বিসিএস বিশেষ সংখ্যা ৪৩তম প্রিলিমিনারি

বিসিএস বিশেষ সংখ্যা ৪৩তম প্রিলিমিনারি

শেয়ার করুন
বিসিএস

সবকিছু ঠিক থাকলে ২৯ অক্টোবর ২০২১ রোজ শুক্রবারই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৩তম বিসিএসের বাছাই পরীক্ষা। যাঁরা এতে অংশগ্রহণ করবেন, তাঁদের প্রস্তুতিও মোটামুটি শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।

শেষ সময়ের প্রস্তুতি যেভাবে

বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। এটি মনে থাকলে বা বুঝতে পারলে প্রস্তুতি নিতে উৎসাহ বা প্রেরণা বাড়বে। গুরুত্বের কারণগুলো হলো:

১. এতে কমবেশি সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে থাকেন। আবেদন আরও বেশি থাকে। তবে, প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ হন কমবেশি ২১ হাজারের মতো পরীক্ষার্থী। শুধু তা–ই নয়, বর্তমানে ক্যাডার পদে কর্মরত থেকেও অনেকে কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাওয়ার জন্য পরীক্ষা দিতে থাকেন।

২. প্রিলিমিনারির নির্দিষ্ট কোনো কাটমার্ক নেই। এটা ক্যাডার নিয়োগের সংখ্যা ও পিএসসির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। তাই আপনি কত পেলে টিকবেন, তা বলা মুশকিল।

৩. বিসিএস পরীক্ষায় প্রস্তুতির প্রথম ধাক্কা হলো প্রিলিমিনারিতে। কারণ, এখানে এসে আপনি জীবনে প্রথম অনেক বিষয়ের খুঁটিনাটি জানতে শুরু করেন। যেমন বাণিজ্য ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা সংবিধান ও মহান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে জানতে শুরু করেন। তাই এমন বিষয় আয়ত্ত করতে পরিশ্রম করতে হয়।

৪. প্রিলিমিনারিতে না জানলে উত্তর দেওয়ার সুযোগ নেই। মানে ‘কিছু একটা লিখে’ দিয়ে এলাম, এমন সুযোগ নেই। তাই সব জানা থাকতে হয়। অন্যথায় পারবেন না।

৫. প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় কোনো অতিরিক্ত প্রশ্ন থাকে না। ২০০টির মধ্যে ২০০টিই উত্তর করতে হয়। কঠিন কাজ।

৬. প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং রয়েছে, যা বিপদের সবচেয়ে বড় কারণ।

৭. প্রিলিমিনারিতে সবাই প্রস্তুতির জন্য সমান সময় পান না। কেউ অনেক আগে থেকে পড়েন। কেউ ছয় মাস ধরে পড়েন। কেউ তিন মাস পড়েন। ফলে পরীক্ষা নিয়ে নানা মাত্রায় প্রস্তুত থাকেন পরীক্ষার্থীরা।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার একটা সুবিধাও রয়েছে। সব প্রশ্ন উত্তর না দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সামনে যে কয়েক দিন সময় পাবেন, তা কীভাবে পড়বেন, সে সম্পর্কে একটু ধারণা দেওয়া যেতে পারে।

ক. দৈনিক ৮-১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করবেন। অপরিহার্য নয়, এমন সব কাজ আপাতত বাদ দেবেন। কারণ, শেষ সময়টা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

খ. বিসিএস ও অন্যান্য বিগত পরীক্ষার শুধু কঠিনতম প্রশ্নগুলোই রিভিশন দেবেন। সহজগুলো জানা আছে।

গ. যেকোনো একটি প্রিলিমিনারি ডাইজেস্ট গাইড সংগ্রহ করে পড়ে শেষ করবেন। নতুন বইপুস্তক আর প্রয়োজন নেই।

ঘ. অন্তত বিগত চার মাসের ‘চলতি ঘটনা: বাংলাদেশ ও বিশ্ব’ ম্যাগাজিনগুলো একবার রিভিউ করে নেবেন।

ঙ. প্রিলিমিনারির পুরো প্রস্তুতিকালে যদি কোনো নোটখাতা মেইনটেইন করে থাকেন, তা রিভিশন করে ফেলবেন।

চ. বোর্ডের বই ও মৌলিক কোনো বই থেকে দাগানো বা এমসিকিউ হতে পারে, এমন অংশ ব্যতীত আর কিছু পড়ার প্রয়োজন নেই।

ছ. প্রতিদিন সব বিষয়ে অল্প অল্প করে হলেও পড়তে হবে। যদি কোনো বিষয়ে বেশি সময় দেওয়া প্রয়োজন মনে করেন, তবে দিন। শেষ সময়ে নতুন কোনো কঠিন টপিকে হাত না দেওয়াই উত্তম।

জ. সব বিষয়েই যেসব তথ্য ও নিয়ম ব্যতিক্রম, সুপরিচিত, বহুল আলোচিত, নিপাতনে সিদ্ধ, এমন বেশি যেন আয়ত্তে থাকে, সেভাবে পড়তে হবে।

ঝ. নিজেকে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।

পরীক্ষার হলে যা করতে হয়

পরীক্ষার হল হলো আসল যুদ্ধক্ষেত্র। এখানেও একটা চমৎকার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। তাহলে পরীক্ষার হলে করণীয় বলা যায়।

১. মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি থেকে যেন ১৩০ ডিগ্রি না হয়ে যায়। অতিরঞ্জিত সিরিয়াস বা ভীত না হলে মাথা ঠান্ডা থাকবে।

২. পিএসসি অনুমোদন করে না, এমন জিনিসপত্র কোনো অবস্থাতেই হলে নেওয়া যাবে না। আর প্রবেশপত্রসহ আনুষঙ্গিক অনুমোদিত জিনিস দয়া করে নিয়ে যাবেন

৩. আন্দাজে কোনো উত্তর দেওয়া যাবে না।

৪. বৃত্ত ভরাটের সময় প্রশ্নের ক্রমিক নম্বর ভালো করে খেয়াল করবেন। ১৭ নম্বর যেন ২৭–তে গিয়ে না পড়ে। অপশনের ক, খ, গ, ঘ কোন ফরম্যাটে আছে, তা–ও খেয়াল রাখুন।

৫. কতটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসবেন, তার কোনো টার্গেট থাকা যাবে না। এটি নির্ভর করবে আপনার জানার ওপর।

৬. মনোযোগ দিয়ে প্রশ্ন পড়বেন। ‘হয়’ চেয়েছে, নাকি ‘নয়’ চেয়েছে। যেমন: নিচের কোনটি আগ্নেয় শিলা নয়। অনেকে এটি পড়েন, নিচের কোনটি আগ্নেয় শিলা হয়!

৭. আশপাশের কোনো পরীক্ষার্থীর ওপর কোনো অবস্থাতেই নির্ভর করবেন না। যদিও সে সুযোগ হল পরিদর্শক দেবেন না। মনে রাখবেন, এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা।

৮. প্রশ্নের সেট ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভালো করে খেয়াল করবেন এবং উত্তরপত্রে ভরাট করবেন মনে করে। হাজিরা খাতায় নিজের নাম ও ছবি দেখে সই করবেন।

৯. প্রশ্ন দ্রুত পড়তে হবে। সঙ্গে সঙ্গেই বৃত্ত ভরাট করে ফেলতে হবে। প্রশ্নের সিরিয়াল অনুসারে ভরাট করে যাবেন। তবে গণিত ও মানসিক দক্ষতা অংশ পরে ভরাট করা ভালো।

১০. যে প্রশ্ন আপনার সম্পূর্ণ অজানা, তা পুরোটা পড়ারই দরকার নেই। সময় বেঁচে যাবে। সময়জ্ঞান খুবই জরুরি বিষয়।

১১. মেয়েদের কান অনাবৃত রাখবেন। এ বিষয় নিয়ে অযথা সময় যেন নষ্ট না হয়।

১৩. কক্ষ পরিদর্শক, ম্যাজিস্ট্রেট বা পিএসসির কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে অযথা বিতর্কে যাবেন না। এতে আপনারই ক্ষতি হবে।

১৪. সুশাসন ও নৈতিকতা এবং মানসিক দক্ষতার উত্তর করার সময় অধিক সতর্ক থাকবেন।

১৫. কোনো অঙ্ক মেলাতে না পারলে দ্রুত পরবর্তী অঙ্কে চলে যান।

১৬. ভুল উত্তর দিলে যে নম্বর কাটা যাবে, সেটা যেন মনে থাকে।

১৭. একাধিক উত্তর সঠিক হলে অপশনের প্রথমে যেটা, সেটা দিয়ে আসবেন। কোনো সঠিক উত্তর না থাকলে ওই প্রশ্ন রেখেই আসবেন। ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।

১৮. পুরোনো (ব্যবহৃত) মোটা কালো কালির বলপয়েন্ট কলম হলে তাড়াতাড়ি বৃত্ত ভরাট করা যায়।

আশা করি এসব মেনে চলতে পারলে পরীক্ষার হল থেকে একটা সন্তুষ্টি নিয়ে বের হতে পারবেন। আরেকটি কথা, যদি আপনার কোনো স্বপ্ন থাকে, তাহলে সেটি খেয়াল রাখবেন।

সবার জন্য রইল শুভকামনা।

আমাদের  ইউটিউব ভিডিও লিংক এখানে

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *