বাচ্চাদের টিকা
বাচ্চাদের টিকা: শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টিকা দেওয়া আমাদের অত্যন্ত জরুরি। জন্মের পর থেকে শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।সেজন্য, বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা পেতে টিকা অপরিহার্য। টিকা শিশুদের শরীরে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে এবং বিভিন্ন মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। তাহলে চলুন দেখে নিই আজকের পোষ্ট এ টিকা সম্পর্কে বিস্তারিত।
টিকা কি এবং কিভাবে কাজ করে ?
টিকা হল এমন একটি পদার্থ যা শরীরে অ্যান্টিজেন বা জীবাণুর আংশিক বা সম্পূর্ণ উপস্থিতি সৃষ্টি করে, যার ফলে শরীর রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শেখে। এভাবে, ভবিষ্যতে ওই জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে শরীর দ্রুততার সাথে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। সেজন্য টিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর টিকার তালিকা
বাচ্চাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিকা গুলোর তালিকা দেওয়া হলো:
বিসিজি টিকা (BCG) :
বিসিজি টিকা শিশুর শরীরকে টিউবারকুলোসিস (যক্ষ্মা) রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখে। জন্মের পর থেকেই এটি প্রদান করা হয়।
পোলিও টিকা (Polio vaccine) :
পোলিও রোগ একটি ভয়ানক ভাইরাসজনিত রোগ যা শিশুর শরীরে পক্ষাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। পোলিও টিকা এই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। জন্মের পর এবং বিভিন্ন বয়সে এ টিকা দেওয়া হয়।
হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B) টিকা:
হেপাটাইটিস বি একটি লিভারের রোগ যা খুবই মারাত্মক হতে পারে। এই টিকা শিশুকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়।
পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা (DTwP-HepB-Hib vaccine):
এই টিকাটি ডিপথেরিয়া, পার্টুসিস (হুপিং কাশি), টিটেনাস, হেপাটাইটিস বি, এবং হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
রুবেলা, হাম এবং মাম্পস (MR) টিকা:
এই টিকা শিশুকে হাম, মাম্পস, এবং রুবেলা থেকে রক্ষা করে, যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে পারে।
ছোট বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার নিয়ম
প্রতিটি টিকার জন্য নির্দিষ্ট বয়স এবং সময় রয়েছে, যা পেডিয়াট্রিশিয়ান বা স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুদের দিতে হবে।
- জন্মের সময়: বিসিজি, পোলিও, হেপাটাইটিস বি টিকা
- ৬ সপ্তাহ: পেন্টাভ্যালেন্ট, পোলিও
- ৯ মাস: এমআর টিকা
- ১৮ মাস: বুস্টার ডোজ
টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
যদিও টিকা শিশুদের সুস্থ রাখে, কিছু ক্ষেত্রে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন:
- টিকা দেওয়ার স্থানে লালচে ভাব বা ফোলা
- সামান্য জ্বর
- খিটখিটে মেজাজ
তবে, এসব লক্ষণ খুবই স্বাভাবিক এবং কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়।
টিকা নেওয়ার পর কী করবেন?
টিকা নেওয়ার পর শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে এবং যদি জ্বর বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দেয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চাদের সরকারি টিকার তালিকা
বাংলাদেশে বাচ্চাদের জন্য সরকার কর্তৃক প্রদত্ত টিকাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন মারাত্মক সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে। সরকার শিশুদের বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা প্রত্যেক শিশুর জন্য নিশ্চিত করতে হয়। নিচে সরকারি টিকা (বাচ্চাদের টিকা) একটি তালিকা দেওয়া হলো:
বিসিজি (BCG) টিকা
রোগ প্রতিরোধ: যক্ষ্মা (টিউবারকুলোসিস)
প্রয়োগের সময়: জন্মের পরই
কেন গুরুত্বপূর্ণ: যক্ষ্মা একটি প্রাণঘাতী ব্যাধি, যা ফুসফুস এবং অন্যান্য অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিসিজি টিকা শিশুদের এই মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
হেপাটাইটিস বি টিকা
রোগ প্রতিরোধ: হেপাটাইটিস বি
প্রয়োগের সময়: জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে
কেন গুরুত্বপূর্ণ: হেপাটাইটিস বি একটি ভাইরাসজনিত লিভারের সংক্রমণ, যা দীর্ঘমেয়াদে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার তৈরি করতে পারে। এই টিকা শিশুকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
পোলিও টিকা (ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন – OPV)
রোগ প্রতিরোধ: পোলিওমাইলাইটিস (পোলিও)
প্রয়োগের সময়: জন্মের পর এবং পরবর্তী ধাপে (৬, ১০, ১৪ সপ্তাহে)
কেন গুরুত্বপূর্ণ: পোলিও একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা পক্ষাঘাত বা পঙ্গুত্ব সৃষ্টি করতে পারে। এই টিকা পোলিও ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা
রোগ প্রতিরোধ: ডিপথেরিয়া, পার্টুসিস (হুপিং কাশি), টিটেনাস, হেপাটাইটিস বি, এবং হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি
প্রয়োগের সময়: ৬, ১০, ১৪ সপ্তাহে
কেন গুরুত্বপূর্ণ: এই একক টিকা পাঁচটি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, যা শিশুদের শরীরকে সুরক্ষিত রাখে।
পিসিভি (PCV) টিকা
রোগ প্রতিরোধ: নিউমোনিয়া এবং মেনিনজাইটিস
প্রয়োগের সময়: ৬, ১০, ১৪ সপ্তাহে
কেন গুরুত্বপূর্ণ: নিউমোনিয়া এবং মেনিনজাইটিস শিশুদের মধ্যে প্রচলিত এবং ভয়াবহ রোগ, যা সঠিক সময়ে প্রতিরোধ করা না গেলে শিশুর মৃত্যুও ঘটতে পারে।
ইনঅ্যাক্টিভেটেড পোলিও ভ্যাকসিন (IPV)
রোগ প্রতিরোধ: পোলিও
প্রয়োগের সময়: ১৪ সপ্তাহ
কেন গুরুত্বপূর্ণ: পোলিও ভাইরাস থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে IPV দেওয়া হয়। এটি শিশুর ইমিউন সিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করে।
এমআর টিকা (MR)
রোগ প্রতিরোধ: হাম এবং রুবেলা
প্রয়োগের সময়: ৯ মাস এবং ১৫ মাস
কেন গুরুত্বপূর্ণ: হাম ও রুবেলা শিশুদের মারাত্মক রোগ, যা মস্তিষ্ক, শ্বাসতন্ত্র এবং ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এমআর টিকা এই রোগগুলোর প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।
রোটা ভাইরাস টিকা
রোগ প্রতিরোধ: ডায়রিয়া (রোটা ভাইরাস সংক্রমণ)
প্রয়োগের সময়: ৬ এবং ১০ সপ্তাহে
কেন গুরুত্বপূর্ণ: রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া শিশুদের মধ্যে মারাত্মক ডায়রিয়ার কারণ, যা তরল শুন্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই টিকা শিশুদের ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করে।
জাপানিজ এনসেফালাইটিস (JE) টিকা
রোগ প্রতিরোধ: জাপানিজ এনসেফালাইটিস
প্রয়োগের সময়: নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রদত্ত, ১২ মাস বয়সে
কেন গুরুত্বপূর্ণ: জাপানিজ এনসেফালাইটিস একটি মস্তিষ্কের সংক্রমণ, যা মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এটি শিশুর মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর সমস্যা তৈরি করে।
বুস্টার ডোজ:
বাচ্চাদের আরও সুরক্ষিত রাখতে নির্দিষ্ট বয়সে (১৮ মাস এবং ৫ বছর) পেন্টাভ্যালেন্ট, পোলিও এবং এমআর টিকার বুস্টার ডোজ প্রদান করা হয়, যা প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করে।
টি টি টিকা (Tetanus vaccine)
টি টি টিকা (টিটেনাস টক্সয়েড) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধক যা টিটেনাস রোগের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। টিটেনাস রোগটি ক্লস্ট্রিডিয়াম টিটানি নামক একটি ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে, যা সাধারণত মাটিতে, ধূলা এবং পশুর মলমূত্রে পাওয়া যায়। যখন কোনো কাটা, ক্ষত বা ছিদ্রের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে, তখন তা নার্ভ সিস্টেমকে আক্রমণ করে এবং পেশিতে কঠোরতা ও খিঁচুনি সৃষ্টি করতে পারে। এটি জীবনের জন্য মারাত্মক হতে পারে, তবে টি টি টিকা এই রোগের প্রতিরোধে কার্যকর।
টিটি টিকা কখন দিতে হয় (tt tika)
শিশুদের জন্য:
শিশুরা সাধারণত পেন্টাভ্যালেন্ট টিকার মাধ্যমে টিটেনাসের টিকা পায়, যা একাধিক রোগ প্রতিরোধ করে। সময়সূচি হলো:
- প্রথম ডোজ: ৬ সপ্তাহ বয়সে
- দ্বিতীয় ডোজ: ১০ সপ্তাহ বয়সে
- তৃতীয় ডোজ: ১৪ সপ্তাহ বয়সে
এই তিনটি ডোজ শিশুদের ডিপথেরিয়া, পার্টুসিস, টিটেনাস এবং হেপাটাইটিস বি-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য:
গর্ভাবস্থায় টি টি টিকা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মা এবং গর্ভের শিশুকে টিটেনাসের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দেয়। সময়সূচি হলো:
- প্রথম গর্ভাবস্থায়:
- প্রথম ডোজ: গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে (১৬-২০ সপ্তাহে)।
- দ্বিতীয় ডোজ: প্রথম ডোজের ৪ সপ্তাহ পর।
- পরবর্তী গর্ভাবস্থায়:
- যদি আগের গর্ভাবস্থায় টি টি টিকা দেওয়া হয়ে থাকে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে হয়, তাহলে একটি বুস্টার ডোজ যথেষ্ট। যদি পাঁচ বছরের বেশি সময় হয়ে যায়, তাহলে দুই ডোজ আবার দেওয়া হয়।
কাটা বা আঘাতপ্রাপ্তদের জন্য:
কোনো ব্যক্তি গুরুতর কাটা বা আঘাত পেলে এবং যদি আগের টি টি টিকা নেওয়ার পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় পার হয়ে যায়, তাহলে টিটেনাস থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য একটি বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়।
- আঘাতের পর প্রথম ডোজ: দ্রুত যত দ্রুত সম্ভব দিতে হবে।
- যদি আগের ডোজ পাঁচ বছরের কম হয়: সাধারণত নতুন টিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
বুস্টার ডোজ:
প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে এবং টিটেনাসের দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতি দশ বছর পর পর একটি বুস্টার ডোজ দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে, যারা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করে বা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাদের নিয়মিত বুস্টার ডোজ নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন:
E Cap Capsule – কিভাবে কাজ করে ও উপকারিতা
টিটি টিকা কেন দেওয়া হয়
টি টি টিকা দেওয়ার কারণসমূহ নিচের দেওয়া হলো:
- টিটেনাস রোগ প্রতিরোধ: টিটেনাস একটি গুরুতর ও জীবন-সংকটময় রোগ। যেহেতু এটি নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসায় নিরাময় করা যায় না, তাই এই রোগ প্রতিরোধে একমাত্র কার্যকর উপায় হলো টি টি টিকা গ্রহণ।
- গর্ভবতী মায়েদের এবং নবজাতকের সুরক্ষা: গর্ভবতী মায়েদের টিটেনাসের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে এবং তাদের নবজাতককে সুরক্ষিত রাখতে টি টি টিকা দেওয়া হয়। গর্ভবতী মায়েরা যদি এই টিকা গ্রহণ করেন, তবে শিশুর জন্মের পর তার মধ্যেও টিটেনাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।
- আঘাতপ্রাপ্তদের ঝুঁকি কমানো: কোনো ব্যক্তি যদি গুরুতর আঘাত পায় বা কোনো কিছু দ্বারা কেটে যায়, তখন তাদের শরীরে টিটেনাসের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। যারা আগের পাঁচ বছরে টি টি টিকা গ্রহণ করেনি, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে এই টিকা দেওয়া হয়।
- পেশাগত ঝুঁকির কারণে: যেসব মানুষ মাটি, ধূলাবালি, বা পশুর সংস্পর্শে বেশি থাকে, যেমন কৃষক বা নির্মাণকর্মী, তাদের ক্ষেত্রে টিটেনাসের ঝুঁকি বেশি। তাই এই ধরনের পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের নিয়মিত বুস্টার ডোজ নেওয়া উচিত।
টিটি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
টি টি টিকা সাধারণত নিরাপদ, তবে কিছু ক্ষেত্রে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতেও পারে। যেমন:
- টিকা দেওয়ার স্থানে ব্যথা বা ফোলা
- সামান্য জ্বর
- ক্লান্তি বা মাথা ব্যথা
এসব লক্ষণ খুব স্বাভাবিক এবং সাধারণত এক বা দুই দিনের মধ্যে সেরে যায়, চিন্তার কোন কারন নেই।
পোলিও টিকা – Polio vaccine
এটি একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা পোলিওমাইলাইটিস ভাইরাসের কারণে হয়। এই ভাইরাস সাধারণত শিশুদের আক্রমণ করে এবং পেশী দুর্বলতা বা পক্ষাঘাতের কারণ হতে পারে। বিশ্বজুড়ে পোলিও নির্মূলের জন্য পোলিও টিকা একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায় হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পোলিও টিকা খাওয়ানোর নির্দিষ্ট সময়সূচি রয়েছে যা শিশুর জন্মের পর থেকেই শুরু হয়। (বাচ্চাদের টিকা)
পোলিও টিকা খাওয়ানোর বয়স
১. জন্মের পর (০-১ মাসের মধ্যে):
- প্রথম ডোজ: পোলিও টিকার (ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন বা OPV) প্রথম ডোজ শিশুর জন্মের পরই দেওয়া হয়। এটিকে বার্থ ডোজ বা শূন্য ডোজ বলা হয়, যা নবজাতককে পোলিও ভাইরাসের প্রাথমিক প্রতিরোধ দিতে সাহায্য করে।
২. ৬ সপ্তাহ বয়সে:
- দ্বিতীয় ডোজ: শিশুর বয়স ৬ সপ্তাহ হলে, OPV-এর দ্বিতীয় ডোজ খাওয়ানো হয়। এছাড়াও, ইনঅ্যাকটিভেটেড পোলিও ভ্যাকসিন (IPV) প্রথমবার ইনজেকশন হিসেবে দেওয়া হয়, যা ভাইরাসকে শরীরের ভেতরে সক্রিয় হওয়া থেকে বাধা দেয়।
৩. ১০ সপ্তাহ বয়সে:
- তৃতীয় ডোজ: শিশুর বয়স যখন ১০ সপ্তাহ হয়, তখন OPV-এর তৃতীয় ডোজ খাওয়ানো হয়। এটি শিশুর শরীরে আরও প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে।
৪. ১৪ সপ্তাহ বয়সে:
- চতুর্থ ডোজ: শিশুর বয়স ১৪ সপ্তাহ হলে OPV-এর চতুর্থ ডোজ খাওয়ানো হয়। এই ডোজ শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
৫. ৯ মাস বয়সে:
- পঞ্চম ডোজ: শিশুর বয়স যখন ৯ মাস হয়, তখন OPV-এর বুস্টার ডোজ খাওয়ানো হয়, যা শিশুর শরীরে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
৬. ১.৫-২ বছর বয়সে:
- দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ: শিশুর বয়স ১.৫-২ বছর হলে একটি বুস্টার ডোজ খাওয়ানো হয়, যা তাকে দীর্ঘমেয়াদে পোলিও ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
হামের টিকা Measles vaccine
হাম একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ, যা সাধারণত শিশুদের আক্রমণ করে। এই রোগের উপসর্গগুলো বেশ মারাত্মক হতে পারে, যেমন জ্বর, চোখে লালভাব, সর্দি, কাশি, এবং লালচে দানাদার র্যাশ বা ফুসকুড়ি। হামের বিরুদ্ধে টিকা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই রোগ থেকে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, মস্তিষ্কে প্রদাহ (এনসেফালাইটিস) ইত্যাদি।
হামের টিকার নাম কি
এ টিকা সাধারণত এমএমআর (MMR) টিকা নামে পরিচিত, যা মাম্পস (Mumps), রুবেলা (Rubella) এবং হাম (Measles)—এই তিনটি রোগ থেকে রক্ষা করে।
হামের টিকা কখন দিতে হয়
১. প্রথম ডোজ:
- কখন দেওয়া হয়: সাধারণত শিশুর বয়স ৯-১২ মাসের মধ্যে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়।
- কেন দেওয়া হয়: এই ডোজ শিশুর শরীরে হামের বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।
২. দ্বিতীয় ডোজ:
- কখন দেওয়া হয়: দ্বিতীয় ডোজটি শিশুর বয়স ১৫-১৮ মাসে দেওয়া হয়। কিছু দেশে ৪-৬ বছর বয়সেও এই টিকা দেওয়া হতে পারে।
- কেন দেওয়া হয়: দ্বিতীয় ডোজ শিশুর শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং ভবিষ্যতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।