ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা

ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা

শেয়ার করুন

সুস্থ থাকার জন্য আমাদের ব্যায়াম করতে হবে। এখন বর্তমানে পৃথিবীতে হাজার হাজার রোগ আছে। এসব রোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে , নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমরা কেউ বা না চাই। তাই আপনাকে নিয়মিত নূন্যতম ৩০ মিনিট প্রতিদিন ব্যায়ামের পিছনে ব্যয় করতে হবে।

একজন মানুষ  দেহের ওজন কমানো, সুগঠিত মাংসপেশি কিংবা সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম করছেন? সেই সাথে যদি আপনি অস্বাভাবিক কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবার খান তাহলে ব্যায়ামের কোনো উপকারই পাবেন না। এতে দেহের ওজন যেমন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে তেমন উপকারও পাওয়া যাবে না।

এ কারণে ব্যায়াম করার পাশাপাশি কিছু খাবারও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।  তাই অনেকে জিমে যান, অনেকে ঘরে ব্যায়াম করেন। ব্যায়াম করছেন আবার ইচ্ছামতো খাবারও খেয়ে নিচ্ছেন। ভাবছেন, ব্যায়াম করলে তো খাবারের সব শক্তি হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা নয়। খাবেন, ইচ্ছামতো নয়, নিয়ম করে খান। ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা

ব্যায়াম শুরু করার ৩০ মিনিট থেকে ৪ ঘণ্টা আগে প্রি-ওয়ার্কআউট খাবার খেয়ে বা নাশতা করে নিতে হবে। কারণ, খাবার হজমের পরই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যাবে। ভারী খাবার খেতে হলে তা ব্যায়ামের ২-৩ ঘণ্টা আগে খেতে হবে আর নাশতার জন্য এ সময় হবে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। এ নিয়ম মেনে চললে ব্যায়ামের সময়ে যথাযথ শক্তিই পাওয়া যাবে, জানান পুষ্টিবিদরা।

ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা
ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা
  • প্রথমে কখনোই খালি পেটে ব্যায়াম করতে যাবেন না। ব্যায়ামের ফলে যে চাপ পড়বে সেটি শরীরের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। যার ফলে হাইপোগ্লেসিমিয়া হয়ে শরীর অবসন্ন হয়ে যেতে পারে। তাই কখনোই খালি পেটে ব্যায়াম করতে যাবেন না। হালকা কিছু খেতে পারেন যেমন, ২টা কলা এক গ্লাস পানি।
  • ডায়াবেটিক হলে ভারি খাবারের পর ব্যায়াম করা প্রয়োজন। তবে সাধারণ লোকের জন্য ভারি খাবারের দুই তিন ঘণ্টা পর ব্যায়াম করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এতে দেহের শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে। ডায়াবেটিক হলে কখনো খালি পেটে বা হালকা খেয়ে ব্যায়াম করবেন না। মোটামুটি ভারি ধরনের কিছু খাবেন তারপর ১৫ মিনিট পর ব্যায়াম শুরু করবেন।
  • জিমে বা ব্যায়ামে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে কাবোর্হাইড্রেট জাতীয় খাবার খেতে হবে। ব্যায়ামের আগে বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে পারেন। ব্যায়ামের আগে খাওয়ার জন্য আপেল বেশ আদর্শ ফল। এর পাশাপাশি কলা, টোস্ট, কর্নফ্লাকস এগুলোও খেতে পারেন। এই খাবারগুলো হজম হতে কম সময় লাগে এবং ব্যায়ামের আগে শরীরে শক্তি জোগাবে। এ ছাড়া ব্যায়ামের আগে অবশ্যই এক গ্লাস পানি পান করে নেবেন। এর ফলে শরীর ভালোভাবে আর্দ্র থাকবে।

ব্যায়াম করার পর খাবারের তালিকা

  • যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করুন। আপনার যদি খুব বেশি ঘাম হয়ে থাকে, আবহাওয়া বেশি আর্দ্র হয়ে থাকে বা ৬০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ভারী ব্যায়াম করেন, তবে শুধু পানি নয়, কোনো একটি ভালো মানের স্পোর্টস ড্রিঙ্ক পান করা আপনার জন্য জরুরি। এর চাইতে কম সময় ধরে এবং কম কষ্টের ব্যায়াম করলে আপনার জন্য পানি পান করাই যথেষ্ট। তবে পানির কোন বিকল্প আসলে নেই।
  •  খাওয়া শুরু করুন ‘আসল’খাবার । খাবার থেকেই আসে আপনার জীবনীশক্তি। এ কারণে প্রাকৃতিক, টাটকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং এড়িয়ে চলুন প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, তেলেভাজা সব কিছু এবং রাসায়নিকযুক্ত খাবার। আপনার ফাস্টফুড ও তেলেভাজা জিনিস গুলো আপনার হার্ট এ্যাটাক ও স্টকের ঝুুকি বেশি পরিমান বাড়িয়ে তুলবে। আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম না করেও থাকেন, তাহলেও এমন সুস্থ একটি খাদ্যভ্যাস আপনার জীবনের মান উন্নত করতেও সাহায্য করবে।
  • প্রোটিন ছাড়াও অন্যান্য খাবার খান । পেশি তৈরির মুল উপাদান হলো প্রোটিন, তাই ব্যায়ামের পর প্রোটিন খাওয়া জরুরী। কিন্তু প্রোটিন ছাড়াও খেতে হবে ভালো চর্বি যা পেশি এবং জয়েন্টের ক্ষতি সারিয়ে তোলে। প্রতিটা ভিটামিন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। এ ছাড়াও ভিটামিনযুক্ত খাবার এবং স্টার্চ জাতীয় শর্করা যেমন মিষ্টি আলু অথবা শিম। পান করতে পারেন ফল, সবজি, শাক,  খেতে পারেন সবজি মেশানো ডিমভাজি।

    ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা

  •  অতিরিক্ত খেয়ে ফেলবেন না । ব্যায়ামের উদ্দেশ্য যদি ওজন কমানো হয়, তবে ব্যায়ামের পর অতিরিক্ত খেয়ে ফেলবেন না। অনেকে ভাবেন যে, এতক্ষণ ব্যায়ামের পর একটু বেশি তো খাওয়াই যায়। কিন্তু একটু বেশি খেতে খেতেই অনেক বেশি ক্যালোরি খাওয়া হয়ে যাবে। আর বেশি ক্যালোরি হলে আপনার ফ্যাট এর পরিমান বেড়ে যাবেন অথ্যা মোটা হয়ে যাবেন। ওজন আর নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। মোটামুটি কত ক্যালোরি ক্ষয় করলেন এবং কত ক্যালোরির খাবার খাবেন তার ব্যাপারে লক্ষ্য রাখুন। এটা ওজন, বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী একেক জনের একেক রকম।
  • শর্করা- গ্লাইকোজেন শরীরের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। আর ব্যায়ামের পর কমে যাওয়া গ্লাইকোজেন বাড়াতে সাহায্য করে শর্করা। ব্যায়াম করার ৩০ মিনিটের মধ্যে আপনার ওজন অনুসারে শূন্য দশমিক ৫ থেকে শূন্য দশমিক ৭ গ্রাম শর্করা খেতে হবে। মিষ্টি আলু, দুধ, ফলের মধ্যে আনারস বা কলা, মুড়ি, ভাত, ওটমিল, আলু, পাস্তা, গমের আটার রুটি শরীরে শর্করার কমতি পূরণ করবে।
  • পরেও খেতে হবে পানি- ব্যায়ামের সময় শরীর থেকে পানি ও ইলেকট্রোলাইটস কমে যায়। ব্যায়ামের ১২ ঘণ্টা আগেই শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে হবে।

ভারী বা মাঝারি—সব ধরনের ব্যায়ামের পরই সঠিক পরিমাণ ও ধরনের খাবার দরকার। আর তরুণদের ক্ষেত্রেও এর বিকল্প নেই। সঠিক খাবার সঠিক সময়ে খেলেই পাওয়া যাবে ব্যায়ামের সঠিক সুফল।

আরও জানুন!

সর্বশেষ কথা-

ব্যায়াম করার আগে ও পরে আপনাকে কি কি করতে হবে এবং কি কি করা নিষেধ সেই দিকে খেয়াল মাস্ট রাখতে হবে। মনে রাখবেন, ব্যায়াম আপনার শরীরের সুস্থ থাকার জীবন। সেই জন্য সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করার আগে ও পরে কি খেতে হবে সেই দিকে লক্ষ্য রাখবেন। সবার সুস্থ কামনা আশা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *