হেপাটাইটিস বি কি

হেপাটাইটিস বি কি এর লক্ষণ এবং চিকিৎসা

শেয়ার করুন

হেপাটাইটিস বি কি

হেপাটাইটিস বি কি: এটি একটি গুরুতর ভাইরাসজনিত লিভারের সংক্রমণ, যা হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (HBV) দ্বারা সৃষ্ট। বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত এবং এর ফলে অনেকের জীবন হুমকির মুখে পড়ে।

এই ভাইরাসটি লিভারের ক্ষতি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে লিভার সিরোসিস, লিভার ফেইলিউর, বা লিভার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। হেপাটাইটিস বি-এর বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই পোস্টে হেপাটাইটিস বি-এর কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা, প্রতিরোধের উপায় এবং এর গুরুতর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস

এই ভাইরাস (HBV) দ্বারা লিভারে সংক্রমণ ঘটে, যা লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই রোগটি বিভিন্ন ধরণের হতে পারে:

  1. অ্যাকিউট হেপাটাইটিস বি (Acute Hepatitis B): এটি স্বল্পমেয়াদি সংক্রমণ যা সাধারণত কয়েক মাসের মধ্যে সেরে যায়।
  2. ক্রনিক হেপাটাইটিস বি (Chronic Hepatitis B): যদি শরীর ভাইরাসটি দূর করতে না পারে, তখন এটি দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণে রূপান্তরিত হয়, যা জীবনব্যাপী থাকতে পারে এবং গুরুতর লিভারের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
হেপাটাইটিস বি : ফাইল ছবি
হেপাটাইটিস: ফাইল ছবি

হেপাটাইটিস কি কারনে হয়

এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে শরীরের বিভিন্ন তরল যেমন রক্ত, বীর্য, এবং শরীরের অন্যান্য তরলের মাধ্যমে। এর কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  • অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক: যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমে এই ভাইরাস একজন থেকে অন্যজনে ছড়াতে পারে।
  • সংক্রমিত রক্ত: সংক্রমিত রক্তের মাধ্যমে ভাইরাসটি অন্য কারও শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যেমন ইনজেকশনের মাধ্যমে।
  • মা থেকে সন্তানে সংক্রমণ: যদি কোনও মা হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত হয়, তবে তিনি তার নবজাতক সন্তানের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারেন।
  • সংক্রমিত সূঁচ বা চিকিৎসা সরঞ্জাম: সংক্রমিত সূঁচ বা চিকিৎসা সরঞ্জামের পুনঃব্যবহারও ভাইরাসটি ছড়ানোর কারণ হতে পারে।
  • রক্তদান: সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ সমূহ

এর সংক্রমণ প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণবিহীন হতে পারে, যা রোগ নির্ণয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে। তবে, কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা দেখা দিতে পারে:

  • জ্বর: হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রাথমিক অবস্থায় হালকা থেকে মাঝারি জ্বর দেখা দিতে পারে।
  • চরম ক্লান্তি: সংক্রমণের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ক্রমাগত ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
  • বমি বমি ভাব ও বমি: রোগীরা প্রায়শই বমি বমি ভাব বা বমি অনুভব করতে পারেন।
  • পেটের ব্যথা: পেটের ডান দিকে লিভারের অংশে ব্যথা অনুভব হয়।
  • গোল্ডার (জন্ডিস): ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়।
  • মূত্রের রং গাঢ় হওয়া: মূত্রের রং গাঢ় হয়ে যাওয়া হেপাটাইটিস বি-এর একটি লক্ষণ।
  • ক্ষুধামন্দা: সংক্রমণের কারণে ক্ষুধা কমে যেতে পারে

হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায়

এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিদেশে যেতে পারেন, তবে কিছু বিষয়ের ওপর এটি নির্ভর করে। বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যনীতি এবং ভিসা সংক্রান্ত নিয়মের মধ্যে হেপাটাইটিস বি আক্রান্তদের জন্য কিছু বিধিনিষেধ থাকতে পারে। সাধারণত, হেপাটাইটিস বি আক্রান্তদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয়:

আরও পড়ুন: ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও প্রতিকার

  1. ভিসা প্রক্রিয়া ও মেডিক্যাল টেস্ট: কিছু দেশে স্থায়ী ভিসা বা কাজের ভিসার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রয়োজন হয়, এবং এতে হেপাটাইটিস বি-এর স্ক্রিনিং অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। যদি হেপাটাইটিস বি ধরা পড়ে, তাহলে সেই দেশ নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করতে পারে বা ভিসা প্রদান না করতে পারে। যেমন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো স্থায়ী অভিবাসনের ক্ষেত্রে কঠোর স্বাস্থ্যনীতি প্রয়োগ করে।

  2. স্বাস্থ্যসেবা ও বীমা: কিছু দেশে ভ্রমণের জন্য স্বাস্থ্যবীমা প্রয়োজন হতে পারে। হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বীমার শর্ত ভিন্ন হতে পারে, এবং কিছু ক্ষেত্রে বীমা না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

  3. সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা: যদি হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য দেশে কাজ করতে চান যেখানে স্বাস্থ্যসেবা বা অন্যান্য সংবেদনশীল পেশায় নিযুক্ত থাকবেন, তবে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কিছু শর্ত আরোপিত হতে পারে।

বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা করলে, প্রাসঙ্গিক দেশের ভিসা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সার্টিফিকেট বা চিকিৎসা সম্পর্কিত নথিপত্র প্রস্তুত রাখা জরুরি।

হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন দাম

এই ভ্যাকসিনের দাম বিভিন্ন দেশে, ভ্যাকসিনের ধরন, এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে সাধারণত হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, তবে দাম কখনও কখনও আরও বেশি হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি এর টিকার দাম কত

ভ্যাকসিনটি সাধারণত তিনটি ডোজে দেওয়া হয়, তাই পুরো কোর্স সম্পন্ন করার জন্য মোট খরচ ১৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা কিছু এনজিও পরিচালিত কর্মসূচির আওতায় কম খরচে বা বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাওয়া যায়।

হেপাটাইটিস এ হলে কি খাওয়া উচিত

 এটা হলে লিভারের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবারের পরামর্শ:

  1. ফল এবং শাকসবজি: তাজা ফল যেমন আপেল, কলা, কমলা, এবং সবুজ শাকসবজি লিভারের জন্য উপকারী। এতে ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা লিভারের ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করে।

  2. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার: ডাল, মুরগি, মাছ, ডিম, এবং বাদাম থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়। তবে বেশি চর্বিযুক্ত প্রোটিন এড়িয়ে চলা উচিত।

  3. ফাইবারযুক্ত খাবার: পুরো গমের রুটি, ওটস, এবং বাদামী চাল ফাইবার সরবরাহ করে, যা হজমে সহায়তা করে।

  4. পর্যাপ্ত পানি পান: শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করতে প্রচুর পানি পান করা উচিত।

  5. ফ্যাট এবং ভাজা খাবার এড়ানো: অতিরিক্ত তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা এড়ানো উচিত।

  6. অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন থেকে বিরত থাকা: অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় লিভারের জন্য ক্ষতিকর, তাই এ ধরনের পানীয় একেবারেই গ্রহণ করা উচিত নয়।

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি। হেপাটাইটিস বি কি

hbsag কি

HBsAg বা Hepatitis B Surface Antigen হলো হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন। এটি ভাইরাসের পৃষ্ঠের প্রোটিন এবং যখন এটি রক্তে উপস্থিত থাকে, তখন এটি ইঙ্গিত করে যে:

  • HBsAg পজিটিভ: যদি কারো HBsAg টেস্ট পজিটিভ হয়, তাহলে বোঝায় যে তিনি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত এবং ভাইরাসটি তার শরীরে সক্রিয় আছে।

  • ক্রনিক সংক্রমণ: যদি HBsAg ছয় মাসের বেশি সময় ধরে পজিটিভ থাকে, তবে এটি ক্রনিক হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ নির্দেশ করে। এর ফলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে এবং লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

  • HBsAg নেগেটিভ: যদি HBsAg নেগেটিভ হয়, তাহলে বোঝায় যে ব্যক্তি বর্তমানে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত নয়।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়

এই ভাইরাস (HBV) বিভিন্ন উপায়ে ছড়াতে পারে, এবং এটি শরীরের বিভিন্ন তরল মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এখানে কিছু প্রধান উপায় উল্লেখ করা হলো:

১. অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক

  • হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। কনডম ব্যবহার না করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

২. সংক্রমিত রক্ত

  • ভাইরাসটি সংক্রামিত রক্তের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যৌথ ব্যবহার করা সুঁই, ইনজেকশন নিডল, বা অন্য কোনো রক্তদানে ব্যবহৃত সরঞ্জাম।

৩. মা থেকে সন্তানে সংক্রমণ

  • যদি গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস বি থাকে, তবে সন্তান জন্মানোর সময় ভাইরাসটি সন্তানে সংক্রমিত হতে পারে।

৪. চিকিৎসা সরঞ্জামের মাধ্যমে

  • সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা বা পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম, যেমন দন্তচিকিৎসার সরঞ্জাম বা মেডিক্যাল ইনজেকশন সরঞ্জাম, যদি পর্যাপ্তভাবে জীবাণুমুক্ত না হয়, তবে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

৫. রক্ত সংক্রমণ

  • সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত দিয়ে রক্তদান করা হলে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে বর্তমানে রক্তদানের সময় স্ক্রীনিং করার ফলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমে গেছে।

৬. খোলা ক্ষত বা ঘা

  • হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তরল বা রক্ত অন্য ব্যক্তির খোলা ক্ষত বা ঘাতে লাগলে ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।

৭. অন্যদের সাথে শেয়ার করা সরঞ্জাম

  • কসমেটিক বা ড্রাগ ইনজেকশন সম্পর্কিত সরঞ্জাম, যেমন ট্যাটু বা শরীরের অন্য কোন প্রক্রিয়া, যদি অপরিষ্কার হয়, তবে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা খরচ

এর চিকিৎসার খরচ বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, চিকিৎসার ধরন, এবং রোগীর অবস্থা অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। এখানে সাধারণত খরচের কিছু তথ্য উল্লেখ করা হলো:

বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি চিকিৎসার খরচ

  1. ডায়াগনস্টিক টেস্ট: হেপাটাইটিস বি নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে, যেমন HBsAg, HBV DNA, এবং লিভার ফাংশন টেস্ট। এই পরীক্ষা গুলির খরচ প্রায় ১,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

  2. অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ: ক্রনিক হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসার জন্য সাধারণত অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলির মধ্যে টেনফোভির, এন্টিভির, অথবা লামিভুডিন অন্তর্ভুক্ত থাকে। এক মাসের জন্য এই ওষুধের খরচ প্রায় ১,৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, তবে বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং জেনেরিক সংস্করণের ওপর ভিত্তি করে দাম পরিবর্তিত হতে পারে। হেপাটাইটিস বি কি

  3. ইন্টারফেরন থেরাপি: কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারফেরন থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে, যার খরচ অনেক বেশি হতে পারে। এক মাসের ইন্টারফেরন থেরাপির খরচ প্রায় ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

  4. লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট: যদি হেপাটাইটিস বি দ্বারা লিভার গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ট্রান্সপ্লান্ট প্রয়োজন হয়, তাহলে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের খরচ বাংলাদেশে প্রায় ১৫-৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা দেশের বাইরে আরো বেশি হতে পারে।

আন্তর্জাতিক চিকিৎসার খরচ

বিদেশে চিকিৎসার খরচ বিভিন্ন দেশে ভিন্ন হতে পারে:

  • যুক্তরাষ্ট্র: অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের জন্য মাসিক খরচ ৫০০ থেকে ২,০০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। ইন্টারফেরন থেরাপির খরচ আরও বেশি হতে পারে, প্রায় ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ ডলার পর্যন্ত। লিভার ট্রান্সপ্লান্টের খরচ ২ লক্ষ ডলারেরও বেশি হতে পারে।

  • ইউরোপ: দেশভেদে খরচ পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের খরচ মাসে ৪০০ থেকে ১,৫০০ ইউরো হতে পারে। লিভার ট্রান্সপ্লান্টের খরচ ৫০,০০০ থেকে ১ লক্ষ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা

অ্যাকিউট হেপাটাইটিস বি: সাধারণত একে নিজে থেকেই নিরাময় করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে রোগীর বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর পানি পান করা, এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রনিক হেপাটাইটিস বি: এর চিকিৎসা প্রয়োজন এবং এটি দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত কিছু প্রধান পদ্ধতি হলো:

  1. অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ: ভাইরাসের বৃদ্ধির গতিকে ধীর করতে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
  2. ইন্টারফেরন ইনজেকশন: এটি একটি ইমিউন থেরাপি যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  3. লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট: যদি লিভারের ক্ষতি অত্যন্ত গুরুতর হয়, তবে লিভার প্রতিস্থাপন করা হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি এর প্রতিরোধ

এর প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়:

  1. হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন: ভ্যাকসিন হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। শিশুরা জন্মের পর এই ভ্যাকসিন পেয়ে থাকে এবং এটি ৯৫% কার্যকর।
  2. অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক এড়ানো: সুরক্ষিত যৌন আচরণ এবং কনডম ব্যবহার করা জরুরি।
  3. পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার: হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে ইনজেকশন ও চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখা উচিত।
  4. রক্ত পরীক্ষা: সংক্রমিত রক্ত ব্যবহার এড়ানোর জন্য রক্তদান পরীক্ষা করা উচিত।
  5. ড্রাগ ইনজেকশন পরিহার: ড্রাগ ইনজেকশন নেওয়ার সময় সঠিক ও নিরাপদ পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন।

হেপাটাইটিস বি এবং গর্ভাবস্থা

গর্ভবতী নারী যদি হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত হন, তবে তার নবজাতক সন্তানের মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমিত হতে পারে। এই কারণে গর্ভাবস্থার সময় মায়েদের হেপাটাইটিস বি পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়।

যদি কোনও মা হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হন, তবে জন্মের ১২ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত। হেপাটাইটিস বি কি

হেপাটাইটিস বি-এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

হেপাটাইটিস বি-এর দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ লিভারের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। ক্রনিক হেপাটাইটিস বি-এর ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে কিছু গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে:

  1. লিভার সিরোসিস: দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণে লিভার টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটি সিরোসিসের দিকে ধাবিত হতে পারে।
  2. লিভার ক্যান্সার: হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীদের লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি।
  3. লিভার ফেইলিউর: লিভার সম্পূর্ণভাবে অকেজো হয়ে যেতে পারে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।

উপসংহার

হেপাটাইটিস বি একটি গুরুতর ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা লিভারের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব, বিশেষত হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে।

তবে যারা ইতিমধ্যে আক্রান্ত, তাদের জন্য সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা হেপাটাইটিস বি-এর সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

3 Comments to “হেপাটাইটিস বি কি এর লক্ষণ এবং চিকিৎসা”

  1. […] আরও পড়ুন : হেপাটাইটিস বি কি? এর লক্ষণ এব… […]

  2. […] আরও পড়ুন : হেপাটাইটিস বি কি? এর লক্ষণ এবং চিকিৎসা […]

  3. […] আরও জানুন : হেপাটাইটিস বি কি? এর লক্ষণ এবং চিকিৎসা […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *