1 second school

এডিনয়েড কি । এডিনয়েড কেন হয়

এডিনয়েড কি 1secondschool

শেয়ার করুন

এডিনয়েড কি

এডিনয়েড কি: এডিনয়েড হচ্ছে এক ধরনের লিম্ফয়েড টিস্যু বা লসিকা গ্রন্থি, যেটা সব শিশুরই থাকে। শিশু এডিনয়েড নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। ২ বছর পর্যন্ত এডিনয়েড স্বাভাবিক থাকে বলে বিশেষজ্ঞরা। ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত এডিনয়েড ধীরে ধীরে একটু বড় হয়ে থাকে।

Adenoid হচ্ছে গলার উপরের অংশে অবস্থিত একধরনের লিম্ফয়েড টিস্যু, যা শিশুদের ইমিউন সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এডিনয়েড শিশুর নাক ও গলার সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এটি সাধারণত শিশুর জন্মের পর থেকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছোট হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি প্রায় ১০-১২ বছর বয়সে সংকুচিত হয়ে যায় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় না।

শীতকালে শিশুদের শর্দিজনিত নানা রোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে গলা ও কানের সমস্যা বেড়ে যায় এই সময়ে। যাদের ঠান্ডা-কাশি লেগে থাকে তাদের শিশুর নাকের পেছনে মাংস বেড়ে যেতে পারে।  এমনটি হলে শিশুদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নাক দিয়ে না নিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়।  শব্দ করে শ্বাস নেয় এমনকি ঘুমের মধ্যে কখনও হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এডিনয়েড কি
এডিনয়েড : 1ss

adenoid meaning in bengali

Adenoid এর বাংলা অর্থ হলো এডিনয়েড, যা নাকের পেছনের দিকে গলার উপরের অংশে অবস্থিত একটি লিম্ফয়েড টিস্যু। এডিনয়েড শিশুদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশ হিসেবে কাজ করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তবে এটি বড় হয়ে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

এডিনয়েডের সমস্যা


যখন এডিনয়েড অতিরিক্ত বড় হয়ে যায়, তখন এটি শ্বাস নিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। সাধারণত এডিনয়েডের আকার বড় হলে শিশুদের মধ্যে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা, এবং নাক দিয়ে শ্বাস নিতে না পারার মতো সমস্যা দেখা যায়। এর পাশাপাশি এডিনয়েড বড় হলে কানে ইনফেকশন, শুনতে সমস্যা, এবং ঠাণ্ডা লাগা বেশি হয়।

চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, ঘনঘন সর্দি লাগার কারণে নাকের পেছনে এডিনয়েড নামক লসিকাগ্রন্থি বড় হয়ে যায়।  

এডিনয়েড কী, এর লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী। 

এডিনয়েড গ্রন্থি কী

নাকের পেছনে এডিনয়েড গ্রন্থি থাকে। এটি গঠনগত দিক থেকে টনসিলের মতো। এডিনয়েড বাইরে থেকে দেখা যায় না। কারণ আমাদের তালুর ওপরে এডিনয়েড থাকে। কাজেই এটা খালি চোখে দেখার কোনো উপায় নেই। এডিনয়েড দেখতে হলে এক্স-রে করতে হবে বা বিশেষ ধরনের অ্যান্ড্রোস্কোপ (Nasoendoscope) আছে, সেগুলো দিয়ে দেখা যেতে পারে।

এডিনয়েডের লক্ষণ

এডিনয়েডের আকার বড় হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:

এডিনয়েড কেন হয়

 এটি সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে শিশুর শরীরে গঠিত হয়, কারণ এটি শিশুদের ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশ। তবে কিছু কারণে এডিনয়েডের আকার বড় হতে পারে এবং তা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এডিনয়েড বড় হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো:

  1. সংক্রমণ (Infection):
    শ্বাসনালী বা গলার সংক্রমণের কারণে এডিনয়েড ফুলে যায়। সাধারণ ঠাণ্ডা, ভাইরাল সংক্রমণ বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের ফলে এডিনয়েড বড় হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংক্রমণ দূর হলে এডিনয়েড স্বাভাবিক আকারে ফিরে আসে, তবে দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ থাকলে এটি স্থায়ীভাবে বড় হয়ে থাকতে পারে।

  2. এলার্জি (Allergies):
    যেসব শিশুদের এলার্জি রয়েছে, তাদের এডিনয়েড বড় হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ধূলা, পরাগ, পশুর লোম বা অন্যান্য এলার্জেনের কারণে গলার লিম্ফয়েড টিস্যু প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফুলে যেতে পারে, যা এডিনয়েড বড় হওয়ার কারণ হতে পারে।

  3. জেনেটিক কারণ (Genetic Factors):
    কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণে এডিনয়েড বড় হতে পারে। পরিবারের মধ্যে পূর্বে এডিনয়েড সমস্যা থাকলে শিশুরও এ ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

  4. বারবার ইনফেকশন (Chronic Infections):
    যেসব শিশুরা বারবার গলা, কান বা শ্বাসনালীর সংক্রমণে ভোগে, তাদের এডিনয়েড সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ধরনের শিশুদের এডিনয়েড প্রায়ই বড় থাকে এবং শ্বাসনালীতে সমস্যা তৈরি করে।

  5. ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া (Immune Response):
    শিশুদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম রোগ প্রতিরোধের জন্য এডিনয়েডকে সক্রিয় করে। এর ফলে এটি ফুলে যায় এবং বড় হয়। শৈশবে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়াতে এই প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক, তবে যখন এডিনয়েড অত্যন্ত বড় হয়ে যায়, তখন এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে।

এডিনয়েড অপারেশন খরচ কত

 এর অপারেশন, যা মেডিক্যাল ভাষায় Adenoidectomy নামে পরিচিত, এটি একটি সাধারণ শল্যচিকিৎসা (surgery) যা এডিনয়েড বড় হয়ে গেলে বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টি করলে করা হয়। অপারেশনের খরচ নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর, যেমন:

সাধারণত এডিনয়েড অপারেশনের খরচ:

খরচের মধ্যে যা অন্তর্ভুক্ত থাকে:

এছাড়াও, স্বাস্থ্যবিমা থাকলে অপারেশন খরচ অনেকটাই কম হতে পারে, যদি বিমা পরিকল্পনায় এই ধরনের সার্জারি অন্তর্ভুক্ত থাকে।

এডিনয়েড হোমিও চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে রোগ নিরাময়ে সহায়ক হিসেবে কাজ করে এবং অনেক মানুষ এডিনয়েড সমস্যার জন্য হোমিও চিকিৎসার ওপর নির্ভর করেন। হোমিওপ্যাথি শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে রোগের মূল কারণ থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। তবে চিকিৎসা গ্রহণের আগে একজন যোগ্য হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এখানে এডিনয়েডের সাধারণ কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

1. Baryta Carbonica:

এটি এমন শিশুদের জন্য উপকারী, যাদের এডিনয়েড বড় হয়ে গেছে এবং তারা কানে ক্রমাগত ইনফেকশনের শিকার হচ্ছে। যদি শিশুর ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা, মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া, এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা যায়, তবে এই ওষুধ কার্যকর হতে পারে।

2. Calcarea Carbonica:

যেসব শিশুর এডিনয়েড বড় হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ঘাম, বিশেষ করে মাথায় ঘাম হয়, এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অস্থিরতা দেখা দেয়, তাদের জন্য এই ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ওষুধটি সাধারণত ঠাণ্ডাজনিত সংক্রমণে উপকার করে।

3. Agraphis Nutans:

এটি এডিনয়েড বৃদ্ধির কারণে নাক বন্ধ থাকা বা কানে সমস্যা থাকা শিশুদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধটি কানে চাপ অনুভব করা, শ্বাসকষ্ট, এবং কানে ইনফেকশন হলে কার্যকর বলে বিবেচিত হয়।

4. Kali Sulphuricum:

যেসব শিশুর এডিনয়েড সমস্যা সাথে সাইনাসের সংক্রমণ হয় এবং নাক দিয়ে হলুদ বা সবুজ পিচ্ছিল শ্লেষ্মা বের হয়, তাদের জন্য এই ওষুধ প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। এটি শ্বাসকষ্ট এবং নাক বন্ধ থাকলে সহায়ক।

5. Silicea:

এটি এমন শিশুদের জন্য প্রযোজ্য, যাদের এডিনয়েড বড় হওয়ার কারণে ঘুমের মধ্যে সমস্যা হয় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সহায়ক।

6. Calcarea Phosphorica:

যেসব শিশু শারীরিকভাবে দুর্বল থাকে এবং এডিনয়েড বড় হওয়ার কারণে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, তাদের জন্য এই ওষুধ উপকারী হতে পারে। এটি সাধারণত হাড় ও টিস্যু গঠনে সাহায্য করে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সুবিধা:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

সতর্কতা:

এডিনয়েডের জন্য হোমিও চিকিৎসা গ্রহণ করার আগে অবশ্যই একজন প্রশিক্ষিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ রোগের অবস্থা ও লক্ষণের ভিত্তিতে সঠিক ওষুধ নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এডিনয়েড এর ঘরোয়া চিকিৎসা

এডিনয়েড সমস্যা হালকা পর্যায়ে থাকলে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে এডিনয়েডের আকার কমানো এবং সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। যদিও গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তবে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো সমস্যার উপশমে সহায়ক হতে পারে। নিচে কিছু প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:

১. বাষ্প গ্রহণ (Steam Inhalation):

নাক ও গলার সংক্রমণ কমাতে বাষ্প গ্রহণ অত্যন্ত কার্যকর। এটি নাসারন্ধ্রের বদ্ধতা দূর করতে সাহায্য করে এবং এডিনয়েডের আকার কমাতে পারে।
পদ্ধতি:

২. নুন-পানির গার্গল (Salt Water Gargle):

নুন-পানি দিয়ে গার্গল করা এডিনয়েডের সংক্রমণ ও গলার ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
পদ্ধতি:

৩. মধু ও আদা (Honey and Ginger):

মধু এবং আদার সংমিশ্রণ এডিনয়েডের প্রদাহ কমাতে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি:

৪. পিপারমিন্ট অয়েল (Peppermint Oil):

পিপারমিন্ট অয়েল প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহ কমাতে এবং শ্বাস নিতে সহজ করতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি:

৫. লেবু ও মধু (Lemon and Honey):

লেবুর রস ও মধুর মিশ্রণ সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে এবং এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে।
পদ্ধতি:

৬. তুলসী পাতা (Basil Leaves):

তুলসী পাতার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ এডিনয়েডের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি:

৭. পানির পরিমাণ বৃদ্ধি (Increase Water Intake):

শরীরকে আর্দ্র রাখা এডিনয়েডের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয় এবং সংক্রমণ কমে যায়। দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

৮. এলার্জি প্রতিরোধ (Allergy Prevention):

এডিনয়েড বড় হওয়ার একটি সাধারণ কারণ হলো এলার্জি। ধুলা, পরাগ, বা অন্যান্য এলার্জেন থেকে দূরে থাকা এডিনয়েড সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। ঘর সবসময় পরিষ্কার রাখুন এবং এলার্জি সৃষ্টি করে এমন উপাদান থেকে দূরে থাকুন।

আরও পড়ুন:

শিলাজিতের উপকারিতা ও অপকারিতা

লেবু পানির উপকারিতা

চিরতা পাতার উপকারিতা

সতর্কতা:

এডিনয়েডের সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, শ্বাস নিতে সমস্যা হয় বা ঘন ঘন কানে ইনফেকশন হয়, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘরোয়া পদ্ধতি শারীরিক স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু গুরুতর সমস্যা থাকলে চিকিৎসা প্রয়োজন।

উপসংহার:

এডিনয়েড একটি গুরুত্বপূর্ণ লিম্ফয়েড টিস্যু, যা নাকের পিছনে অবস্থিত এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। তবে এটি যদি বড় হয়ে যায়, তাহলে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, ইনফেকশন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো এডিনয়েডের প্রদাহ ও সংক্রমণ কমাতে কার্যকর হতে পারে, কিন্তু গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক চিকিৎসা ও যত্ন গ্রহণ করে এডিনয়েডের সমস্যার সমাধান সম্ভব, যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

Exit mobile version