পদ কাকে বলে উদাহরণ সহ

পদ কাকে বলে উদাহরণ সহ

শেয়ার করুন

পদ কাকে বলে উদাহরণ সহ

পদ কাকে বলে উদাহরণ সহ : বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দকে পদ বলে। এক কথায় বলা যায়, বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যকটি শব্দই একেকটি পদ। যেমন – মানুষ, তাঁরা, জন্য, আকাশ ইত্যাদি। তাহলে চলুন পদের বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করা যাক। আশা করি আজকের পর থেকে এ বিষয়ে যেকোন পরীক্ষায় কোন ধরনের প্রশ্ন আর মিস হবে না।

পদ কাকে বলে
পদ

পদ প্রধানত কত প্রকার

গঠনগতভাবে পদ দুই প্রকার। যথা:

  • সলগ্নক পদ: যেসব পদে লগ্নক থাকে সেগুলোকে সলগ্নক পদ বলে।
  • অলগ্নক পদ: যেসব পদে লগ্নক থাকে না সেগুলোকে অলগ্নক পদ বলে।

উদাহরণ: “ছেলেরা ক্রিকেট খেলে” – এই বাক্যের ‘ছেলেরা’ (ছেলে + রা) ও ‘খেলে’ (খেল + এ) সলগ্নক পদ এবং ‘ক্রিকেট’ অলগ্নক পদ।

বর্তমানে বাংলা ভাষায় পদ ৮ প্রকার। যথা: (বর্তমান ৯-১০ম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণে ‘অব্যয়’ অন্তর্ভুক্ত নেই)

১.বিশেষ্য ২. বিশেষণ ৩.সর্বনাম ৪. ক্রিয়া ৫.ক্রিয়া বিশেষণ ৬.অনুসর্গ ৭.যোজক ৮.আবেগ

বিশেষ্য পদ কাকে বলে উদাহরণ

বাক্যমধ্যে ব্যবহৃত যে সমস্ত পদ দ্বারা কোন ব্যাক্তি, বস্তু,স্থান, জাতি,কাল,ভাব ইত্যাদি নাম বোঝানো হয়, তাদের বিশেষ্য পদ বলে।

ইফাদ, ঢাকা, নদী,গীতাঞ্জলি, চাল ইত্যাদি।বিশেষ্যের প্রকারভেদবিশেষ্য পদ সাধারণত ৬ প্রকার।

যথা:নাম বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য

ব্যক্তি, স্থান ইত্যাদির নাম বোঝায়। যেমন: রহিম, ঢাকা, রবিবার, মেঘনা, হিমালয়, গীতাঞ্জলি ইত্যাদি।জাতিবাচক বিশেষ্য

একই জাতীয় বস্তু বা প্রাণীর সাধারণ নাম বোঝায়। যেমন: কবি, মাছ, মানুষ, ইংরেজ, নদী, পর্বত, গাছ ইত্যাদি।বস্তুবাচক বিশেষ্য

উপাদানবাচক পদার্থের নাম বোঝায়। যেমন: টেবিল, কাঠ, ধান, পানি, লবণ, মাটি, কলম ইত্যাদি।সমষ্টিবাচক বিশেষ্য

বেশ কিছু বস্তু বা প্রাণীর সমষ্টিগত নামকে বোঝায়। যেমন: সেনাবাহিনী, দল, জনতা, সমিতি, মহফিল, বহর, সভা ইত্যাদি।গুণবাচক বিশেষ্য

কোন কিছুর দোষ বা গুণের নাম বোঝায়। যেমন: দারিদ্র, দীনতা, সততা, ধৈর্য, গুরুত্ব, যৌবন, সৌরভ ইত্যাদি।ক্রিয়া-বিশেষ্য

কোন কাজের নাম বোঝায়। যেমন: পঠন, শয়ন, গমন, দর্শন ইত্যাদি।

বিশেষণ পদ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন: চলন্ত গাড়ি। এখানে চলন্ত গাড়ির একটি অবস্থা নির্দেশ করেছে, তাই এটি বিশেষণ পদ।

বিশেষণের প্রকারভেদ

বিশেষণ দুইভাগে বিভক্ত। যথা: নাম বিশেষণ ও ভাব বিশেষণ। পদ কাকে বলে উদাহরণ সহ

নাম বিশেষণ

যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষায়িত করে তাই নাম বিশেষণ। যেমন: হাজার লোক। এখানে লোক বিশেষ্য পদ এবং হাজার শব্দ লোক শব্দটিকে বিশেষিত করেছে। নাম বিশেষণের প্রকারভেদ-

  • রূপবাচক: নীল আকাশ, কালো মেঘ, সবুজ মাঠ
  • গুণবাচক: চৌকশ লোক, দক্ষ কারিগর
  • অবস্থাবাচক: তাজা মাছ, রোগা ছেলে
  • সংখ্যাবাচক: টাকা
  • ক্রমবাচক: দশম শ্রেনী
  • পরিমাণবাচক: এক কেজি চাল
  • অংশবাচক: সিঁকি পথ
  • উপাদানবাচক: বেলে মাটি
  • প্রশ্নবাচক: কতদূর পথ?
  • নির্দিষ্টতাজ্ঞাপক: এই লোক, সেই ছেলে, ছাব্বিশে মার্চ

ভাববাচক বিশেষণ

যে বিশেষণ পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম ব্যাতীত অন্য পদকে বিশেষায়িত করে তাকে ভাববাচক বিশেষণ বলে। যেমন: ধীরে ধীরে বায়ু বয়। ভাববাচক বিশেষণ ৪ প্রকার। যথা:

  • ক্রিয়া বিশেষণ: ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে। যেমন: পরে একবার আসবে।
  • বিশেষণীয় বিশেষণ: বিশেষণ বা ক্রিয়া বিশেষণকে বিশেষিত করে। যেমন: রকেট অতি দ্রুত চলে।
  • অব্যয়ের বিশেষণ: অব্যয়-পদ বা তার অর্থকে বিশেষিত করে। যেমন: ধিক্ তারে।
  • বাক্যের বিশেষণ: সম্পূর্ণ বাক্যকে বিশেষিত করে। যেমন: বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন।

বিশেষণের অতিশায়ন

বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য পদের মধ্যে গুণ, অবস্থা, পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ে তুলনায় একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝিয়ে থাকে, তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। যেমন: যমুনা একটি দীর্ঘ নদী, পদ্মা দীর্ঘতর, কিন্তু মেঘনা দীর্ঘতম নদী।

বাংলা শব্দের অতিশায়ন

দুয়ের মধ্যে চাইতে, চেয়ে, হইতে, হতে, অপেক্ষা, থেকে ইত্যাদি শব্দ এবং বহুর মধ্যে সবচাইতে, সবচেয়ে, সব থেকে, সর্বাপেক্ষা, সর্বাধিক প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়। জোর দেওয়ার জন্য অনেক, অধিক, বেশি, কম ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। যেমন:

  • গরুর থেকে ঘোড়ার দাম বেশি
  • দশম শ্রেণীর ছাত্রদের মধ্যে করিম সবচেয়ে বুদ্ধিমান
  • পদ্মফুল গোলাপের চাইতে অনেক সুন্দর। পদ কাকে বলে উদাহরণ সহ

তৎসম শব্দের অতিশায়ন

দুয়ের মধ্যে তর, তম, ঈয়স এবং বহুর মধ্যে তম, ইষ্ঠ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-

  • ঘোড়া হাতি অপেক্ষা অধিকতর সুশ্রী।
  • নির্মান শেষ হলে পাদ্মা সেতু বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু হবে।

উল্লেখ্য একই পদ বিশেষ্য ও বিশেষণ উভয়রূপে প্রয়োগ হতে পারে। যেমন-

ভালো বাড়ি পাওয়া কঠিন (বিশেষণ)

আপন ভালো সবাই চায় (বিশেষ্য)

বিশেষ্য ও বিশেষণ এর পার্থক্যঃ

পার্থক্যঃ বিশেষণ বিশেষ্য
ভালো ভালো বাড়ি পাওয়া কঠিন আপন ভালো সবাই চাই
মন্দ মন্দ কথা বলতে নেই এখানে কি মন্দটা তুমি দেখলে ?
পুণ্য তোমার এ পুণ্য প্রচেষ্টা সফল হোক পুণ্যে মতি হোক
নিশীথ নিশীথ রাতে বাজছে বাঁশি গভীর নিশীথে প্রকৃতি সুপ্ত
শীত শীতকালে কুয়াশা পড়ে শীতের সকালে চারদিক কুয়াশায় অন্ধকার
সত্য সত্য পথে থেকে সত্য কথা বল এ এক বিরাট সত্য

সর্বনাম কাকে বলে উদাহরণ দাও

বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে। যেমন – আমি, আমরা, ঐ,কেহ,অন্য,পর ইত্যাদি।। সর্বনামকে ৯ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  • ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক – আমি, তুমি, সে, আমরা, তোমরা, তারা, তাহারা, তিনি ইত্যাদি
  • আত্মবাচক – নিজে, খোদ, স্বয়ং, আপনি
  • নির্দেশক বা সামীপ্যবাচক – এ, এই, এরা, ইহারা, ইনি ইত্যাদি
  • অনির্দিষ্ট – কেউ, কোন, কেহ, কিছু, কোথাও, কিছু, একজন ইত্যাদি।
  • সকলবাচক – সবাই, সকল, সমুদয়, তাবৎ ইত্যাদি।
  • প্রশ্নবাচক – কে, কি, কী, কোন ইত্যাদি
  • সাপেক্ষ – যেমন-তেমন, যারা-তারা ইত্যাদি।
  • পারস্পারিক বা ব্যতিহারিক – আপনা আপনি, নিজ নিজে, নিজেরা-নিজেরা, আপসে, পরস্পর ইত্যাদি
  • অন্যবাচক – অন্য, অপর, পর ইত্যাদি

সাপেক্ষ সর্বনাম : কখনও কখনও পর্সপর সম্পর্কযুক্ত একাধিক সর্বনাম পদ একই সঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে দুটি বাক্যের সংযোগ সাধন করে থাকে। এদেরকে বলা হয় সাপেক্ষ সর্বনাম। যেমন-

যত চাও তত লও (সোনার তরী)

ও, যত গর্জে তত বর্ষে না।

যেই কথা সেই কাজ।

যেমন কর্ম তেমন ফল।

যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল।

[সাপেক্ষ সর্বনাম; ভাষা অনুশীলন; সোনার তরী]

সর্বনামের পুরুষ [PERSON] পদ কাকে বলে উদাহরণ সহ

[বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পুরুষভেদে ভিন্ন রূপ দেখা যায়। বিশেষণ ও অব্যয় পদের কোন পুরুষভেদ নেই।

অব্যয় কাকে বলে

অব্যয় শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘ন ব্যয়’, অর্থাৎ যার কোন ব্যয় নেই।

যে পদের কোন ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে। অর্থাৎ, যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থাকে, যার সঙ্গে কোন বিভক্তি যুক্ত হয় না এবং পুরুষ বা বচন বা লিঙ্গ ভেদে যে পদের রূপের বা চেহারারও কোন পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে।

অব্যয় পদ বাক্যে কোন পরিবর্তন ছাড়াই ব্যবহৃত হয় এবং বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে কখনো বাক্যকে আরো শ্রচতিমধুর করে, কখনো একাধিক পদ বা বাক্যাংশ বা বাক্যের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে।

বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের অব্যয় শব্দ ব্যবহৃত হয়-

. বাংলা অব্যয় শব্দ : আর, আবার, ও, হাঁ, না

. তৎসম অব্যয় শব্দ : যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্ত্তত।

‘এবং’ ও ‘সুতরাং’ এই দুটি অব্যয় শব্দও তৎসম, অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। তবে এ দুটি অব্যয় শব্দের অর্থ বাংলা ভাষায় এসে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সংস্কৃতে ‘এবং = এমন’ আর ‘সুতরাং = অত্যন্ত, অবশ্য’

বাংলায় ‘এবং = ও’ আর ‘সুতরাং = অতএব’

৩. বিদেশি অব্যয় শব্দ : আলবত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবা

অব্যয়ের প্রকারভেদ:

অব্যয় পদ মূলত ৪ প্রকার-

১. সমুচ্চয়ী অব্যয় :

যে অব্যয় পদ একাধিক পদের বা বাক্যাংশের বা বাক্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে, তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে। এই সম্পর্ক সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন যে কোনটিই হতে পারে। একে সম্বন্ধবাচক অব্যয়ও বলে।

সংযোজক অব্যয় : উচ্চপদ ও সামাজিক মর্যাদা সকলেই চায়। (উচ্চপদ, সামাজিক মর্যাদা- দুটোই চায়)

তিনি সৎ, তাই সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করে। (তাই অব্যয়টি ‘তিনি সৎ’ ও ‘সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করে’ বাক্য দুটির মধ্যে সংযোগ ঘটিয়েছে।

এরকম- ও, আর, তাই, অধিকন্তু, সুতরাং, ইত্যাদি।

বিয়োজক অব্যয় : আবুল কিংবা আব্দুল এই কাজ করেছে। (আবুল, আব্দুল- এদের একজন করেছে, আরেকজন

করেনি। সম্পর্কটি বিয়োগাত্মক, একজন করলে অন্যজন করেনি।)

এরকম- কিংবা, বা, অথবা, নতুবা, না হয়, নয়তো, ইত্যাদি।

সংকোচক অব্যয় : তিনি শিক্ষিত, কিন্তু অসৎ। (এখানে ‘শিক্ষিত’ ও ‘অসৎ’ দুটোই সত্য, কিন্তু শব্দগুলোর মধ্যে

সংযোগ ঘটেনি। কারণ, বৈশিষ্ট্য দুটো একরকম নয়, বরং বিপরীতধর্মী। ফলে তিনি অসৎ

বলে তিনি শিক্ষিত বাক্যাংশটির ভাবের সংকোচ ঘটেছে।)

এরকম- কিন্তু, বরং, তথাপি, যদ্যপি, ইত্যাদি।

২. অনন্বয়ী অব্যয় :

যে সব অব্যয় পদ নানা ভাব বা অনুভূতি প্রকাশ করে, তাদেরকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। এগুলো বাক্যের অন্য কোন পদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন-

উচ্ছ্বাস প্রকাশে            : মরি মরি! কী সুন্দর সকাল!

স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি প্রকাশে  : হ্যা, আমি যাব। না, তুমি যাবে না।

সম্মতি প্রকাশে            : আমি আজ নিশ্চয়ই যাব।

অনুমোদন প্রকাশে        : এতো করে যখন বললে, বেশ তো আমি আসবো।

৩. অনুসর্গ অব্যয় :

যেসব অব্যয় শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বিভক্তির কাজ করে, এবং কারকবাচকতা প্রকাশ করে, তাকে অনুসর্গ অব্যয় বলে। অর্থাৎ, যেই অব্যয় অনুসর্গের মতো ব্যবহৃত হয়, তাকে অনুসর্গ অব্যয় বলে। যেমন-

ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না। (এখানে ‘দিয়ে’ তৃতীয়া বিভক্তির মতো কাজ করেছে, এবং ‘ওকে’ যে কর্ম কারক, তা নির্দেশ করেছে। এই ‘দিয়ে’ হলো অনুসর্গ অব্যয়।)

[কারক ও বিভক্তি] [অনুসর্গ]

৪. অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় : বিভিন্ন শব্দ বা প্রাণীর ডাককে অনুকরণ করে যেসব অব্যয় পদ তৈরি করা হয়েছে, তাদেরকে অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বলে।

মানুষ আদিকাল থেকেই অনুকরণ প্রিয়। তারা বিভিন্ন ধরনের শব্দ, প্রাকৃতিক শব্দ, পশুপাখির ডাক, যেগুলো তারা উচ্চারণ করতে পারে না, সেগুলোও উচ্চারণ করার চেষ্টা করেছে। এবং তা করতে গিয়ে সে সকল শব্দের কাছাকাছি কিছু শব্দ তৈরি করেছে। বাংলা ভাষার এ সকল শব্দকে বলা হয় অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়। যেমন-

বজ্রের ধ্বনি- কড় কড়

তুমুল বৃষ্টির শব্দ- ঝম ঝম

স্রোতের ধ্বনি- কল কল

বাতাসের শব্দ- শন শন

আরও পড়ুন”

সুগার রোগীর খাদ্য তালিকা

ক্রিয়া কত প্রকার ও কি কি

যার দ্বারা কোন কার্য সম্পাদন করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া বলে। যেমন – খাই, যাই, করিম বই পড়ছে। ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সাথে পুরুষ অনুযায়ী কালসূচক ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠিত। যেমন: পড়ছে = পড়্ (ধাতু) + ছে (বিভক্তি)। ক্রিয়াপদ বাক্যের অপরিহার্য অঙ্গ। ক্রিয়াপদ ছাড়া কোন বাক্য গঠিত হয় না। তবে কখনও কখনও ক্রিয়াপদ বাক্যে উহ্য বা অনুক্ত থাকতে পারে। যেমন: আজ প্রচণ্ড গরম = আজ প্রচণ্ড গরম (অনুভূত হচ্ছে)।

ক্রিয়ার প্রকারভেদ

ক্রিয়াপদকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। ভাব প্রকাশের উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াপদকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  • সমাপিকা ক্রিয়া: বক্তার মনোভাবের পরিসমাপ্তি জ্ঞাপিত হয়। যেমন: বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে
  • অসমাপিকা ক্রিয়া: বক্তার মনোভাবের পরিসমাপ্তি জ্ঞাপিত হয় না। যেমন: সকালে সূর্য উঠলে…।

একটি বাক্যে অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। কিন্তু সমাপিকা ক্রিয়া থাকতেই হবে। সমাপিকা ক্রিয়া ছাড়া বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ হয় না। যেমন: ‘এ কথা শুনে তিনি হাসলেন’ বাক্যটি সম্পূর্ণ, সুতরাং ‘হাসলেন’ – সমাপিকা ক্রিয়া। কিন্তু ‘এ কথা শুনে’—এই পর্যন্ত বাক্যটি বললে অর্থ অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাই ‘শুনে’ ক্রিয়াপদটি অসমাপিকা। প্রথম বাক্যে ‘হাসলেন’ সমাপিকা ক্রিয়ার মাধ্যমে ‘শোনা’ ক্রিয়াটির অর্থ সম্পূর্ণতা পায়। আরও উদাহরণ: আমি বাড়ি এসে (অসমাপিকা) তোমাকে দেখলাম (সমাপিকা)। অনুরূপভাবে-

  • চারটা বাজলে স্কুলের ছুটি হবে
  • একবার মরলে কি কেউ ফেরে
  • তিনি গেলে কাজ হবে
  • এখন বৃষ্টি হলে ফসলের ক্ষতি হবে

সাধারণ ভাবে ক্রিয়াপদ ৬ প্রকার। যথা:

  • কর্মের উপর ভিত্তি করে-
    • সকর্মক ক্রিয়া
    • অকর্মক ক্রিয়া
    • দ্বিকর্মক ক্রিয়া
      • সমধাতুজ কর্মপদের ক্রিয়া
    • প্রযোজক ক্রিয়া
  • গঠন বৈশিষ্ট্য অণুসারে-
    • যৌগিক ক্রিয়া
    • মিশ্র ক্রিয়া

সকর্মক ক্রিয়া: বাক্যে কোন ক্রিয়াপদের কর্মপদ থাকলে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: মা রান্না করছেন। এখানে ‘করছেন’ ক্রিয়াপদ এবং এর কর্ম হল ‘রান্না’। সুতরাং উক্ত বাক্যে ‘করছেন’ সকর্মক ক্রিয়া।

উল্লেখ্য বাক্যের ক্রিয়াপদকে কী?/কাকে? প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই কর্ম পদ। যেমন: উপরিউক্ত বাক্যে ক্রিয়া ‘করছেন’ ; কী করছেন? প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায় ‘রান্না’।

অকর্মক ক্রিয়া: বাক্যে কোন ক্রিয়ার কর্মপদ না থাকলে তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: করিম পড়ে। এখানে ‘পড়ে’ ক্রিয়াপদ, কিন্তু এর কোন কর্ম নেই। ‘পড়ে’- পদকে কী পড়ে? প্রশ্ন করলে কোন উত্তর উক্ত বাক্য থেকে পাওয়া যায় না। সুতরাং এখানে ‘পড়ে’ অকর্মক ক্রিয়া।

দ্বিকর্মক ক্রিয়া: বাক্যে যে ক্রিয়াপদের দুটি কর্মপদ থাকে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: শিক্ষক ছাত্রদের বাংলা পড়াচ্ছেন। এখানে ক্রিয়াপদ ‘পড়াচ্ছেন’-কে কী পড়াচ্ছেন? প্রশ্ন করলে উত্তর আসে ‘বাংলা’, আবার কাকে পড়াচ্ছেন? প্রশ্ন করলে উত্তর আসে ‘ছাত্রদের’। সুতরাং উক্ত বাক্যে পড়াচ্ছেন ক্রিয়াপদের দুটি কর্ম আছে: ‘বাংলা’ ও ‘ছাত্রদের’।

সমধাতুজ কর্ম ও ক্রিয়া: বাক্যের ক্রিয়া ও কর্মপদ একই ধাতু দ্বারা গঠিত হলে ঐ কর্মপদকে সমধাতুজ কর্ম বা ধাত্বর্থক কর্মপদ বলে। যেমন: বেশ একটা ঘুম ঘুমিয়েছি। এখানে ‘ঘুমিয়েছি’ ক্রিয়াপদের কর্ম ‘ঘুম’, যারা একই ধাতু ‘ঘুম’ দ্বারা গঠিত। সুতরাং ‘ঘুম’ সমধাতুজ কর্ম এবং ‘ঘুমিয়েছি’ সমধাতুজ কর্মের ক্রিয়া।

প্রযোজক ক্রিয়া: যে ক্রিয়া একজনের প্রযোজনা বা চালনায় অন্য কর্তৃক অনুষ্টিত হয়, তাই প্রযোজক ক্রিয়া। যেমন: মা খোকাকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। এখানে মায়ের প্রযোজনায় ‘খোকা’ ক্রিয়া সম্পন্ন করছে বা চাঁদ দেখছে।

যৌগিক ক্রিয়া: একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া যদি একত্রে একটি বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে তবে তাই যৌগিক ক্রিয়া। যেমন: সাইরেন বেজে (অসমাপিকা) উঠল (সমাপিকা)।

মিশ্র ক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বনাত্বক অব্যয়ের সাথে ধাতুযোগে গঠিত ক্রিয়াপদ বিশেষ অর্থে মিশ্র ক্রিয়া গঠন করে। যেমন: আমরা তাজমহল দর্শন করলাম

ক্রিয়াবিশেষণ

যে পদ ক্রিয়াকে বিশেষায়িত করে তাকে ক্রিয়াবিশেষণ বলে। যেমন:

  • ছেলেটি দ্রুত দৌড়ায়।
  • লোকটি ধীরে হাটে।

আবার গঠন বিবেচনায় ক্রিয়াবিশেষণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

একপদী: একটি পদ নিয়ে গঠিত ক্রিয়াবিশেষণকে একপদী ক্রিয়াবিশেষণ বলে। যেমন: আছে, জোরে, চেঁচিয়ে, ভালোভাবে ইত্যাদি।

বহুপদী: একের অধিক পদ নিয়ে গঠিত ক্রিয়াবিশেষণকে বহুপদী ক্রিয়াবিশেষণ বলে। যেমন: ভয়ে ভয়ে, চুপি চুপি ইত্যাদি।

যোজক

পদ, বর্গ বা বাক্যকে যেসব শব্দ যুক্ত করে তাদের যোজক বলে। যেমন: এবং, ও ইত্যাদি। অর্থ ও সংযোজনের বৈশিষ্ট্য অনুসারে যোজক শব্দকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

সাধারণ যোজক: দুটি শব্দ বা বাক্যকে জুড়ে দেয়। যেমন: আর, এবং, ও, বা, কিংবা, তথা ইত্যাদি।

  • সুখ ও সমৃদ্ধি কে না চায়? (দুটি শব্দের সংযোগক)
  • কবির আর রহিম একে অন্যের বন্ধু। (দুটি শব্দের সংযোগক)

বিকল্প যোজক: একাধিক শব্দ বা বাক্যকল্প বা বাক্যের বিকল্প নির্দেশ করে। যেমন:

  • মৌসুমী হয় ট্রেনে, না হয় বাসে যাবে।
  • সারা দিন খুঁজলাম, অথচ কোথাও গরুটা পেলাম না।

বিরোধমূলক যোজক: দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটিয়ে দ্বিতীয়টির সাহায্যে প্রথম বাক্যের বক্তব্যের সংশোধন বা বিরোধ নির্দেশ করে। যেমন:

  • এত বৃষ্টি হলো, তবু গরম গেল না।
  • তোমাকে খবর দিয়েছি, কিন্তু তুমি আসোনি।

কারণবাচক যোজক: দুটি বাক্য, যার একটি অন্যটির কারণ নির্দেশ করে, তাদের মধ্যে সংযোগ ঘটায়। যেমন:

  • জিনিসের দাম বেড়েছে, কারণ হরতাল-অবরোধ চলছে।
  • খুব ঠাণ্ডা লেগেছে, তাই আইসক্রিম খাচ্ছি না।

সাপেক্ষ যোজক: একে অন্যের পরিপূরক হয়ে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। প্রথাগত ব্যাকরণে এগুলোকে বলে নিত্যসম্বন্ধীয় অব্যয়। যেমন:

  • যত গর্জে তত বর্ষে না।
  • যথা ধর্ম তথা জয়।

মিশ্র ক্রিয়া

বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্, হ্, দে, পা, যা, কাট্, গা, ছাড়্, ধর্, মার্, প্রভৃতি ধাতু যোগ হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে মিশ্র ক্রিয়া বলে। যেমন-

বিশেষ্যের পরে : আমরা তাজমহল দর্শন করলাম। গোল্লায় যাও।

বিশেষেণের পরে  : তোমাকে দেখে বিশেষ প্রীত হলাম।

ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে : মাথা ঝিম ঝিম করছে। ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে।

আবেগ বা আবেগসূচক পদযেসব পদ বা শব্দাংশ দিয়ে মনের নানা ভাব বা আবেগকে প্রকাশ করা হয় তাই আবেগসূচক পদ। এ পদগুলো বাক্যের অন্য শব্দের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত না হয়ে স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন: হাহা, হায় হায়, সাবাশ ইত্যাদি। আবেগসূচক পদের পর আবেগসূচক চিহ্ন (!) বসে। বিভিন্ন প্রকার আবেগ –

সিদ্ধান্তবাচক আবেগ:

অনুমোদন, সম্মতি, সমর্থন ভাব প্রকাশ করা হয়। যেমন: হ্যাঁ, আমাদের জিততেই হবে।
বেশ, তবে যাওয়াই যাক।

প্রশংসাবাচক আবেগ: প্রশংসাবাচক মনোভাব প্রকাশ করা হয়। যেমন: শাবাশ! এমন খেলাই তো চেয়েছিলাম! বাহ্! চমৎকার লিখেছ।

বিরক্তিসূচক আবেগ: অবজ্ঞা, ঘৃণা, বিরক্তি মনোভাব প্রকাশে ব্যবহৃত হয়। যেমন: ছি ছি! এরকম কথা তাঁর মুখে মানায় না। জ্বালা! তোমাকে নিয়ে আর পারি না!

আতঙ্কসূচক আবেগ: আতঙ্ক, যন্ত্রণা, কাতরতা প্রকাশ করে। যেমন: উহ্, কী বিপদে পড়া গেল। বাপরে বাপ! কী ভয়ঙ্কর ছিল রাক্ষসটা।

বিস্ময়সূচক আবেগ: বিস্মিত বা আশ্চর্য হওয়ার ভাব প্রকাশ করে। যেমন: আরে! তুমি আবার কখন এলে? আহ্, কী চমৎকার দৃশ্য!

করুণাসূচক আবেগ: করুণা, মায়া, সহানুভূতির মনোভাব প্রকাশ করে। যেমন: আহা! বেচারার এত কষ্ট। হায় হায়! ওর এখন কী হবে!

সম্বোধনসূচক আবেগ: সম্বোধন বা আহ্বান করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যেমন: হে বন্ধু, তোমাকে অভিনন্দন। ওগো, তোরা জয়ধ্বনি কর।

আলংকারিক আবেগ: কোমলতা, মাধুর্যের মতো বৈশিষ্ট্য এবং সংশয়, অনুরোধ, মিনতির মনোভাব প্রকাশের জন্যে অলংকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন: দূর! এ কথা কি বলতে আছে? যাকগে, ওসব কথা থাক।

পদ কাকে বলে উদাহরণ সহ

আমাদের পোষ্ট গুলো প্রতিনিয়ত আপডেট করা হয়। বিসিএস,প্রাইমারি সহ সব পরীক্ষার প্রতিনিয়ত প্রশ্ন অনুযায়ী পোষ্ট গুলো আমরা আপডেট করি। সবার জন্য শুভ কামনা রইলো।

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *