মানসিক চাপ কমানোর উপায়

মানসিক চাপ কমানোর উপায়

শেয়ার করুন

মানসিক চাপ কমানোর উপায়

মানসিক চাপ কমানোর উপায় : মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে।  দীর্ঘমেয়াদে অবসাদ, ক্লান্তি ও একঘেয়ে জীবন চাপ সৃষ্টি করে মনের ওপর।  আবার পারিপার্শিক অবস্থার কারণেও অনেক সময় মানসিক চাপ তৈরি হয়।  এই চাপ দীর্ঘসময় বয়ে বেড়ালে বড় বিপদ হয়ে যেতে পারে।  

মনের চাপ থেকেই রক্তচাপে হেরফের দেখা দেয়।  অনেক ক্ষেত্রে হৃদরোগের কারণও মানসিক চাপ।  

মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায়

মানসিক চাপ কাটানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেন।

* প্রথমত জানতে হবে মানসিক চাপের কারণে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য, আমাদের নিরাপত্তার জন্য তৈরি হয় এবং এটি প্রাকৃতিক ও শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া।  এতে ঘাবড়ে গেলেই বিপদ।  তাই মানসিক চাপ তাৎক্ষণিক মোকাবিলা করার মনোবল রাখতে হবে।  কেউ দীর্ঘদিন মানসিক চাপে থাকলে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়, সেগুলো শনাক্ত করতে হবে এবং সেগুলোর ক্ষতিকারক প্রভাব কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

সুগার রোগীর খাদ্য তালিকা

* দ্বিতীয়ত যেসব সমস্যার কারণে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে যেসব সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে।  সেক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করে ধীরস্থির হয়ে, বিচক্ষণতার সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে হবে।  প্রয়োজনে পেশাদার কারো সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

* শ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে।  শরীর প্রশান্ত করতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি।  নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রেখে মুখ দিয়ে ছাড়তে হবে।  এ প্রক্রিয়া চলাকালীন সম্পূর্ণ মনোযোগ শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিবিধির ওপর দিতে হবে।  ১০ মিনিট করে দৈনিক ৩/৪ বার এই ব্যায়ামটি করতে হবে।

* মেডিটেশন মনে প্রশান্তি আনে।  মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন মানুষকে অপ্রয়োজনীয় চিন্তা থেকে সরিয়ে কাঙিক্ষত লক্ষ্যে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে, ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে ভাবতে শেখায়, নিজেকে ক্ষমা করতে শেখায়, নিজেকে জানতে এবং ভালোবাসতে শেখায়।  মেডিটেশন মাংসপেশিকে শিথিল করে।

একই সময়ে, নিয়মিত ৪৫ মিনিট বিভিন্ন প্রকার শরীরচর্চা যেমন- হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি করলে মস্তিষ্ক এন্ডরফিন নামক একপ্রকার হরমোন নিঃসরণ করে যা শরীরকে উদ্দীপ্ত রাখে, কাজ করার শক্তি জোগায়।

আরও জানুন : 

রোগ থেকে মুক্তির দোয়া

* নিয়মিত, পর্যাপ্ত ঘুম শরীর এবং মনের ক্লান্তি দূর করে, শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলোকে সচল রাখতে সহায়তা করে।

* যাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকে, প্রয়োজনে পাশে থাকার সঙ্গী থাকে, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় থাকে তাদের ওপর মানসিক চাপের নেতিবাচক প্রভাব খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না।

কারণ তাদের অক্সিটোসিন হরমোন বেশি নিঃসরণ হয়, যা উদ্বেগ কমায় এবং মনকে শান্ত রাখে।  

তাই সুস্থ থাকতে হলে প্রকৃত বন্ধুর সংখ্যা বাড়াতে হবে, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে।  যদি ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গে সমস্যা তৈরি হয় এবং তা মানসিক চাপের কারণ হয় তাহলে সেই সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে চেষ্টা করতে হবে।

মানসিক স্ট্রেস কমানোর উপায়

  • যেভাবে জীবনকে পরিচালিত করতে চাই, জীবনে যতটা সফল হতে চাই তা হতে পারি না।  সেক্ষেত্রে বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার মতো দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে, অন্যকে এবং নিজেকে ক্ষমা করার জন্য গুণাবলী অর্জন করতে হবে।  জীবনের যে কোনো অবস্থায় নিজেকে ভালোবাসতে হবে।  নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
  •  নিয়মিত, পরিমিত পরিমাণে সুষম খাদ্য খেতে হবে। ফল, শাক-সবজি, প্রোটিন বেশি করে খেতে হবে। পানি প্রচুর পরিমাণে পান করতে হবে।
  •  নিয়মিত প্রার্থনা ও দোয়া-দরুদ ধর্মপ্রাণ মানুষের মনোবল বাড়ায়, মনে শান্তি আনে।
  • বই পড়ে, গান শুনে, বাগান করে বা অন্য কোনো শখের কাজ করে এ কেউ কেউ মানসিক চাপমুক্ত হতে পারেন।
  •  সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে হবে।  কখনও কখনও নিজের ইচ্ছাকে দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করতে হবে।

মানসিক চাপের লক্ষণ

যখন মানসিক চাপ অনুভব করবেন তখন এই লক্ষণগুলো শারীরিক ভাবে পরিলক্ষিত হতে পারে।

  • বদহজম হওয়া
  • ওজন বেড়ে যাওয়া অথবা কমে যাওয়া
  • নিজের মধ্যে অস্বস্তিবোধ করা
  • অসুস্থতায় ভোগা
  • মাথাব্যাথা
  • মাথা ঘোরা
  • ঘুমের অসুবিধা
  • বমি বমি ভাব

মানসিক চাপ যখন তীব্র হয় তখন সাধারণত নিম্ম লিখিত বিষয় গুলো ঘটতে পারে।

  • নিঃসঙ্গতা অনুভব
  • অসহায় বোধ করা
  • অনিশ্চয়তায় ভোগা
  • সিদ্ধান্ত নেওয়ার অসুবিধা হওয়া
  • উদ্বেগ
  • ভয়
  • বিরক্তি ভাব
  • অল্পতেই রাগ
  • হতাশা

 

মানসিক চাপ কমানোর ঔষধ

সাইকোথেরাপি: 

মানসিক চাপ এ মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং টক থেরাপি নামেও পরিচিত, এতে উদ্বেগের লক্ষণগুলি কমাতে একজন থেরাপিস্টের সাথে কাজ করা জড়িত। যা উদ্বেগের জন্য একটি কার্যকর চিকিত্সা হতে পারে।

উদ্বেগজনিত ব্যাধিগুলির জন্য সাইকোথেরাপির সবচেয়ে কার্যকরী রূপ হল জ্ঞানীয়-আচরণমূলক থেরাপি (CBT) হল একটি স্বল্পমেয়াদী চিকিত্সা, আপনার লক্ষণগুলিকে উন্নত করার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট দক্ষতা শেখানোর উপর ফোকাস করতে হবে এবং দেখবে এক সময় ধীরে ধীরে সেই ক্রিয়াকলাপগুলিতে ফিরে যেতে যা আপনি উদ্বেগের কারণে এড়িয়ে গেছেন।

মেডিকেশন:

আপনার উদ্বেগজনিত ব্যাধির ধরন এবং আপনার অন্যান্য মানসিক বা শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কিনা তার উপর নির্ভর করে লক্ষণগুলি উপশম করার জন্য বিভিন্ন ধরণের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ:

  • কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস উদ্বেগজনিত ব্যাধিগুলির চিকিত্সার জন্যও ব্যবহৃত হয়।
  • Buspirone এবং অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ঔষধ নির্ধারিত হতে পারে।

যে ওষুধগুলি উদ্বেগের চিকিত্সার জন্য সাধারণত ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে রয়েছে এন্টিডিপ্রেসেন্টস এবং সেডেটিভস। তারা মস্তিষ্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে, চিন্তা বা  উদ্বেগের পর্বগুলি প্রতিরোধ করতে এবং ব্যাধির অতিরিক্ত গুরুতর লক্ষণ এবং উপসর্গগুলিকে বাঁচাতে কাজ করে।

 

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *