ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে: কোনো ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে যে উপাদানসমূহ পাওয়া যায় সেগুলোকে পৃথকভাবে ধ্বনি বলে। ধ্বনির সঙ্গে সাধারণত অর্থের সংশ্লিষ্টতা থাকে না, ধ্বনি তৈরি হয় বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে। ধ্বনি তৈরিতে যেসব বাগ্-প্রত্যঙ্গ সহায়তা করে সেগুলো হলো ফুসফুস, গলনালি, জিহ্বা, তালু, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট, নাক ইত্যাদি।
মানুষ ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে। ফুসফুস থেকে বাতাস বাইরে আসার সময় মুখের বিভিন্ন জায়গায় বাধা পায়। ফলে মুখে নানা ধরনের ধ্বনির সৃষ্টি হয়। তবে সব ধ্বনিই সব ভাষা গ্রহণ করে না।
বাংলা ভাষায় ব্যবহূত ধ্বনিগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয় :
- স্বরধ্বনি
- ব্যঞ্জনধ্বনি।
স্বরধ্বনি:
যে ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া নিজেই সম্পূর্ণভাবে উচ্চারিত হয় এবং যাকে আশ্রয় করে অন্য ধ্বনির সৃজন হয়, তাকে স্বরধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি সাতটি। যথা অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।
স্বরধ্বনির উচ্চারণ
ই এবং ঈ-ধ্বনির উচ্চারণে জিহবা এগিয়ে আসে এবং উচ্চে অগ্রতালুর কঠিনাংশের কাছাকাছি পৌছে। এ ধ্বনির উচ্চারণে জিহবার অবস্থান ই-ধ্বনির মতাে সম্মুখেই হয়, কিন্তু একটু নিচে এবং আ-ধ্বনির বেলায় আরও নিচে। ই ঈ এ (অ) ধ্বনির উচ্চারণে জিহবা এগিয়ে সম্মুখভাগে দাঁতের দিকে আসে বলে এগুলােকে বলা হয় সম্মুখ ধ্বনি। ই এবং ঈ-র উচ্চারণের কেলায় জিহবা উচ্চে থাকে। তাই এগুলাে উচ্চসম্মুখ স্বরধ্বনি। এ মধ্যাবস্ধিত সম্মুখ স্বরধ্বনি এবং অ নিম্নাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি।
উ এবং উ-ধ্বনি উচ্চারণে জিহ্বা পিছিয়ে আসে এবং পশ্চাৎ তালুর কোমল অংশের কাছাকাছি ওঠে। ও-ধ্বনির উচ্চারণে জিহবা আরও একটু নিচে আসে। অ-ধ্বনির বেলায় তার চেয়েও নিচে আসে। উ উ ও অ-ধ্বনির উচ্চারণে জিহবা পিছিয়ে আসে বলে এগুলােকে পশ্চাৎ স্বরধ্বনি কলা হয়। উ ও উ-ধ্বনির উচ্চারণকালে জিহ্বা উচ্চে থাকে বলে এদের কলা হয় উচ্চ পশ্চাৎ স্রধ্বনি ও মধ্যাবস্থিত পশ্চাৎ সবরধ্বনি এবং অ-নিয্নাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি। বাংলা আ-ধ্বনির উচ্চারণে জিহবা সাধারণত শায়িত অবস্থায় থাকে এবং কণ্ঠের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং মুখের সম্মুখ ও পশ্চাৎ অংশের মাঝামাঝি বা কেন্দ্রস্থানীয় অংশে অবস্থিত বলে আ-কে কেন্দ্রীয় নিম্নাবস্থিত স্বরধ্বনি এবং বিবৃত ধ্বনিও বলা হয়। ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
* উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ । যেমন — (১) কণ্ঠধ্বনি, (২) তালব্য ধ্বনি, (৩) ওষ্ঠ ধ্বনি, (৪) কন্ঠ তালব্য ধ্বনি, (৫) কান্ঠ্যোষ্ট ধ্বনি, (৬) মূর্ধন্য ধ্বনি ।
(১) অ , আ → কণ্ঠধ্বনি ( কণ্ঠের সাহায্যে উচ্চারিত হয় বলে )
(২) ই, ঈ → তালব্য ধ্বনি ( তালুর সাহায্যে উচ্চারিত হয় বলে )
(৩) উ, ঊ → ওষ্ঠ ধ্বনি ( ওষ্টের সাহায্যে উচ্চারিত হয় বলে )
(৪) এ, ঐ → কন্ঠ তালব্য ধ্বনি ( কন্ঠ ও তালুর সাহায্যে উচ্চারিত হয় বলে )
(৫) ও, ঔ → কন্ঠ্যোষ্ঠ ধ্বনি ( কন্ঠ ও ওষ্ঠের সাহায্যে উচ্চারিত হয় বলে )
(৬) ঋ → মূর্ধন্য ধ্বনি ( মূর্ধার সাহায্যে উচ্চারিত হয় বলে )
বিভিন্ন স্বরধ্বনির উচ্চারণরীতি / বৈশিষ্ট্য
অ — বাংলা ভাষায় অ-কারের দুই রকম উচ্চারণরীতি রয়েছে । যথা — (১) স্বাভাবিক রীতি ও (২) অস্বাভাবিক বা বিকৃত রীতি ।
(১) স্বাভাবিক রীতি — যেমন, অসীম, অসুখ, সরল, দখল, জল, ফল ইত্যাদি ।
(২) অস্বাভাবিক বা বিকৃত রীতি — যেমন – অতুল > ওতুল, সবিনয়, সস্ত্রীক, সশিষ্য ইত্যাদি । যদি > যোদি, মধু > মোধু, মন > মোন ইত্যাদি ।
আ — এটি দীর্ঘস্বর, স্বাভাবিক উচ্চারণ —বাবা, কাকা, মামা ।
ই, ঈ — দুটির উচ্চারণ স্বাভাবিক ।
উ, ঊ — দুটির উচ্চারণ স্বাভাবিক ।
ঋ — স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য – ঋষি, বৃষ্টি,
এ — (১) স্বাভাবিক উচ্ছারণ — একদা, মেঘ, স্নেহ, প্রেম ইত্যাদি ।
(২) বিকৃত উচ্চারণ — নেড়া > ন্যাড়া, বেলা > ব্যালা, বেটা > ব্যাটা । এখানে ‘এ্যা’ কার হয়ে যায় ।
ও — স্বাভাবিক উচ্চারণ — রোগা, যোগী, ভোগী ইত্যাদি ।
ঐ — যৌগিক ধ্বনি — দৈন্য, চৈতন্য ইত্যাদি ।
ঔ — যৌগিক ধ্বনি — মৌমাছি, সৌরভ ইত্যাদি
ব্যঞ্জনধ্বনি:
যে ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া স্পষ্টরূপে উচ্চারিত হতে পারে না এবং যে ধ্বনি সাধারণত অন্য ধ্বনিকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন: ক্, খ্, গ্, ঘ্, প্, স্, ইত্যাদি। এই ধ্বনিগুলোকে প্রকৃষ্টভাবে শ্রুতিযোগ্য করে উচ্চারণ করতে হলে স্বরধ্বনির আশ্রয় নিতে হয়। যেমন: (ক্+অ=) ক; (গ্+অ=) গ; (প্+অ=) প ইত্যাদি।
উচ্চারণের স্থানভেদে ব্যঞ্জনধ্বনির বিভাগ
ধ্বনি উৎপাদনের ক্ষেত্রে মুখবিবরে উচ্চারণের মূল উপকরণ বা উচ্চারক জিহবা ও ওষ্ঠ। আর উচ্চারণের স্থান হলাে কণ্ঠ বা জিহ্বামূল, অগ্রতালু, মূর্ধা বা পশ্চাৎ দন্তমূল, দন্ত বা অগ্র দন্তমূল, ওষ্ঠ্য ইত্যাদি।
উচ্চারণের স্থানের নাম অনুসারে ব্যঞ্জনধ্বনিগুলাকে পাঁচ তাগে ভাগ করা হয় :
- কণ্ঠ্য বা জিহ্বামূলীয়
- তালব্য বা অগ্রতালুজাত,
- মূর্ধন্য বা পশ্চাৎ দন্তমূলীয়,
- দন্ত্য বা অগ্র দন্তমূলীয় এবং
- ওষ্ঠ্য।
নিচে উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনি বিভাজন দেখানো হলো
প্রষ্টব্য : খণ্ড-ত (ৎ)-কে স্বতন্ত্র বর্ণ হিসেবে ধরা হয় না। এটি ত বর্ণের হস-চিহ্ন যুক্ত (ত্)-এর বূপভেদ মাত্র।
ং : এ তিনটি বর্ণ স্বাধীনভাবে স্বতন্ত্র বর্ণ হিসেবে ভাষায় ব্যবহৃত হয় না। এ বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি অন্য ধ্বনির সঙ্গে মিলিত হয়ে একত্রে উচ্চারিত হয়। তাই এ বর্ণগুলােকে বলা হয় পরাশ্রয়ী বর্ণ।
ঙ ঞ ণ ন ম-এ পাঁচটি বর্ণ এবং ং ঃ যে বর্ণের সঙ্গে লিখিত হয় সে বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস নিঃসৃত বায়ু মুখবিবর ছাড়াও নাসারস্ত্র দিয়ে বের হয়; অর্থাৎ এগুলাের উচ্চারণে নাসিকার সাহায্য প্রয়ােজন হয়। তাই এগুলােকে বলে অনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি। আর এগুলাের বর্ণকে বলা হয় অনুনাসিক বা নাসিক্য বর্ণ।
আরও পড়ুন:
বাক্য কাকে বলে ? গঠন ও অর্থ অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ
সরধ্বনির ক্রস্বতা ও দীর্ঘতা : স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে সময়ের স্বন্সতা ও দৈর্ঘ্য অনুসারে ক্রস্ব বা দীর্ঘ হয়। যেমন- ইংরেজি full-পূর্ণ এবং fool বােকা। শব্দ দুটোর প্রথমটির উচ্চারণ ত্রস্ব ও দ্বিতীয়টির উচ্চারণ দীর্ঘ। জ্রসব বর্ণের উচ্চারণ যে দীর্ঘ হয় এবং দীর্ঘ বর্ণের উচ্চারণ যে হ্রস্ব হয়, কয়েকটি উদাহরণে তা স্পষ্ট হবে। যেমন-ইলিশ, তিরিশ, উচিত, নতুন-লিখিত হয়েছে ত্রসব ই-কার ও ক্রস্ব – উ-কার দিয়ে; কিন্তু উচ্চারণ হচ্ছে দীর্ঘ। আবার দীন, ঈদুল ফির, ভূমি-লিখিত হয়েছে দীর্ঘ ঈ-কার এবং দীর্ঘ উ-কার দিয়ে; কিন্তু উচ্চারণে ক্রসব হয়ে যাচ্ছে। একটিমাত্র ধ্বনিবিশিষ্ট শব্দের উচ্চারণ সবসময় দীর্ঘ হয়। যেমন-দিন, তিল, পুর ইত্যাদি।
যৌগিক স্বর : পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে দ্রুত উচ্চারণের সময় তা একটি সংযুক্ত স্বরধ্বনি বূপে উচ্চারিত হয়। এরুপে একসঙ্গে উচ্চারিত দুটো মিলিত স্বরধ্বনিকে যৌগিক স্বর বা দবি-স্বর বলা হয়। যেমন-অ + ই অই (বই), অ + উ = অউ (বউ), অ + এ = অয়, (বয়, ময়না), অ + ও = অও (হও, লও)। ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা পঁচিশ।
আ + ই = আই (যাই, তাই); আ + উ = আউ (লাউ); আ + এ = আয় (যায়, খায়); আ + ও = আও (যাও, খাও); ই + ই – ইই (দিই); ই + উ – ইউ (শিউলি); ই + এ = ইয়ে (বিয়ে); ই + ও = ইও (নিও, দিও); উ+ ই = উই (উই, শুই); উ + আ = উয়া (কুয়া); এ + আ=এয়া (কেয়া, দেয়া); এ + ই = এই (সেই, নেই); এ + ও = এও (খেও); ও + ও = ওও (শােও)।
বাংলা বর্ণমালায় যৌগিক স্বরজ্ঞাপক দুটো বর্ণ রয়েছে: ঐ এবং ঔ। উদাহরণ : কৈ, বৌ। অন্য যৌগিক স্বরের চিহ্ন স্বরূপ কোনাে বর্ণ নেই।
ব্যঞ্জনধ্বনির বিভাগ ও উচ্চারণগত নাম
আগে আমরা দেখেছি যে, পাঁচটি বর্গ বা গুচ্ছে প্রত্যকটিতে পাঁচটি বর্ণ পাওয়া যায়। এগুলাে স্পৃষ্ট ধ্বনিজ্ঞাপক। ক থেকে ম পর্যন্ত এ পঁচিশটি ব্যঞ্জনকে স্পর্শ ব্যঞ্জন বা স্পৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।
উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনিগুলােকে প্রথমত দুই ভাগে ভাগ করা যায় :
- অঘােষ এবং
- ঘােষ।
উচ্চারণ প্রকৃতি | অঘোষ | ঘোষ | ||||
বর্গ | অ ল্প প্রা ণ | ম হা প্রা ণ | অ ল্প প্রা ণ | ম হা প্রা ণ | না সি ক্য | |
স্পর্শ ধ্বনি বা বর্গীয় ধ্বনি | ক- বর্গ | ক | খ | গ | ঘ | ঙ |
চ-বর্গ | চ | ছ | জ | ঝ | ঞ | |
ট-বর্গ | ট | ঠ | ড | ঢ | ণ | |
ত-বর্গ | ত | থ | দ | ধ | ন | |
প-বর্গ | প | ফ | ব | ভ | ম | |
অন্তঃস্থ ব্যঞ্জন | য | র | ল | ব | ||
উষ্ম ব্যঞ্জন | শ | ষ | স | হ | ||
তাড়িত | ড় | ঢ় | ||||
অযোগবাহ | ঃ, (বিসর্গ) ও ং (অনুস্বার) | |||||
পার্শ্বিক ব্যঞ্জন | ল | কম্পিত | র |
অঘােষ : যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না, তাকে বলা হয় অঘােষ ধ্বনি। যেমন- ক, খ, চ, ছ ইত্যাদি।
ঘােষ : যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয়, তাকে বলে ঘােষ ধ্বনি। যেমন-গ, ঘ, জ, ঝ ইত্যাদি।
এগুলােকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় :
- অল্প্রাণ এবং
- মহাপ্রাণ।
অল্প্রাণ : যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের স্বল্পতা থাকে, তাকে বলা হয় অল্প্রাণ ধ্বনি। যেমন-ক, গ, চ, জ ইত্যাদি।
মহাপ্রাণ : যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের আধিক্য থাকে, তাকে কলা হয় মহাপ্রাণ ধ্বনি। যেমন-খ, ঘ, ছ, ঝ ইত্যাদি।
উম্মধ্বনি : শ, য, স, হ – এ চারটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি উচ্চারণের সময় আমরা শ্বাস যতক্ষণ খুশি রাখতে পারি। এগুলােকে বলা হয় উম্মধ্বনি বা শিশধ্বনি। এ বর্ণগুলােকে বলা হয় উম্মবর্ণ।
শ ষ স – এ তিনটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি অঘােষ অল্প্রাণ, আর “হ” ঘােষ মহাপ্রাণ ধ্বনি।
অন্তঃস্থ ধ্বনি : যু (Y) এবং বু (W) এ দুটো বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান স্পর্শ ও উম্মধ্বনির মাঝামাঝি। এজন্য এদের বলা হয় অন্তঃস্থ ধ্বনি।
সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি ও যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ
দুটি বা তার বেশি ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যে কোনো স্বরধ্বনি না থাকলে সে ব্যঞ্জনধ্বনি দুটি বা অধিক একত্রে উচ্চারিত হয়। এরূপ যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির দ্যোতনার জন্য দুটি বা অধিক ব্যঞ্জনবরর্ণ একত্রিত হয়ে সংযুক্ত বর্ণ / ligature গঠিত হয়। সাধারণত এরূপে গঠিত সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের মূল বা আকৃতি পরিবর্তিত হয়। যেমন : তক্তা (ত্+অ+ক্+ত্+আ=তক্তা)। এখানে দ্বিতীয় বর্ণ ক ও ত-এর মূলরূপ পরিবর্তিত হয়ে ক্ত হয়েছে।
দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনবর্ণ একত্রে অর্থবোধক ধ্বনি সৃষ্টি করলে যুক্তবর্র্ণ হয়। অথবা অ’র হসোচ্চারণ নিতেই ব্যঞ্জন ও ব্যঞ্জনের অর্থপূর্ণ যুক্ত অবস্থানকে যুক্তবর্ণ ^া ফলাবর্ণ বলে। উচ্চারণ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পেতে বর্ণকে যুক্ত করা হয়। যেমন: ‘শানত’ লেখলে উচ্চারণ করতে হতো ‘শানোতো’ কিন্তু ‘শান্ত’ লেখলে এমন ভুল হয় না বরং অ’র হসোচ্চারণ হয় অর্থাৎ মুক্ত উচ্চারণ থেকে মুক্তি হলো।
বাংলা ভাষায় সাধারণত তিনভাবে সংযুক্ত ব্যঞ্জন গঠিত হতে পারে। যেমন :
ক) কার সহযোগে
খ) ফলা সহযোগে
গ) ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ব্যঞ্জনবর্ণ (ফলা ব্যতীত) সহযোগে
ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
কার সহযোগে
স্বরবর্ণ সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে বলে ‘কার’। অ-ভিন্ন অন্য দশটি স্বরধ্বনির সংক্ষিপ্ত রূপ হয়। সুতরাং বাংলায় কার ১০টি। এগুলো যথাক্রমে :
* আ-কার (া) : বাবা, মা, চাকা
* ঋ-কার ( ৃ) : কৃতী, গৃহ, ঘৃত
* ই-কার ( ি) : পাখি, বাড়ি, চিনি
* এ-কার ( ে) : ছেলে, মেয়ে, ধেয়ে
* ঈ-কার (ী) : নীতি, শীত, স্ত্রী
* ঐ-কার ( ৈ) : বৈশাখ, চৈত্র, ধৈর্য
* উ-কার ( ু ) : খুকু, বুবু, ফুফু
* ও-কার (ে া) : দোলা, তোতা, খোকা
* ঊ-কার ( ূ ) : মূল্য, চূর্ণ, পূজা
* ঔ-কার (ে ৗ ) : পৌষ, গৌতম, কৌতুক
ফলা সহযোগে
১. ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে ফলা। ফলা যুক্ত হলে বর্ণের আকারের পরিবর্তন সাধিত হয়। বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের ফলা ৬টি। যেমন:
* ণ/ন-ফলা : চিহ্ন, রত্ন, পূর্বাহ্ন (হ+ন),
অপরাহ্ণ (হ+ণ), কৃষ্ণ (ষ+ণ)
* ব-ফলা : বিশ্বাস, নিঃস্ব, নিতম্ব
* ম-ফলা : তন্ময়, পদ্ম, আত্মা
* য-ফলা : সহ্য, অত্যন্ত, বিদ্যা
* র-ফলা : গ্রহ, ব্রত, স্রষ্ট
* রেফ : বর্ণ, স্বর্ণ, তর্ক, খর্ব
* ল-ফলা : ক্লান্ত, অম্লান, উল্লাস
২. বাংলা স্বরবর্ণের সঙ্গেও ফলা যুক্ত হয়। যেমন : এ্যাপোলো, এ্যাটম, অ্যাটর্নি, অ্যালার্ম ধ্বনি ইত্যাদি।
৩. বাংলা যুক্তব্যঞ্জনের সঙ্গেও কার এবং ফলা যুক্ত হয়ে শব্দ গঠিত হয়। যেমন : সন্ন্যাস, সূক্ষ্ম, বুক্নিণী, সন্ধ্যা ইত্যাদি।
ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
কতিপয় সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ
দুই বর্ণের যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ
* ক্ক=ক্+ক : পাক্কা, ছক্কা, চক্কর
* ক্ত=ক্+ত : রক্ত, শক্ত, ভক্ত
* ক্ষ=ক্+ষ : শিক্ষা, বক্ষ, রক্ষা (উচ্চারণ ক্+খ-এর মতো)
* ক্স=ক্+স : বাক্স
* ঙ্খ=ঙ্+খ : শৃঙ্খলা, শঙ্খ
* ঙ্গ=ঙ্+ঘ : সঙ্ঘ, লঙ্ঘন
* চ্চ=চ্+চ : উচ্চ, উচ্চারণ, উচ্চকিত
* চ্ছ=চ্+ছ : উচ্ছল, উচ্ছেদ
* জ্জ=জ্+জ : উজ্জীবন, উজ্জীবিত
* জ্ঝ=জ্+ঝ : কুজ্ঝটিকা
* জ্ঞ=জ্+ঞ : জ্ঞান, সংজ্ঞা, বিজ্ঞান (উচ্চারণ ‘গগ্যঁ’-এর মতো)
* ঞ্চ=ঞ্+চ : অঞ্চল, সঞ্চয়, পঞ্চম
* ঞ্ছ=ঞ্+ছ : বাঞ্ছিত, বাঞ্ছনীয়, বাঞ্ছা
* ঞ্জ=ঞ্+জ : গঞ্জ, রঞ্জন, কুঞ্জ
* ঞ্ঝ=ঞ্+ঝ : ঝঞ্ঝা, ঝঞ্ঝাট
ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
বিদ্র. উপর্যুক্ত চারটি সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণ ‘ন’ হলে এবং
লেখার সময় কখনো ন্চ (অন্চল), ন্ ছ (বান্ছা), নজ (গন্জ), নঝ (ঝন্ঝা) রূপে লেখা অপ্রাসঙ্গিক।
* ট্ট=ট্+ট : অট্টালিকা, চট্টোপাধ্যায়, চট্টগ্রাম
* ড্ড=ড্+ড : গড্ডালিকা, উড্ডীন, উড্ডয়ন
* ণ্ট=ণ্+ট : ঘণ্টা, বণ্টন
* ত্ত=ত্+ত : উত্তম, বিত্ত, চিত্ত
* ত্থ=ত্+থ : উত্থান, উত্থিত, অভ্যুত্থান
* দ্দ=দ্ +দ : উদ্দাম, উদ্দীপক, উদ্দেশ্য
* দ্ধ=দ্+ধ : উদ্ধত, উদ্ধৃত, পদ্ধতি
* দ্ভ=দ্+ভ : উদ্ভব, উদ্ভট, উদ্ভিদ
* ন্ত=ন+ত : অন্ত, দন্ত, কান্ত
* ন্দ=ন+দ : আনন্দ, সন্দেশ, বন্দী
* দ্ধ=ন+ধ : বন্ধন, রন্ধন, সন্ধান
* ন্ন=ন্+ন : অন্ন, ছিন্ন, ভিন্ন
* ন্ম=ন্+ম : জন্ম, আজন্ম
* প্ত=প্+ত : রপ্ত, ব্যাপ্ত, লিপ্ত
* প্প=প্+প : বাপ্পা, বাপ্পি
* প্স=প্+স : লিপ্সা, অভীপ্সা
* ব্দ=ব্+দ : অব্দ, জব্দ, শব্দ
* ল্ক=ল্+ক : উল্কা, বল্কল
* ল্গ=ল্+গ : ফাল্গুন
* ল্ট=ল্+ট : উল্টা
* ষ্ক=ষ্+ক : শুষ্ক, পরিষ্কার, বহিষ্কার
* স্ক=স্+ক : স্কুল, স্কন্ধ
* স্খ=স্+খ : স্খলন
* স্ট=স+ট : আগস্ট, স্টেশন
* স্ত=স্+ত : অস্ত, সস্ত, স্তব্ধ
* স্ফ=স্+ফ : স্ফটিক, প্রস্ফুটিত
* হ্ম=হ্+ম : ব্রহ্ম, ব্রাহ্মণ
ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
এছাড়া বাংলা ভাষায় দুয়ের অধিক বর্ণ সংযোগেও কিছু সংযুক্ত বর্ণ গঠিত হয়। সূক্ষ্ম শব্দে ক্ষ্ম বর্ণ=ক্+ষ+ম-ফলা। স্বাতন্ত্র্য শব্দের ন্ত্র্য=ন+ত+র-ফলা ( ্র)+য-ফলা (্য) ইত্যাদি।
ধ্বনির পরিবর্তন (১৬টি)
ভাষার পরিবর্তন ধ্বনির পরিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত। ধ্বনি পরিবর্তন নানা প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। যেমন :
১. স্বরাগম
ক) আদি স্বরাগম / Prothesis : উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা অন্য কোনো কারণে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনি এলে তাকে বলে আদি স্বরাগম। যেমন : স্কুল>ইস্কুল, স্টেশন>ইস্টিশন। এরূপ : আস্তাবল, আস্পর্ধা।
খ) মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি / Anaptyxis : সময় সময় উচ্চারণের সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনি আসে। একে বলা হয় মধ্য স্বরাগম বা বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি। যেমন :
অ : রত্ন>রতন, ধর্ম>ধরম, স্বপ্ন>স্বপন, হর্ষ>হরষ ইত্যাদি।
ই : প্রীতি>পিরীতি, ক্লিপ>কিলিপ, ফিল্ম>ফিলিম ইত্যাদি।
উ : মুক্তা>মুকুতা, তুর্ক>তুরুক, ভ্রু>ভুরু ইত্যাদি।
এ : গ্রাম>গেরাম, প্রেক>পেরেক, স্রেফ>সেরেফ ইত্যাদি।
ও : শ্লোক>শোলোক, মুরগ>মুরোগ>মোরগ ইত্যাদি।
গ) অন্ত্যস্বরাগম / Apothesis : কোনো কোনো সময় শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসে। এরূপ স্বরাগমকে বলা হয় অন্ত্যস্বরাগম। যেমন : দিশ >দিশা, পোখত্ >পোক্ত, বেঞ্চ >বেঞ্চি, সত্য>সত্যি ইত্যাদি।
২. অপিনিহিতি / Apenthesis: পরের ই-কার আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগে ই-কার বা উ-কার উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিতি বলে। যেমন : আজি>আইজ, সাধু>সাউধ, রাখিয়া>রাইখ্যা, বাক্য>বাইক্য, সত্য>সইত্য, চারি>চাইর, মারি>মাইর।
৩. অসমীকরণ / Dissimilation : একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে যখন স্বরধ্বনি যুক্ত হয় তখন তাকে বলে অসমীকরণ। যেমন : ধপ+ধপ>ধপাধপ, টপ+টপ>টপাটপ
৪. স্বরসঙ্গতি / Vowel harmony: একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন: দেশি>দিশি, বিলাতি>বিলিতি, মুলা>মুলো।
ক. প্রগত / Progressive : আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তিত হলে প্রগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: মূল্য>মূলো, শিকা>শিকে, তুলা>তুলো।
খ. পরাগত / Regressive : অন্ত্যস্বরের কারণে আদ্যস্বর পরিবর্তিত হলে পরাগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: আখো> আখুয়া> এখো, দেশি, দিশি।
গ. মধ্যগত / Mutual : আদ্যস্তর ও অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বর পরিবর্তিত হলে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: বিলাতি>বিলিতি।
ঘ. অন্যোন্য / Reciprocal : আদ্য ও অন্ত্য দুই স্বরই পরস্পর প্রভাবিত হলে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন:
মোজা> মুজো।
ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
ঙ. চলিত বাংলার স্বরসঙ্গতি : গিলা>গেলা, মিলামিশা> মেলামেশা, মিঠা>মিঠে, ইচ্ছা>ইচ্ছে ইত্যাদি। পূর্বস্বর উ-কার হলে পরবর্তী স্বর ও-কার হয়। যেমন : মুড়া>মুড়ো, চুলা>চুলো ইত্যাদি। বিশেষ নিয়মে-উড়–নি>উড়নি, এখনি> এখুনি হয়।
৫. সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ : দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দের আদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কোনো স্বরধ্বনির লোপকে বলা হয় সম্প্রকর্ষ। যেমন : বসতি>বসইত, জানালা>জান্লা ইত্যাদি।
ক. আদিস্বরলোপ / Aphesis : যেমন : অরাবু>লাবু>লাউ, উদ্ধার>উধার>ধার।
খ. মধ্যস্বর লোপ / Syncope : অগুরু>অগ্রু, সুবর্ণ>স্বর্ণ।
গ. অন্ত্যস্বর লোপ / Apocope : আশা>আশ, আজি>আজ, চারি>চার (বাংলা), সন্ধ্যা>সঞঝা>সাঁঝ। (স্বরলোপ বস্তুত
স্বরাগমের বিপরীত প্রক্রিয়া।)
৬. ধ্বনি বিপর্যয় : শব্দের মধ্যে দুটি ব্যঞ্জনের পরস্পর পরিবর্তন ঘটলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন : ইংরেজি বাক্স> বাংলা বাস্ক, জাপানি রিক্সা>বাংলা রিস্কা ইত্যাদি। অনুরূপ-পিশাচ>পিচাশ, লাফ>ফাল।
৭. সমীভবন / Assimilation: শব্দমধ্যস্থ দুটি ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে অল্প-বিস্তর সমতা লাভ করে। এ ব্যাপারকে বলা হয় সমীভবন। যেমন : জন্ম>জম্ম, কাঁদনা>কান্না ইত্যাদি।
ক. প্রগত সমীভবন / Progressive : পূর্ব ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে। পরবর্তী ধ্বনি পূর্ববর্তী ধ্বনির মতো হয়, একে বলে প্রগত সমীভবন। যেমন : চক্র>চক্ক, পকৃ>পক্ক, পদ্ম>পদ্দ, লগ্ন>লগ্গ ইত্যাদি।
খ. পরাগত সমীভবন / Regressive : পরবর্তী ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ধ্বনির পরিবর্তন হয় একে বলে পরাগত সমীভবন। যেমন : তৎ+জন্য>তজ্জন্য, তৎ+হিত>তদ্ধিত, উৎ+মুখ>উন্মুখ ইত্যাদি।
গ. অন্যোন্য সমীভবন / Mutual : যখন পরস্পরের প্রভাবে দুটো ধ্বনিই পরিবর্তিত হয় তখন তাকে বলে অন্যোন্য সমীভবন। যেমন : সংস্কৃত সত্য>প্রাকৃত-সচ্চ, সংস্কৃত-বিদ্যা>প্রাকৃত-বিজ্জা ইত্যাদি।
৮. বিষমীভবন / Dissimilation: দুটো সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে। যেমন: শরীর>শরীল, লাল>নাল।
সন্ধি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
৯. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বা/ Long Consonant: কখনো কখনো জোর দেয়ার জন্য শব্দের অন্তর্গত ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়, একে বলে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্ব। যেমন : পাকা>পাক্কা, সকাল>সক্কাল ইত্যাদি।
১০. ব্যঞ্জন বিকৃতি : শব্দ-মধ্যে কোনো কোনো সময় কোনো ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে নতুন ব্যঞ্জনধ্বনি ব্যবহৃত হয়। একে বলে ব্যঞ্জন বিকৃতি। যেমন : কবাট>কপাট, ধোবা>ধোপা, ধাইমা>লাইমা ইত্যাদি।
১১. ব্যঞ্জনচ্যুতি : পাশাপাশি সমউচ্চারণের দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে তার একটি লোপ পায়। এরূপ লোপকে বলা হয় ধ্বনিচ্যুতি বা ব্যঞ্জনচ্যুতি। যেমন : বউদিদি>বউদি, বড় দাদা>বড়দা ইত্যাদি।
১২. অন্তর্হতি : পদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্তর্হতি। যেমন : ফাল্গুন>ফাগুন, ফলাহার> ফলার, আলাহিদা>আলাদা ইত্যাদি।
১৩. অভিশ্রুতি / Umlaut : বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে এবং তদনুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে বলে অভিশ্রুতি। যেমন : করিয়া থেকে অপিনিহিতির ফলে ‘কইরিয়া’ কিংবা বিপর্যয়ের ফলে ‘কইরা’ থেকে অভিশ্রুতিজাত ‘করে’। এরূপ : শুনিয়া> শুনে, বলিয়া>বলে, হাটুয়া>হাউটা>হেটো, মাছুয়া>মেছো ইত্যাদি।
১৪. র-কার লোপ : আধুনিক চলিত বাংলায় অনেক ক্ষেত্রে র-কার লোপ পায় এবং পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়। যেমন : তর্ক>তক্ক, করতে>কত্তে, মারল>মাল্ল, করলাম>কল্লাম।
১৫. হ-কার লোপ : আধুনিক চলিত ভাষায় অনেক সময় দুই স্বরের মাঝামাঝি হ-কারের লোপ হয়। যেমন : পুরোহিত >পুরুত, গাহিল>গাইল, চাহে>চায়, সাধু>সাহু>সাউ, আরবি-আল্লাহ>বাংলা-আল্লা, ফারসি-শাহ্>বাংলা-শা ইত্যাদি।
১৬. অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি / Euphonic glides: শব্দের মধ্যে পাশাপাশি দুটো স্বরধ্বনি থাকলে যদি এ দুটো স্বর মিলে একটি দ্বিস্বর (যৌগিক স্বর) না হয় তবে এ স্বর দুটোর মধ্যে উচ্চারণের সুবিধার জন্য একটি ব্যঞ্জনধ্বনির মতো অন্তঃস্থ ‘য়’ (ণ) বা অন্তঃস্থ ‘ব’ (ড) উচ্চারিত হয়। এই অপ্রধান ব্যঞ্জনধ্বনিটিকে বলা হয় য়-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি। যেমন : মা+ আমার=মা (য়) আমার>মায়ামার। যা+অ=যা (ও) য়া=যাওয়া। এরূপ : নাওয়া, খাওয়া, দেওয়া ইত্যাদি।
ধ্বনি পরিবর্তন
ভাষার শব্দগুলো বহুজনে ব্যবহৃত হতে হতে কখনো কখনো সেই শব্দের ধ্বনিসমূহের মধ্যে কোনো কোনো ধ্বনি লোপ পায় কিংবা নতুন ধ্বনির আগমন ঘটে, কিন্তু শব্দটি দ্বারা পূর্বের অর্থই বোঝায়। ধ্বনির এরকম পরিবর্তনকে ধ্বনিপরিবর্তন বলে। যেমন: স্কুল>ইস্কুল; পিশাচ> পিচাশ ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রকার ধ্বনি পরিবর্তন নিম্নরূপ –
আদি স্বরাগম (Prothesis): মূল শব্দের আদিতে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন:
- স্কুল > ইস্কুল
- স্পর্ধা > আস্পর্ধা
- স্তাবল > আস্তাবল
- স্টিমার > ইস্টিমার ইত্যাদি।
মধ্য স্বরাগম (Anaptyxis): মূল শব্দের মধ্যে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে মধ্য স্বরাগম বলে। যেমন:
- রত্ন > রতন
- ধর্ম > ধরম
- স্বপ্ন > স্বপন
- ফিল্ম > ফিলিম
- মুক্ত > মুকুতা
- ভ্রু >ভুরু
- গ্রাম > গেরাম
- শ্লোক > শোলক
- মুরগ > মুরোগ
- ক্লি > কিলিপ ইত্যাদি।
অন্ত স্বরাগম (Apotheosis):
মূল শব্দের শেষে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে অন্ত স্বরাগম বলে। যেমন:
- সত্য>সত্যি
- বেঞ্চ>বেঞ্চি
- পোখত্ > পোক্ত
- দিশ্> দিশা ইত্যাদি।
অপিনিহিতি (Apenthesis): শব্দমধ্যস্থ পরের ই বা উ ধ্বনি আগে উচ্চারণের প্রবণতাকে অপিনিহিত বলে। অর্থ্যাৎ শব্দে ই বা উ ধ্বনি থাকলে তাদের উচ্চারণ যথাস্থানের আগে করার প্রবণতাই অপিনিহিতি। যেমন:
- আজি > আইজ
- চারি > চাইর
- রাখিয়া > রাইখ্যা
- বাক্য > বাইক্য ইত্যাদি।
অসমীকরণ (Dissimilation):
সমধ্বনি পাশাপাশি উচ্চারণের সময় অনেক ক্ষেত্রে মাঝখানে একটি স্বরধ্বনি যুক্ত হয়, তাকে অসমীকরণ বলে। একই ধ্বনির পুনরাবৃত্তি দুর করতে মাঝখানে স্বরধ্বনি যুক্ত হয়। যেমন:
- ফট+ফট= ফটাফট
- ধপ+ধপ=ধপাধপ
- টপ+টপ=টপাটপ ইত্যাদি।
স্বরসঙ্গতি (Vowel Harmony): পরপর দুটি স্বরধ্বনি থাকলে উচ্চারণের সময় একটি পরিবর্তিত হয়ে অন্যটির মতো হওয়াকে স্বরসঙ্গতি বা উচ্চতাসাম্য বলে। যেমন: কবুল>কোবুল; বিলাতি>বিলিতি; মুলা>মুলো; বিদ্যা>বিদ্যে; দেশি>দিশি; তুলা>তুলো; মোজা>মুজো; জুতা>জুতো; ফিতা>ফিতে; নৌকা>নৌকো; পূজা>পূজো; সুতা>সুতো; শিয়াল>শেয়াল; ধুলা>ধুলো ইত্যাদি। একে আবার ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
- প্রগত: আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তিত হলে। যেমন: মুলা>মুলো, তুলা>তুলো ইত্যাদি।
- পরাগত: অন্ত্যস্বর অনুযায়ী আদিস্বর পরিবর্তিত হলে। যেমন: দেশি>দিশি।
- মধ্যগত: আদিস্বর ও অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বর পরিবর্তিত হলে। যেমন: বিলাতি>বিলিতি
- অন্যোন্য: আদিস্বর ও অন্ত্যস্বর দুটিই পরস্পর প্রভাবিত হলে। যেমন: মোজা>মুজো
- চলিত বাংলা সরসঙ্গতি: মিঠা > মিঠে, চুলা > চুলো, ইচ্ছা>ইচ্ছে ইত্যাদি।
- বিশেষ নিয়মে – এখনি > এখুনি।
ধ্বনিলোপ:
অনেক উচ্চারণের সময় শব্দস্থিত কিছু ধ্বনি উচ্চারিত হয়না। এই প্রক্রিয়াকে ধ্বনিলোপ বলে। স্বরধ্বনি হলে স্বরধ্বনিলোপ বা সম্প্রকর্ষ, ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ হলে ব্যঞ্জনধ্বনিলোপ বা ব্যঞ্জনচ্যুতি বলে।
- আদিস্বর লোপ: শব্দের আদি বা প্রথমে স্বরধ্বনিলোপ পেলে। যেমন: অলাবু>লাবু>লাউ; উদ্ধার>উধার>ধার ইত্যাদি।
- মধ্যস্বর লোপ: শব্দের মধ্যে স্বরধ্বনি লোপ পেলে। যেমন: বসতি>বস্ তি; গামোছা>গাম্ ছা ইত্যাদি।
- অন্ত্যস্বর লোপ: শব্দের অন্তে বা শেষে লোপ পেলে। যেমন: আজি (ই)>আজ; চারি (ই)>চার ইত্যাদি।স্বরাগম এবং স্বরালোপ সম্পর্কে পরস্পর বিপরীত।
অনুরূপভাবে ব্যঞ্জন ধ্বনির ক্ষেত্রে-
- আদি ব্যঞ্জনলোপ: রংপুর>অংপুর; শ্রাবণ>শাবন
- মধ্যব্যঞ্জনলোপ: মজদুর>মজুর; দুগ্ধ> দুধ
- অন্তব্যঞ্জনলোপ: বৌদিদি>বৌদি; ছোটকাকা>ছোটকা; শিয়ালদহ>শিয়ালদ
ধ্বনি বিপর্যয়:
উচ্চারনের সময় শব্দের দুটি ব্যঞ্জন পরস্পর স্থান পরিবর্তন করলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন:
- নকশা > নশকা
- কলমি > কমলি
- পিশাচ > পিচাশ
- রিক্সা > রিস্কা
- লোকসান > লোসকান ইত্যাদি।
সমীভবন:
উচ্চারণের সময় পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি একই রকম হয়ে যাওয়া কিংবা একই রকম হওয়ার প্রবনতাকে সমীভবন বলে। একে ব্যঞ্জনসঙ্গতিও বলা হয়। যেমন: দুর্গা>দুগ্গা; জন্ম>জম্ম ইত্যাদি।
বিসমীভবন: দুটো সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে। যেমন:
- শরীর > শরীল
- লাল > নাল
- জরুরি > জরুলি
- লাঙ্গল > নাঙ্গল ইত্যাদি।
ব্যঞ্জন বিকৃতি: শব্দের মধ্যে কোন ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্র্তত হয়ে কোন নতুন ব্যঞ্জনধ্বনি ব্যবহৃত হয়, তাকে ব্যঞ্জন বিকৃতি বলে। যেমন:
- ধোবা>ধোপা
- ধাইমা>দাইমা
- শাক>শাগ ইত্যাদি।
ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা:
জোর দেওয়ার জন্য শব্দের অন্তর্গত ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হলে তাকে ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা বলে। যেমন: পাকা > পাক্কা, সকাল > সক্কাল ইত্যাদি।
অন্তর্হতি: শব্দের মধ্যে কোন ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্তর্হতি বলে। যেমন: ফাল্গুন>ফাগুন, ফলাহার > ফলার, আলাদিয়া > আলাদা ইত্যাদি।
অভিশ্রুতি: অপিনিহিতি ও পরে বিপর্যয়ের ফলে পরিবর্তিত ধ্বনিতে যদি অপিনিহিতর প্রভাবজনিত ই কিংবা উ ধ্বনি পূর্বধ্বনির সঙ্গে মিলে শব্দের পরিবর্তন ঘটায় তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন: (করিয়া>করিইয়া>কইরা>করে) করিয়া থেকে অপিনিহিতির ফলে করিইয়া হয়, তা থাকে বিপর্যয়ের ফলে কইরা হয় এবং শেষে অভিশ্রুতির ফলে করে শব্দ গঠিত হয়। অনুরূপভাবে, মানিয়া > মাইন্যা > মেনে; আজি > আইজ > আজ ইত্যাদি। ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
সমীকরণ: পর পর দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ স্থান পৃথক হলে এবং এর মধ্যে একটির ধ্বনি বদলে গেলে, (যাতে ধ্বনি দুটির উচ্চারণ স্থান কাছাকাছি হয়) তাকে সমীকরণ বলে। যেমন: অনু+স্থান = অনুষ্ঠান।
র-কার লোপ: আধুনিক চলিত বাংলায় অনেক ক্ষেত্রে র-কার লোপ পায় এবং পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়। যেমন: তর্ক>তক্ক, করতে, কত্তে।
হ-কার লোপ: দুই স্বরের মাঝামাঝে হ-কারের লোপ হয়। যেমন: পুরোহিত>পুরুত, গাহিল>গাইল, শাহ্>শা ইত্যাদি।
ধ্বনি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন
2-ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে একটি পার্থক্য লেখ।
উ-ধ্বনি কেবলমাত্র শোনা যায়,কিন্তু দেখা যায় না। আবার বর্ণ চোখে দেখা যায়।
3-ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় কি?
উ-ধ্বনিতত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয় হল বাগধ্বনি অর্থাৎ মুখের ভাষা।
4-বাগধ্বনি প্রধানত কয় প্রকার ও কি কি?
উ-বাগধ্বনি মূলত দুই প্রকার ।যথা- বিভাজ্য ধ্বনি এবং অবিভাজ্য ধ্বনি।
5-মৌলিক স্বরধ্বনি কয়টি ও কি কি?
উ-মৌলিক স্বরধ্বনি হলো ৭ টি।যথা -অ,আ,ই,উ,এ,ও,অ্যাশ
6-মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে ?
উ-যে সকল স্বরধ্বনিকে বিশ্লেষণ করা যায়না তথা ভাঙা যায় না,তাদের মৌলিক স্বরধ্বনি বলে ।
7-ঘোষীভবন কী?
উ-অনেক সময় উচ্চারণকালে অঘোষধ্বনি ধ্বনি ঘোষধ্বনিতে পরিণত হয় ,একেই ঘোষীভবন বলে।
8-গুচ্ছধ্বনি কাকে বলে ?
উ-পাশাপাশি উচ্চারিত দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশকে গুচ্ছধ্বনি বলে।
9-যুক্তধ্বনি বলতে কী বোঝো?
উ-যে ব্যঞ্জন সমষ্টিগুলি শব্দের আদিতে বা দলের শুরুতে উচ্চারিত হতে পারে ,তাদের যুক্তধ্বনি বলে।
10-অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে ?
উ-ভাষার যে ধ্বনি উপাদানগুলিকে কৃত্রিমভাবে খন্ড করা যায় না বা বিশ্লেষণ করা যায় না,তাদের অবিভাজ্য ধ্বনি বলে ।
11-সুরতরঙ্গ কাকে বলে?
উ-ভাষার ওঠা-নামার দ্বারা বাক্যের অর্থ নিয়ন্ত্রিত হলে তাকে সুরতরঙ্গ বলে।
12-ধ্বনিমূল কাকে বলে?
উ-যেসব ধ্বনির বৈচিত্র্যময় উচ্চারণ থাকে,তাদের ধ্বনিমূল বলে।
অ-ধ্বনির উচ্চারণ
শব্দে অবস্থানভেদে ‘অ’ দুইভাবে লিখিত হয়। যেমন :
১. স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত অ। যেমন : অমর, অনেক।
২. শব্দের মধ্যে অন্য বর্ণের সঙ্গে বিলীনভাবে ব্যবহৃত অ। যেমন : কর, বল। এখানে ক ও র আর ব ও ল বর্ণের সঙ্গে অ বিলীন হয়ে আছে। (ক্+অর্++অ; ব্+অ+ল্+অ)।
শব্দের অ-ধ্বনির দুই রকম উচ্চারণ পাওয়া যায়
১. বিবৃত বা স্বাভাবিক উচ্চারণ। যেমন : অমল, অনেক, কত।
২. সংবৃত বা ও-ধ্বনির মতো উচ্চারণ। যেমন : অধীর, অতুল, মন। এ উচ্চারণগুলোতে অ-এর উচ্চারণ অনেকটা ও-এর মতো (ওধীর, ওতুল, মোন)।
‘অ’-ধ্বনির স্বাভাবিক বা বিবৃত উচ্চারণ
ক. শব্দের আদিতে
২. শব্দের আদিতে না-বোধক ‘অ’ যেমন : অটল, অনাচার।
৩. ‘অ’ কিংবা ‘আ’-যুক্ত ধ্বনির পূর্ববর্তী অ-ধ্বনি বিবৃত হয়। যেমন : অমানিশা, অনাচার, কথা।
খ. শব্দের মধ্যে ও অন্তে
১. পূর্ব স্বরের সঙ্গে মিল রেখে স্বরসঙ্গতির কারণে বিবৃত ‘অ’। যেমন : কলম, বৈধতা, যত, শ্রেয়ঃ।
২. ঋ-ধ্বনি, এ-ধ্বনি, ঐ-ধ্বনি এবং ঔ-ধ্বনির পরবর্তী ‘অ’ প্রায়ই বিবৃত হয়। যেমন : তৃণ, দেব, বৈধ, নোলক, মৌন।
৩. অনেক সময় ই-ধ্বনির পরের ‘অ’ বিবৃত হয়। যেমন : গঠিত, মিত, জনিত ইত্যাদি। ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
অ-ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণ
অ-ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণে চোয়াল বেশি ফাঁক হয়। ঠোঁট তত বাঁকা বা গোল হয় না। কিন্তু সংবৃত উচ্চারণে চোয়ালের ফাঁক কম ও ঠোঁট গোলাকৃত হয়ে ‘ও’-এর মতো উচ্চারিত হয়। সংবৃত উচ্চারণকে ‘বিকৃত’, ‘অপ্রকৃত’ বা ‘অস্বাভাবিক’ উচ্চারণ বলা অপ্রাসঙ্গিক। সংবৃত উচ্চারণও ‘স্বাভাবিক’, ‘অবিকৃত’ ও ‘প্রকৃত’ উচ্চারণ।
ক. শব্দের আদিতে
১. পরবর্তী স্বর সংবৃত হলে শব্দের আদি ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন : অতি (ওতি), করুণ (কোরুণ), করে (অসমাপিকা ‘কোরে’)। কিন্তু সমাপিকা ‘করে’ শব্দের ‘অ’ বিবৃত।
২. পরবর্তী ই, উ ইত্যাদির প্রভাবে পূর্ববর্তী র-ফলাযুক্ত ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন : প্রতিভা (প্রোতিভা), প্রচুর (প্রোচুর) ইত্যাদি। কিন্তু অ, আ ইত্যাদির প্রভাবে পূর্ব ‘অ’ বিবৃত হয়। যেমন : প্রভাত, প্রত্যয়, প্রণাম ইত্যাদি।
খ. শব্দের মধ্যে ও অন্তে
১. তর, তম, তন প্রত্যয়যুক্ত বিশ্লেষণ পদের অন্ত্য স্বর ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন : প্রিয়তম (প্রিয়তমো), গুরুতর (গুরুতরো)।
২. ই, উ-এর পরবর্তী মধ্য ও অন্ত্য ‘অ’ সংবৃত। যেমন : পিয় (পিয়ো), যাবতীয় (যাবতীয়য়ো) ইত্যাদি।
বাংলায় একাক্ষর / Monosyllabic শব্দে ‘অ’ দীর্ঘ হয়। যেমন : কাজ শব্দের ‘অ’ দীর্ঘ এবং কাল শব্দের ‘আ’ হ্রস্ব। এরূপ: যা, পান, ধান, সাজ, চাল, চাঁদ, বাঁশ।
ই ঈ : বাংলায় সাধারণত হ্রস্ব ই-ধ্বনি এবং দীর্ঘ ঈ-ধ্বনির উচ্চারণে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। একাক্ষর শব্দের ই বা ঈ-দুটোই দীর্ঘ হয়। যেমন : বিষ, বিশ, দীন, দিন, শীত।
উ ঊ : বাংলায় উ বা ঊ ধ্বনির উচ্চারণে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। ই বা ঈ-ধ্বনির মতো একাক্ষর শব্দে এবং বহু অক্ষর-বিশিষ্ট বদ্ধাক্ষরে বা প্রান্তিক যুক্তাক্ষরে উচ্চারণ সামান্য দীর্ঘ হয়। যেমন : চুল (দীর্ঘ), চুলা (হ্রস্ব), ভূত, মুক্ত, তুলতুলে, তুফান, বহু, অজু, করুণ।
ঋ : স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হলে ঋ-এর উচ্চারণ রি অথবা রী-এর মতো হয়। আর ব্যঞ্জন ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হলে র-ফলা+ই-কার এর মতো হয়। যেমন : ঋণ, ঋতু, (রীন, রীতু), মাতৃ (মাত্রি), কৃষ্টি (ক্রিষ্টি)।
বিশেষ জ্ঞাতব্য বা দ্রষ্টব্য : বাংলায় ঋ-ধ্বনিকে স্বরধ্বনি বলা চলে না। সংস্কৃতে এই ধ্বনিটি স্বরধ্বনিরূপে উচ্চারিত হয়।
এ-ধ্বনির উচ্চারণ
সংস্কৃত প্রয়োগ অনুসারেই বাংলা বর্ণমালায় এটি স্বরবর্ণের মধ্যে রক্ষিত হয়েছে।
এ : এ-ধ্বনির উচ্চারণ দুই রকম : সংবৃত ও বিবৃত। যেমন : মেঘ, সংবৃত/বিবৃত, খেলা (খ্যালা), বিবৃত।
১. সংবৃত
ক) পদের অন্তে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন : পথে, ঘাটে, দোষে, গুণে, আসে ইত্যাদি।
খ) তৎসম শব্দের প্রথমে ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে যুক্ত ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন : দেশ, প্রেম, শেষ ইত্যাদি।
গ) একাক্ষর সর্বনাম পদের ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন : কে, সে, যে।
ঘ) ‘হ’ কিংবা আকারবিহীন যুক্তধ্বনি পরে থাকলে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন : দেহ, কেহ, কেষ্ট।
ঙ) ‘ই’ বা ‘উ’-কার পরে থাকলে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন : দেখি, রেণু, বেলুন।
২. বিবৃত : ‘এ’ ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণ ইংরেজি ক্যাট/ cat ও ব্যাট / bat -এর ‘এ’ /ধ-এর মতো। যেমন : দেখ (দ্যাখ), একা (এ্যাকা) ইত্যাদি।
ধ্বনির এই বিবৃত উচ্চারণ কেবল শব্দের আদিতেই পাওয়া যায়, শব্দের মধ্যে ও অন্তে পাওয়া যায় না।
ক) দুই অক্ষর বিশিষ্ট সর্বনাম বা অব্যয় পদে। যেমন : এত, হেন, কেন ইত্যাদি। কিন্তু ব্যতিক্রম-যেমন, সেথা, হেথা।
খ) অনুস্বার ও চন্দ্রবিন্দু যুক্ত ধ্বনির আগের ধ্বনি বিবৃত। যেমন : খেংড়া, চেংড়া, স্যাঁতসেঁতে, গেঁজেল।
গ) খাঁটি বাংলা শব্দ। যেমন : খেমটা, ঢেপসা, তেলাপোকা, তেনা, দেওর।
ঘ) এক, এগার, তের কয়টি সংখ্যাবাচক শব্দে। ‘এক’ যুক্ত শব্দেও। যেমন : একচোট, একতলা, একঘরে ইত্যাদি।
ঙ) ক্রিয়াপদের বর্তমান কালের অনুজ্ঞায়, তুচ্ছার্থ ও সাধারণ মধ্যম পুরুষের রূপে। যেমন : দেখ্ (দ্যাখ), দেখ (দ্যাখো), খেল্ (খ্যাল), খেল (খ্যালো), ফেল (ফ্যাল), ফেল (ফ্যালো) ইত্যাদি।
ঐ : ধ্বনিটি একটি যৌগিক স্বরধ্বনি। অ+ই কিংবা ও+ই=অই, ওই। অ, ই দুটো স্বরের মিলিত ধ্বনিতে ঐ-ধ্বনির সৃষ্টি হয়। যেমন : ক +অ+ই=কই/কৈ, বৃ +ই+ধ=বৈধ ইত্যাদি। এরূপ : বৈদেশিক, ঐক্য, চৈতন্য।
ও : বাংলা একাক্ষর শব্দে ও-কার দীর্ঘ হয়। যেমন : গো, জোর, রোগ, ভোর, কোন, বোন ইত্যাদি অন্যত্র সাধারণত হ্রস্ব হয়। যেমন : সোনা, কারো, পুরোভাগ। ও-এর উচ্চারণ ইংরেজি বোট / boat শব্দের / oa -এর মতো
বর্ণ
ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে বলা হয় বর্ণ। কোন ভাষায় ব্যবহৃত লিখিত বর্ণসমষ্টিকে সে ভাষার বর্ণমালা বলা হয়। যে বর্ণমালায় বাংলা বর্ণ লিখিত হয় তাকে বলা হয় বঙ্গলিপি। বাংলা বর্ণমালায় মোট বর্ণ ৫০টি।
বর্ণ দুই প্রকার। যথা:-
- স্বরবর্ণ
- ব্যঞ্জনবর্ণ
স্বরবর্ণ: স্বরধ্বনি নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত বর্ণ বা স্বরধ্বনির দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে বলা হয় স্বরবর্ণ। বাংলা বর্ণমালায় স্বরবর্ণ ১১ টি: হ্রস্ব স্বর ৪টি (অ, ই, উ, ঋ), দীর্ঘ স্বর ৭টি (হ্রস্ব স্বর বাদে বাকিগুলো)।
- স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ হল ‘কার’। কার আছে এমন স্বরবর্ণ ১০টি (শুধুমাত্র “অ” এর সংক্ষিপ্ত রূপ নেই)। ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
- মৌলিক স্বরজ্ঞাপক বর্ণ ৭টি: অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।
- যৌগিক স্বরজ্ঞাপক বর্ণ ২টি: ঐ = অ + ই, ঔ = অ + উ। অন্যান্য যৌগিক স্বরের কোন আলাদা বর্ণ নেই।
ব্যঞ্জনবর্ণ: ব্যঞ্জনধ্বনি দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে বলা হয় ব্যঞ্জনবর্ণ।
- বাংলা বর্ণমালায় ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি (প্রকৃত ৩৫টি + অপ্রকৃত ৪টি)
- ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ হল ‘ফলা’।
- ফলা আছে এমন ব্যঞ্জণবর্ণ ৬টি: ম, ন, ব, য, র, ল ।
মাত্রা: বর্ণের উপরে যে রেখা ( ¯ ) বা দাগ দেওয়া থাকে তাই মাত্রা। মাত্রা অনুযায়ী বাংলা বর্ণ তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:
- পূর্ণমাত্রাযুক্ত বর্ণ: বর্ণের উপর পূর্ণ মাত্রা থাকে।
- অর্ধমাত্রাযুক্ত বর্ণ: বর্ণের উপর অর্ধেক মাত্রা থাকে।
- মাত্রাহীন বর্ণ: বর্ণের উপর কোন মাত্রা থাকে না।
মাত্রা | স্বরবর্ণ | ব্যঞ্জনবর্ণ | মোট |
---|---|---|---|
মাত্রাহীন | ৪টি (এ, ঐ, ও, ঔ) | ৬টি (ঙ, ঞ, ৎ, ং, ঃ, ঁ) | ১০টি |
অর্ধমাত্রাযুক্ত | ১টি (ঋ) | ৭টি (খ, গ, ণ, থ, ধ, প, শ) | ৮টি |
পূর্ণ মাত্রাযুক্ত | ৬টি (অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ) | ২৬টি | ৩২টি |
মোট | ১১টি | ৩৯টি | ৫০টি |
কার ও ফলা
‘অ’ বাদে বাকি স্বরবর্ণগুলো ও কিছু কিছু ব্যঞ্জনবর্ণ দুটি ভিন্ন রূপে ভাষায় ব্যবহৃত হয়। এরা স্বাধীনভাবে শব্দের মাঝে ব্যবহৃত হয়; আবার অন্য কোন বর্ণের সাথে যুক্ত হয়ে সংক্ষিপ্ত রূপে বা আশ্রিত রূপেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, ‘আ’ বর্ণটি ‘আবার’ শব্দ স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং একইসাথে ‘ব’-র (ব + আ = বা) আশ্রিত হয়ে সংক্ষিপ্ত রূপেও (া ) ব্যবহৃত হয়েছে। ‘আ’-র এই সংক্ষিপ্ত রূপটিকে (া ) আ-কার বলা হয়। অনুরূপভাবে ই-কার(ি) , ঈ-কার(ী) , উ-কার(ু) , ঊ-কার(ূ) ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
বাংলা বর্ণমালায় ফলা ৬ টি। যথা: ণ/ন-ফলা, য-ফলা , ব-ফলা, ম-ফলা, র-ফলা ও ল-ফলা। যেমন: ‘চিহ্ন’ শব্দে ‘ন’ ফলা ব্যবহৃত হয়েছে। অনুরূপভাবে বিশ্বাস, তন্ময়, অত্যন্ত, গ্রহ, উল্লাস শব্দগুলোতে যথাক্রমে ব-ফলা, ম-ফলা, য-ফলা, র-ফলা ও ল-ফলা ব্যবহৃত হয়েছে।
যুক্তবর্ণ
গুরুত্বপূর্ণ যুক্তবর্ণগুরো নিম্নরূপ –
ক্র = ক্ + র | ক্ষ = ক্ + ষ | ঙ্গ = ঙ্ + গ | জ্ঞ = জ্ +ঞ |
ঞ্চ = ঞ্ + জ | ত্র = ত্ + র | ত্থ = ত্ + থ | শ্রু = শ্ + র্ + উ |
শ্রূ = শ্ + র্ + ঊ | ষ্ণ = ষ্ + ণ | হৃ = হ্ + ঋ | হ্ন = হ্ + ন |
হ্ম = হ্ + ম |
বাংলা ২য় পত্র অধ্যায়-২: ধ্বনি ও বর্ণ (Sound and word)
১. স্বরবর্ণের প্রাথমিক রূপ কাকে বলে?
Ο ক) স্বরবর্ণের স্বাধীন ব্যবহারকে
Ο খ) শব্দের আদিতে স্বরবর্ণের ব্যবহারকে
Ο গ) সংক্ষিপ্ত আকারে স্বরবর্ণের ব্যবহারকে
Ο ঘ) যুগ্ম-স্বরধ্বনির ব্যবহারকে
সঠিক উত্তর: (ক)
২. স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে কী বলে?
Ο ক) কার
Ο খ) ফলা
Ο গ) স্বর
Ο ঘ) মূল
সঠিক উত্তর: (ক)
৩. স্বরধ্বনির লিখিত রূপ বা প্রতীককে কী বলে?
Ο ক) স্বরস্বর
Ο খ) স্বরবর্ণ
Ο গ) স্বরাগম
Ο ঘ) স্বরলিপি
সঠিক উত্তর: (খ)
৪. ও, ঔ উচ্চারণস্থান অনুসারে বর্ণের নাম কী?
Ο ক) দন্ত্য বর্ণ
Ο খ) ওষ্ঠ্য বর্ণ
Ο গ) কন্ঠ্যেষ্ঠ্য বর্ণ
Ο ঘ) তালব্য বর্ণ
সঠিক উত্তর: (গ)
৫. নিচের যে শব্দে ‘এ’ এর বিকৃত উচ্চারণ হয়েছে –
Ο ক) একটি
Ο খ) কেটলি
Ο গ) এক
Ο ঘ) মেঘ
সঠিক উত্তর: (গ)
৬. ঞ + চ এর সমন্বয়ে গঠিত যুক্তবর্ণের শব্দ হলো –
Ο ক) ব্যঞ্জন
Ο খ) তৃষ্ণা
Ο গ) অঞ্চল
Ο ঘ) যজ্ঞ
সঠিক উত্তর: (গ)
৭. ‘শব্দের মধ্যে বা শেষে ব-ফলা যুক্ত হলে ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়’ – এই সূত্রের আলোকে সঠিক উচ্চারণ হলো –
Ο ক) বিশশাশ্
Ο খ) পকক
Ο গ) দনদো
Ο ঘ) তিববত
সঠিক উত্তর: (ক)
৮. নিচের কোনটিতে শব্দের মাঝে স্বরবর্ণের পূর্ণরূপ রয়েছে?
Ο ক) উকিল
Ο খ) বাউল
Ο গ) মৌসুমি
Ο ঘ) পৃথিবী
সঠিক উত্তর: (খ)
৯. কোনগুলো কন্ঠ্য ধ্বনি?
Ο ক) চ, ছ, জ, ঝ, ঞ
Ο খ) ক, খ, গ, ঘ, ঙ
Ο গ) ট, ঠ, ড, ঢ, ণ
Ο ঘ) ত, থ, দ, ধ, ন
সঠিক উত্তর: (খ)
১০. ‘স্মরণ’ এর শুদ্ধ উচ্চারণ হবে –
Ο ক) শঁরন্
Ο খ) শোরন্
Ο গ) শঁরোন্
Ο ঘ) শোঁরোন
সঠিক উত্তর: (গ)
১১. যৌগিক স্বরধ্বনির প্রতীক কোনটি?
Ο ক) ঔ
Ο খ) ঋ
Ο গ) ঈ
Ο ঘ) অ
সঠিক উত্তর: (ক)
১২. মৌলিক স্বরধ্বনি কয়টি?
Ο ক) ২টি
Ο খ) ৫টি
Ο গ) ৬টি
Ο ঘ) ৭টি
সঠিক উত্তর: (ঘ)
১৩. যে ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া নিজেই সম্পূর্ণরূপে উচ্চারিত হয় এবং যাকে আশ্রয় করে অন্য ধ্বনির সৃজন হয় তাকে বলে –
Ο ক) স্বরধ্বনি
Ο খ) ব্যঞ্জনধ্বনি
Ο গ) যৌগিক ধ্বনি
Ο ঘ) মৌলিক ধ্বনি
সঠিক উত্তর: (ক)
১৪. বাংলা বর্ণমালায় পূর্ণমাত্রা, অর্ধমাত্রা ও মাত্রাহীন বর্ণের সংখ্যা যথাক্রমে –
Ο ক) ৩৩, ৮, ১০
Ο খ) ৩২, ৭, ১১
Ο গ) ৩০, ৮, ১২
Ο ঘ) ৩২, ৭, ৯
সঠিক উত্তর: (ক)
১৫. ‘পদ্ম’ এর শুদ্ধ উচ্চারণ হলো –
Ο ক) পদদঁ
Ο খ) পোদদো
Ο গ) পদদোঁ
Ο ঘ) পদদুঁ
সঠিক উত্তর: (গ)
১৬. ধ্বনি তৈরিতে সহায়তা করে কোনটি?
Ο ক) স্বরতন্ত্রী
Ο খ) গলনালি
Ο গ) তালু
Ο ঘ) বাগযন্ত্র
সঠিক উত্তর: (ঘ)
১৭. ‘ম’ অনুচ্চারিত থাকে কোন শব্দে –
Ο ক) স্মার্ট
Ο খ) স্মৃতি
Ο গ) স্মিত
Ο ঘ) স্মাইল
সঠিক উত্তর: (খ)
১৮. ‘শ্মশান’ এর শুদ্ধ উচ্চারণ কোনটি?
Ο ক) শঁশান্
Ο খ) শসান্
Ο গ) শোশান্
Ο ঘ) শোসান্
সঠিক উত্তর: (ক)
১৯. ‘দ্বিত’ এর শুদ্ধ উচ্চারণ কোনটি?
Ο ক) দিততো
Ο খ) দিততোঁ
Ο গ) দিতত
Ο ঘ) দিততঁ
সঠিক উত্তর: (ক)
২০. ‘অ, ই, উ, ঋ’ – কোন ধরনের স্বরধ্বনি?
Ο ক) দীর্ঘ স্বরধ্বনি
Ο খ) হ্রস্ব স্বরধ্বনি
Ο গ) যৌগিক স্বরধ্বনি
Ο ঘ) মৌলিক স্বরধ্বনি
সঠিক উত্তর: (খ)
২১. ‘মৃন্ময়’ এর সঠিক উচ্চারণ হবে –
Ο ক) মৃনময়
Ο খ) মৃনমোয়
Ο গ) মৃনময়্
Ο ঘ) মৃনমোয়্
সঠিক উত্তর: (ক)
২২. মৌলিক স্বরধ্বনি কোনটি?
Ο ক) উ
Ο খ) ঊ
Ο গ) ঐ
Ο ঘ) ঔ
সঠিক উত্তর: (ক)
২৩. ধ্বনি এককের জন্য প্রত্যেক ভাষায় যে প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে কী বলা হয়?
Ο ক) বর্ণ
Ο খ) শব্দ
Ο গ) পদ
Ο ঘ) ধ্বনি
সঠিক উত্তর: (ক)
২৪. ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে কী বলে?
Ο ক) কার
Ο খ) ফলা
Ο গ) হলন্ত বর্ণ
Ο ঘ) সংবৃত
সঠিক উত্তর: (খ)
২৫. ‘ঙ’ – এর উচ্চারণ স্থানের নাম কী?
Ο ক) তালু
Ο খ) ওষ্ঠ
Ο গ) মূর্ধা
Ο ঘ) কন্ঠ্য
সঠিক উত্তর: (ঘ)
২৬. ক খ গ ঘ ঙ – এর উচ্চারণ স্থান হলো –
Ο ক) অগ্রতালু
Ο খ) জিহ্বামূল
Ο গ) পশ্চাৎ দন্তমূল
Ο ঘ) অগ্র দন্তমূল
সঠিক উত্তর: (খ)
২৭. ‘প’ বর্গীয় ধ্বনিগুলোর উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী নাম কী?
Ο ক) কন্ঠ্য ধ্বনি
Ο খ) তালব্য ধ্বনি
Ο গ) মূর্ধন্য ধ্বনি
Ο ঘ) ওষ্ঠ্য ধ্বনি
সঠিক উত্তর: (ঘ) ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
২৮. র-ফলা কোথায় যুক্ত হয়?
Ο ক) বর্ণের উপরে
Ο খ) বর্ণের নিচে
Ο গ) বর্ণের পাশে
Ο ঘ) বর্ণের আগে
সঠিক উত্তর: (খ)
২৯. ব্যঞ্জনধ্বনির লিখিত রূপ বা প্রতীককে কী বলে?
Ο ক) ব্যঞ্জনস্বর
Ο খ) ব্যঞ্জনরব
Ο গ) ব্যঞ্জনবর্ণ
Ο ঘ) স্বরবর্ণ
সঠিক উত্তর: (গ)
৩০. ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে কী বলে?
Ο ক) শব্দ
Ο খ) বর্ণ
Ο গ) বাক্য
Ο ঘ) পদ
সঠিক উত্তর: (খ)
৩১. উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী কোনগুলো তালব্য বর্ণ?
Ο ক) ক, খ, গ
Ο খ) চ, ছ, ঝ
Ο গ) ট, ঠ, ড
Ο ঘ) প, ফ, ব
সঠিক উত্তর: (খ)
৩২. গঠন বিচারে স্বরধ্বনিকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়?
Ο ক) দুইভাগে
Ο খ) তিনভাগে
Ο গ) চারভাগে
Ο ঘ) পাঁচভাগে
সঠিক উত্তর: (ক)
৩৩. মানুষের মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাক-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে উচ্চারিত আওয়াজকে বলে –
Ο ক) ভাষা
Ο খ) ধ্বনি
Ο গ) শব্দ
Ο ঘ) বাক্য
সঠিক উত্তর: (খ)
৩৪. বাংলা বর্ণামালায় স্বরবর্ণের লিখিত রূপ কতটি?
Ο ক) ১টি
Ο খ) ২টি
Ο গ) ৩টি
Ο ঘ) ৪টি
সঠিক উত্তর: (খ)
৩৫. বাংলা বর্ণমালায় ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা কতটি?
Ο ক) ১১টি
Ο খ) ১৩টি
Ο গ) ৩৯টি
Ο ঘ) ৪৯টি
সঠিক উত্তর: (গ) ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
বহু নির্বাচনী
ধ্বনিতত্ত্ব
১। স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে কী বলে?
ক) ফলা খ) কার
গ) রেখা ঘ) যুক্ত বর্ণ
২। ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে কী বলে?
ক) ফলা খ) কার
গ) রেখা ঘ) ফলাই
৩। ‘ব্রহ্মপুত্র’ শব্দের ‘হ্ম’ যুক্তবর্ণটি কোন কোন বর্ণের সংযুক্ত রূপ?
ক) ম + হ
খ) হ্ + ম
গ) ক্ + ষ
ঘ) ষ্ + ণ
৪। তাড়নজাত ধ্বনি কোনগুলো?
ক) চ, ছ খ) ড়, ঢ়
গ) ড, ঢ ঘ) ৎ, ঃ
৫। যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় তাকে কী বলে?
ক) উষ্ম ধ্বনি
খ) পার্শ্বিক ধ্বনি
গ) যৌগিক ধ্বনি ঘ) ঘোষ ধ্বনি
৬। বাংলা একাক্ষর শব্দে আ-এর উচ্চারণ কী হয়?
ক) হ্রস্ব হয়
খ) দীর্ঘ হয়
গ) হ্রস্ব হয় না
ঘ) দীর্ঘ হয় না
৭। কোন স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ নেই?
ক) আ খ) অ
গ) উ ঘ) ঋ
৮। বাংলা বর্ণমালায় পূর্ণমাত্রা, অর্ধমাত্রা ও মাত্রাহীন বর্ণের সংখ্যা যথাক্রমে—
ক) ৩২, ৮, ১০
খ) ৩২, ৭, ১১
গ) ৩০, ৮, ১২
ঘ) ৩২, ৭, ৯
৯। বাংলা বর্ণমালায় ফলা কয়টি?
ক) পাঁচটি খ) আটটি
গ) দশটি ঘ) ছয়টি
১০। ধ্বনি উৎপাদনের মূল উপকরণ বা উচ্চারক কোনটি?
ক) কণ্ঠ ও জিহ্বা খ) জিহ্বা ও ওষ্ঠ
গ) জিহ্বা ও তালু ঘ) তালু ও নাসিকা
১১। বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা কয়টি?
ক) এগারোটি
খ) পঁচিশটি
গ) চল্লিশটি
ঘ) পঞ্চাশটি
১২। কোন ধ্বনি উচ্চারণে জিহ্বা সাধারণত শায়িত থাকে?
ক) ‘অ’ ধ্বনি
খ) ‘আ’ ধ্বনি
গ) ‘ই’ ধ্বনি
ঘ) ‘উ’ ধ্বনি
১৩। ‘ক’ থেকে ‘ম’ পর্যন্ত বর্ণগুলোকে কী বর্ণ বলা হয়?
ক) মহাপ্রাণ বর্ণ
খ) স্পর্শ বর্ণ
গ) ওষ্ঠ্য বর্ণ
ঘ) ঘোষ বর্ণ
১৪। বাংলা ভাষায় সাধারণত কয় ভাবে সংযুক্ত ব্যঞ্জন গঠিত হতে পারে?
ক) দুই ভাবে
খ) তিন ভাবে
গ) চার ভাবে
ঘ) পাঁচ ভাবে
১৫। য র ল ব—এ চারটি বর্ণকে কী বলে?
ক) স্পর্শ বর্ণ
খ) উষ্ম বর্ণ
গ) অন্তঃস্থ বর্ণ
ঘ) তালব্য বর্ণ
ধ্বনির পরিবর্তন
১। ‘রিক্সা > রিস্কা’—কিসের উদাহরণ?
ক) ব্যঞ্জনবিকৃতি
খ) ধ্বনি বিপর্যয়
গ) বিষমীভবন
ঘ) বিপ্রকর্ষ
২। পরের ই-কার ও উ-কার আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জন ধ্বনির আগে ই-কার বা উ-কার উচ্চারিত হলে তাকে কী বলে?
ক) বিপ্রকর্ষ
খ) ধ্বনি বিপর্যয়
গ) অপিনিহিতি
ঘ) অভিশ্রুতি
৩। দুটি সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে কী বলে?
ক) সমীভবন
খ) ব্যঞ্জনবিকৃতি
গ) ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা
ঘ) বিষমীভবন
৪। পদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জন ধ্বনি লোপ হলে তাকে কী বলে?
ক) অভিশ্রুতি
খ) বিষমীভবন
গ) স্বরলোপ
ঘ) অন্তর্হতি
৫। একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে স্বরধ্বনি যুক্ত হওয়াকে কী বলে?
ক) পরাগত
খ) সম্প্রকর্ষ
গ) স্বরসংগতি
ঘ) অসমীকরণ
৬। বিষমীভবনের উদাহরণ কোনটি?
ক) লাল > নাল
খ) বিলাতি > বিলিতি
গ) ধোবা > ধোপা ঘ) গ্রাম > গেরাম
৭। বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সঙ্গে মিলে গেলে এবং তদানুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির যে পরিবর্তন ঘটে তাকে কী বলে?
ক) নামধাতু
খ) অন্তর্হতি
গ) অভিশ্রুতি
ঘ) যোগরূঢ় শব্দ
৮। একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে কী বলে?
ক) বিষমীভবন
খ) স্বরসংগতি
গ) ব্যঞ্জনচ্যুতি
ঘ) সমীভবন
৯। আদি স্বরাগমের উদাহরণ কোনটি?
ক) স্কুল > ইস্কুল খ) দিশ্ > দিশা
গ) গ্রাম > গেরাম ঘ) রত্ন > রতন
১০। শব্দ মধ্যস্থ দুটি ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে অল্প-বিস্তর সমতা লাভ করে। এ ব্যাপারকে কী বলা হয়?
ক) দ্বিত্ব ব্যঞ্জন
খ) সমীভবন
গ) সম্প্রকর্ষ
ঘ) অসমীকরণ
১১। নিচের কোনটি র-কার লোপের উদাহরণ?
ক) গাহিল > গাইল খ) পুরোহিত > পুরুত
গ) চাহে > চায়
ঘ) তর্ক > তক্ক
১২। ‘স্কুল > ইস্কুল’—এটি কোন ধরনের ধ্বনির পরিবর্তন?
ক) মধ্য স্বরাগম
খ) বিপ্রকর্ষ
গ) আদি স্বরাগম ঘ) অন্ত্য স্বরাগম
১৩। নিচের কোনটি দ্বিত্ব ব্যঞ্জনের উদাহরণ?
ক) পাকা > পাক্কা খ) কবাট > কপাট
গ) ধোবা > ধোপা ঘ) ধাইমা > দাইমা
১৪। পরাগত সমীভবনের উদাহরণ কোনটি?
ক) চক্র > চক্ক
খ) তৎ + জন্য > তজ্জন্য
গ) পক্ব > পক্ক ঘ) বিদ্যা > বিজ্জা
১৫। পাশাপাশি সম উচ্চারণের দুটি ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলে তার একটি লোপ পায়—এরূপ লোপকে কী বলে?
ক) দ্বিত্ব ব্যঞ্জন
খ) ব্যঞ্জন বিকৃতি
গ) ব্যঞ্জনচ্যুতি
ঘ) অন্তর্হতি ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে
বহু নির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর : ধ্বনিতত্ত্ব : ১. খ ২. ক ৩. খ ৪. খ ৫. ঘ ৬. খ ৭. খ ৮. ক ৯. ঘ ১০. খ ১১. খ ১২. খ ১৩. খ ১৪. খ ১৫. গ।
ধ্বনির পরিবর্তন : ১. খ ২. গ ৩. ঘ ৪. ঘ ৫. ঘ ৬. ক ৭. গ ৮. খ ৯. ক ১০. খ ১১. ঘ ১২. গ ১৩. ক ১৪. খ ১৫.
আমাদের পোষ্ট গুলো প্রতিনিয়ত আপডেট করা হয়। বিসিএস,প্রাইমারি সহ সব পরীক্ষার প্রতিনিয়ত প্রশ্ন অনুযায়ী পোষ্ট গুলো আমরা আপডেট করি। সবার জন্য শুভ কামনা রইলো।