অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ
অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ : বয়স বাড়লেই কেবল চুল পাকে এমন ধারনা ঠিক নয়। তবে এখন কিন্তু এমন অনেকের চুল পাকার সমস্যা হচ্ছে, যারা বয়সে তরুণ। তাদের ক্ষেত্রেও চুল পাকতে দেখা যায়। এখন এটি বেশ স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
একটি-দুটি চুল পাকলে সমস্যা নেই, কিন্তু একসঙ্গে সব চুল পেকে গেলেই তাহলে সমস্যা। তখন অনেকে বাধ্য হয়ে চুলে রং করে নেন। আর কেমিক্যালে ঠাসা সেসব রং ব্যবহারে চুল আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কম বয়সে চুল পাকার এই সাধারণ সমস্যা যদি ঘটে থাকে আপনার ক্ষেত্রেও তবে এর কারণগুলো জেনে নেওয়া জরুরি। কারণ জানা থাকলে সমাধান খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। চুল কালো করার জন্য কেমিক্যালযুক্ত হেয়ার কালার ব্যবহার করবেন না। চুল পাকার সমস্যা হলে জেনে নিন এটি কী কারণে ঘটতে পারে-
অকালে চুল পাকার কারণ (চুল পাকার কারণ)
কম বয়সে চুল পাকার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যেগুলো সঠিকভাবে বুঝে নেওয়া জরুরি। নিচে অকালে চুল পাকার কিছু সাধারণ কারণ দেওয়া হলো:
১. বংশগত কারণ:
পরিবারে যদি আগের প্রজন্মে অকালে চুল পাকার ইতিহাস থাকে, তাহলে বংশগতির প্রভাবে তা পরবর্তী প্রজন্মেও দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণত জিনের কারণে ঘটে থাকে এবং এর বিরুদ্ধে বিশেষ কিছু করার থাকে না।
২. স্ট্রেস (মানসিক চাপ):
দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ চুলের রঙ পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। মানসিক চাপ শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, যার ফলে অকালে চুল পেকে যেতে পারে।
৩. অপুষ্টি:
যথেষ্ট পুষ্টি না পাওয়া, বিশেষত ভিটামিন বি১২, আয়রন, জিঙ্ক ইত্যাদির অভাব, অকালে চুল পাকার একটি বড় কারণ। সঠিক পুষ্টির অভাবে চুলের প্রাকৃতিক রঙ হারিয়ে ফেলে।
৪. ধূমপান:
ধূমপানের কারণে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ে, যা শরীরের কোষগুলির ক্ষতি করে। এটি অকালে চুল পাকার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
৫. থাইরয়েড সমস্যা:
থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম, অকালে চুল পাকার জন্য দায়ী হতে পারে। এই ধরনের সমস্যাগুলো চুলের স্বাস্থ্য ও রঙের ওপর প্রভাব ফেলে।
৬. পরিবেশগত দূষণ:
দূষিত বায়ু, পানি এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান চুলের রঙের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। দূষণের ফলে চুলের পিগমেন্টেশন কমে গিয়ে চুল পাকা শুরু হয়।
৭. রাসায়নিক উপাদানযুক্ত চুলের পণ্য:
চুলে ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক সমৃদ্ধ পণ্য যেমন হেয়ার ডাই, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ইত্যাদি চুলের প্রাকৃতিক পিগমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে অকালে চুল পেকে যায়।
৮. অটোইমিউন রোগ:
কিছু অটোইমিউন রোগ, যেমন অ্যালোপেসিয়া আরেয়াটা বা ভিটিলিগো, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চুলের পিগমেন্টেশন সিস্টেমকে আক্রমণ করতে পারে। এতে চুল দ্রুত সাদা হতে পারে।
অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ ও প্রতিকার
কম বয়সে চুল পাকার সমাধান :
১. জেনেটিক বা বংশগত কারণ:
বংশগতির প্রভাব চুল পাকার প্রধান কারণ হতে পারে। যদি পরিবারে কারো অল্প বয়সে চুল পাকা শুরু হয়, তাহলে তা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও দেখা যেতে পারে।
২. মানসিক চাপ:
অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা টেনশন চুল পাকার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। মানসিক চাপ শরীরের হরমোনগুলির ওপর প্রভাব ফেলে, যা চুলের পিগমেন্টেশন নষ্ট করে দিতে পারে।
৩. খাদ্যাভ্যাসে পুষ্টির ঘাটতি:
ভিটামিন বি১২, আয়রন, কপার, জিঙ্ক ইত্যাদির অভাব চুলের স্বাস্থ্য খারাপ করে দেয় এবং অকালে চুল পাকার কারণ হয়। সঠিক পুষ্টি না পেলে চুলের রঙ দ্রুত সাদা হয়ে যেতে পারে।
৪. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা:
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বিশেষ করে থাইরয়েডের সমস্যা, চুলের প্রাকৃতিক রঙ পরিবর্তন করতে পারে। হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজমের ফলে চুল দ্রুত পেকে যায়।
৫. অক্সিডেটিভ স্ট্রেস:
দেহে ফ্রি র্যাডিকাল বা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা বেড়ে গেলে চুলের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পিগমেন্টেশন কমে যায়। এর ফলে অকালে চুল পাকার সমস্যা দেখা দেয়।
৬. অটোইমিউন রোগ:
কিছু অটোইমিউন রোগ যেমন অ্যালোপেসিয়া আরেয়াটা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা চুলের পিগমেন্ট কোষগুলিকে আক্রমণ করে, ফলে চুল দ্রুত সাদা হতে পারে।
চুল পাকার প্রতিকার
১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস:
চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করতে ভিটামিন বি১২, আয়রন, কপার এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, সবুজ শাকসবজি, বাদাম, এবং মাছ খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং চুল পাকার গতি ধীর করে।
২. মানসিক চাপ কমানো:
স্ট্রেস কমাতে যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং অন্যান্য মানসিক প্রশান্তির জন্য কার্যকরী কৌশল অবলম্বন করা উচিত। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করলে চুলের স্বাভাবিক পিগমেন্টেশনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
৩. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার:
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমানোর জন্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন ব্লুবেরি, অরেঞ্জ, টমেটো ইত্যাদি খাওয়া উচিত। এগুলো ফ্রি র্যাডিকাল প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং চুলের পিগমেন্টেশন বজায় রাখে।
৪. চুলের যত্ন:
প্রাকৃতিক তেল যেমন নারকেল তেল, আমলা তেল, এবং অলিভ তেল দিয়ে নিয়মিত চুল ম্যাসাজ করা উচিত। এতে চুলের পুষ্টি বৃদ্ধি পায় এবং চুলের রঙ দীর্ঘদিন ধরে কালো থাকে।
৫. হেয়ার ডাই এবং রাসায়নিক পণ্য পরিহার করা:
বেশি রাসায়নিক উপাদানযুক্ত চুলের পণ্য ব্যবহার করা চুলের পিগমেন্টেশনে ক্ষতি করে। প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করলে চুলের ক্ষতি কম হয়।
৬. মেডিকেল চেকআপ:
যদি থাইরয়েড বা অন্য কোনো হরমোনজনিত সমস্যা থাকে, তাহলে ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া উচিত। থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখলে চুল পাকা কমাতে সাহায্য হবে।
৭. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার:
ধূমপান ও অ্যালকোহল চুলের ক্ষতি করে এবং অকালে পাকার কারণ হতে পারে। এগুলো এড়িয়ে চললে চুল পাকা ধীর করতে সহায়ক হবে।
৭. ধূমপান এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা:
ধূমপান, অ্যালকোহল, এবং অন্যান্য ক্ষতিকর অভ্যাস শরীরে টক্সিন বৃদ্ধি করে, যা চুলের রঙ পরিবর্তনের জন্য দায়ী হতে পারে। ধূমপান বিশেষ করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়, যা চুল পাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
কি খেলে সাদা চুল কালো হয়
সাদা চুল কালো করার জন্য খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করলে চুলের পিগমেন্টেশন বজায় থাকে এবং চুলের অকাল পাকা ধীর হতে পারে। নিচে কিছু পুষ্টিকর খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা চুল কালো রাখতে সহায়ক:
১. আমলকী (Indian Gooseberry):
আমলকী ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা চুলের পিগমেন্টেশনে সহায়ক। এটি নিয়মিত খাওয়া বা আমলকীর তেল মাথায় ব্যবহার করলে চুল কালো হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
২. তিলের বীজ (Sesame Seeds):
বিশেষ করে কালো তিলের বীজ চুলের পিগমেন্টেশন বৃদ্ধি করে। তিলে প্রচুর পরিমাণে কপার থাকে, যা মেলানিন উৎপাদন বাড়ায় এবং চুল কালো রাখতে সহায়তা করে।
৩. বাদাম (Nuts):
আখরোট এবং আমন্ডের মতো বাদামে প্রচুর পরিমাণে বায়োটিন, ভিটামিন ই এবং আয়রন থাকে, যা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং পাকা চুল ধীর করতে সাহায্য করে।
৪. শাকসবজি:
সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, ব্রকলি, এবং মেথি শাকে প্রচুর আয়রন এবং ক্যালসিয়াম থাকে। এগুলো রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায় এবং চুলের পিগমেন্টেশনে সহায়তা করে।
৫. ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার:
চুলের পিগমেন্টেশন ঠিক রাখতে ভিটামিন বি১২ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাংস, ডিম, দুধ, এবং মাছ ভিটামিন বি১২-এর চমৎকার উৎস, যা নিয়মিত খেলে চুল কালো রাখা সহজ হয়।
৬. গাজর:
গাজরে বিটা-ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ থাকে, যা মাথার ত্বকের সেলগুলোর পুনর্জন্ম ঘটায় এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি চুলের পিগমেন্টেশনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৭. ডিম:
ডিম প্রোটিনের একটি দারুণ উৎস। এছাড়া ডিমে বায়োটিন, ভিটামিন বি১২, এবং কোলাজেন থাকে, যা চুলের পিগমেন্টেশনে সাহায্য করে এবং চুল কালো রাখার প্রক্রিয়ায় কার্যকরী।
৮. আদা ও মধু:
আদা ও মধুর মিশ্রণ রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। চুল পাকার সমস্যা রোধ করতে এই মিশ্রণ নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
চুল পাকা বন্ধ করার তেল
১. আমলকী তেল (Amla Oil):
আমলকী তেল চুল পাকা রোধে অত্যন্ত কার্যকরী। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা চুলের পিগমেন্টেশনে সহায়ক।
- ব্যবহার পদ্ধতি: চুলে এবং মাথার ত্বকে আমলকী তেল ভালোভাবে ম্যাসাজ করে সারা রাত রেখে দিন। এরপর সকালে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে চুল পাকা ধীর হবে।
২. নারকেল তেল ও লেবুর রস (Coconut Oil & Lemon Juice):
নারকেল তেল চুলের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। লেবুর রস চুলের পিগমেন্টেশন ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- ব্যবহার পদ্ধতি: ২ টেবিল চামচ নারকেল তেলে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
৩. ভৃঙ্গরাজ তেল (Bhringraj Oil):
ভৃঙ্গরাজ তেলকে প্রাচীন আয়ুর্বেদে চুলের জন্য একটি বিশেষ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি চুলের পিগমেন্টেশন ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং চুলের স্বাভাবিক রং ফিরিয়ে আনতে পারে।
- ব্যবহার পদ্ধতি: চুলে ভৃঙ্গরাজ তেল ম্যাসাজ করে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে চুলের রঙ ধীরে ধীরে গাঢ় হতে শুরু করবে।
৪. তিলের তেল (Sesame Oil):
তিলের তেলে প্রচুর কপার ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ থাকে, যা চুলের রঙ ধরে রাখতে সহায়ক। বিশেষ করে কালো তিলের তেল চুলের পাকা রোধে কার্যকর।
- ব্যবহার পদ্ধতি: নিয়মিত তিলের তেল মাথায় ম্যাসাজ করে ৩০-৪০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত ২ বার এই তেল ব্যবহার করতে হবে।
৫. আলমন্ড তেল (Almond Oil):
আলমন্ড তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে, যা চুলের পিগমেন্টেশন উন্নত করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- ব্যবহার পদ্ধতি: চুলে আলমন্ড তেল ম্যাসাজ করে ১ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের রঙ কালো রাখা সম্ভব।
৬. আর্জিন তেল (Argan Oil):
আর্জিন তেলে ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ই থাকে, যা চুলের পিগমেন্টেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পাকার হার ধীর করে।
- ব্যবহার পদ্ধতি: এই তেল নিয়মিত চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখলে চুলের পিগমেন্টেশন ভালো থাকে এবং অকাল পাকা কমে।
৭. মেথি ও নারকেল তেল (Fenugreek & Coconut Oil):
মেথির বীজ চুলের রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে। নারকেল তেলের সঙ্গে মেথির বীজ মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুলের পিগমেন্টেশনে উন্নতি হয়।
- ব্যবহার পদ্ধতি: ২ টেবিল চামচ মেথি গুঁড়ো করে নারকেল তেলে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে সেই তেল চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।
৮. আলভেরা তেল (Aloe Vera Oil):
আলভেরা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং এর সঙ্গে নারকেল তেল বা অন্য তেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুলের পিগমেন্টেশনে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- ব্যবহার পদ্ধতি: আলভেরা জেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে চুল পাকা কমতে পারে।
চুল পাকা বন্ধ করার উপায় ঔষধ
কেশ বা চুল পড়ে যাওয়ার কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করা হয়। প্রথমে কারনটা বের করতে হবে পরে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। সরাসরি চুলের গোড়ায় স্টেম সেল, গ্রোথ ফ্যাক্টর বা পিআরপি চিকিৎসা চুল পাকা রোধ করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে অনেক সময় তবে করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ
পাকা বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি বর্তমানে ব্যবহার করা হয়। তবে ঔষধ গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এসব ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। নিচে কিছু সম্ভাব্য ঔষধ ও পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো, যা চুল পাকা বন্ধ করতে সাহায্য করতে পারে:
১. বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট:
বায়োটিন (ভিটামিন বি৭) চুলের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং চুলের রঙ ধরে রাখতে সহায়ক। বাজারে বায়োটিন ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল পাওয়া যায়, যা নিয়মিত গ্রহণ করলে চুলের পিগমেন্টেশন বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
২. ফোলিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৯):
ফোলিক অ্যাসিডের অভাব চুল পাকার একটি বড় কারণ। ফোলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট নিয়মিত গ্রহণ করলে চুলের পিগমেন্টেশন বাড়ে এবং চুল পাকা কমাতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত ডাক্তাররা সুপারিশ করেন যদি চুল পাকার পেছনে পুষ্টির অভাব থাকে।
৩. প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫):
এই ভিটামিনটি চুলের রঙ বজায় রাখার জন্য কার্যকরী। এটি হেয়ার ফলিকলগুলিকে সুরক্ষিত রাখে এবং চুল পাকা ধীর করতে সাহায্য করে। প্যানটোথেনিক অ্যাসিড ট্যাবলেট বা সিরাপ হিসেবে পাওয়া যায়।
৪. মিনোক্সিডিল:
মিনোক্সিডিল মূলত চুল পড়া বন্ধ করতে ব্যবহৃত একটি ঔষধ, তবে এটি চুলের রঙ ফেরাতে ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে কার্যকর হতে পারে। এটি সাধারণত চুলের ক্ষতি রোধে স্ক্যাল্পে ব্যবহার করা হয়।
৫. মেলানিন বুস্টার সাপ্লিমেন্ট:
মেলানিন হলো সেই পিগমেন্ট যা চুলের রঙ নির্ধারণ করে। মেলানিন উৎপাদন বাড়াতে কিছু সাপ্লিমেন্ট আছে, যা চুলের পাকা ধীর করতে সাহায্য করে। তবে এগুলো শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে নেওয়া উচিত।
৬. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট:
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ঔষধ বা সাপ্লিমেন্ট যেমন ভিটামিন সি এবং ই, ফ্রি র্যাডিকালের প্রভাব থেকে চুলের পিগমেন্ট রক্ষা করতে সাহায্য করে। এগুলো শরীরের ফ্রি র্যাডিকাল দূর করে চুল পাকা কমায়।
৭. জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট:
জিঙ্ক শরীরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত এবং চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। জিঙ্কের অভাব হলে চুল দ্রুত পেকে যেতে পারে। তাই জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত খেলে চুল পাকার হার কমে যেতে পারে। (অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ)
অল্প বয়সে দাড়ি পাকলে করণীয়
কম বয়সে দাড়ি পাকা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি বেশিরভাগ মানুষকে মানসিকভাবে হতাশ করতে পারে। যদিও বংশগত কারণ কিংবা শারীরিক অবস্থা এই সমস্যার মূল কারণ হতে পারে, সঠিক যত্ন ও কিছু প্রতিকার মেনে চললে এই সমস্যার সমাধান বা ধীর করা সম্ভব। নিচে অল্প বয়সে দাড়ি পাকা রোধ করার কিছু উপায় ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ:
দাড়ির রঙ ও গঠন নির্ভর করে সঠিক পুষ্টি গ্রহণের ওপর। দাড়ি পাকা রোধ করতে হলে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ভিটামিন বি১২, আয়রন, কপার, এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দাড়ির পিগমেন্টেশনে সহায়ক। শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, ডিম, মাছ, মাংস প্রভৃতি খাবার দাড়ির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।
২. মানসিক চাপ কমানো:
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস চুল ও দাড়ির পিগমেন্টেশনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত স্ট্রেস শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়, যা দাড়ি পাকার অন্যতম কারণ হতে পারে। নিয়মিত যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে এবং শরীরের জন্য ভালো হয়। এতে দাড়ি পাকা ধীর হতে পারে।
৩. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা:
ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায় এবং দাড়ির পিগমেন্টেশনে প্রভাব ফেলে। এগুলো থেকে বিরত থাকা দাড়ির রঙ বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যও উন্নত হয়।
৪. প্রাকৃতিক তেলের ব্যবহার:
দাড়ির পিগমেন্টেশন বজায় রাখতে প্রাকৃতিক তেল যেমন নারকেল তেল, আমলা তেল, এবং বাদাম তেল নিয়মিত ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। এই তেলগুলো দাড়ির রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং পুষ্টির জোগান দেয়। নিয়মিত তেল দিয়ে দাড়িতে ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং পিগমেন্টেশন ঠিক থাকে।
৫. ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ:
বিভিন্ন ভিটামিন, বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন ই, চুল ও দাড়ির পিগমেন্টেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে দাড়ি অকালে সাদা হতে শুরু করতে পারে। বায়োটিন (ভিটামিন বি৭) এবং ফোলিক অ্যাসিডও দাড়ি পাকার হার কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এসব সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৬. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার:
ফ্রি র্যাডিকাল শরীরের কোষের ক্ষতি করে এবং পিগমেন্টেশনে প্রভাব ফেলে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন ব্লুবেরি, টমেটো, আঙুর, এবং শাকসবজি দাড়ির কোষের ক্ষতি কমায় এবং দাড়ি পাকার হার ধীর করে।
৭. থাইরয়েড পরীক্ষা করা:
কম বয়সে দাড়ি পাকার পেছনে থাইরয়েড বা হরমোনজনিত সমস্যাও একটি কারণ হতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে দাড়ির পিগমেন্টেশনে সমস্যা হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে থাইরয়েড পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসা গ্রহণ করলে দাড়ি পাকার হার কমে যেতে পারে।
৮. মেলানিন উন্নতকারী সাপ্লিমেন্ট:
মেলানিন হলো সেই পিগমেন্ট যা দাড়ির রঙ নির্ধারণ করে। মেলানিন উৎপাদন বাড়াতে কিছু সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়, যা দাড়ির পিগমেন্টেশনে সহায়ক। তবে মেলানিন বুস্টার সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৯. দাড়ির যত্ন নেওয়া:
দাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সঠিক শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। প্রতিদিন ত্বকের যত্ন নেওয়া এবং দাড়ির যত্নে সঠিক পণ্য ব্যবহার করলে পিগমেন্টেশন বজায় থাকে এবং দাড়ি পাকা ধীর হয়।
পাকা চুল নিয়ে হাদিস
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কখনো সাদা চুল উঠাবে না। কারণ এগুলো কেয়ামতের দিন নূর হবে।
আর যে (মুসলিম) ব্যক্তির চুল বার্ধক্যের কারণে সাদা হয় তার প্রতিটি সাদা চুলের বিপরীতে একটি করে সাওয়াব লেখা হয়, একটি করে গোনাহ মাফ করা হয় এবং একটি করে মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হয়। (সুবহানাল্লাহ)’ (ইবনু হিব্বান)
বিখ্যাত গ্রন্থ হাদিসের নাসাঈ ও মিশকাতের বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাকা চুল তুলতে নিষেধ করেছেন।
কারণ পাকা চুল হলো মুসলমানের জ্যোতি। কোনো মুসলমানের একটি চুল পেকে গেলে আল্লাহ তাআলার তার জন্য একটি নেকি লেখেন। একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং একটি পাপ মুচে দেন।’ (নাসাঈ, মিশকাত)।
আরও পড়ুন:
চুলে কালার করা কি জায়েজ
কালো চুল বা দাড়ীতে রং বা কালার করানো একটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ। কিন্তু সাদা চুল-দাড়ি মেহদী বা অন্য রং দিয়ে পরিবর্তন করা নবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর সুন্নাত। তিনি সাদা চুলকে কালো রং বাদ দিয়ে অন্য যেকোন রং দিয়ে পরিবর্তন করতে আদেশ দিয়েছেন।
এতে প্রতারণা, আল্লাহর সৃষ্টিকে গোপন করা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই’। (সুরা: রুম ৩০)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেনঃ
“ ইয়াহুদী ও নাসারারা চুল ও দাড়িতে খেযাব (সাদা চুলকে কালো রঙ্গে রঞ্জিত ) লাগায় না। সুতরাং তোমরা খেযাব ([খেজাব্, খিযাব] (বিশেষ্য) কলপ; রং বিশেষ; সাদা চুল কালো করার রং) লাগিয়ে তাদের বিপরীত কর”।
(বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া।) তবে উত্তম হবে না লাগানো। কারণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদা চুলকে মুমিনের নুর আখ্যায়িত করেছেন।
(অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ)