উত্তর সমূহ
- সামাজিকী করণের ধারণা
এক ব্যক্তিকে সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার নাম সামাজিকীকরণ। সামাজিকীকরণ একটি শিক্ষণ প্রক্রিয়া যা জন্মের পরেই শুরু হয়। অর্থাৎ সামাজিকীকরণ হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি মানুষের আচরণের প্রচলিত নিদর্শনগুলি অর্জন করে। প্রতিটি ব্যক্তি নিজেকে সেই পরিস্থিতি ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য করার চেষ্টা করে যা মূলত সমাজের দ্বারা নির্ধারিত হয় যার দ্বারা সে একজন সমাজীক জীব বা সদস্যে পরিণত হয়। তাছাড়া সামাজিকীকরণ হল কোনো ব্যক্তির সংস্কৃতি জানার প্রক্রিয়া এবং এর মধ্যে কীভাবে বাঁচতে হয় তা শিখতে পারে।
অগবার্ন(Ogburn) এর মতে; ”সামাজিকীকরণ হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি গোষ্ঠীর নিয়ম মেনে চলতে শেখে।”
কলে(Colley) এর মতে; ”সামাজিকীকরণ একটি সামাজিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিয়মগুলি শিখার মাধ্যমে এবং অন্যের কাছ থেকে নিজের স্ব সম্পর্কে জেনে নিজের স্বভাব বিকাশ করে।”
যে প্রক্রিয়ায় জন্মের পর থেকে মানবশিশু সমাজের নিয়মকানুন ও রীতিনীতি শিখতে থাকে, সেই প্রক্রিয়াকেই সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া বলে।
একটি শিশু যখন পৃথিবীতে আসে, তখন সে কোনও সংস্কৃতি ছাড়াই জন্মগ্রহণ করে। তাকে ধীরে ধীরে সমাজে গোষ্ঠীগুলির দ্বারা একটি সামাজিক সত্তায় রূপান্তরিত করা হয়। শৈশব হল একটি শিশুর সবচেয়ে তীব্র এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিকীকরণের সময়কাল। অনুকরণের মাধ্যমে একটি শিশু অনেকগুলি সামাজিক আচরণের ধরণগুলি শেখে। ভাষা এবং উচ্চারণ শিশু কেবল অনুকরণের মাধ্যমে অর্জন করে। বাচ্চা বয়সে বড় হওয়ার সাথে সাথে শিশু তার প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারে যা তার চাহিদা পূরণ করে এবং অন্যান্য বিষয়গুলো জানার মাধ্যমে একটি শিশু সনাক্তকরণের প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায়।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা ইসমাইল হোসেন ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (ওয়ান সেকেন্ড স্কুল )]
- সামাজিকীকরণের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
প্রত্যেক সমাজের কিছু নিয়ম-রীতি, মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও আদর্শ রয়েছে। মানুষকে এগুলো আয়ত্ব করতে হয়। সমাজের এই নিয়ম-রীতি আয়ত্ব করার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় সামাজিকীকরণ। এরমধ্যে দিয়েই ব্যক্তি সমাজের নিয়ম-রীতি ও প্রত্যাশিত আচরণের উপযোগী হয়ে গড়ে উঠে। সামাজিকীকরণ অঅসলে একটি চলমান প্রক্রিয়া। শৈশব থেকে মৃত্যু অবধি এটা চলতে থাকে।
সামাজিকীকরণে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রভাব
ব্যক্তির সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সামাজিকীকরণ প্রয়োজন। জন্মের পর থেকেই মানব শিশু সমাজের নিয়ম-কানুন ও রীতি-নীতি শিখতে থাকে। একেই বলার যায় তার সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া। এই অধ্যায়ে আমরা সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে কয়েকটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সম্পর্কে জানব।
পরিবার :
সামাজিকীকরণের প্রথম ও প্রধান বাহন পরিবার। পরিবারে বসবাস করতে গিয়ে শিশু পরিবারের সদস্যদের প্রতি আবেগ, অনুভূতি, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জাগিয়ে তোলে। খাদ্যাভাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, ধর্মচর্চা, শিক্ষাগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে পারিবারিক সংস্কৃতির প্রতিফলন সরাসরি ব্যক্তির উপর পড়ে। এজন্যই বলা হয় সামাজিকীকরণের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী বাহন হচ্ছে পরিবার।
স্থানীয় সমাজ :
বাবা-মা বা পরিবারের পর স্থানীয় সমাজই শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন। চারপাশের মানুষের আচার-আচরণ ও রীতিনীতি দেখতে দেখতে শিশু বেড়ে উঠে। এভাবে সে সহজেই সমাজের রীতিনীতি শিখে যায়।স্থানীয় মানুষের ভাষাভঙ্গি ও মূল্যবোধ তার আচরণে প্রভাব ফেলে।
স্থানীয় সমাজের বিভিন্ন উপাদান:
স্থানীয় সমাজের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য সমিতি, সাংস্কৃতিক সংঘ, খেলাধূলার ক্লাব, সঙ্গীত শিক্ষা কেন্দ্র, বিজ্ঞান ক্লাব প্রভৃতি। স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা এসব সংগঠন ব্যক্তির চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচার-আচরণের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। ব্যক্তি এসব সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে জড়ায়। সংগঠনভুক্ত অন্যদের সঙ্গে মিশে তার বুদ্ধিবৃত্তি, সুকুমার বৃত্তি ও সৌন্দর্য বোধ জেগে উঠে। এই বোধ তাকে সহনশীল হতে শেখায়। এভাবেই ব্যক্তি স্থানীয় সমাজের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ায় এবং তাদের অংশ হয়ে উঠে।
সমবয়সী সঙ্গী:
শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে সমবয়সী বন্ধু বা সঙ্গীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শৈশবে সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধূলার আকর্ষণ থাকে অপ্রতিরোধ্য। এভাবে খেলার সাথিরা একে অপরের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখে। কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও চালচলনের ক্ষেত্রে তারা একে অন্যকে প্রভাবিত করে। এর মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে সহমর্মিতা, সহযোগিতা, সহনশীলতা ও নেতৃত্বের গুণগুলো বিকশিত হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :
বিভিন্ন ধরনের শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থীরা পরষ্পরের সাথে মিলিত হওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পায়। এর মাধ্যমে একে অপরকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। এসব শিক্ষালয় সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান :
রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব এবং আন্দোলন সংগ্রামও ব্যক্তির সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষকে সচেতন ও সংগঠিত করার মাধ্যমে তারা এ কাজটি করে।
- কী কারণে সামাজিকীকরণে বর্তমান পরিবেশ প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করছে
সামাজিকীকরণ সমাজতাত্ত্বিক ও মনোবৈজ্ঞানিক একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় একজন ব্যক্তিকে তার জন্মের পর থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার প্রয়োজনে অনেক কিছু শিখতে হয়। এ শিক্ষণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরে বাবা-মা, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, খেলার সাথী ও সমবয়সি দল, বন্ধু, প্রতিবেশী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, কর্মস্থান এবং চেনা-অচেনা অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি তার নিজস্ব ভাষা, পারিবারিক নিয়ম-কানুন, আদব-কায়দা, আচার-আচরণ, সামাজিক রীতিনীতি, সামাজিক শৃঙ্খলা, প্রথা-পদ্ধতি, মূল্যবোধ ইত্যাদি আয়ত্ত করে সমাজের উপযোগী একজন সদস্য হয়ে ওঠেন। জীবনব্যাপী চলতে থাকা এ শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে সামাজিকীকরণ বলে। সামাজিকীকরণ যথাযথ না হলে শিশু বা ব্যক্তির মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে সে অনেক অসামাজিক আচরণ করতে পারে। ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম ঘটলে তার প্রভাব সমাজের ওপর পড়ে।
করোনাকালে ব্যক্তি, বিশেষ করে শিশু-কিশোর-কিশোরী ও ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে সামাজিকীকরণের যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, বিগত প্রায় ৯০ বছরের মধ্যে এমনটি ঘটেনি। করোনাভাইরাস পৃথিবীব্যাপী মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এ রোগের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, স্বাস্থ্যগত ও মনস্তাত্ত্বিক অভিঘাত নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার ওপর এর অভিঘাত নিয়ে এখনো কোনো গবেষণা হয়েছে বলে জানা নেই।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা ইসমাইল হোসেন ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (ওয়ান সেকেন্ড স্কুল )]
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা, প্রকাশিত সংবাদ ও সাধারণ পর্যবেক্ষণ থেকে বলা যায়, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, লকডাউন বা শাটডাউন ঘোষণা, অফিস-আদালতসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার কারণে অনেকেই ঘরে থাকতে বাধ্য। অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে, অসংখ্য মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এসব থেকে সৃষ্ট ভয়, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও মানসিক চাপের বিরূপ প্রভাব পড়েছে পরিবার ও ছেলেমেয়েদের ওপর। দেশে শিশু-কিশোর ও ছাত্রছাত্রীদের ওপর সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার যে চ্যালেঞ্জগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো হলো-
১. যেসব মাধ্যমে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সাধিত হয়, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম পরিবার। পরিবারেই শিশুর চিন্তা, আবেগ ও কর্মের অভ্যাস গঠিত হয়। একটি শিশুর সুকোমল বৃত্তি ও সুপ্ত প্রতিভা পরিবারের মাধ্যমেই বিকাশ লাভ করে। শিশু পরিবার থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও গ্রহণ করে।
পরিবার থেকেই একটি শিশু আচার-আচরণ, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজে একজন যোগ্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসাবে গড়ে ওঠে। সুতরাং, একটি শিশুর ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে পরিবারের তিনটি বিষয়ের ওপর- মা-বাবার সম্পর্ক, মা-বাবা ও শিশুর মধ্যে সম্পর্ক, একই পরিবারের একাধিক শিশুদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক। উল্লিখিত সম্পর্কগুলো যদি ইতিবাচক হয়, তবে শিশু সৎ, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে ওঠে এবং সমাজে সহজ জীবনযাপন করতে পারে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার দ্বারা শিশুর পূর্ণ বিকাশও হয়ে থাকে।
পরিবার, বিশেষ করে বাবা-মা যেহেতু শিশুর সামাজিকীকরণের প্রথম স্থান; সেই পরিবারেই যদি উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা, ঝগড়া, দ্বন্দ্ব কাজ করে, তাহলে তার প্রভাব শিশুর ওপর পড়তে বাধ্য। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাকালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পরিবারে এখন উপরোক্ত সমস্যগুলো বিরাজমান। সুতরাং, শিশুর স্বাভাবিক যে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া, করোনাকালে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
এ ছাড়া এ সময়ে যেসব নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, তারাও যথোপযুক্ত সামাজিকীকরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একমাত্র বাবা-মা ছাড়া অন্য কোনো আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তাদের কোনো পরিচয় ঘটছে না এতে তারা পরিবারের অন্য সদস্যদের আবেগ-অনুভূতি ও স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কাজেই এদিক থেকে বলা যায়, নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রেও সামাজিকীকরণ ব্যাহত হচ্ছে।
সবার আগে Assignment আপডেট পেতে Follower ক্লিক করুন
ধন্যবাদ এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য!
৯ম শ্রেণির পদার্থ বিজ্ঞান ১৮তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর লিংক
৯ম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা ১৮তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর লিংক
৯ম শ্রেণির হিসাব বিজ্ঞানের ১৮তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের লিংক