য বলে।

মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মতে, ” যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোন বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়, তাকে বাক্য বলে।

বাক্যে শব্দের অর্থ

বাক্যের সংজ্ঞা নির্ণয় করতে গিয়ে দেখেছি যে বাক্যের প্রধান উদ্দেশ্য হলো অর্থ প্রকাশ করা। শব্দের এই অর্থ তিন প্রকার হয়। যথা-

১) অভিধা– শব্দের যে অর্থ ব্যাকরণ ও অভিধানসম্মত তাকেই বলা হয় অভিধা। যেমন- রামবাবু পেশায় একজন উকিল। আলোচ্য বাক্যে শব্দগুলির অভিধানগত যা অর্থ সেই অর্থই বাক্যে প্রকাশিত হয়েছে।

২) লক্ষণা– শব্দের আভিধানিক অর্থকে অতিক্রম করে যখন বিশেষ অর্থ প্রকাশিত হয় সেই অর্থকে বলে লক্ষণা। যেমন- রামবাবু গ্রামের মাথা। আলোচ্য বাক্যটিতে ‘মাথা’ শব্দটির অর্থ ‘মস্তক’ নয়, গ্রামের প্রধান ব্যক্তি বোঝাতেই ‘মাথা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

৩) ব্যঞ্জনা– শব্দার্থ যখন অভিধা এবং লক্ষণাকে অতিক্রম করে কোন গ্রহ গূঢ় অর্থ প্রকাশ করে, তাকে ব্যঞ্জনা বলা হয়। অন্যভাবে বললে, শব্দের যে শক্তি শব্দের বা বাক্যের আভিধানিক অর্থকে অতিক্রম করে বক্তার অভিপ্রেত কোনো অন্তর্নিহিত তাৎপর্যময় অর্থকে তুলে ধরে তাকে ব্যঞ্জনা বলে। যেমন, “রামবাবু সমবায় সমিতি স্থাপন করে গ্রামের কুটিরশিল্পের মরা গাঙে জোয়ার এনেছেন”। ‘মরা গাঙে জোয়ার’ আনা বলতে ক্ষয়িষ্ণু কুটিরশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করাকে বোঝানো হয়েছে।

বাক্য নির্মাণের শর্ত

‘সাহিত্যদর্পণ’ রচয়িতা বিশ্বনাথ কবিরাজ বলেন “বাক্যাং স্যাদ্ যােগ্যতাকাক্ষাসক্তিযুক্ত পদোচ্চয়ঃ”। অর্থাৎ, যোগ্যতা, আকাঙ্খা ও আসত্তি- এই তিনটি হল বাক্য নির্মাণের শর্ত। অন্যভাবে বললে, যোগ্যতা, আকাঙ্খা ও আসত্তি- এই তিন প্রকার গুণ থাকলে তবেই তাকে বাক্য বলা হবে।

১) যোগ্যত্য [Compatibility]- বাক্য যে অর্থ প্রকাশ করতে চায় তা যেন বাস্তবতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়। বাক্যের এই বিশেষ গুণটিকে বলা হয় যোগ্যতা। যেমন, তাদের গোয়ালঘরে দুটো বাঘ বাঁধা আছে। কথাটি ব্যাকরণগত ভাবে ঠিক হলেও বাস্তবতা বর্জিত। গোয়ালঘরে গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি বাঁধা থাকতে পারে কিন্তু বাঘ বেঁধে রাখার ব্যাপারটা অবাস্তব, আর বাস্তবসম্মত নয় বলেই এটি বাক্য নয়।

তবে, অনেক সময় আপাতদৃষ্টিতে কোন বাক্যের অর্থ বাস্তবসম্মত মনে না হলেও গভীরভাবে অনুধাবন করলে বাক্যটির অন্তর্নিহিত অর্থ পরিস্ফুট হয়। নিচের বাক্যটি লক্ষণীয়- “তাদের গোয়ালঘরে দুটো বাঘ বাঁধা আছে। এমন রাক্ষুসে বলদ আমি জীবনে দেখিনি!” দ্বিতীয় বাক্যটি বলা হবার পরেই বোঝা যাচ্ছে প্রথম বাক্যে যাদের ‘বাঘ’ বলা হয়েছে সেগুলি আসলে দুটি বলদ। হয়তো সেগুলি খুব হৃষ্টপুষ্ট আর সকলকে গুঁতোতে যায়, সেইজন্য তাদেরকে বাঘ বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে দুটো বাক্যেরই যোগ্যতা রয়েছে এবং দুটিই বাক্য।

২) আকাঙ্খা [Expectancy]- বাক্যের কাজ সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করা। কোনো বাক্য যদি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে না পারে তবে শ্রোতার আকাঙ্খা পূরণ হয় না এবং সেটিকে বাক্য বলা চলে না। আকাঙ্খা হল বাক্যের সেই শর্ত যা বাক্যের অর্থকে সম্পূর্ণ করার নিশ্চয়তা দেয়। যেমন, “আমি সকালে..” বলে যদি আর কিছু না বলা হয় তবে শ্রোতার আকাঙ্খা পূরণ হয় না। যদি বলা হয় “আমি সকালে হাটতে যাই”- এবারে শ্রোতার আকাঙ্খা পূরণ হল এবং এটি যথার্থ বাক্য হল।

৩) আসত্তি [Proximity]- বাক্যে যথাযথ পদবিন্যাসের রীতিকে বলা হয় আসত্তি। বাক্যে একটির পর আরেকটি পদ বসে একটি অর্থবোধক পদক্রম সৃষ্টি হলে তবেই শ্রোতা বক্তার মনের ভাব বুঝতে পারে। পদগুলি উল্টোপাল্টা বসানো হলে বাক্যের উদ্দেশ্যে সিদ্ধ হয় না। যেমন- ‘পরের রবিবার রামের বাবা বাড়ি ফিরবেন’। এই বাক্যটিতে পদগুলি যথাযথভাবে বসেছে বলেই বক্তার মনের ভাব শ্রোতার কাছে বোধগম্য হবে। কিন্তু যদি বলা হত- ‘রামের রবিবার পরের বাবা বাড়ি ফিরবেন’- এই বাক্যটিতে একই পদ ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু কোনো সঙ্গত অর্থ প্রকাশ করতে পারছে না। সুতরাং আসত্তি না থাকলে বাক্যটি কেবল পদসমষ্টি বলে গণ্য করা হবে, সেটিকে বাক্য বলা যাবে না।

বাক্যের প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ

বাক্যের নানারকম প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ হতে পারে। তবে দুটো দিক থেকে এর প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ করা হয়। যথাঃ

  • গঠন অনুসারে
  • অর্থ অনুসারে

গঠন অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ

গঠন অনুসারে বাক্য ৩ প্রকার। যথাঃ-

  • সরল বাক্য
  • জটিল বা মিশ্র বাক্য
  • যৌগিক বাক্য

সরল বাক্য: যে বাক্যে একটিমাত্র কর্তা বা উদ্দেশ্য এবং একটিমাত্র ক্রিয়া বা বিধেয় থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন – পুকুরে পদ্মফুল জন্মে। ইফাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। এখানে পদ্মফুল ও ইফাদ হলো উদ্দেশ্য আর জন্মে ও যায় হচ্ছে বিধেয়।

জটিল বা মিশ্র বাক্য: যে বাক্যে একটি প্রধান খন্ডবাক্যের সাথে এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়, তাকে জটিল বা মিশ্র বাক্য বলে। যেমন – তুমি যদি না আস, আমি যাব না। যে পরিশ্রম করে, সেই সুখ লাভ করে। যিনি পরের উপকার করেন, তাকে সবাই ভালোবাসে। এখানে,

আশ্রিত বাক্য প্রধান খন্ড বাক্য
তুমি যদি না আস আমি যাব না
যে পরিশ্রম করে সেই সুখ লাভ করে
যিনি পরের উপকার করেন তাকে সবাই ভালোবাসে

যৌগিক বাক্য: পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা ততোধিক সরল বা জটিল বা মিশ্র বাক্য মিলিত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন করলে তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন – ইফাদ অনেক মেধাবী ছাত্র কিন্তু নিয়মিত ক্লাস করে না। তার বয়স হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি বাড়ে নি।

অর্থ অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ

অর্থ অনুসারে বাক্যকে ৭ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-

  • বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক বাক্য
  • প্রশ্নবোধক বা প্রশ্নাত্মক বাক্য
  • অনুজ্ঞা বা আদেশসূচক বাক্য
  • ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য
  • কার্যকারণাত্মক বাক্য
  • সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যােতক বাক্য
  • আবেগসূচক বাক্য

বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক বাক্যঃ যে বাক্য দ্বারা কোন কিছু বর্ণনা বা বিবৃতি করা হয় তাকে, বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক বাক্য বলে। যেমন – গরু মাঠে ঘাস খায়। স্মৃতিসৌধ সাভারে অবস্থিত।

বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক বাক্য আবার দুপ্রকার। যথাঃ

  • অস্থিবাচক বা হ্যাঁ বোধক বাক্য
  • নেতিবাচক বা না বোধক বাক্য

অস্থিবাচক বা হ্যাঁ বোধক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা কোন ঘটনা, ভাব বা বক্তব্যের অস্থিত্ব বা হ্যাঁ সূচক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে অস্থিবাচক বা হ্যাঁ বোধক বাক্য বলে। যেমন – ইফাদ চুপ করে রইল।

নেতিবাচক বা না বোধক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা কোন ঘটনা, ভাব বা বক্তব্যের না সূচক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে নেতিবাচক বা না বোধক বাক্য বলে। যেমন – ইফাদ কোন কথা বলল না।

আমাদের পথ নেই আর।
এ কলমে লেখা যায়না।
এখনো ছেলেটা বাড়ি ফেরেনি।

প্রশ্নবোধক বা প্রশ্নাত্মক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা কোন কিছু জিজ্ঞেস করা বা জানতে চাওয়া হয়, তাকে প্রশ্নবোধক বা প্রশ্নাত্মক বাক্য বলে।

যেমন – তুমি কোন ক্লাসে পড়?, যাবে নাকি?

ছেলেটা কেমন পড়াশোনা করছে?
আমড়া গাছে কি আম হয়?
অদিতির গানের গলা কেমন?
কোয়েল কাল কোথায় যাবে?

ইত্যাদি ।

অনুজ্ঞা বা আদেশসূচক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, আবেদন, অনুরোধ ইত্যাদি বোঝায়, তাকে অনুজ্ঞা বা আদেশসূচক বাক্য বলে।

যেমন: সদা সত্য কথা বলবে।

দয়া করে কথা বন্ধ রাখ।

দয়া করে চুপ করুন।
এখন মাঠে খেলতে যেও না।
বুড়ো মানুষের কথাটা শোনো।
আপনারা শান্ত হোন।

ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা মনের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, প্রার্থনা, আশীর্বাদ ইত্যাদি প্রকাশ পায়, তাকে ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য বলে।

যেমন – তোমার মঙ্গল হোক।

জীবনে সফল হও।
মানুষটা যেন দৃষ্টি ফিরে পায়।
আজ যেন বৃষ্টি না হয়।
সকলের কল্যাণ হোক।

কার্যকারণাত্মক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা কোন কারণ বা শর্ত বোঝায়, তাকে কার্যকারণাত্মক বাক্য বলে।

যেমন – দুঃখ বিনা জগতে সুখ লাভ করা যায় না।

যতক্ষন শ্বাস ততক্ষণ আশ।
যদি ধোঁয়া দেখো বুঝবে আগুনও আছে।
পড়তে হয়, নাহলে পিছিয়ে পড়তে হয়।
যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা।

সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যােতক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা কোন সন্দেহ, সংশয় কিংবা কোন সম্ভাবনা প্রকাশ পায় তাকে সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যােতক বাক্য বলে।

যেমন – হয়তো সুদিন আসবে।

মরে গেছে হয়তো।
এই বুঝি পা পিছলে পড়ে গেলাম।
সময়ের কাটা যেন থেমে গেছে।
বোধহয় ও পারবে।

আবেগসূচক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা হর্ষ, বিষাদ, আনন্দ, বিস্ময়, বিহ্বল বা মনের আকস্মিক আবেগ বাা উচ্ছ্বাস প্রকাশ পায়, তাকে আবেগসূচক বাক্য বলে।

যেমন: আহা! কী দেখিলাম!
হায় রে পোড়া কপাল!
বাব্বা! কত উন্নতি করেছ!
হায় হায়! লোকটা অকালেই চলে গেল!

বাক্য পরিবর্তন

বাক্যের অর্থ অপরিবর্তিত রেখে এক প্রকার বাক্য থেকে আরেক প্রকার বাক্যে রূপান্তর করাই হল বাক্য পরিবর্তন। প্রথমে বাক্যের গঠনগত পরিবর্তন দেখে নেওয়া যাক।

– লোকটি দরিদ্র হলেও লোকটি সৎ। (সরল)
– যদিও লোকটি দরিদ্র তথাপি সে সৎ। (জটিল)
– লোকটি দরিদ্র কিন্তু লোকটি সৎ। (যৌগিক)

উপরের তিনটি বাক্যের অর্থ এক কিন্তু গঠন ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির। বাক্য পরিবর্তনের কয়েকটি সাধারণ নিয়ম রয়েছে। সেগুলি খুব সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

গঠনগতভাবে বাক্যের পরিবর্তন করার সময় তিনটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে।

১) সরলবাক্যের একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। অসমাপিকা ক্রিয়া যতখুশি থাকতে পারে বা নাও পারে কিন্তু সমাপিকা ক্রিয়া একটি থাকবে এবং একটিই থাকবে।

২) জটিল বাক্যে দুটি খন্ডবাক্য (Clause) থাকবে এবং তাদের মধ্যে সম্পর্কটা এমন হবে যেন একটি আরেকটির উপর নির্ভরশীল। দুটি খন্ডবাক্য মানেই কিন্তু দুটো ক্রিয়াপদও থাকবে।

৩) যৌগিক বাক্যে দুটি স্বাধীন খন্ডবাক্য ও, এবং, কিন্তু ইত্যাদি অব্যয় দ্বারা যুক্ত থাকে। যৌগিক বাক্যেও দুটি ক্রিয়াপদ থাকে।

এবার আসি বাক্য পরিবর্তনের কথায়। সরল বাক্য থেকে জটিল বা যৌগিক বাক্য করতে হলে প্রথমেই বাক্যটিকে দুটি ছোটো বাক্যে ভাগ করে নিতে হবে। দেখতে হবে বাক্যটিতে কোন অসমাপিকা ক্রিয়া আছে কিনা। যদি অসমাপিকা ক্রিয়া থাকে, তবে কাজটা অনেক সহজ হবে। যেমন-

‘বাঘ দেখে গ্রামের লোক চলে গেল’- বাক্যটিতে একটি অসমাপিকা ক্রিয়া রয়েছে- ‘দেখে’। এই বাক্যটিকে দুটি ছোটো বাক্যে ভাগ করা যেতে পারে- ‘গ্রামের লোক বাঘ দেখলো’ এবং ‘তারা চলে গেল’। এবারে এই সরল বাক্যটিকে জটিল এবং যৌগিক বাক্যে রূপান্তর করা করা যাক-

জটিল বাক্যে রূপান্তর- জটিল বাক্যে দুটি বাক্যখন্ড যা, যে, যেটি, যেখানে, যখন, যখন-তখন, যেমন-তেমন ইত্যাদি পদ দিয়ে যুক্ত থাকে। উপরের উদাহরণে সরলবাক্যটিকে ভেঙে যেদুটি ছোটো বাক্য গিয়েছিল তাদেরকে জুড়ে দেওয়া যাক এইভাবে-

‘গ্রামের লোক যখনই বাঘ দেখলো, তখনই (তারা) চলে গেল’। অথবা বলতে পারি- ‘যেইমাত্র গ্রামের লোক বাঘ দেখলো, তখনই তারা চলে গেল।’ যেমন ভাবেই যোগ করা হোক, দেখতে হবে একটি বাক্যখণ্ডের উপর যেন অপরটি নির্ভরশীল হয়। তবেই সেটি জটিল বাক্য হবে।

যৌগিক বাক্যে রূপান্তর- যৌগিক বাক্যে রূপান্তর করতে হলে ছোটো বাক্যদুটিকে ‘এবং’, ‘ও’, ‘আর’ ইত্যাদি সংযোজক অব্যয় দিয়ে যোগ করে দিলেই হবে। যেমন- ‘গ্রামের লোক বাঘ দেখলো এবং চলে গেল’। কিংবা বলা যেতে পারে- ‘বাঘ দেখলো আর গ্রামের লোক চলে গেল।’ মোটকথা হল, দুটি বাক্যখন্ডের অর্থকে জুড়ে দিলেই যৌগিক বাক্য হয়।

এতক্ষণ ধরে সরল থেকে জটিল এবং যৌগিক বাক্যে রূপান্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হল। জটিল এবং যৌগিক বাক্যকে সরল বাক্যে পরিণত করতে হলে ওই একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে, তবে উল্টো দিক থেকে। আগেই বলা হয়েছে যে, জটিল এবং যৌগিক বাক্যে দুটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। সেই দুটি ক্রিয়াপদের একটিকে (সাধারণত, যে ক্রিয়াটি আগে ঘটে সেটিকে) অসমাপিকা ক্রিয়াতে পরিণত করতে হবে। যেমন-

জটিল- যখন বিকেল হয়, পাখিরা বাসায় ফেরে।
যৌগিক- বিকেল হয় এবং পাখিরা বাসায় ফেরে।

উপরের বাক্য দুটির একই অর্থ, শুধু গঠন আলাদা। প্রথমটি জটিল বাক্য এবং দ্বিতীয়টি যৌগিক বাক্য। দুটি বাক্যেই দুটি করে সমাপিকা ক্রিয়া রয়েছে- ‘হওয়া’ এবং ‘ফেরা’। প্রথমে বিকেল হচ্ছে এবং তারপর পাখিরা বাসায় ফিরছে। প্রথম ক্রিয়াটি ‘হওয়া’, এটিকে অসমাপিকা ক্রিয়ার রূপ দিলেই সরলবাক্যে করা যাবে। যেমন-
‘বিকেল হলে পাখিরা বাসায় ফেরে।’ আবার, বাংলা ভাষায় অনেকসময় ‘হ’ ধাতুনিষ্পন্ন ক্রিয়াপদগুলি উহ্য থাকে, তাই ‘হলে’ ,ক্রিয়াপদটি না উল্লেখ করেও চলে। বলা যেতে পারে- ‘বিকেলে পাখিরা বাসায় ফেরে’। এটিও সরল বাক্য।

এবারে জটিল থেকে যৌগিক এবং যৌগিক থেকে জটিল বাক্যের রূপান্তর দেখে নেওয়া যাক। এই দুই প্রকার বাক্যেই দুটি খন্ডবাক্য থাকে। তার মানে, এদের রূপান্তর করা অনেকটা সহজ। বাক্যখন্ডগুলিকে ‘এবং’, ‘কিন্তু’ ইত্যাদি দিয়ে যোগ করলেই যৌগিক বাক্য; আর, ‘যা’, ‘যা-তা’, যখন-তখন ইত্যাদি অব্যয় দিয়ে যোগ করলে জটিল বাক্য হয়ে যায়। যেমন-

যখন মাঝরাত তখন শঙ্করের ঘুম ভেঙে গেল। (জটিল)
মাঝরাত হল এবং শঙ্করের ঘুম ভেঙে গেল। (যৌগিক)

আশা করি গঠনগতভাবে বাক্য পরিবর্তনের বিষয়টি বোঝা গেল। এবারে যত বেশি অভ্যাস করা হবে তত নতুন নতুন জিনিস শিখতে পারা যাবে।

এবার চলো তাহলে আমরা এমসিকিউ/বিভিন্ন পরীক্ষায় mcq আসা সমাধান করি

১.ভাষার প্রাণ কী?

উ: অর্থবোধক বাক্য।

২. বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক কী?

উ: শব্দ

৩. বাক্যের মৌলিক উপাদান কী?

উ: শব্দ

৪. বাক্যের অংশ কয়টি?

উ: দুটি

৫. গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার?

উ: তিন প্রকার

৬. অর্থানুসারে বাক্য কত প্রকার?

উ: পাঁচ প্রকার

৭. আশ্রিত খণ্ডবাক্য কয় প্রকার?

উ: তিন প্রকার

৮. একটি স্বার্থক বাক্যে কয়টি গুণ থাকা আবশ্যক?

উ: তিন

৯.আকাঙ্ক্ষা, আসত্তি, যোগ্যতা- বাক্যের কী?

উ: গুণ

১০.বাক্যস্থিত পদসমূহের অর্থগত ও ভাবগত মেল বন্ধনের নাম কী?

উ: যোগ্যতা

১১. বাক্যে এক পদের পর অন্য পদ শোনার ইচ্ছাকে কী বলে?

উ: আকাঙ্ক্ষা

১২. বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদবিন্যাসকে কী বলে?

উ: আসত্তি

১৩. কোনো বাক্যে যার সম্বন্ধে কিছু বলা হয়, তাকে কী বলে?

উ: উদ্দেশ্য

১৪. উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বলা হয় তাকে কি বলে?

উ: বিধেয়

১৫. ‘আসত্তি’ অর্থ কী?

উ: নৈকট্য

১৬.সাধারণত বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়াপদ কোথায় বসে?

উ: শেষে

১৭. যে বাক্যে একটি মাত্র উদ্দেশ্য থাকে তাকে কী বলে?

উ: সরল উদ্দেশ্য

১৮. অসমাপিকা ক্রিয়াপদ বাক্যের কোথায় বসে?

উ: বিশেষণের পূর্বে

১৯. বাক্যে বিধেয়-বিশেষণ কোথায় বসে?

উ: বিশেষ্যের পরে

২০. সম্বন্ধপদ বাক্যে কোথায় বসে?

উ: বিশেষ্যের পূর্বে

২১. বাক্যে বহু পদময় বিশেষণ কোথায় বসে?

উ: বিশেষ্যের পূর্বে

২২.যৌগিক বাক্যকে সরলবাক্যে রূপান্তর করতে হলে কয়টি বিষয় মনে রাখতে হবে?

উ: পাঁচটি

২৩. মিশ্র বাক্যের অপর নাম কী?

উ: জটিল বাক্য

২৪. যৌগিক বাক্যের অপর নাম কী?

উ: সংযুক্ত বাক্য

২৫. কোন্ বাক্যের প্রতিটি বাক্যই স্বাধীন?

উ: যৌগিক

২৬. বাক্যের অপরিহার্য অঙ্গ কী?

উ: ক্রিয়াপদ

২৭. ‘আমার হূদয় মন্দিরে আশার বীজ উপ্ত হলো’- এটি কিসের ভুল?

উ: উপমার ভুল প্রয়োগ

২৮. তত্সম শব্দের সঙ্গে দেশীয় শব্দের প্রয়োগ কোন দোষ সৃষ্টি করে?

উ: গুরুচণ্ডালী দোষ

২৯. ‘আমার সঙ্গে প্রাপঞ্চ করেছ’- বাক্যটিতে কোন ধরনের দোষ ঘটেছে?

উ: দুর্বোধ্যতা

৩০. যৌগিক বাক্যের অন্যতম গুণ কী?উ: দুটি সরল বাক্যের সাহায্যে বাক্য গঠন

৩১. ‘মেঘ গর্জন করলে ময়ুর নৃত্য করে’- বাক্যটি কোন বাক্যের উদাহরণ?

উ: সরল বাক্যের

৩২.‘জ্ঞানীলোক সকলের শ্রদ্ধা পান।’ -এটি কোন ধরনের বাক্য?

উ: সরল বাক্য

৩৩.‘ লাল ফুল ফুটেছে’- এ বাক্যের উদ্দেশ্যের সমপ্রসারণ ঘটেছে কীভাবে?

উ: বিশেষণ যোগে

৩৪. ভাব অনুযায়ী বাক্য কয় প্রকার?

উ: দুই প্রকার।

৩৫.ভাষার মূল উপকরণ কী?

উ: বাক্য

৩৬.বাক্যের মূল উপাদান কী?

উ: শব্দ

৩৭.বাক্যের বিভিন্ন পদের মধ্যে কী থাকা আবশ্যক?

উ: পারস্পরিক সম্পর্ক বা অন্বয়

৩৮. বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদবিন্যাসকে কী বলে?

উ: আসত্তি

৩৯. ‘আকাঙ্ক্ষা’ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?

উ: Expactancy.

৪০. ‘আসত্তি’ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?

উ: Order/Proximity

বাক্য প্রকরণ

২৪. কোনটি যৌগিক বাক্যের উদাহরণ?

ক. তাঁর টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না

খ. যখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে

গ. তাঁর বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি

ঘ. তার বাবা যায়নি

২৫. বাক্যের উদ্দেশ্য কত প্রকার?

ক. দুই প্রকার

খ. তিন প্রকার

গ. চার প্রকার

ঘ. পাঁচ প্রকার

২৬. উদ্দেশ্যের সঙ্গে কী যুক্ত থাকলে তাকে সম্প্রসারিত উদ্দেশ্য বলে?

ক. বিশেষ্যাদি খ. বিশেষণাদি

গ. কারকাদি ঘ. অব্যয়াদি

২৭. গঠন অনুযায়ী বাক্য কত প্রকার?

ক. দুই প্রকার খ. তিন প্রকার

গ. চার প্রকার ঘ. পাঁচ প্রকার

২৮. যে বাক্যে একটিমাত্র কর্তা ও একটিমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকে, তাকে কোন বাক্য বলে?

ক. সরল বাক্য

খ. জটিল বাক্য

গ. যৌগিক বাক্য

ঘ. খণ্ড বাক্য

২৯. যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ড বাক্যের এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়, তাকে কী বলে?

ক. জটিল বাক্য খ. যৌগিক বাক্য

গ. সরল বাক্য ঘ. আশ্রিত খণ্ড বাক্য

৩০. তৎসম শব্দের সঙ্গে দেশীয় শব্দের প্রয়োগ কখনো কখনো কী সৃষ্টি করে?

ক. দুর্বোধ্যতা

খ. বাহুল্য দোষ

গ. গুরুচণ্ডালী দোষ

ঘ. উপমার ভুল প্রয়োগ

৩১. ‘যে ভিক্ষা চায় তাকে দান করো’—এটা কোন বাক্যের উদাহরণ?

ক. সরল বাক্য খ. যৌগিক বাক্য

গ. মিশ্র বাক্য ঘ. খণ্ড বাক্য

৩২. আশ্রিত খণ্ড বাক্য কত প্রকার?

ক. দুই খ. তিন

গ. চার ঘ. পাঁচ

৩৩. কোনটি শুদ্ধ?

ক. একান্ত বাধ্যগত খ. একান্ত অনুগত

গ. একান্ত বিনয়গত ঘ. একান্ত বাধ্যানুগত

৩৪. মিশ্র বাক্য বিশ্লেষণে প্রথম কী প্রদর্শন করতে হয়?

ক. আশ্রিত খণ্ড বাক্য

খ. প্রধান খণ্ড বাক্য

গ. নিত্যসম্বন্ধীয় অব্যয়

ঘ. সংযোজক অব্যয়

৩৫. কোনটি জটিল বাক্যের উদাহরণ?

ক. মন দিয়ে পড়লে পরীক্ষায় ভালো করা যায়

খ. সত্য কথা বলিনি, তাই বিপদে পড়েছি

গ. আমি অনেক কষ্ট করেছি, তাই শিক্ষালাভ করেছি

ঘ. যখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে

৩৬. ‘তার চুল পেকেছে কিন্তু বুদ্ধি পাকেনি’—এটা কোন বাক্য?

ক. সাধারণ বাক্য

খ. মিশ্র বাক্য

গ. যৌগিক বাক্য

ঘ. সরল বাক্য

সঠিক উত্তর

বাক্য প্রকরণ: ২৪. ক ২৫. ক ২৬. খ ২৭. খ ২৮. ক ২৯. ক ৩০. গ ৩১. গ ৩২. খ ৩৩. খ ৩৪. খ ৩৫. ঘ ৩৬. গ.

আমাদের পোষ্ট গুলো প্রতিনিয়ত আপডেট করা হয়। বিসিএস,প্রাইমারি সহ সব পরীক্ষার প্রতিনিয়ত প্রশ্ন অনুযায়ী পোষ্ট গুলো আমরা আপডেট করি। সবার জন্য শুভ কামনা রইলো।

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *