ফুসফুস ক্যান্সার

ফুসফুস ক্যান্সার – কি কেন হয় লক্ষণ ও চিকিৎসা

শেয়ার করুন

ফুসফুস ক্যান্সার

ফুসফুস ক্যান্সার: (Lung Cancer) বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি মানুষের মৃত্যুর একটি অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত। প্রাথমিক অবস্থায় এই ক্যান্সার ধরা না পড়লে এটি দ্রুত শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা চিকিৎসা কঠিন করে তোলে। সঠিক তথ্য এবং সচেতনতার অভাবের কারণে অনেকেই এই রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই পোস্টে আমরা ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ, লক্ষণ, এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

ফুসফুসের ক্যান্সার কি (lungs cancer)

ফুসফুস ক্যান্সার তখন ঘটে যখন ফুসফুসের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়। এটি মূলত দুটি ধরণের হতে পারে:

  1. স্মল সেল লাং ক্যান্সার (SCLC): এটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
  2. নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (NSCLC): এটি তুলনামূলক ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং সবচেয়ে সাধারণ ধরণের ফুসফুস ক্যান্সার।
ফুসফুস ক্যান্সার
ফুসফুসে ক্যান্সার : 1secondschool

ফুসফুস ক্যান্সার কেন হয় (lung cancer cause)

ক্যান্সার ফুসফুসে হলে প্রধান কারণগুলো নিম্নরূপ:

  1. ধূমপান: ফুসফুস ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ ধূমপান। ধূমপানের কারণে ফুসফুসের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ক্যান্সার কোষের বিকাশের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  2. পরোক্ষ ধূমপান: শুধু ধূমপান নয়, পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবও ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  3. বায়ু দূষণ: বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, কারখানার ধোঁয়া, এবং যানবাহনের ধোঁয়া ফুসফুসের ক্ষতি করে, যা ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
  4. রেডন গ্যাস: মাটি থেকে নির্গত হওয়া এই গ্যাসটি একটি অদৃশ্য গ্যাস, যা দীর্ঘসময় ধরে শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে।
  5. আর্সেনিক এবং অ্যাসবেসটস: কিছু শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ যেমন আর্সেনিক ও অ্যাসবেসটসের সংস্পর্শে আসলে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

ফুসফুস ক্যান্সার এর লক্ষণ

এখানে ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণগুলি তেমন স্পষ্ট না হলেও, কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা দেখে সচেতন হওয়া উচিত:

  1. অনবরত কাশি: দীর্ঘমেয়াদি কাশি বা কফের সাথে রক্ত আসা ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ।
  2. শ্বাসকষ্ট: হঠাৎ শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা স্বাভাবিক কাজ করার সময় শ্বাসকষ্ট অনুভব করা।
  3. ওজন হ্রাস: কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই শরীরের ওজন দ্রুত কমে গেলে এটি একটি লক্ষণ হতে পারে।
  4. বুকে ব্যথা: দীর্ঘ সময় ধরে বুকে ব্যথা থাকা বা শ্বাস নেওয়ার সময় অস্বস্তি অনুভব করা।
  5. কন্ঠস্বর পরিবর্তন: দীর্ঘমেয়াদে কন্ঠস্বর পরিবর্তন হলে, যেমন স্বর ভাঙা বা গলা ভাঙা শোনা গেলে তা ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

ঝুঁকির উপাদানসমূহ

ক্যান্সারের ঝুঁকি কারও কারও জন্য বেশি হতে পারে, যেমন:

  1. দীর্ঘমেয়াদি ধূমপায়ীরা
  2. বয়স্ক ব্যক্তিরা
  3. যারা দীর্ঘসময় বায়ু দূষণের মধ্যে বসবাস করেন
  4. জেনেটিক বা বংশগত কারনে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা
ফুসফুস ক্যান্সার এর লক্ষণ
ফুস’ফুস ক্যান্সার এর লক্ষণ

ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধ

  • ধূমপান বন্ধ করা: যারা ধূমপান করেন তাদের দ্রুত ধূমপান বন্ধ করা উচিত। ধূমপান না করলে ফুসফুসের ক্ষতি কমে যায় এবং ক্যান্সারের ঝুঁকিও হ্রাস পায়।
  • পরোক্ষ ধূমপানের এড়ানো: ধূমপান না করলেও, ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে না যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবও ক্ষতিকর।
  • বায়ু দূষণ এড়ানো: যারা শিল্প এলাকায় বা বড় শহরে বসবাস করেন তাদের দূষিত বায়ু থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
  • রেডন গ্যাস পরীক্ষা: বাড়িতে রেডন গ্যাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করা উচিত এবং প্রয়োজন হলে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
  • পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ: শাকসবজি, ফলমূল, এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: যাদের ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি, তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক সহজ হয়।

ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা

ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের ধরণ, আকার, এবং ক্যান্সার কতটা বিস্তৃত হয়েছে তার উপর। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি হলো:

  1. অস্ত্রোপচার (Surgery): ক্যান্সার কোষ ফুসফুসে সীমাবদ্ধ থাকলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তা অপসারণ করা যায়।
  2. কেমোথেরাপি (Chemotherapy): এটি এমন একটি পদ্ধতি যা ক্যান্সার কোষগুলিকে ধ্বংস করে এবং নতুন কোষের বৃদ্ধি রোধ করে।
  3. রেডিয়েশন থেরাপি (Radiation Therapy): এই চিকিৎসায় উচ্চ-শক্তিসম্পন্ন রশ্মির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
  4. ইমিউন থেরাপি (Immunotherapy): এটি এমন একটি চিকিৎসা যা শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

ফুসফুস ক্যান্সারের ঘরোয়া চিকিৎসা

১. আদা

আদা ফুসফুসের সংক্রমণ এবং প্রদাহ কমাতে কার্যকরী। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।

ব্যবহার:

  • এক কাপ গরম পানিতে কিছু আদা মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার পান করা যেতে পারে।

২. হলুদ

হলুদের প্রধান উপাদান কারকিউমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ধীর করতে সাহায্য করতে পারে।

ব্যবহার:

  • এক গ্লাস গরম দুধের সাথে আধা চা-চামচ হলুদ মিশিয়ে প্রতিদিন পান করা যেতে পারে।

৩. তুলসী পাতা

তুলসী পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা ফুসফুসের সংক্রমণ কমাতে এবং শ্বাসযন্ত্রকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

ব্যবহার:

  • প্রতিদিন সকালে ৪-৫টি তাজা তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • এছাড়াও, তুলসী পাতা দিয়ে চা তৈরি করে দিনে একবার বা দুবার পান করা যায়।

৪. লেবু ও মধু

লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মধু কফ দূর করতে সাহায্য করে এবং শ্বাসনালীর প্রদাহ কমায়।

ব্যবহার:

  • এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করা যেতে পারে।

৫. রসুন

রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যালিসিন নামক একটি উপাদান, যা প্রদাহ কমাতে এবং ক্যান্সারের কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক।

ব্যবহার:

  • প্রতিদিন সকালে কাঁচা রসুন খাওয়া যেতে পারে। যদি কাঁচা রসুন খেতে না পারেন, তবে খাবারের সাথে রসুন যোগ করে খাওয়া যেতে পারে।

ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর খাবার

ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর জন্য সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, ডাল, মুরগি এবং বাদাম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। সবুজ শাকসবজি, ফল, বিশেষ করে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ফাইবারযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি, যা শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে। প্রক্রিয়াজাত ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ তা রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ডায়েট অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়।

<yoastmark class=

ফুসফুস ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে

ফুসফুস ক্যান্সার হলে রোগীর কতদিন বাঁচা সম্ভব হবে, তা নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর, যেমন ক্যান্সারের ধরন (স্মল সেল বা নন-স্মল সেল), পর্যায়, চিকিৎসার সময়মতো শুরু, এবং রোগীর সার্বিক স্বাস্থ্যের অবস্থা।

  • নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (NSCLC) এর ক্ষেত্রে, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়, তাহলে রোগীরা ৫ বছর বা তার বেশি সময় বাঁচতে পারেন।
  • স্মল সেল লাং ক্যান্সার (SCLC), যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এর ক্ষেত্রে প্রায় ৬-১২ মাস বাঁচার সম্ভাবনা থাকে যদি দেরিতে ধরা পড়ে।

যদিও চিকিৎসার উন্নতির ফলে রোগীর আয়ু বাড়তে পারে, তবে সঠিক সময়ে নির্ণয় এবং চিকিৎসা জরুরি।

আরও পড়ুন: সুগার রোগীর খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও প্রতিকার

সকল রোগ থেকে মুক্তির দোয়া

কিডনির দাম কত

ফুসফুস ক্যান্সার কি ভাল হয়

ফুসফুস ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব হতে পারে যদি এটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে (স্টেজ ১ বা ২) ক্যান্সার ধরা পড়লে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে এটি সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা সম্ভব হতে পারে।

তবে উন্নত পর্যায়ে (স্টেজ ৩ বা ৪) ক্যান্সার ধরা পড়লে, এটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা কঠিন। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সারের বৃদ্ধি ধীর করা, লক্ষণগুলো কমানো এবং রোগীর জীবনমান উন্নত করা সম্ভব। চিকিৎসা যত দ্রুত শুরু করা যাবে, ততই ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

ফুসফুসে টিউমার হলে কি করনীয়

ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। টিউমারটি ক্যান্সারজনিত কিনা তা নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়, যেমন সিটি স্ক্যান, এমআরআই, বা বায়োপসি। চিকিৎসা নির্ভর করবে টিউমারের আকার, অবস্থান, এবং এটি ক্যান্সার কিনা তার উপর। করণীয় কিছু বিষয়:

  1. চিকিৎসকের পরামর্শ: সঠিক নির্ণয়ের জন্য প্রাথমিক পরীক্ষা করানো।
  2. চিকিৎসা পরিকল্পনা: যদি টিউমার ক্যান্সারজনিত হয়, তবে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি বা ইমিউন থেরাপির মতো চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
  3. জীবনযাত্রার পরিবর্তন: ধূমপান ত্যাগ করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
  4. নিয়মিত ফলোআপ: চিকিৎসার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে উন্নতির পর্যবেক্ষণ।

প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে, টিউমারের উন্নতি বা নিরাময়ের সম্ভাবনা বাড়ে।

ফুসফুস পরিষ্কার করার উপায়

ফুসফুসের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা কমাতে কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে। এই লেখায় আমরা কিছু প্রাকৃতিক এবং সহজ উপায় আলোচনা করবো, যা আপনার ফুসফুসকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে।

১. ধূমপান থেকে বিরত থাকুন

ধূমপান ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি ফুসফুসের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই, ধূমপান ত্যাগ করা প্রথম পদক্ষেপ।

২. নিয়মিত ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম, বিশেষ করে কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ, যেমন দৌড়ানো, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটা, ফুসফুসের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এটি ফুসফুসকে কার্যকরীভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।

৩. সঠিক খাদ্যাভ্যাস

ফুসফুস পরিষ্কার রাখতে ফল এবং সবজি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিট্রাস ফল (যেমন লেবু, কমলা) এবং ব্রোকলি, শাকসবজি ইত্যাদি ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়াও, তাজা রস পান করা উপকারী।

৪. আদা ও হলুদ

আদা এবং হলুদে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে, যা ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আপনি চা হিসেবে আদা এবং হলুদ ব্যবহার করতে পারেন।

৫. স্টিম ইনহেলেশন

গরম পানির স্টিম ইনহেলেশন ফুসফুসকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এটি শ্বাসনালীকে খোলামেলা রাখে এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা কমায়।

৬. প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন

জল আপনার শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত জল পান করলে ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ে এবং শ্বাসের সমস্যা কমে।

৭. ফুসফুসের জন্য বিশেষায়িত উপকরণ

এলম এবং মুলেতি (লিকরিশ) রুটের চা পান করতে পারেন। এই উপকরণগুলি ফুসফুসের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক।

৮. দূষণ থেকে বাঁচুন

বায়ু দূষণ এবং রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকুন। বাড়ির ভেতরে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন যাতে আপনি পরিষ্কার বাতাস পান।

৯. প্রাকৃতিক সমাধান

মধু এবং লেবুর মিশ্রণ পান করতে পারেন, যা ফুসফুস পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

ফুসফুসে ইনফেকশন

 এখানে ইনফেকশন (পনুমোনিয়া) একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি এবং তীব্র শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই লেখায় আমরা ফুসফুসে ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করবো।

ফুসফুসে ইনফেকশন কেন হয়

 ইনফেকশনের মূল কারণগুলি হলো:

  • ব্যাকটেরিয়া: স্ট্রেপ্টোকোক্কাস নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে এটি ঘটে।
  • ভাইরাস: সাধারণত ফ্লু বা সর্দির কারণে ভাইরাল ইনফেকশন হতে পারে।
  • ফাঙ্গাস: কিছু ফাঙ্গাল ইনফেকশনও ফুসফুসে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকেদের জন্য।

ফুসফুসে ইনফেকশন এর লক্ষণ

ইনফেকশনের লক্ষণগুলি অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার মতোই থাকে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  • শ্বাসকষ্ট: সাধারণত হাঁটলে বা কাজ করার সময় বেশি অনুভূত হয়।
  • কাশি: শুকনো কাশি হতে পারে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি পুজ্জ কাশিতে পরিণত হতে পারে।
  • জ্বর: শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে।
  • মাথা ব্যথা: অনেক রোগী মাথা ব্যথার সম্মুখীন হন।
  • দুর্বলতা: ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব।

ফুসফুসের ইনফেকশন দূর করার উপায়

ফুসফুসে ইনফেকশন প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার কিছু কার্যকর পদ্ধতি হলো:

  • স্বাস্থ্যকর খাদ্য: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল এবং সবজি যেমন কমলা, কপি এবং মিষ্টি আলু ফুসফুসের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
  • বিশ্রাম: শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে, যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
  • পানি পান: পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন, যা শরীরের টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
  • ভ্যাকসিন: ফ্লু এবং নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
  • শ্বাসের ব্যায়াম: গভীর শ্বাস নেওয়া এবং শ্বাসের ব্যায়াম করা ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ায়।
ধূমপায়ীদের ফুসফুস পরিষ্কার করার সহজ উপায়
ধূমপায়ীদের ফুসফুস পরিষ্কার করার সহজ উপায়

ধূমপায়ীদের ফুসফুস পরিষ্কার করার সহজ উপায়

  • ধূমপান ত্যাগ করুন
  • নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন
  • সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
  • প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন
  • স্টিম ইনহেলেশন করুন
  • মধু ও লেবুর মিশ্রণ পান করুন
  • দূষণ থেকে রক্ষা করুন
  • শ্বাসের ব্যায়াম করুন

উপসংহার

ফুসফুস ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ হলেও সচেতনতা এবং সময়মতো চিকিৎসা পেলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন, যেমন ধূমপান পরিহার করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা করানো ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধের মূলমন্ত্র। সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই রোগের ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব।

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *