এডিনয়েড কি

এডিনয়েড কি । এডিনয়েড কেন হয়

শেয়ার করুন

এডিনয়েড কি

এডিনয়েড কি: এডিনয়েড হচ্ছে এক ধরনের লিম্ফয়েড টিস্যু বা লসিকা গ্রন্থি, যেটা সব শিশুরই থাকে। শিশু এডিনয়েড নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। ২ বছর পর্যন্ত এডিনয়েড স্বাভাবিক থাকে বলে বিশেষজ্ঞরা। ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত এডিনয়েড ধীরে ধীরে একটু বড় হয়ে থাকে।

শীতকালে শিশুদের শর্দিজনিত নানা রোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে গলা ও কানের সমস্যা বেড়ে যায় এই সময়ে। যাদের ঠান্ডা-কাশি লেগে থাকে তাদের শিশুর নাকের পেছনে মাংস বেড়ে যেতে পারে।  এমনটি হলে শিশুদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নাক দিয়ে না নিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়।  শব্দ করে শ্বাস নেয় এমনকি ঘুমের মধ্যে কখনও হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, ঘনঘন সর্দি লাগার কারণে নাকের পেছনে এডিনয়েড নামক লসিকাগ্রন্থি বড় হয়ে যায়।  

এডিনয়েড কী, এর লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী। 

এডিনয়েড গ্রন্থি কী

নাকের পেছনে এডিনয়েড গ্রন্থি থাকে। এটি গঠনগত দিক থেকে টনসিলের মতো। এডিনয়েড বাইরে থেকে দেখা যায় না। কারণ আমাদের তালুর ওপরে এডিনয়েড থাকে। কাজেই এটা খালি চোখে দেখার কোনো উপায় নেই। এডিনয়েড দেখতে হলে এক্স-রে করতে হবে বা বিশেষ ধরনের অ্যান্ড্রোস্কোপ (Nasoendoscope) আছে, সেগুলো দিয়ে দেখা যেতে পারে।

এডিনয়েড কেন হয়

এটি কখনো খালি চোখে দেখা যায় না, এক্সরে বা ন্যাজোঅন্ডোস্কোপের সাহায্যে দেখা যায়। সব শিশুদের এডিনয়েড থাকে, এটি কোনো সমস্যা না। তবে ঘন ঘন ঠান্ডা-জ্বরের কারণে, সর্দির কারণে, অ্যালার্জিজনিত কারণে তখন শিশুর এডিনয়েডে যখন বার বার ইনফেকশন হয় তখনই এডিনয়েড স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হতে শুরু করে। তখন বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।

এডিনয়েড এর ঘরোয়া চিকিৎসা

সাধারণত এডিনয়েড এর ঘরোয়া চিকিৎসা করা যায় না। কারন এ সমস্যা টা হলে তখন ডাক্তারের পরামর্শ মতো চিকিৎসা নিতে হয়। তবে, বাসায় বাড়িতে বাচ্চার দিকে খেয়াল রাখবেন যেন কোন ভাবেই ঠান্ডা না লাগে। এই ঠান্ডার করনে একমাত্র বড় সমস্যা ধারন করে। 

বাচ্চাদের এ সমস্যার ক্ষেত্রে অবশ্যই নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।  শিশুর বয়স ১২-১৪ বছর হলেও এডিনয়েড স্বাভাবিক হয় না অনেক সময়। ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় না হলে শিশুর কষ্ট দীর্ঘতর হলে বিভিন্ন পরীক্ষার পর সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে অপারেশনের মাধ্যমে এডিনয়েড ফেলে দিতে হয়, যা একটি নিরাপদ সার্জারি ।

কখন অস্ত্রপাচার করবেন বা অপারেশন করতে হবে বলে মনে হবে। (এডিনয়েড কি )

১. যদি নাক প্রায়ই বন্ধ থাকে এবং এক্স-রে করে তার প্রমাণ পাওয়া যায় তবেই অস্ত্রোপচার করাতে হবে 
২. এডিনয়েড বড় হয়ে যাওয়ার কারণে যদি মধ্যকর্ণে ইনফেকশন হয় এবং মধ্যকর্ণে তরল পদার্থ জমে আটকে থাকে
৩. যদি বারবার মধ্যকর্ণের ইনফেকশন হয়
৪. ঘুমের মধ্যে যদি শিশুর দম বন্ধ (স্লিপ এপনিয়া) অবস্থা হয়

এডিনয়েড চিকিৎসা

অস্ত্রোপচার চিকিত্সা: এটিতে অ্যাডিনয়েডক্টমি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে অ্যাডিনয়েড টিস্যু অস্ত্রোপচার অপসারণ জড়িত। বিভিন্ন ধরণের অস্ত্রোপচারের চিকিত্সার বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • চালিত যন্ত্র: এতে মাইক্রোডিব্রাইডারের মতো যন্ত্র জড়িত, যা এডিনয়েডের সুনির্দিষ্ট শেভিং সক্ষম করে।
  • কোব্লেশন এডিনোয়েডেক্টমি: এটি কম অস্বস্তির সাথে এডিনয়েড টিস্যু ভেঙ্গে  ফেলে এবং অপসারণ করতে রেডিওফ্রিকোয়েন্সি শক্তি ব্যবহার করে।
  • এন্ডোস্কোপিক-সহায়তা অ্যাডেনোয়েডেক্টমি: এটি এডিনয়েডের সুনির্দিষ্ট অপসারণের জন্য উন্নত ভিজ্যুয়ালাইজেশন প্রদান করে।
  • লেজার এডিনোয়েডেক্টমি: এটি লক্ষ্যযুক্ত বাষ্পীভবন এবং অপসারণের জন্য লেজার প্রযুক্তি নিয়োগ করে।
  • সংমিশ্রণ চিকিত্সা: সম্মিলিত পদ্ধতি, যেমন টনসিলেক্টমি সহ অ্যাডেনোয়েডেক্টমি, ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুসারে ব্যাপক চিকিত্সার বিকল্পগুলি অফার করে। এই অস্ত্রোপচার টা কৌশলগুলি উন্নত ফলাফলের সাথে অ্যাডিনয়েড-সম্পর্কিত অবস্থার কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে।

এডিনয়েড হোমিও চিকিৎসা

একজন হোমিও ডাক্তারের কাছে গিয়ে সমস্যার কথা বলবেন। হোমিওপ্যাথিক প্রতিকারের প্রতি স্বতন্ত্র প্রতিক্রিয়া পরিবর্তিত হতে পারে, এবং একজন পেশাদার হোমিওপ্যাথের কাছ থেকে নির্দেশনা চাওয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, যিনি আপনার সন্তানের নির্দিষ্ট প্রয়োজন এবং স্বাস্থ্য ইতিহাসের সাথে মানানসই চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন।

এডিনয়েড অপারেশন খরচ কত

স্থান এবং কতটা জটিল পর্যায় গিয়েছে সেটার উপর নির্ভর করে খরচটা নির্ধারন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে একেক হাসপাতাল বা ক্লিনিক গুলো একেক বাজেট বলে। তবে আনুমানিক, ১০/১৫ হাজার মধ্যে হয়ে থাকে।

অস্ত্রোপচারের উপকারিতা

অস্ত্রোপচারের পর শিশু ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠে, শিশুর নাক বন্ধ অবস্থার উন্নতি হয়। এ সময়ে শিশুকে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। 
অ্যালার্জি থাকলে অপারেশনের পর শিশুকে অ্যালার্জির জন্য দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ দিতে হয়।

অপারেশনের দুই-তিন দিনের মধ্যেই শিশু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে শিশু সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায়।

অস্ত্রোপচার না করালে যে ঝুঁকি

গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে শিশুর নাক বন্ধ থাকার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। এর ফলে শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ বিঘ্নিত হয়। ফলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ কম হয়। এছাড়া শিশু ক্রমাগতভাবে কম শোনার কারণে ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে পড়ে, পড়াশোনায় খারাপ করে এবং শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়।

আরও পড়ুন:

কিভাবে ওজন কমানো যায়


একপর্যায়ে শিশুর মধ্যকর্ণের ইনফেকশন জটিল হয়ে কানের পর্দা ফুটো করে দেয় এবং শিশু কানপাকা রোগের নিয়মিত রোগী হয়ে যায় অর্থাৎ দীর্ঘস্থায়ী কানপাকা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *