কোর্ট ম্যারেজ কি
কোর্ট ম্যারেজ কি: এটি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ আইনের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এটি মূলত সরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোর্টের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় এবং এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
এটা সাধারণত সনাতনী, ধর্মীয় বা পারিবারিক নিয়ম-কানুনের বাইরে আইনি ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। যারা ধর্মীয় আচার পালন না করে সরাসরি আইনের অধীনে বিবাহ করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি সহজ ও নিরাপদ পদ্ধতি।
কোর্ট ম্যারেজ এর সুবিধা
১. আইনি সুরক্ষা: এর মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হলে, তা আইনত স্বীকৃত হয়। এটি দম্পতিকে আইনি সুরক্ষা প্রদান করে এবং ভবিষ্যতে আইনি বিরোধের সম্ভাবনা কমিয়ে আনে।
২. সহজ প্রক্রিয়া: ধর্মীয় আচার পালনের প্রয়োজন নেই, তাই এটি দ্রুত এবং সহজ হয়।
৩. আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃজাতীয় বিবাহ: কোর্ট ম্যারেজ আন্তঃধর্মীয় বা আন্তঃজাতীয় বিবাহের ক্ষেত্রেও কার্যকর।
কোর্ট ম্যারেজ বাতিল করার নিয়ম
এটা করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত বা নিয়ম পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে কিছু প্রধান শর্ত হলো:
- বয়সসীমা: পুরুষের ন্যূনতম বয়স ২১ বছর এবং নারীর ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে।
- উভয়ের সম্মতি: বিবাহ সম্পন্ন করার জন্য উভয়ের সম্মতি বাধ্যতামূলক।
- অবিবাহিত অবস্থা: উভয়ের আগের কোন বৈধ বিবাহ থাকা যাবে না, অথবা যদি থাকে, তবে সেটা আইনি প্রক্রিয়ায় বিচ্ছেদ হতে হবে।
কোর্ট ম্যারেজ কি ইসলামে বৈধ
-
ইসলামি শর্ত পূরণ: কোট মেরেজ যদি ইসলামি শর্ত পূরণ করে, যেমন:
- উভয়ের সম্মতি (বিবাহে পাত্র-পাত্রীর সম্মতি),
- সাক্ষীদের উপস্থিতি (দুইজন মুসলিম প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষী),
- মহর নির্ধারণ,
তবে সেই বিবাহ ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ বলে বিবেচিত হয়। এর সাথে কোর্ট বা রাষ্ট্রীয় নথিপত্রের যোগ করা হলে, সেটা বিবাহকে আরও আইনি সুরক্ষা দেয়।
-
রাষ্ট্রীয় আইন ও শরীয়তের সমন্বয়: কোর্ট ম্যারেজ একটি আইনি প্রক্রিয়া, যা রাষ্ট্রীয় বিবাহ আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। যদি এটি শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক না হয় এবং বিবাহের ধর্মীয় শর্ত পূরণ করা হয়, তাহলে তা বৈধ হতে পারে।
-
সুবিধা: কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে একটি বিবাহ আইনি স্বীকৃতি পায়, যা ভবিষ্যতে কোনো বিরোধ বা জটিলতার সময় আইনি সুরক্ষা প্রদান করে। তাই অনেক মুসলিম ব্যক্তি শরীয়তের শর্ত পূরণের পাশাপাশি কোর্ট ম্যারেজও করে থাকেন।
কোর্ট ম্যারেজ কি বৈধ
হ্যা,এটা বৈধ, কারণ এটি রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে পরিচালিত একটি বিবাহ প্রক্রিয়া। কোর্টের মাধ্যমে বিবাহ নিবন্ধন করলে তা আইনি স্বীকৃতি পায় এবং রাষ্ট্র কর্তৃক বিবাহিত দম্পতিদের সুরক্ষা প্রদান করা হয়।
তবে এটি ধর্মীয় বিবাহের বিকল্প নয়। ধর্মীয় আচার ও নিয়ম মানা না হলেও, কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। বিশেষ করে আন্তঃধর্মীয় বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দম্পতির ক্ষেত্রে কোর্ট ম্যারেজ একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইসলামে কোর্ট ম্যারেজের আপত্তি
কিছু ইসলামিক পণ্ডিতরা কোর্ট ম্যারেজ নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করে থাকেন যদি:
- বিবাহের সময় ইসলামি শর্ত মেনে না চলা হয়, যেমন: সাক্ষী বা মহর নির্ধারণ করা না হয়।
- যদি কোর্টের প্রক্রিয়ায় ইসলামি নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু থাকে।
কোর্ট ম্যারেজ এর খরচ কত
কোর্ট ম্যারেজ বাতিল করার নিয়ম
বাতিল করার ধাপসমূহ:
- ডিভোর্স পিটিশন দাখিল: বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য কোর্টে আবেদন জমা দিন।
- কারণ উল্লেখ: পিটিশনে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ উল্লেখ করুন (যেমন: বোঝাপড়ার অভাব, নির্যাতন)।
- সমন জারি: কোর্ট অপর পক্ষকে সমন পাঠাবে শুনানির জন্য।
- শুনানি: উভয় পক্ষের বক্তব্য ও প্রমাণ কোর্টে উপস্থাপন করতে হবে।
- আলোচনা বা মধ্যস্থতা: কোর্ট প্রয়োজনে সমঝোতার চেষ্টা করতে পারে।
- বিচ্ছেদ আদেশ: যদি মধ্যস্থতা ব্যর্থ হয়, কোর্ট বিবাহ বিচ্ছেদ অনুমোদন করবে।
- বিচ্ছেদ সনদ: কোর্ট বিচ্ছেদ সনদ প্রদান করবে, যা বিবাহ বাতিলের আইনি প্রমাণ।
আরও পড়ুন: রোগ থেকে মুক্তির দোয়া
কোর্ট ম্যারেজ করতে কি লাগে
এটা করতে যেসব জিনিস লাগে:
-
জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট: পাত্র-পাত্রীর পরিচয় প্রমাণের জন্য।
-
জন্ম সনদ বা বয়স প্রমাণপত্র: বয়স নির্ধারণের জন্য, যেখানে পুরুষের ন্যূনতম বয়স ২১ এবং নারীর ১৮ হতে হবে।
-
দুইজন সাক্ষী: বিবাহ প্রক্রিয়ায় দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষীর উপস্থিতি প্রয়োজন।
-
পাত্র-পাত্রীর ছবি: সাধারণত ২-৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হয়।
-
বিবাহের নোটিস: কোর্টে বিবাহের জন্য ৩০ দিন আগে নোটিস জমা দিতে হয়।
-
মহর নির্ধারণ: ইসলামী বিবাহের ক্ষেত্রে মহর নির্ধারণ করা আবশ্যক।
-
আগের বিবাহের বিচ্ছেদ সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়): যদি আগের বিবাহ থাকে তবে বৈধভাবে বিচ্ছেদ সনদ জমা দিতে হবে।
কোর্ট ম্যারেজের প্রক্রিয়া
- নোটিস প্রদান: প্রথমে, কোর্টে বিবাহের জন্য নোটিস দিতে হয়। এই নোটিসটি সাধারণত ৩০ দিনের জন্য প্রকাশ্যে রাখা হয় যাতে কোন আপত্তি থাকলে তা কোর্টে জমা দেওয়া যায়।
- বিবাহের নিবন্ধন: ৩০ দিনের সময়সীমা পার হলে এবং যদি কোন আপত্তি না আসে, তখন কোর্টে বিবাহের নিবন্ধন করা হয়।
- সনদ প্রাপ্তি: নিবন্ধনের পর দম্পতিকে বিবাহের সনদ প্রদান করা হয়, যা তাদের বিবাহের আইনি প্রমাণ।
কোর্ট ম্যারেজ এর নমুনা কপি
নিচে একটি সাধারণ কোর্ট ম্যারেজের নমুনা কপি প্রদান করা হলো। এটি বিভিন্ন দেশের আইনের ওপর নির্ভর করে সামান্য ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণ কাঠামো নিম্নরূপ:
বিবাহ নিবন্ধন ফরম (কোর্ট ম্যারেজ)
১. বিবাহের নোটিস
নোটিস নং: ____________
তারিখ: ____________
পাত্রের নাম: ____________
পাত্রীর নাম: ____________
ঠিকানা: ____________
পাত্রের পিতার নাম: ____________
পাত্রীর পিতার নাম: ____________
বয়স: পাত্র: ____________ পাত্রী: ____________
ধর্ম: পাত্র: ____________ পাত্রী: ____________
২. বিবাহের ঘোষণাপত্র
আমি, (পাত্রের নাম), পিতা (পাত্রের পিতার নাম), স্থায়ী ঠিকানা (ঠিকানা), ঘোষণা করছি যে আমি নিজের ইচ্ছায়, কোন প্রকার চাপ ছাড়া (পাত্রীর নাম), কন্যা (পাত্রীর পিতার নাম), স্থায়ী ঠিকানা (ঠিকানা)-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে সম্মত হয়েছি।
আমি, (পাত্রীর নাম), ঘোষণা করছি যে আমি নিজের ইচ্ছায়, কোন প্রকার চাপ ছাড়া (পাত্রের নাম)-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে সম্মত হয়েছি।
৩. সাক্ষী
১. সাক্ষী ১: ____________
ঠিকানা: ____________
স্বাক্ষর: ____________
২. সাক্ষী ২: ____________
ঠিকানা: ____________
স্বাক্ষর: ____________
৪. বিবাহ নিবন্ধক
নাম: ____________
স্বাক্ষর: ____________
তারিখ: ____________
এটি একটি সাধারণ নমুনা। বাস্তবে কোর্ট ম্যারেজের জন্য আপনার দেশের বিবাহ নিবন্ধন ফরম ব্যবহার করতে হবে, যা স্থানীয় কোর্ট থেকে সরবরাহ করা হয়।
হিন্দু কোর্ট ম্যারেজ এর নমুনা কপি
এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!
এ বিষয় টি নিয়ে কিছু টা শংকায় ছিলাম
এখন বুজলাম বিষয় টি