ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা
ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা : ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা: সুস্থ থাকার জন্য আমাদের ব্যায়াম করতে হবে। এখন বর্তমানে পৃথিবীতে হাজার হাজার রোগ আছে।
একজন মানুষ দেহের ওজন কমানো, সুগঠিত মাংসপেশি কিংবা সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম করছেন? সেই সাথে যদি আপনি অস্বাভাবিক কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবার খান তাহলে ব্যায়ামের কোনো উপকারই পাবেন না। এতে দেহের ওজন যেমন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে তেমন উপকারও পাওয়া যাবে না।
এ কারণে ব্যায়াম করার পাশাপাশি কিছু খাবারও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাই অনেকে জিমে যান, অনেকে ঘরে ব্যায়াম করেন।
ব্যায়াম করছেন আবার ইচ্ছামতো খাবারও খেয়ে নিচ্ছেন। ভাবছেন, ব্যায়াম করলে তো খাবারের সব শক্তি হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা নয়। খাবেন, ইচ্ছামতো নয়, নিয়ম করে খান।
জিম এর খাদ্য তালিকা
একটি সঠিক খাদ্য তালিকা শরীরকে পুষ্টি জোগায় এবং ব্যায়ামের সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে সাহায্য করে। এখানে একটি সাধারণ খাদ্য তালিকা দেওয়া হলো:
প্রাতঃরাশ/ সকালে:
- ওটমিল বা ব্রাউন ব্রেড
- ডিম (সিদ্ধ বা পোচ)
- এক গ্লাস দুধ বা বাদামের দুধ
- একটি ফল (যেমন কলা, আপেল)
দুপুরের খাবার লিস্ট:
- ব্রাউন রাইস বা কোয়inoa
- মুরগির মাংস বা মাছ
- সবুজ শাকসবজি (ব্রকলি, পালং শাক)
- ডাল বা ছোলা
সন্ধ্যাবেলা স্ন্যাকস লিস্ট:
- বাদাম, কাঠবাদাম বা চিনাবাদাম
- গ্রীক দই বা লো-ফ্যাট দই
- একটি প্রোটিন শেক (ব্যায়ামের আগে বা পরে)
রাতের খাবার লিস্ট:
- গ্রিলড চিকেন বা ফিশ
- মিষ্টি আলু বা স্যালাড
- সবজি (গাজর, বীট)
অতিরিক্ত টিপস লিস্ট:
- পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
- প্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে পেশির গঠন নিশ্চিত করতে হবে।
- প্রাকৃতিক চিনি (ফল) গ্রহণ করুন, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
ব্যায়াম করার আগে কখন খাবেন
ব্যায়াম শুরু করার ৩০ মিনিট থেকে ৪ ঘণ্টা আগে প্রি-ওয়ার্কআউট খাবার খেয়ে বা নাশতা করে নিতে হবে। কারণ, খাবার হজমের পরই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যাবে।
ভারী খাবার খেতে হলে তা ব্যায়ামের ২-৩ ঘণ্টা আগে খেতে হবে আর নাশতার জন্য এ সময় হবে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। এ নিয়ম মেনে চললে ব্যায়ামের সময়ে যথাযথ শক্তিই পাওয়া যাবে, জানান পুষ্টিবিদরা।
- প্রথমে কখনোই খালি পেটে ব্যায়াম করতে যাবেন না। ব্যায়ামের ফলে যে চাপ পড়বে সেটি শরীরের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। যার ফলে হাইপোগ্লেসিমিয়া হয়ে শরীর অবসন্ন হয়ে যেতে পারে। তাই কখনোই খালি পেটে ব্যায়াম করতে যাবেন না। হালকা কিছু খেতে পারেন যেমন, ২টা কলা এক গ্লাস পানি।
- ডায়াবেটিক হলে ভারি খাবারের পর ব্যায়াম করা প্রয়োজন। তবে সাধারণ লোকের জন্য ভারি খাবারের দুই তিন ঘণ্টা পর ব্যায়াম করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এতে দেহের শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে। ডায়াবেটিক হলে কখনো খালি পেটে বা হালকা খেয়ে ব্যায়াম করবেন না। মোটামুটি ভারি ধরনের কিছু খাবেন তারপর ১৫ মিনিট পর ব্যায়াম শুরু করবেন।
- জিমে বা ব্যায়ামে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে কাবোর্হাইড্রেট জাতীয় খাবার খেতে হবে। ব্যায়ামের আগে বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে পারেন। ব্যায়ামের আগে খাওয়ার জন্য আপেল বেশ আদর্শ ফল। এর পাশাপাশি কলা, টোস্ট, কর্নফ্লাকস এগুলোও খেতে পারেন। এই খাবারগুলো হজম হতে কম সময় লাগে এবং ব্যায়ামের আগে শরীরে শক্তি জোগাবে। এ ছাড়া ব্যায়ামের আগে অবশ্যই এক গ্লাস পানি পান করে নেবেন। এর ফলে শরীর ভালোভাবে আর্দ্র থাকবে।
জিম করার আগে কি খাওয়া উচিত
জিম করার আগে সঠিক খাবার গ্রহণ শরীরকে পর্যাপ্ত শক্তি ও সহনশীলতা দেয়। সাধারণত, ব্যায়াম শুরুর ৩০-৬০ মিনিট আগে হালকা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। জিমের আগে কিছু স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট যেমন ওটমিল, ব্রাউন ব্রেড, ফলমূল (যেমন কলা বা আপেল) খাওয়া ভালো, কারণ এগুলো দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।
প্রোটিনও গুরুত্বপূর্ণ, যা পেশির পুনর্গঠন ও শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যেমন একটুখানি বাদাম, দই, বা ডিম। এছাড়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি, যাতে শরীর হাইড্রেট থাকে এবং ব্যায়ামের সময় ক্লান্তি কমে।
সকালে ব্যায়াম করার আগে কি খাওয়া উচিত
ব্যায়াম শুরুর ৩০-৬০ মিনিট আগে হালকা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। সকালে ব্যায়ামের আগে আপনি ওটমিল, ব্রাউন ব্রেড, ফলমূল (যেমন কলা বা আপেল) খাওয়া ভালো, কারণ এগুলো দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে থাকে।
ব্যায়াম করার পর খাবারের তালিকা
- আপনার শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি ঘাম বেশি হয়, আর্দ্রতা বেশি থাকে বা ৬০ মিনিটের বেশি ভারী ব্যায়াম করেন, তবে শুধু পানি নয়, ভালো মানের স্পোর্টস ড্রিঙ্ক পান করাও প্রয়োজন। তবে কম কষ্টের ব্যায়ামের জন্য শুধু পানি যথেষ্ট। পানি পানির কোনো বিকল্প নেই।
- খাওয়া শুরু করুন ‘আসল’খাবার । খাবার থেকেই আসে আপনার জীবনীশক্তি।
- প্রাকৃতিক, টাটকা খাবার গ্রহণ করুন এবং প্রক্রিয়াজাত, ফাস্টফুড, তেলেভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
-
ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা
- ওজন কমানোর জন্য ব্যায়ামের পর অতিরিক্ত খাবেন না। অনেকেই মনে করেন ব্যায়ামের পর বেশি খাওয়া ঠিক আছে, কিন্তু এতে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ হয়ে ওজন বাড়তে পারে। অতিরিক্ত ক্যালোরি ফ্যাট বাড়িয়ে মোটা হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।
- ওজন আর নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। মোটামুটি কত ক্যালোরি ক্ষয় করলেন এবং কত ক্যালোরির খাবার খাবেন তার ব্যাপারে লক্ষ্য রাখুন। এটা ওজন, বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী একেক জনের একেক রকম।
- শর্করা- গ্লাইকোজেন শরীরের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। আর ব্যায়ামের পর কমে যাওয়া গ্লাইকোজেন বাড়াতে সাহায্য করে শর্করা।
- ব্যায়াম করার ৩০ মিনিটের মধ্যে আপনার ওজন অনুসারে শূন্য দশমিক ৫ থেকে শূন্য দশমিক ৭ গ্রাম শর্করা খেতে হবে। মিষ্টি আলু, দুধ, ফলের মধ্যে আনারস বা কলা, মুড়ি, ভাত, ওটমিল, আলু, পাস্তা, গমের আটার রুটি শরীরে শর্করার কমতি পূরণ করবে।
- পরেও খেতে হবে পানি- ব্যায়ামের সময় শরীর থেকে পানি ও ইলেকট্রোলাইটস কমে যায়। ব্যায়ামের ১২ ঘণ্টা আগেই শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
ভারী বা মাঝারি—সব ধরনের ব্যায়ামের পরই সঠিক পরিমাণ ও ধরনের খাবার দরকার। আর তরুণদের ক্ষেত্রেও এর বিকল্প নেই। সঠিক খাবার সঠিক সময়ে খেলেই পাওয়া যাবে ব্যায়ামের সঠিক সুফল।
খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করা উচিত
খাবারের পর ব্যায়াম করার সময়ের ওপর নির্ভর করে আপনি কী ধরনের খাবার খেয়েছেন। হালকা খাবার খেলে সাধারণত ৩০-৬০ মিনিট পর ব্যায়াম করা যায়। এই সময়ের মধ্যে শরীর হালকা খাবার হজম করতে পারে এবং আপনাকে পর্যাপ্ত শক্তি দেয়।
তবে, ভারী খাবার (যেমন ভাত, পাস্তা, মাংস) খেলে অন্ততপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করা উচিত, কারণ শরীরকে এই ধরনের খাবার হজম করতে বেশি সময় লাগে। হজম না হলে ব্যায়ামের সময় অস্বস্তি, পেট ফাঁপা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। তাই হালকা ও ভারী খাবারের উপর নির্ভর করে সময় ঠিক করা জরুরি।
আরও জানুন!
সর্বশেষ কথা-
ব্যায়াম করার আগে ও পরে আপনাকে কি কি করতে হবে এবং কি কি করা নিষেধ সেই দিকে খেয়াল মাস্ট রাখতে হবে। মনে রাখবেন, ব্যায়াম আপনার শরীরের সুস্থ থাকার জীবন। সেই জন্য সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করার আগে ও পরে কি খেতে হবে সেই দিকে লক্ষ্য রাখবেন। সবার সুস্থ কামনা আশা করছি।
উপসংহার:
ব্যায়ামের পর সঠিক খাবার খাওয়া শরীরের পুনর্গঠনে সহায়ক। প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার পেশি পুনর্নির্মাণ ও শক্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। যেমন, গ্রিলড মুরগি, ডিম, মাছ, বাদাম বা দই প্রোটিন সরবরাহ করে, এবং ব্রাউন রাইস বা মিষ্টি আলু থেকে প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট মেলে। পর্যাপ্ত পানি পান করে শরীরকে হাইড্রেট রাখা অপরিহার্য। স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অ্যাভোকাডো বা অলিভ অয়েল পেশি ও হাড়ের জন্য উপকারী। সঠিক পরিমাণে এবং সময়ে খাওয়া ব্যায়ামের সর্বোচ্চ ফলাফল নিশ্চিত করতে সহায়ক।