ipl

সেমিতে আজ মুখোমুখি ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড

শেয়ার করুন

 ভারতকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে যাত্রা শুরু করে পাকিস্তান। অথচ ইন্টারন্যাশনাল একটি স্পোর্টস সাইটের জরিপ বলছে, সুপার টুয়েলভে ওই ম্যাচটাই ছিল সবচেয়ে এক্সাইটেড! উপমহাদেশের দর্শক কী তবে এক চোখা? আবেগ বোঝে, ক্রিকেট বোঝে না! নিজ দেশ কিংবা ভারত, পাকিস্তানই শেষ কথা। নইলে আইসিসির সর্বশেষ দুটি বিশ্বকাপের ফাইনাল সবাই ভুলে যায় কি করে? কলকাতায় ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপের রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভারে ইংল্যান্ডকে কাঁদিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১৯-এ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কি ঘটেছিল? ইতিহাসের সেরা এক ফাইনাল দেখেছিল বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন। 

টানা তিনটি বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। ২০১৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল এবং এই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। আগের দুই আসরেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরেছে ব্লাকক্যাপসরা। আজ কি তবে নিউজিল্যান্ডের প্রতিশোধের মিশন, নাকি আগের দুই আসরের মতো এবারও শ্রেষ্ঠত্বের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে সেলিব্রেশনে মেতে উঠবেন ইংলিশরা!

নিউজিল্যান্ড দলটা অন্যরকম। দলে কানো মহাতারকা নেই। কিন্তু প্রয়োজনে ১১ জনই হয়ে যেতে পারেন বড় তারকা। তারকাসমৃদ্ধ ভারতকে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় করে দিয়ে সামর্থ্যরে প্রমাণও দিয়েছে কিউইরা। আর ইংল্যান্ড দল বরাবরের মতোই ভয়ংকর। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং -তিন বিভাগেই সেরা। দলে দারুণ ভারসাম্য। দল হিসেবে তারা এই টুর্নামেন্টে খেলছেও অসাধারণ। ইয়ন মরগানের নেতৃত্বে ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পর এবার টি-২০ শিরোপার খোঁজে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যে। জয়ের জন্য দৃঢ় সংকল্প নিয়েই আজ মাঠে নামছে ইংলিশ।

কিন্তু উইলিয়ামসনরাও যে ছেড়ে কথা বলবে না! ৫ বছর আগে এই শেষ চারে হারের ক্ষত যে এখনো শুকায়নি কিউইদের। ব্লাকক্যাপসদের জন্য সুখবর হচ্ছে ২০১৬-তে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় যার ব্যাটের আগুনে পুড়েছিল তারা সেই ইংলিশ ওপেনার জেসন রায় একদিন আগেই ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে গেছেন। কিন্তু এটাও ঠিক যে ইংল্যান্ড এমন একটি দল তাদের দুই একজন ক্রিকেটার দলে থাকুক বা না থাকুক তাতে কিছু যায় আসে না! বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক বেন স্টোকসের অনুপুস্থিতিতেও কোনো সমস্যা হয়নি। বরং যিনি সুযোগ পান তিনিই দাপট দেখান।তবে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের কারও কোনো ইনজুরি সমস্যা নেই। দলের সবাই দারুণ ফিট এবং দুর্দান্ত ফর্মে।

কেবল পারফর্ম করার জন্য তারা মুখিয়ে আছেন। টি-২০তে পাওয়ার প্লের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। ব্যাটিং প্রথম ছয় ওভারে যারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ম্যাচের ভাগ্য তাদের দিকেই ঝুঁকে পড়ে। তবে এই জায়গায় দুই দলই দুর্দান্ত। কিন্তু আলাদা করে বলতে হবে ইংলিশ ওপেনার জোস বাটলারের কথা। এই টুর্নামেন্টে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তিনি। প্রতি ম্যাচেই বাইশগজে ঝড় তুলছেন। অন্যদিকে কিউই দুই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি দারুণ বোলিং করছেন। প্রতি ম্যাচেই তারা পাওয়ার প্লেতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। তবে স্লগ ওভার নিয়ে কিছুটা ভয় আছে ইংলিশ বোলারদের। কেন না, শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চার ওভারে তারা ৪৯ রান দিয়েছিল। তাই শেষের ওভারগুলোতে সুযোগ নিতে পারেন কিউই ব্যাটসম্যানরা।

তবে দুই দলই ভয়ে আছেন ‘ডিউ-ফ্যাক্টর’ নিয়ে। কারণ, টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়া দল বাড়তি সুবিধা পায়। রাতে শিশিরের কারণে বল গ্রিপ করা কঠিন হয়ে যায়। তাছাড়া বাইশগজও ব্যাটসম্যানদের বাড়তি সুবিধা করে। তবে টস জয় হচ্ছে ভাগ্যের ব্যাপার। এ নিয়ে চিন্তা করেও কোনো লাভ নেই।  চিন্তিতও নন দুই অধিনায়ক। মরগানের লক্ষ্য কিউইদের আবারও আটকে দেওয়া। সেভাবেই তার চক্র সাজিয়েছেন। আর উইলিয়ামসন চাচ্ছেন, এবার তৃতীয় চেষ্টায় মরগানের চক্রব্যূহ ভেঙে সব বাধা পেরিয়ে ইংল্যান্ড-দুঃখ ঘোচাতে।

সেমির লড়াই শেষ পর্যন্ত কে সফল হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছিলেন, ‘চেষ্টা ও ভুলের সমন্বিত প্রক্রিয়াতেই হয় উন্নয়ন।’ কেন উইলিয়ামসনদের অদম্য চেষ্টায় ২০১৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। বোলারদের ভুলে হারতে হয়। সাদামাটা একটি দল নিয়েও ২০১৯ সালে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো ফাইনালে তোলেন উইলিয়ামসন।

একটুখানি ভুলের কারণে স্বপ্নভঙ্গ। বার বার ইংল্যান্ড বাধা সেই ইংল্যান্ড। তবে কি আগের ভুল আর এবারের চেষ্টা মিলে নতুন কিছু পেতে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড? দেখা যাক, আবুধাবিতে কী অপেক্ষা করছে তাদের জন্য!

নিউজিল্যান্ড দল : কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), টড অ্যাস্টল, ট্রেন্ট বোল্ট, মার্ক চ্যাপম্যান, ডেভন কনওয়ে, এডাম মিলনে, মার্টিন গাপটিল, কাইল জেমিসন, ড্যারিল মিচেল, জিমি নিশাম, গ্লেন ফিলিপস, মিচেল স্যান্টনার, টিম সেইফার্ট, ইশ সোধি ও টিম সাউদি।
ইংল্যান্ড দল : ইয়োইন মরগান (অধিনায়ক), মঈন আলি, জনি বেয়ারস্টো, স্যাম বিলিংস, জস বাটলার, টম কারান, ক্রিস জর্ডান, লিয়াম লিভিংস্টোন, ডেভিড মালান, রিচ টপলি, আদিল রশিদ, জেমস ভিন্স, ডেভিড উইলি, ক্রিস ওকস, মার্ক উড।

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *