জিম করার নিয়ম

জিম করার নিয়ম

শেয়ার করুন

জিম করার নিয়ম

জিম করার নিয়ম: আমাদের শরীরচর্চার সঠিক কৌশলের মাধ্যমে সুঠাম দেহ গঠনের জন্য জিমে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আপনাকে মেনে চলতে হবে, আর স্বাভাবিকভাবেই থাকে কিছু সতর্কতারও প্রশ্ন। কারণ আপনার শরীর গঠনের ষোলকলার পাশাপাশি জিমে যেসব উপকরণ থাকে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার না জানলে হিতে বিপরীত হতে পারে। জিম করার নিয়ম সম্পকে সেজন্য প্রতিটি কথা ভালো ভাবে পড়ুন।

Highlights,

  • ওজন কমানোর জন্য আপনাকে মন দিয়ে ডায়েট, শরীরচর্চা করতে হবে ঠিকই
  • কিন্তু তাই বলে, প্রথম থেকেও অতিরিক্ত ওজন তোলা, খুব বেশি ডাম্বেল এক্সারসাইজ কিংবা প্রায় কিছুই না খেয়ে থাকা অথবা ব্যায়ামের পর প্রোটিন না খাওয়া।
  • এগুলো কিন্তু একদম ঠিক নয়। এতে হতে পারে শরীরের জন্য ভয়ানক ক্ষতি।

যে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন-

১। শরীরচর্চা কোন ৩/৬ মাস বা ১ বছর মেয়াদী কোর্স নয়, এটি সারা জীবনের জন্য।
২। আপনি আপনার শরীরের কোন পরিবর্তন তৎক্ষণাৎ দেখতে পাবেন না। এর জন্য অনেক সময় লাগবে। তাই আপনার ধৈরযশক্তি দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন। নূন্যতম ৬ মাস লাগবে আপনার বডির সেইভ আসতে।

৩। প্রথম কয়েকদিন (৭দিন)  শরীরে প্রচুর ব্যথা হবে তাই সেটার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হন। ব্যথার জন্য ব্যায়াম ছেড়ে দেবেন না। আর ব্যাথার জন্য কোন মেডিসিন নিবেন না। তবে প্রথমে অল্প অল্প ভলিউমে ট্রেইনিং শুরু করুন যাতে ব্যথা কম হয়।
৪। শরীরকে যথেষ্ট পরিমান বিশ্রাম দিন। সপ্তাহে প্রতিদিন ব্যায়াম করার থেকে সপ্তাহে তিন দিন ব্যায়াম করা ভালো প্রথম দিকে, পরে দিন বাড়িয়ে নিবেন। আর প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘন্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন।

৫। আপনার এক্সপেক্টেশন রিয়েলিস্টিক রাখুন। ন্যাচারালি কোন ধরণের স্টেরয়েড/টেস্টোস্টেরন ছাড়া শুধুমাত্র প্রোপার ট্রেইনিং ও সঠিক ডায়েট দ্বারা একজন নবীনের মাসে সর্বচ্চ ১.৫-২ পাউন্ড পরিমান মাসেল বিল্ডিং সম্ভব হয়। অনেক সময় ইউটিউবে দেখা যায় অনেকে ৩-৬ মাসে প্রচুর মাসেল বিল্ডিং করে ফেলে কিন্তু এর পেছনে স্টেরয়েড ইউজ এর কথা তারা বলে না এটা মনে রাখবেন। তাই অনেকে জীম শুরু করে আশানরূপ ফল না পেয়ে জীম করা ছেড়ে দেয়। তাই নিজের এক্সপেক্টেশন টা রিয়েলিস্টিক রাখা টা জরুরী। সময় দিন ১ বছর পর নিজেই রেজাল্ট পেয়ে যাবেন।

যে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন-

৬। নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখুন। সপ্তাহে কোন তিনদিন/চারদিন ব্যায়াম করবেন সেটা রুটিন করে ফেলুন সাথে সাথে। খুবই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এক দিনও মিস করবেন না। এক দিন মিস করলে পরের দিন আর যেতে ইচ্ছা হবে না। এটা মাস্ট ঘটবে এবং গেলে অনেক্ষন করতে মন চাইবে এটাও মাস্ট ঘটবে।

৭। জীমে গিয়ে কিছু বন্ধু বানিয়ে ফেলুন কিংবা আপনার কোন প্রিয় বন্ধুর সাথে জীম করা শুরু করুন। এতে জীম করার সময়টা অনেক উপভোগ্য হবে এবং কষ্টটা কম মনে হবে। মজাও লাগবে।

৮। একদম পুরোপুরি ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত ব্যায়াম করুন। আন্ডার ট্রেইনিং করলে ম্যাক্সিমাম মাসল গেইন পাবেন না। ইয়ারফোন বা হেড ফোন দিয়ে যাবেন। এতে কষ্ট কম মনে হবে।

৯। সঠিক ডায়েট ও পর্যাপ্ত পরিমান প্রোটিন গ্রহন না করলে সকল পরিশ্রম বৃথা। কাজেই আপনার দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রোটিন খান। (একজন শারিরীক পরিশ্রমী ব্যক্তির দৈনিক প্রোটিন চাহিদা (২x কেজিতে শরীরের ওজন) এটা বিএমআর অনুযায়ী হিসাব করবেন। (জিম করার নিয়ম)

 

প্রতিদিন কত ক্যালোরি বার্ন হচ্ছে তার হিসেব রাখুন!

একদিনেই কখনও ওজন কমে যায় না। আর তাই একটা টার্গেট সেট করে সেই মতো অভ্যেস করুন। প্রথম সপ্তাহেই ২০ কেজি ওজন তুলবেন না। বরং বিভিন্ন ব্যায়ামের সংখ্যা বাড়াতে থাকুন। প্রথম দুদিন দু সেট করে হলে পরদিন তিনসেট করে অভ্যেস করুন। এই ভাবে আস্তে আস্তে অভ্যেস করলে আপনি ২৫ কেজি পর্যন্ত ওয়েট লস করতে পারবেন। মনে রাখবেন একদিনেই সব করতে যাবেন না। ধীরে ধীরে নিজেকে সময় দিন ।

মেয়েদের জিম করার পদ্ধতি

ডায়েট চাট অবশ্যই মেনে চলুন

প্রতিদিন খাবারের মধ্যেও সমতা বজায় রাখুন। ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট , প্রোটিন এগুলোর মধ্যেও সমতা বজায় রাখুন। শুধু প্রোটিন যেমন শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর তেমনই সব্জি সেদ্ধ আর ফলেই যে শরীর পুরোপুরি পুষ্টি পায় এমন নয়। আর তাই এই খাবারের মধ্যে সমতা রাখুন। আর একই ডায়েট দীর্ঘদিন ময়, আড়াই মাস অন্তর ডায়েটও পরিবর্তন করুন।

• বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় ডিওডারেন্ট লাগান৷ বিশেষ করে বাহুমূলের নীচে৷ ব্যায়াম করার সময় প্রচুর ঘামের হাত ধরে গায়ে দুর্গন্ধ হলে তা খুবই বিরক্তিকর৷ অথবা পারফিউম ব্যবহার করতে পারেন।

• ডায়াটিশিয়ান যেমন বলবেন তেমনভাবে হালকা কিছু খাবার ও একগ্লাস জল খেয়ে নিন ব্যায়াম শুরু করার ৩০-৪৫ মিনিট আগে৷  এটা নিয়মিত করবেন।

ওয়ার্ক আপ শুরু করার আগে ওয়ার্ম আপ মাস্ট করতে হবে ৷ না হলে চোট লাগতে পারে৷ এমনকি বড় ধরনের ‍দূর্ঘটনাও ঘটতে পারে। কাজেই জগিং, সাইক্লিং, রানিং জাতীয় কার্ডিওভ্যাসকুলার এক্সারসাইজ করুন৷ শরীরে রক্তের যোগান বাড়লে ভারী ব্যায়ামের ধকল নিতে পারবেন৷

• তৃষ্টা পেলে মাঝে-মাঝে দু-এক ঢোক করে জল খান৷ বেশি কখনো খাবেন না। জাস্ট গলা ভিজানোর জন্য।

• ওয়ার্কআউট শেষ করার ৩০-৪৫ মিনিটের মধ্যে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান পেটভরে । এতে জীমটা কাজে আসবে।

খাবারের তালিকাঃ প্রথমে আপনার দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হিসাব করে নিন। গুগলে TDEE Calculator এখানে ক্লিক করলে হিসাব করার ক্যালকুলেটর পেয়ে যাবেন। এবার আপনার ক্যালরি চাহিদার থেকে ২০০ ক্যালরি বাড়িয়ে খাওয়া শুরু করুন। খাদ্যতালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি রাখবেন যেমন- মাংস, মাছ, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, কলা, বিভিন্ন রকমের ডাল ও ডিম, কেননা প্রোটিন চাহিদা পূরণ করাটা সবচেয়ে জরুরী।

জিম করার উপকারিতা

জিমের উপকরণে ত্রুটি

জিমে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকে, যেগুলোর প্রত্যেকটির কাজ ভিন্ন ভিন্ন। জিমের নতুন সদস্যদের ক্ষেত্রে প্রথম প্রথম এগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে মুশকিলে পড়া মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষ করে আকারে বড় ও ভারি ওজনের সরঞ্জামগুলো নতুনদের জন্য বেশ বিপদজ্জনক হয় তাই এগুলো প্রথমে করতে যাবেন না। অসাবধানতাবশত এগুলোর যে কোনোটির ভুল ব্যবহার শুধু উপকরণটির ক্ষতি নয়, ব্যবহারকারীর জন্যও গুরুতর দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। জিম করার নিয়ম

জিম করার নিয়ম
জিম করার নিয়ম

জিমের উপকারিতা

উপায়

প্রত্যেকবার  জিমে প্রবেশের পর প্রথমেই পুরো জিম ঘুরে উপকরণগুলো একবার পরিদর্শন করুন। কোনোটিতে কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়লে অবিলম্বে তা জিম কর্তৃপক্ষকে জানান।

এতে আপনি যেমন দুর্ঘটনা থেকে বেচে যাবেন সাথে অন্যরাও।

সঠিক ব্যবহারের নির্দেশিকা নিয়মিত অনুসরণ করতে করতে এক সময় অভ্যস্ততা চলে আসবে। এ ছাড়াও ব্যবহার জানার জন্য জিম কর্তপক্ষের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। জিম করার নিয়ম

অতিরিক্ত সংকোচন বা প্রসারণে পেশি ছিঁড়ে যাওয়া

শরীরকে ইস্পাত কঠিন বানাতে গিয়ে অনেকেই নিজেদের পেশি সংকোচন-প্রসারণে প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়।

এর চরম সীমায় পেশি ছিঁড়ে যেতে পারে। আর তখন হালকা ব্যায়ামগুলোও করা কঠিন হয়ে পরে যায়।

প্রতি অনুশীলনের শুরুতে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ওয়ার্ম-আপ করুন। এতে করে শরীরের পেশির তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।

তারপর ওয়ার্কআউটে অল্প অল্প করে ওভারলোড প্রয়োগ করুন। সময়ে নিয়ে ধীরে ধীরে তীব্রতা বৃদ্ধি করুন।

জিম ছেড়ে দিলে কি হয়

জিম করা ছেড়ে দিলে শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। প্রথমত, নিয়মিত ব্যায়াম বন্ধ করার ফলে পেশির শক্তি ও আকার ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। পেশিগুলো দুর্বল হতে শুরু করে, কারণ তারা পর্যাপ্ত কাজ বা চ্যালেঞ্জ পায় না। এছাড়া, শারীরিক কার্যকলাপ কমে যাওয়ায় শরীরে চর্বি জমতে শুরু করে, যা ওজন বাড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ায়। মেটাবলিজমের হারও ধীরে ধীরে কমে যায়, যা আরও ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। মানসিকভাবে ক্লান্তি, স্ট্রেস, ও হতাশা অনুভূত হতে পারে, কারণ ব্যায়াম মনকে সজীব ও সক্রিয় রাখতে সহায়ক।
প্রতিবার জিমে প্রবেশের পর প্রথমেই পুরো জিম ঘুরে উপকরণগুলো একবার পরিদর্শন করুন। কোনোটিতে কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়লে অবিলম্বে তা জিম কর্তৃপক্ষকে জানান।

জিম ছেড়ে দিলে কি হয়
জিম ছেড়ে দিলে কি হয়

আরও জানুন!

খুশকি দূর করার উপায়

শিলাজিতের উপকারিতা ও অপকারিতা

লেবু পানির উপকারিতা

চিরতা পাতার উপকারিতা

উপসংহার:

জিম করা শরীরের সুস্থতা বজায় রাখার একটি কার্যকর উপায়। এটি শুধু পেশি শক্তিশালী করে না, বরং শারীরিক স্থিতিশীলতা, সহনশীলতা এবং মনোবল বাড়াতেও সহায়ক। নিয়মিত জিমে যাওয়া ও ব্যায়াম করার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে। জিম মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী, কারণ এটি স্ট্রেস ও হতাশা কমায় এবং মনকে সতেজ রাখে। তবে, ব্যায়ামের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিকভাবে, জিম স্বাস্থ্যের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সমাধান হতে পারে যদি এটি ধারাবাহিকভাবে করা হয়।

শেষ কথা- জিম করলে নিয়মিত করুন। ধৈর্য্য মাস্ট থাকতে হবে। মনে রাখবেন, ১ মাসেই আপনার বডি মাসল আসবে না। এ সময় অনেকে নেগেটিভ কথা বলবে।

কিরে, তুই জিম করিস কিছু তো দেখিনা শরীরে। তাদের বলবেন, জীম এ গেলেই বডি হয়ে যায় না। সময় দিতে হয়। বছর খানেক পর দেখবি। নিয়মিত খাবার চার্ট, ডায়েট মেনে চলুন।

ইনশাল্লাহ ধৈর্য্য ধরলে অবশ্যই সফলতা আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *