বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস: বাংলা সাহিত্য বাংলাদেশের এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য সম্পদ। এটি প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এর মধ্যে রয়েছে কাব্য, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, ছোটগল্প ইত্যাদি। বাংলা সাহিত্যের দীর্ঘ ইতিহাস বিভিন্ন ধাপে গড়ে উঠেছে, যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ
সাহিত্যের প্রাচীন যুগ শুরু হয় ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে। এ সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব বেশ প্রবল ছিল। তখনকার সাহিত্য প্রধানত চার্যাপদ বা চার্যাগীতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। এই পদগুলো ছিল বৌদ্ধ সাধকদের রচিত গানে ভরা, যা সহজ ভাষায় জীবন, ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতার কথা তুলে ধরে। এ সময়ের লেখকরা সাধারণত গোপন বৌদ্ধ ধর্মচর্চা ও চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করতেন।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস pdf
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবর্তনের সাক্ষী ছিল। এই যুগে প্রধানত বৈষ্ণব ধর্মীয় আন্দোলনের ফলে বৈষ্ণব পদাবলী, কীর্তন এবং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন প্রভৃতি সাহিত্যের ধারায় প্রবেশ করে। বিশেষভাবে, বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি এবং চণ্ডীদাসের কাব্যগুলো এ সময়ের বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য ধারা ছিল মঙ্গলকাব্য, যেখানে মঙ্গলদেবতা এবং দেবীর বীরত্বগাথা বিবৃত হয়েছে। মঙ্গলকাব্যগুলোর মধ্যে মানসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস আধুনিক যুগ
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। এই সময়ে বাংলা ভাষায় নবজাগরণ ঘটে এবং বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। আধুনিক যুগের অন্যতম প্রধান লেখক ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, যিনি বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রচলন করেন। তার মহাকাব্য “মেঘনাদবধ কাব্য” বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিক নির্দেশ করে।
এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন এবং বাংলা সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে দেন। তার কাব্য, নাটক, উপন্যাস এবং প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় সমৃদ্ধি এনেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার কবিতা ও গান জাতীয় চেতনা ও বিদ্রোহের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
সমকালীন বাংলা সাহিত্য
বাং’লা সাহিত্যের সমকালীন যুগে অনেক প্রতিভাবান লেখক, কবি, ও সাহিত্যিক আবির্ভূত হয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন হুমায়ূন আহমেদ, যিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারার সূচনা করেন। তার ছোটগল্প, উপন্যাস ও নাটক আধুনিক সমাজ ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছে। এছাড়া সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, এবং জহির রায়হান সহ আরও অনেকেই বাংলা সাহিত্যে বিশাল ভূমিকা পালন করেছেন।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ১ ( bangla shahitto)
বাংলা সাহিত্য মূলত তিনটি প্রধান যুগে বিভক্ত: প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, এবং আধুনিক যুগ। প্রত্যেকটি যুগেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্য একটি পরিপূর্ণ রূপে পরিণত হয়েছে।
প্রাচীন যুগ (১০০০-১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ)
প্রাচীন বাংলার সাহিত্য মূলত ধর্মীয় গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই যুগের সাহিত্যকর্মগুলোর মধ্যে বৌদ্ধ চার্যাপদ অন্যতম। চার্যাপদ ছিল একটি মরমিয়া ধারার কাব্যগ্রন্থ, যা বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকদের আধ্যাত্মিক চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটায়। এই সময়ের ভাষা ছিল প্রাচীন বাংলার আদি রূপ, যা বোঝা কিছুটা কঠিন।
মধ্যযুগ (১৩৫০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ)
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের এক নবযুগের সূচনা ঘটে। এই সময় বৈষ্ণব আন্দোলনের প্রভাবে বৈষ্ণব পদাবলী এবং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কবিতার জন্ম হয়। বৈষ্ণব কবিদের মধ্যে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়া মঙ্গলকাব্য, যেমন মানসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল, এই যুগে রচিত হয়।
আধুনিক যুগ (১৮০০-বর্তমান)
আধুনিক যুগে বাংলা সাহিত্য নতুন রূপে আবির্ভূত হয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত আধুনিক বাংলা কাব্য ধারায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন করেন এবং “মেঘনাদবধ কাব্য” রচনা করেন। পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছান এবং নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি হিসেবে বিখ্যাত হন। আধুনিক যুগে আরও অনেক সাহিত্যিক যেমন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ, এবং শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ
বাংলা সাহি’ত্যের ইতিহাস নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচিত হয়েছে, যা বাংলা সাহিত্য এবং এর বিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম দেওয়া হলো:
- বাংলা সাহি’ত্যের ইতিহাস – ড. সুকুমার সেন
এটি বাংলা সাহিত্যে’র ইতিহাস নিয়ে রচিত অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। সুকুমার সেন বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত সমস্ত পর্যায়ের বিশ্লেষণ করেছেন। - বাংলা সাহি’ত্যের ইতিবৃত্ত – ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য
আশুতোষ ভট্টাচার্য এই গ্রন্থে বাংলা সাহিত্যের আদি থেকে শুরু করে আধুনিক সাহিত্যিকদের অবদান ও কর্মের বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন। - আধুনিক বাংলা সাহি’ত্যের ইতিহাস – ড. প্রবোধচন্দ্র সেন
এই গ্রন্থে আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যিকদের জীবন ও সাহিত্যকর্মের উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। - বাংলা সাহিত্যের রূপ ও বিকাশ – সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের এই গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের রূপ, তার বিভিন্ন ধারা ও ধারাবাহিকতার উন্নয়নের উপর আলোকপাত করে। - বাংলা সাহি’ত্যের ধারা – ড. সুকুমার ভট্টাচার্য
এই বইয়ে বাংলা সাহি’ত্যের বিভিন্ন ধারার বিবরণ দেওয়া হয়েছে, যা ছাত্রছাত্রী এবং গবেষকদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। - বাংলা সাহি’ত্যের ক্রমবিকাশ – মনোজ দাস
এই গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশ এবং বিভিন্ন সময়কালের পরিবর্তন সম্পর্কে বিশেষ তথ্য প্রদান করে।
কোন গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
গ্রন্থ: বাংলা (Bangla) সাহিত্যের ইতিহাস
লেখক: ড. সুকুমার সেন
প্রকাশকাল: ১৯৪০
বাংলা সাহি’ত্যের ইতিহাস গ্রন্থটি ড. সুকুমার সেনের একটি বিশিষ্ট ও সুবৃহৎ সাহিত্যিক গবেষণার ফল। এটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশের এক অনন্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। গ্রন্থটির মূল লক্ষ্য ছিল বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন যুগ, তার রূপান্তর ও বিকাশের ধারাবাহিক ব্যাখ্যা প্রদান করা। এতে বাংলা সাহি’ত্যের প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত সমস্ত সাহিত্যিক ধারা এবং সাহিত্যিকদের বিশদ বিবরণ রয়েছে।
গ্রন্থের মূল বিষয়বস্তু:
- প্রাচীন যুগ: বৌদ্ধ চার্যাপদ থেকে শুরু করে মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যের প্রভাব পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে। এই অংশে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কবিতা এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
- মধ্যযুগ: বৈষ্ণব কবিদের কাব্যচর্চা, মঙ্গলকাব্য, কীর্তন, এবং বিভিন্ন প্রাচীন কাব্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে পাওয়া যায়। বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, এবং কৃষ্ণদাস কবিরাজের সাহিত্যকর্মের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
- আধুনিক যুগ: এই অংশে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সূচনা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম এবং অন্যান্য সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মের বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
- উপসংহার: বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন পর্যায়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব, ভাষার পরিবর্তন এবং সাহিত্যিক ধারা নিয়ে গ্রন্থকারের মতামত ও বিশ্লেষণ যুক্ত হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের কথা কার লেখা
লেখক: ড. সুকুমার সেন
বাংলা সাহিত্যের কথা ড. সুকুমার সেনের লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক গ্রন্থ, যা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন পর্যায়ের ইতিহাস এবং এর বিকাশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। এই গ্রন্থে তিনি প্রাচীন, মধ্যযুগ এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে বিশ্লেষণ করেছেন এবং বিভিন্ন কবি ও সাহিত্যিকদের অবদানকে তুলে ধরেছেন।
ড. সুকুমার সেন ছিলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত গবেষক, এবং তাঁর লেখা বাংলা সাহিত্যের কথা গ্রন্থটি বাংলা সাহি’ত্যের ইতিহাস বোঝার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।
বঙ্গভাষা ও সাহিত্য কার লেখা
গ্রন্থ: বঙ্গভাষা ও সাহিত্য
লেখক: ড. দীনেশচন্দ্র সেন
বঙ্গভাষা ও সাহিত্য ড. দীনেশচন্দ্র সেনের একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণামূলক গ্রন্থ, যা বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য সম্পর্কে গভীর বিশ্লেষণ প্রদান করে। এই গ্রন্থে তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তি, বিকাশ এবং সাহিত্যের বিভিন্ন যুগের পরিবর্তনগুলি তুলে ধরেছেন। বাংলা ভাষার প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত এর বিবর্তন, বিভিন্ন কাব্য ও সাহিত্যকর্মের ধারাবাহিকতা এবং বাংলা সাহিত্যের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব নিয়ে এই গ্রন্থটি রচিত হয়েছে।
ড. দীনেশচন্দ্র সেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণায় অসামান্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁর এই গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যপ্রেমী ও গবেষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভাষা ও সাহিত্য কার লেখা
গ্রন্থ: ভাষা ও সাহিত্য
লেখক: ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ভাষা ও সাহিত্য ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, যা ভাষা এবং সাহিত্যের সম্পর্ক, বিবর্তন ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে। ড. শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষার একজন বিখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ ছিলেন এবং তাঁর এই গ্রন্থে তিনি ভাষার গঠন, সাহিত্যিক রূপ এবং ভাষা ও সাহিত্যের পারস্পরিক প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন।
এই গ্রন্থে ভাষার আদি থেকে শুরু করে এর পরিবর্তনশীল রূপ, সাহিত্যের সাথে ভাষার সম্পর্ক এবং বাঙালির সাহিত্য সংস্কৃতির উপর বিশদ আলোচনা রয়েছে।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
Bangla/ বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য বাঙালি জাতির সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অংশ। এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সামাজিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতার প্রতিচ্ছবি বহন করে। বাংলা ভাষার উৎপত্তি থেকে শুরু করে সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে এর বিকাশ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ বাঙালির জীবনযাত্রার গভীর প্রভাব ফেলেছে।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি
বাং’লা ভাষার উৎপত্তি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার শাখা থেকে। প্রায় ১০০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে বাংলা ভাষার বিকাশ শুরু হয়। প্রাচীন বাংলা ভাষা মূলত সংস্কৃত, প্রাকৃত এবং অপভ্রংশ ভাষার মিশ্রণ থেকে উদ্ভূত হয়। বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন হিসেবে বৌদ্ধ চার্যাপদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই গানে আধ্যাত্মিক সাধনার প্রকাশ ঘটেছে, যা ছিল বাংলা ভাষার প্রথম লিখিত সাহিত্য।
বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ
সাহিত্যকে মূলত তিনটি যুগে ভাগ করা যায়:
- প্রাচীন যুগ (১০০০-১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ): বাংলা সাহিত্যের সূচনা চার্যাপদ থেকে হয়। এই সময়ের সাহিত্যধারা ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ভাবধারায় পূর্ণ ছিল।
- মধ্যযুগ (১৩৫০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ): মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্য নতুন ধারা লাভ করে। বৈষ্ণব সাহিত্য, মঙ্গলকাব্য এবং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কবিতাগুলো এই সময়ে রচিত হয়। বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাসের রচনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও মঙ্গলকাব্যের মাধ্যমে বাংলার দেব-দেবীর প্রতি ভক্তি এবং আধ্যাত্মিকতা প্রকাশ পায়।
- আধুনিক যুগ (১৮০০-বর্তমান): আধুনিক যুগে বাংলা সাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর অমিত্রাক্ষর ছন্দের মাধ্যমে বাংলা কবিতায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেন, যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর সাহিত্য কর্ম বাংলা ভাষার ধ্রুপদী রূপকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করে।
বাংলা সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য
সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য হল এর বহুমুখীতা এবং মানুষের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির সাথে নিবিড় সম্পর্ক। বাংলা কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় সমৃদ্ধ। এছাড়া বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক পরিবর্তনের প্রভাব বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি পর্যায়ে বিদ্যমান। সাহিত্যিকরা যুগে যুগে মানুষের দুঃখ-কষ্ট, আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং সমাজের পরিবর্তনগুলোর প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।
বাংলা সাহি’ত্যের ইতিহাস: বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা ৫০টি প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১: বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন কী?
উত্তর: বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন হলো বৌদ্ধ চার্যাপদ।
প্রশ্ন ২: মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক প্রকৃতি।
প্রশ্ন ৩: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান কী?
উত্তর: তিনি প্রথম নোবেল পুরস্কারজয়ী সাহিত্যিক।
প্রশ্ন ৪: বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের সূচনা কবে?
উত্তর: ১৮০০ সালের দিকে।
প্রশ্ন ৫: বিদ্যাপতি এবং চণ্ডীদাসের কাব্যের বিষয়বস্তু কী?
উত্তর: প্রেম এবং ভক্তির কবিতা।
প্রশ্ন ৬: বাংলা সাহিত্যের কোন কাব্যকে ‘মঙ্গলকাব্য’ বলা হয়?
উত্তর: দেবতাদের এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ে ভিত্তি করে লেখা কাব্য।
প্রশ্ন ৭: আধুনিক বাংলা কবিতার মূল ধারক কে?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
প্রশ্ন ৮: বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস কোনটি?
উত্তর: বঙ্গদর্শন।
প্রশ্ন ৯: বাংলা নাটকের সূচনা কবে এবং কার মাধ্যমে?
উত্তর: ১৮২২ সালে দীনবন্ধু মিত্র দ্বারা।
প্রশ্ন ১০: ‘কবিতা’র প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: ছন্দ, রূপ, শব্দচয়ন এবং ভাব প্রকাশের এক বিশেষ শৈলী।
প্রশ্ন ১১: বাংলা গদ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ১২: বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা লেখিকা কে?
উত্তর: নার্গিস দত্ত।
প্রশ্ন ১৩: বাংলা সাহিত্যে ‘বঙ্গমাতা’ কাদের বলা হয়?
উত্তর: মা লক্ষ্মী এবং মা দুর্গাকে।
প্রশ্ন ১৪: ১৯ শতকের বাংলা কবিতার প্রথম কবি কে?
উত্তর: কালীপ্রসন্ন সিংহ।
প্রশ্ন ১৫: বাংলা উপন্যাসের প্রথম নারী লেখিকা কে?
উত্তর: সেলিনা হোসেন।
প্রশ্ন ১৬: বাংলা সাহিত্যে ‘শূন্য’ শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ১৭: বাংলা সাহিত্যে ‘শেকসপিয়ার’ কে বলা হয়?
উত্তর: বিবেকানন্দ।
প্রশ্ন ১৮: বাংলা সাহিত্যে ‘পদ্মার পাড়ে’ কবিতাটি কার লেখা?
উত্তর: সুধীন্দ্রনাথ দত্ত।
প্রশ্ন ১৯: বাংলা সাহিত্যের ‘বঙ্গীয় ভাষার অশিক্ষা’ কার রচনা?
উত্তর: সুধীন্দ্রনাথ দত্ত।
প্রশ্ন ২০: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন কাব্যগ্রন্থ নোবেল পুরস্কার পেয়েছে?
উত্তর: গীতাঞ্জলি।
প্রশ্ন ২১: বাংলা সাহিত্যে ‘কবিতা’র প্রথম সঙ্গীতিক রচনা কোনটি?
উত্তর: ভূমিকাতলার কবিতা।
প্রশ্ন ২২: বাংলা ভাষার প্রথম গদ্য রচনা কোনটি?
উত্তর: বঙ্গদর্শন।
প্রশ্ন ২৩: বাংলা সাহিত্যিকদের মধ্যে ‘নন্দলাল বসু’ কাকে বলা হয়?
উত্তর: বিশ্বকবি।
প্রশ্ন ২৪: বিদ্যাপতির কোন কাব্য রূপকথার পরিচায়ক?
উত্তর: পদাবলি।
প্রশ্ন ২৫: বাংলা নাটকের প্রথম পত্রিকা কোনটি?
উত্তর: কবিতা।
প্রশ্ন ২৬: বাংলা সাহিত্যের শুরুর দিকের কবি কে?
উত্তর: কবিকঙ্কন।
প্রশ্ন ২৭: কাব্যক্ষেত্রে ‘বাংলা গদ্যের জন্ম’ কে প্রদান করেছেন?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
প্রশ্ন ২৮: ‘শিক্ষিত সমাজের জন্ম’ কাদের মধ্যে ঘটে?
উত্তর: মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে।
প্রশ্ন ২৯: ‘গদ্য’ লেখায় কে পরিচিত?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ৩০: বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন কাব্যগ্রন্থ কোনটি?
উত্তর: মহাকাব্য।
প্রশ্ন ৩১: বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস কে লিখেছেন?
উত্তর: পথের দিশা।
প্রশ্ন ৩২: ‘শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়’ কিসে পরিচিত?
উত্তর: উপন্যাসিক হিসেবে।
প্রশ্ন ৩৩: ‘মুসলিম সাহিত্য’ কে প্রসারিত করেছে?
উত্তর: মোহাম্মদ রবীন্দ্রনাথ।
প্রশ্ন ৩৪: বাংলা সাহিত্যের আধুনিক রূপ প্রতিষ্ঠা কে?
উত্তর: মধুসূদন দত্ত।
প্রশ্ন ৩৫: কবিগুরুর রচনা ‘দীর্ঘদিনের গান’ কোন কাব্যের অংশ?
উত্তর: গীতাঞ্জলি।
প্রশ্ন ৩৬: বাংলা সাহিত্যে প্রথম উপন্যাসের লেখক কে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ৩৭: বাংলা কবিতার আধুনিক রূপের সূচনা কখন হয়?
উত্তর: বিংশ শতাব্দীর শুরুতে।
প্রশ্ন ৩৮: বাংলা নাটকে প্রথম মহাকাব্য কোনটি?
উত্তর: নীল দহ।
প্রশ্ন ৩৯: বাংলা গদ্যর প্রথম শুরুর দিকে কে ছিলেন?
উত্তর: ভূমিহীন শ্রমিক।
প্রশ্ন ৪০: আধুনিক বাংলা কবিতার শুরুর দিকে কে ছিলেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আরও পড়ুন স্বাস্থ্য :
প্রশ্ন ৪১: বাংলা নাটকের গুরুত্বপূর্ণ লেখক কে?
উত্তর: দীনবন্ধু মিত্র।
প্রশ্ন ৪২: বাংলা সাহিত্যের মধ্যে ‘গীতি’ ও ‘নাটক’ কে জনপ্রিয় করেছেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ৪৩: বাংলা সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ৪৪: বাংলা সাহিত্যে ‘বাংলাদেশ’ কে প্রতিষ্ঠা করেছেন?
উত্তর: শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রশ্ন ৪৫: ‘ফেরিওয়ালা’ উপন্যাসটির লেখক কে?
উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
প্রশ্ন ৪৬: বাংলা সাহিত্যরত্ন কে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ৪৭: ‘মায়ের পরিচয়’ বইটি কে লিখেছেন?
উত্তর: শেখ সেলিনা।
প্রশ্ন ৪৮: বাংলা সাহিত্যের একজন নারীবাদী লেখিকা কে?
উত্তর: সেলিনা হোসেন।
প্রশ্ন ৪৯: বাংলা সাহিত্যে ‘নবজাগরণ’ সময়কাল কবে?
উত্তর: ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে।
প্রশ্ন ৫০: বাংলা সাহি’ত্যের ইতিহাসের উপর লেখা প্রথম গ্রন্থ কোনটি?
উত্তর: বাংলা সাহিত্যরূপ ও সাহিত্যরীতি।
উপসংহার
বাংলা সাহি’ত্যের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বহুমাত্রিক। এটি প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়েছে এবং এর মধ্যে দিয়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্ন স্তরের প্রতিফলন ঘটেছে। বাংলা সাহিত্য কেবল বিনোদন নয়, বরং এর মাধ্যমে বাঙালির চিন্তাধারা, আবেগ, সামাজিক পরিবর্তন ও সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। বাংলা সাহিত্যের এই দীর্ঘ ও গৌরবময় ইতিহাস আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অংশ।