হার্ট অ্যাটাক

হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারন লক্ষণ ও চিকিৎসা

শেয়ার করুন

Table of Contents

হার্ট ব্লক 

আমাদের সমস্ত দেহে ছড়িয়ে আছে দুই ধরনের রক্তনালি- ১. ধমনী ২. শিরা। ধমনীর কাজ হল অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে দেয়া।

ধমনীর প্রবাহপথ যদি কোন কারণে সরু বা বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়, এই বাধাকে বলে ব্লক’ ।

হার্ট ব্লক হওয়ার কারণ

হার্ট ব্লক হলো হৃদয়ের ইলেকট্রিকাল সিস্টেমে ব্যাঘাত, যা হৃদযন্ত্রের সংকোচন ও শিথিলন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। এই সমস্যাটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ নিচে আলোচনা করা হলো:

১. বয়সজনিত পরিবর্তন

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ের ইলেকট্রিকাল সিস্টেম দুর্বল হয়ে যেতে পারে। বিশেষত ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষদের মধ্যে হার্ট ব্লকের ঝুঁকি বেশি থাকে।

২. হৃদযন্ত্রের রোগ

যেসব ব্যক্তি হৃদযন্ত্রের সমস্যা যেমন করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্ট অ্যাটাক, বা কার্ডিওমায়োপ্যাথিতে ভুগছেন, তাদের মধ্যে হার্ট ব্লকের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

৩. ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা

শরীরে ইলেকট্রোলাইট, যেমন পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে বা বেড়ে গেলে হার্ট ব্লক হতে পারে। এই খনিজগুলোর ভারসাম্য হার্টের ইলেকট্রিকাল সংকেতকে প্রভাবিত করে।

৪. কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কিছু ওষুধ যেমন বিটা-ব্লকার, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার বা ডিজিটালিস হৃদযন্ত্রের ইলেকট্রিকাল কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটিয়ে হার্ট ব্লকের কারণ হতে পারে।

৫. জেনেটিক বা জন্মগত ত্রুটি

কিছু মানুষ জন্মগতভাবেই হার্ট ব্লকের সমস্যায় ভুগে থাকেন। বিশেষ করে যেসব শিশুর হার্টের গঠনগত ত্রুটি রয়েছে, তাদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৬. ইনফেকশন

কিছু ইনফেকশন যেমন লাইম ডিজিজ বা রিউম্যাটিক ফিভার হার্টের ইলেকট্রিকাল সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে হার্ট ব্লক হতে পারে।

৭. অতিরিক্ত এলকোহল বা ধূমপান

অতিরিক্ত ধূমপান ও এলকোহল গ্রহণ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে এবং ইলেকট্রিকাল সংকেতের প্রভাব ফেলে। ফলে হার্ট ব্লক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৮. হার্টের অস্ত্রোপচার

হৃদযন্ত্রের অপারেশন বা কোনো ধরনের শল্যচিকিৎসার সময় ইলেকট্রিকাল সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হলে হার্ট ব্লক হতে পারে।

৯. অটোইমিউন ডিজিজ

কিছু অটোইমিউন রোগ যেমন সারকয়েডোসিস বা লুপাস হৃদযন্ত্রের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা হার্ট ব্লক সৃষ্টি করতে পারে।

কি খেলে হার্টের রোগ ভালো হয়

হৃদযন্ত্রের সুস্থতা রক্ষা করতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্য নির্বাচন করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো এবং হার্টের কার্যক্ষমতা উন্নত করা সম্ভব। নিচে হার্টের রোগ ভালো করার জন্য কিছু উপকারী খাদ্য উল্লেখ করা হলো:

১. ফ্যাটি ফিশ (Omega-3 সমৃদ্ধ মাছ)

স্যামন, ম্যাকেরেল, সার্ডিন এবং টুনার মতো ফ্যাটি ফিশ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তনালী সুস্থ রাখতে সহায়ক।

২. বেরি (Berries)

ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি এবং রাস্পবেরির মতো বেরিগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে ভরপুর। এগুলো হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক এবং রক্তনালীকে মজবুত করে। বেরি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

৩. ওটস (Oats)

ওটস সলিউবল ফাইবার সমৃদ্ধ, যা খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ওটস অন্তর্ভুক্ত করলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

৪. অলিভ অয়েল (Olive Oil)

অলিভ অয়েল হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি তেল। এতে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং রক্তনালীকে সুস্থ রাখে।

৫. বাদাম (Nuts)

আলমন্ড, আখরোট এবং কাজুর মতো বাদাম হার্টের জন্য ভালো। এগুলো প্রোটিন, ফাইবার, ওমেগা-৩, এবং ভালো ফ্যাট সমৃদ্ধ, যা হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

৬. সবুজ শাকসবজি (Leafy Greens)

পালং শাক, কেল এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এগুলো রক্তচাপ কমায়, প্রদাহ হ্রাস করে, এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

৭. ডার্ক চকলেট (Dark Chocolate)

৭০% বা তার বেশি কোকো সমৃদ্ধ ডার্ক চকলেট হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী হতে পারে। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তনালী সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

৮. রসুন (Garlic)

রসুন হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে অ্যালিসিন নামে একটি সক্রিয় উপাদান রয়েছে, যা রক্তচাপ কমায়, খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

৯. সবজি এবং ফল (Fruits and Vegetables)

সব ধরনের সবজি এবং ফল খাদ্যতালিকায় বেশি পরিমাণে রাখলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যায়। বিশেষ করে টমেটো, গাজর, বেল পেপার, আপেল, এবং কমলার মতো খাবারগুলো হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো।

১০. ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্য (Whole Grains)

সম্পূর্ণ শস্য যেমন ব্রাউন রাইস, পুরো গমের রুটি, ওটমিল ইত্যাদি ফাইবারসমৃদ্ধ এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

<yoastmark class=

হার্ট এটাক হলে করনীয়

হার্ট অ্যাটাক একটি জরুরি অবস্থা, যা দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হয়। যদি সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো যেমন বুকে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিলে নিম্নলিখিত করণীয় কাজগুলো দ্রুত করতে হবে:

১. জরুরি চিকিৎসা সহায়তা নিন

প্রথম এবং সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স বা নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করা। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

২. আসপিরিন সেবন করুন

যদি হাতের কাছে আসপিরিন থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি অ্যালার্জি বা অন্য কোনো কারণবশত আসপিরিন সেবন করতে না পারেন, তবে তাকে ১৬০-৩২৫ মি.গ্রা আসপিরিন চিবিয়ে খেতে দিতে পারেন। এটি রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

৩. শরীরকে শিথিল রাখুন

আক্রান্ত ব্যক্তিকে বসার বা শোয়ার অবস্থায় রাখতে হবে, যাতে শরীরে অপ্রয়োজনীয় চাপ না পড়ে। তাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে এবং গভীর শ্বাস নিতে উৎসাহিত করতে হবে।

৪. নাইট্রোগ্লিসারিন সেবন করুন (যদি প্রয়োজন হয়)

যদি আক্রান্ত ব্যক্তির নাইট্রোগ্লিসারিন প্রেসক্রাইব করা থাকে, তবে নির্দেশিত পরিমাণে তাকে সেই ওষুধ সেবন করতে দিতে পারেন। এটি হৃদযন্ত্রের রক্ত প্রবাহ উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।

৫. সিপিআর (CPR) প্রয়োগ করুন (যদি অজ্ঞান হন)

যদি আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যান এবং শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে সিপিআর শুরু করা উচিত। এর জন্য বুকের মাঝে দুই হাতের তালু দিয়ে জোরে চাপ দিতে হবে (মিনিটে প্রায় ১০০-১২০ বার)। যদি সিপিআর সম্পর্কে ভালোভাবে জানা না থাকে, তবে হাসপাতালের কোনো জরুরি স্বাস্থ্যকর্মীর নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

৬. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকুন

হার্ট অ্যাটাকের সময় কিছু ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে যেসব ওষুধে আক্রান্ত ব্যক্তির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, সেগুলো দেওয়ার আগে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

৭. ধূমপান বা এলকোহল থেকে দূরে থাকুন

যদি আক্রান্ত ব্যক্তি ধূমপান বা এলকোহল সেবন করেন, তবে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে এটি বন্ধ করতে হবে, কারণ এগুলো হৃদযন্ত্রের ক্ষতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

৮. অতিরিক্ত চাপ কমানোর চেষ্টা করুন

হৃদযন্ত্রে বাড়তি চাপ না দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে যতটা সম্ভব শিথিল থাকতে এবং গভীর শ্বাস নিতে সহায়তা করতে হবে।

৯. জরুরি ওষুধ ও অক্সিজেন সাপোর্ট

হাসপাতালে পৌঁছানোর পর প্রয়োজন অনুযায়ী ডাক্তার জরুরি ওষুধ, অক্সিজেন সাপোর্ট বা শল্য চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। তাই দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

 

আরও জানুন:

সুগার রোগীর খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও প্রতিকার

শিলাজিতের উপকারিতা ও অপকারিতা

লেবু পানির উপকারিতা

চিরতা পাতার উপকারিতা

হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ

হার্ট ব্লক হলো হৃদযন্ত্রের ইলেকট্রিকাল সিগন্যালের ব্যাঘাত, যা হৃদয়ের স্বাভাবিক কাজকে ব্যাহত করে। এর ফলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। নিচে হার্ট ব্লক হওয়ার কিছু সাধারণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো:

১. হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (Arrhythmia)

হার্ট ব্লকের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো হৃদস্পন্দনের অনিয়ম। হৃদযন্ত্র ধীর বা দ্রুত গতিতে স্পন্দিত হতে পারে, অথবা মাঝে মাঝে স্পন্দন বন্ধও হতে পারে।

২. দুর্বলতা ও ক্লান্তি

হার্ট ঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে না পারলে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না, যার ফলে ব্যক্তির দুর্বলতা ও অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভব হতে পারে, এমনকি সাধারণ কাজ করতে গিয়েও।

৩. মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব

হার্ট ব্লকের কারণে রক্তচাপ কমে গেলে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যখন ব্যক্তি শারীরিক পরিশ্রম করেন, তখন এই লক্ষণগুলো বাড়তে পারে।

৪. অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (Syncope)

হার্ট ব্লকের একটি গুরুতর লক্ষণ হলো অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। যদি হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্পিং করতে না পারে, তবে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত না পৌঁছালে ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।

৫. শ্বাসকষ্ট (Shortness of Breath)

হার্ট ব্লকের কারণে শরীরে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়, যা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে শারীরিক পরিশ্রমের সময় শ্বাসকষ্ট তীব্র হতে পারে।

৬. বুকে ব্যথা (Chest Pain)

বুকে চাপ অনুভব করা বা ব্যথা হওয়া একটি গুরুতর লক্ষণ হতে পারে। এটি বিশেষ করে তখন ঘটে যখন হৃদযন্ত্র পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না এবং হৃদপিণ্ডের রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে।

৭. হৃদস্পন্দনের ধীর গতি (Bradycardia)

হার্ট ব্লকের প্রাথমিক পর্যায়ে হৃদস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিকভাবে ধীর হতে পারে। এই অবস্থাকে ব্র্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়, যা ক্লান্তি ও দুর্বলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

৮. কনফিউশন বা মানসিক বিভ্রান্তি

যখন মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ হয় না, তখন কনফিউশন বা মানসিক বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। ব্যক্তি নিজের স্বাভাবিক কাজকর্ম বা চিন্তাভাবনায় মনোযোগ দিতে অক্ষম হতে পারেন।

৯. ঘন ঘন জ্ঞান হারানো

হার্ট ব্লকের কারণে যারা ঘন ঘন জ্ঞান হারান, তাদের দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে, কারণ এটি হৃদযন্ত্রের গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

১০. শারীরিক পরিশ্রমে অসুবিধা

হার্ট ব্লক থাকলে সামান্য শারীরিক পরিশ্রমেও ক্লান্তি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা তৈরি করে।

হার্টের রিং কোনটা ভালো

হার্টের ব্লকেজ বা রক্তনালী সংকীর্ণ হলে চিকিৎসকরা প্রায়ই রিং বা স্টেন্ট ব্যবহার করেন। এখানে কিছু জনপ্রিয় ও কার্যকরী হার্টের রিং সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. বায়োডিগ্রেডেবল স্টেন্ট

  • উপকারিতা: এই ধরনের স্টেন্ট শরীরের মধ্যে সময়ের সাথে সাথে দ্রবীভূত হয়। রক্তনালীতে জায়গা কম দখল করে, যা দীর্ঘমেয়াদী রক্তপ্রবাহের উন্নতি করে।
  • উদাহরণ: সেন্ট্রেল বায়োডিগ্রেডেবল স্টেন্ট।

২. মেটাল স্টেন্ট

  • উপকারিতা: সাধারণত স্টেনলেস স্টিল বা কোবাল্ট-ক্রোম ব্যবহৃত হয়। এগুলো খুব মজবুত এবং দীর্ঘমেয়াদী সাপোর্ট দেয়।
  • উদাহরণ: ইলাস্টিক বা স্ন্যাপ-অফ স্টেন্ট।

৩. ড্রাগ-এলিউটিং স্টেন্ট (DES)

  • উপকারিতা: এই স্টেন্টগুলো রক্তনালীতে ব্লকেজ তৈরি হওয়া প্রতিরোধে ঔষধ (ড্রাগ) মুক্ত করে।
  • উদাহরণ: জোয়েল এবং সাইলেন্ট স্টেন্ট।

৪. পলিমার-লেপিত স্টেন্ট

  • উপকারিতা: পলিমার লেপ ব্লকেজ তৈরি হওয়া প্রতিরোধে সহায়ক।
  • উদাহরণ: বাইরের পলিমার-লেপিত স্টেন্ট।

বাছাই করার সময় বিবেচনা করার বিষয়

  • ডাক্তারের পরামর্শ: আপনার শারীরিক অবস্থা ও ব্লকেজের প্রকার অনুযায়ী কোন ধরনের স্টেন্ট নির্বাচন করবেন তা নিশ্চিত করার জন্য ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন।
  • বিকল্পগুলি: বিভিন্ন ধরনের স্টেন্টের সুবিধা ও অসুবিধা বোঝার জন্য চিকিৎসকের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করুন।
  • লম্বা সময়ের ফলাফল: বিভিন্ন স্টেন্টের দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা সম্পর্কে জানুন।

হার্ট এটাক এর প্রাথমিক চিকিৎসা

হার্ট অ্যাটাক একটি জীবনহানিকর পরিস্থিতি, তাই দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক চিকিৎসা সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত: হার্ট অ্যাটাক

১. জরুরি চিকিৎসা সহায়তা ডাকুন

প্রথমেই অ্যাম্বুলেন্স বা নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করুন। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন, কারণ সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানোই জীবন বাঁচানোর মূল চাবিকাঠি।

২. রোগীকে বিশ্রাম দিন

আক্রান্ত ব্যক্তিকে বসিয়ে বা শুইয়ে দিন এবং যতটা সম্ভব শিথিল রাখার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি হার্টের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে।

৩. আসপিরিন দিন (যদি সঠিক হয়)

যদি হাতের কাছে আসপিরিন থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি এটি সেবনে সক্ষম হন, তবে ১৬০-৩২৫ মি.গ্রা আসপিরিন চিবিয়ে খেতে দিন। এটি রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের ক্ষতি কমাতে পারে। তবে আগে থেকে যদি আসপিরিনের প্রতি এলার্জি থাকে, তাহলে এটি না দেওয়াই ভালো।

৪. নাইট্রোগ্লিসারিন সেবন করান (যদি প্রেসক্রাইব করা থাকে)

যদি আক্রান্ত ব্যক্তির নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া থাকে, তবে নির্দেশিত ডোজ অনুযায়ী তা ব্যবহার করান। এটি রক্তনালীর প্রসারণে সাহায্য করে, যা রক্ত প্রবাহকে উন্নত করে।

৫. রোগীকে শ্বাসকষ্ট থেকে রেহাই দিন

যদি রোগী শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন, তাহলে তাকে সাহায্য করুন যাতে তিনি সহজে শ্বাস নিতে পারেন। ঘরের জানালা খুলে দিন বা ফ্যান চালু রাখুন যাতে পর্যাপ্ত বাতাস পায়।

৬. সিপিআর (CPR) প্রয়োগ করুন (যদি শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়)

যদি আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় বা হৃদস্পন্দন অনুভূত না হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে সিপিআর শুরু করতে হবে। বুকের মাঝখানে দুই হাতের তালু দিয়ে জোরে চাপ দিতে হবে (মিনিটে প্রায় ১০০-১২০ বার)। এটি জরুরি অবস্থায় হৃদযন্ত্রকে সাময়িকভাবে সচল রাখতে পারে।

৭. অতিরিক্ত চলাফেরা বন্ধ করুন

রোগীকে কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত নড়াচড়া করতে দেবেন না। শারীরিক চাপ হৃদযন্ত্রের অবস্থাকে আরও খারাপ করতে পারে।

৮. সাহস দিন এবং শান্ত রাখুন

আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে সাহস দিতে হবে এবং শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। অতিরিক্ত আতঙ্কিত হলে শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।

৯. অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করুন (যদি সম্ভব হয়)

যদি বাড়িতে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকে, তবে রোগীর শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য অক্সিজেন দেওয়া যেতে পারে। এটি রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক।

১০. চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ সেবন

যদি আগে থেকে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার জন্য কোনো ওষুধ প্রেসক্রাইব করা থাকে, তবে তা যথাযথভাবে সেবন করান। তবে ওষুধ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হলে ডাক্তার ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ দেওয়া ঠিক নয়।

হার্ট দুর্বল হলে কি খাওয়া উচিত

হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা কমাতে কিছু বিশেষ খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • ফ্যাটি ফিশ: ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, কেল হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
  • বাদাম: আখরোট, আলমন্ড ভালো ফ্যাট ও ফাইবার সমৃদ্ধ।
  • বেরি: ব্লুবেরি ও স্ট্রবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।
  • ওটস: কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
  • অলিভ অয়েল: ভালো ফ্যাট সমৃদ্ধ, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • রসুন: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

হার্টের জন্য উপকারী খাবার

  • ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ: স্যামন ও টুনা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
  • শাকসবজি: পালং শাক ও ব্রকলি ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর।
  • বাদাম: আখরোট ও আলমন্ড খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
  • বেরি: ব্লুবেরি ও স্ট্রবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
  • ওটস: রক্তপ্রবাহ উন্নত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • অলিভ অয়েল: স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের উৎস, যা হার্টের সুরক্ষায় সহায়ক।
  • রসুন: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
হার্টের জন্য উপকারী খাবার
হার্টের জন্য উপকারী খাবার

হার্ট ব্লক দূর করার উপায়

হার্ট ব্লক, অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের সংকোচন ও রক্তপ্রবাহের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে। নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে:

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

  • ফলের ও সবজির বেশি গ্রহণ: বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি, বিশেষ করে শাকসবজি, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
  • ওমেগা-৩ ফ্যাট: স্যামন, ম্যাকেরেল এবং আখরোট খাওয়া হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • কম ফ্যাটযুক্ত দুধ এবং দুধের পণ্য: কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক।

২. নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন

  • কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম: হাঁটা, সাঁতার, বা সাইক্লিং, যা রক্তপ্রবাহ বাড়ায় এবং হার্টকে শক্তিশালী করে।
  • যোগব্যায়াম: স্ট্রেস কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৩. স্ট্রেস পরিচালনা

  • মেডিটেশন ও মননশীলতা: মানসিক চাপ কমাতে এবং হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক।
  • গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম: হার্টের পক্ষে উপকারী।

৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

  • রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত পরীক্ষা করিয়ে স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন।

৫. ধূমপান ত্যাগ

  • ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ: হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

৬. ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা

  • প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন: ডাক্তার কর্তৃক প্রদত্ত ওষুধগুলো সঠিকভাবে গ্রহণ করা।

হার্টের ব্লক খোলার ঔষধ

হার্টের ব্লক বা হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহৃত হয়। এই ঔষধগুলো রক্তপ্রবাহ উন্নত করতে এবং হার্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়ক। নিচে কিছু সাধারণ ঔষধের তালিকা দেওয়া হল: হার্ট অ্যাটাক

১. অ্যাসপিরিন

  • এটি রক্তকে পাতলা করতে এবং রক্তনালীতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

২. বিটা-ব্লকারস

  • যেমন: মেটোপ্রলল এবং অ্যাটেনোলল। এগুলো হৃদযন্ত্রের হার কমিয়ে দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

৩. ACE ইনহিবিটারস

  • যেমন: এনালাপ্রিল এবং লিসিনোপ্রিল। এই ধরনের ঔষধ রক্তচাপ কমায় এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।

৪. ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস

  • যেমন: আম্লোডিপিন ও ডিলটিয়াজেম। এগুলো রক্তনালী প্রসারিত করে এবং হার্টের চাপ কমায়।

৫. স্ট্যাটিনস

  • যেমন: অ্যাটোরভাস্ট্যাটিন এবং রোভাস্ট্যাটিন। এগুলো কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

৬. নাইট্রোগ্লিসারিন

  • এটি হার্টের পেশীগুলোকে শিথিল করে এবং রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যাংইনা (বুকে ব্যথা) উপশমে ব্যবহৃত হয়।

৭. থ্রম্বোলাইটিক্স

  • যেমন: স্ট্রেপটোকিনেজ এবং টিইপিএ। এগুলো ব্লাড ক্লটগুলো দ্রবীভূত করতে ব্যবহৃত হয়, যা হার্ট অ্যাটাকের সময় ব্যবহৃত হয়।

হার্টের রিং পরানোর খরচ

হার্টের রিং (করোনারি স্টেন্ট) পরানোর খরচ বিভিন্ন কারণে ভিন্ন হতে পারে। এখানে কিছু মূল ফ্যাক্টর উল্লেখ করা হলো:

১. রিংয়ের প্রকার

  • মেটাল স্টেন্ট: সাধারণত তুলনামূলকভাবে কম খরচে।
  • ড্রাগ-এলিউটিং স্টেন্ট (DES): এই স্টেন্টগুলি সাধারণত বেশি দামে বিক্রি হয় কারণ এতে ঔষধ থাকে।

২. চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান

  • সরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে খরচের পার্থক্য হতে পারে। বেসরকারি হাসপাতাল সাধারণত বেশি খরচ নেয়।

৩. চিকিৎসকের ফি

  • অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা সাধারণত বেশি ফি নেন।

৪. চিকিৎসার স্থান

  • দেশের ভিন্ন স্থানে চিকিৎসার খরচ আলাদা হতে পারে।

৫. অতিরিক্ত খরচ

  • হাসপাতালের ভর্তি খরচ, পরীক্ষার খরচ, এবং অন্যান্য মেডিকেল খরচ যোগ করা প্রয়োজন।

সাধারণ খরচের আভাস

  • ভারতে: হার্টের রিং পরানোর খরচ সাধারণত ₹1,00,000 থেকে ₹3,00,000 (ভারতীয় রুপি) বা তার বেশি হতে পারে।
  • বাংলাদেশে: খরচ সাধারণত ১,০০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • অন্যান্য দেশ: দেশে দেশে এই খরচ খুব ভিন্ন হতে পারে; উন্নত দেশের খরচ সাধারণত বেশি।

মনে রাখবেন, একবার অসুস্থ হলে সেটা রিকভার করা অনেক অনেক কঠিন সেজন্য নিজেদেরকে নিয়ম এর মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া। ফাইনালি আপনি সুন্দর সুস্থ একটা জীবন পাবেন। সবার জন্য দোয়া এবং শুভ কামনা রইলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *