ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস কী ? কেন হয় ? কত প্রকার ও কি কি

শেয়ার করুন

ডায়াবেটিস শব্দটি আমাদের সবার কাছেই বেশ পরিচিত। এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কোনো ডায়াবেটিসের রোগী নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ডায়াবেটিস এখন একটি মহামারি রোগ। এই রোগের অত্যধিক বিস্তারের কারণেই সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

প্রশ্ন আসতেই পারে, ডায়াবেটিস কী? আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডায়াবেটিস এমনই একটি রোগ, যা কখনো সারে না। কিন্তু এই রোগকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

আইরিশ ইনডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, যখন আমরা কার্বোহাইড্রেট বা সাধারণ শর্করাজাতীয় খাবার খাই, তখন তা ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়। ইনসুলিন হচ্ছে একধরনের হরমোন। এর কাজ হলো এই গ্লুকোজকে মানুষের দেহের কোষগুলোয় পৌঁছে দেওয়া। এরপর সেই গ্লুকোজ ব্যবহার করে শরীরের কোষগুলো শক্তি উৎপাদন করে। সেই শক্তি দিয়েই রোজকারের কাজকর্ম করে মানুষ। সুতরাং যখন এই গ্লুকোজ শরীরের কোষে পৌঁছাবে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হবে।

যখন কারও ডায়াবেটিস হয়, তখন ওই মানুষের শরীরে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে দেহের কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না। এতে করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এই কারণে ডায়াবেটিস রোগীর ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। যখন প্রস্রাব বেশি হয়, তখন ডায়াবেটিসে ভোগা রোগী তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন।

অন্যদিকে, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ বের হয়ে যায়। এতে করে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে পারে না দেহের কোষগুলো। ফলে রোগী দুর্বলতা অনুভব করেন। রোগী যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তবে তার রক্তনালি, স্নায়ু, কিডনি, চোখ ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডায়াবেটিস হল একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। ডায়াবেটিস এমন একটি শারীরিক অবস্থা যা সারা জীবনের জন্যে বয়ে বেড়াতে হয় এবং সারা বিশ্বে এর কারণে প্রতি বছর ১৬ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া যে কোন ব্যক্তিই এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। শরীর যখন রক্তের সব চিনিকে (গ্লুকোজ) ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখনই ডায়াবেটিস হয়।  

এই জটিলতার কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক হতে পারে। এছাড়াও ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিডনি এবং অনেক সময় শরীরের নিম্নাঙ্গ কেটেও ফেলতে হতে পারে। সারা বিশ্বেই এই সমস্যা বেড়ে চলেছে।

বর্তমানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৭ কোটির। ৩০ বছর আগের তুলনায় এই সংখ্যা এখন চার গুণ বেশি। চিকিৎকরা বলছেন, ডায়াবেটিসের এতো ঝুঁকি থাকার পরেও যতো মানুষ এই রোগে আক্রান্ত তাদের অর্ধেকেরও বেশি এই রোগটি সম্পর্কে সচেতন নয়। তবে জীবন যাপনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম নীতি মেনে চললে অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আরও জানুন : হেপাটাইটিস বি কি? এর লক্ষণ এবং চিকিৎসা

ডায়াবেটিস কেন হয়?

আমরা যখন কোন খাবার খাই তখন আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে (গ্লুকোজ) রুপান্তরিত করে। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয়, সেটা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় চিনিকে গ্রহণ করার জন্যে। এই চিনি কাজ করে শরীরের জ্বালানী বা শক্তি হিসেবে। শরীরে যখন ইনসুলিন তৈরি হতে না পারে অথবা এটা ঠিক মতো কাজ না করে তখনই ডায়াবেটিস হয়। এবং এর ফলে রক্তের মধ্যে চিনি জমা হতে শুরু করে।

কতো মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ১৯৮০ সালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ কোটি। ২০১৪ সালে সেটা বেড়ে হয় ৪২ কোটিরও বেশি। ১৯৮০ সালে ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষের ডায়াবেটিস হওয়ার হার ছিল ৫ শতাংশেরও কম কিন্তু ২০১৪ সালের তাদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশকি ৫ শতাংশ। সংস্থাটি বলছে, ২০১৬ সালে ডায়াবেটিসের কারণে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন বলছে, প্রাপ্ত বয়স্ক যেসব মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের প্রায় ৭৯ শতাংশ মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশের, যেখানে খুব দ্রুত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটছে।  

ডায়াবেটিসের কারণে কী ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে?

রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি হলে রক্তনালীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। শরীরে যদি রক্ত ঠিক মতো প্রবাহিত হতে না পারে, যেসব জায়গায় রক্তের প্রয়োজন সেখানে যদি এই রক্ত পৌঁছাতে না পারে, তখন স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর ফলে মানুষ দৃষ্টি শক্তি হারাতে পারে। ইনফেকশন হতে পারে পায়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অন্ধত্ব, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদির পেছনে একটি বড় কারণ ডায়াবেটিস।

কী কী ধরনের ডায়াবেটিস আছে?

ডায়াবেটিস বিভিন্ন ধরনের।

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস: অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তখন রক্তের প্রবাহে গ্লুকোজ জমা হতে শুরু করে। বিজ্ঞানীরা এখনও বের করতে পারেন নি কী কারণে এরকমটা হয়। তবে তারা বিশ্বাস করেন যে এর পেছনে জিনগত কারণ থাকতে পারে। অথবা অগ্ন্যাশয়ে ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো নষ্ট হয়ে গেলেও এমন হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ১০ শতাংশ এই টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত।

টাইপ টু ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিসে যারা আক্রান্ত তাদের অগ্ন্যাশয়ে যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না অথবা এই হরমোনটি ঠিক মতো কাজ করে না।সাধারণত মধ্যবয়সী বা বৃদ্ধ ব্যক্তিরা টাইপ টু ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও যাদের ওজন বেশি এবং যাদেরকে বেশিরভাগ সময় বসে বসে কাজ করতে হয় তাদেরও এই ধরনের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ কিছু এলাকার লোকেরাও এই ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছে। তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। সন্তানসম্ভবা হলে পরেও অনেক নারীর ডায়াবেটিস হতে পারে। তাদের দেহ থেকে যখন নিজের এবং সন্তানের জন্যে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন যথেষ্ট পরিমানে তৈরি হতে না পারে, তখনই তাদের ডায়াবেটিস হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে ৬ থেকে ১৬ শতাংশ গর্ভবতী নারীর ডায়াবেটিস হতে পারে। ডায়েট, শরীর চর্চ্চা অথবা ইনসুলিন নেওয়ার মাধ্যমে তাদের শরীরে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা গেলে তাদের টাইপ টু ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।

A. টাইপ ১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার কারন কি?

a). টাইপ ১ ডায়াবেটিস হওয়ার কারন কি?

টাইপ ১ ডায়াবেটিসটি জন্ম থেকেই শিশুতেও দেখা যায়। এই ডায়াবেটিস খুব অল্প বয়সেও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে শরীরের ভিতরে ইনসুলিন মোটেই তৈরি হয় না। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে, জেনেটিক কারণে অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন বন্ধ হয়ে যায় বলে এটি ঘটে। এটি ‘অটোইমিউন ডিসঅর্ডার’ নামেও পরিচিত। এই ডায়াবেটিসে, দেহের নিজস্ব কোষগুলি শত্রু হিসাবে নির্দিষ্ট কোষগুলিতে প্রতিক্রিয়া জানায় এবং তাদের আক্রমণ করে এবং সেগুলি ধ্বংস করে.

b). টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ কি?

টাইপ ২ ডায়াবেটিস দুর্বল জীবনযাত্রার কারণে ঘটে। অতিরিক্ত মেদ হওয়া, সময়মতো ঘুম না করা, অতিরিক্ত নেশা, হাই বিপি, সকাল অবধি ঘুমানো এবং নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন এর মূল কারণগুলি। টাইপ ২ ডায়াবেটিস শরীরে ইনসুলিনের উত্পাদনও হ্রাস করে। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং ভুল-খাওয়ার কারণে এটি ঘটে। শরীরে ইনসুলিনের অভাবের কারণে রক্তে উপস্থিত কোষগুলি ইনসুলিনের প্রতি খুব কম সংবেদনশীলতা দেখায়। এ কারণে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ব্যক্তি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের শিকার হন.

আরও জানুন : এলার্জি কি, কেন হয়? ও এলার্জি চিরতরে দূর করার উপায়

B. টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস শরীরে কি ক্ষতি করে?

a). টাইপ ১ ডায়াবেটিস শরীরে কি ক্ষতি?

এই ধরণের ডায়াবেটিসে অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় এবং এভাবে ইনসুলিন গঠন সম্ভব হয় না। এটি জেনেটিক, অটো-ইমিউন এবং কিছু ভাইরাল সংক্রমণের কারণে ঘটে থাকে, যার কারণে শৈশবে বিটা কোষগুলি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এই রোগটি সাধারণত 12 থেকে 25 বছরের কম বয়সে দেখা যায়। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডে আরও বেশি প্রভাব ফেলে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের মতে, টাইপ ১ ডায়াবেটিস ভারতে 1% থেকে 2% ক্ষেত্রে দেখা যায়.

b). টাইপ ২ ডায়াবেটিস শরীরে কি ক্ষতি করে?

টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব বেশি, যা নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। এই অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তি আরও তৃষ্ণার্ত, ঘন ঘন প্রস্রাব এবং ঘন ঘন ক্ষুধাজনিত সমস্যা অনুভব করেন। এটি যে কারও ক্ষেত্রে ঘটতে পারে তবে এটি শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে, দেহ ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে অক্ষম.

C. টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস এ কারা বেশি আক্রান্ত হয়?

a). টাইপ ১ ডায়াবেটিস কাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়?

টাইপ ১ ডায়াবেটিস শৈশবে যে কোনও সময় হতে পারে, এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও। তবে টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগ সাধারণত 6 থেকে 18 বছরেরও কম অবস্থায় দেখা যায় অর্থাৎ এটি এমন একটি রোগ যা শিশুদের মধ্যে ঘটে। যদিও এই ধরণের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা খুব কম, ভারতে মাত্র 1% থেকে 2% লোকের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিস রয়েছে.

b). টাইপ ২ ডায়াবেটিস কাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়?

বর্তমানে, ব্যায়ামের অভাব এবং ফাস্টফুডের উচ্চ পরিমাণের কারণে শিশুরা টাইপ ২ ডায়াবেটিসও পাচ্ছে। এটি 15 বছরের কম বয়সীদের মধ্যে দৃশ্যমান, বিশেষত 12 বা 13 বছর বয়সের মধ্যে। এটি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই রোগটি বেশি ওজনযুক্ত লোকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, সাধারণত 32 বছরের বেশি লোকের মধ্যে BMI বেশি থাকে। এটি জেনেটিক কারণেও ঘটতে পারে.

D. টাইপn১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি?

a). টাইপ ১ টি ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি?

টাইপ ১ ডায়াবেটিসে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে রোগীকে বারবার প্রস্রাব করে তোলে, অতিরিক্ত তরল শরীর থেকে বের হওয়ার কারণে রোগী খুব তৃষ্ণার্ত বোধ করে। এ কারণে শরীরে জলেরও অভাব হয়, রোগী দুর্বল বোধ করতে শুরু করে, হার্টবিটও অনেক বেড়ে যায়.

b). টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি?

টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর কারণে শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির কারণে ক্লান্তি, স্বল্প দৃষ্টি এবং মাথা ব্যথার মতো সমস্যা রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণে শরীর থেকে তরল বের হওয়ার ফলে এটি রোগীকে আরও তৃষ্ণার্ত বোধ করে। কোনও আঘাত বা ক্ষত দেখা দিলে তিনি দ্রুত নিরাময় করেন না। অবিচ্ছিন্নভাবে ডায়াবেটিস চোখের দৃষ্টিকে প্রভাবিত করে, যা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নামে একটি রোগের দিকে পরিচালিত করে, যা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস করে.

ডায়াবেটিসের অন্য কিছু বিরল কারণও আছে, এর অন্তর্ভুক্ত হল:

  • অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির কোন সমস্যা, যেমন দীর্ঘমেয়াদী প্যান্‌ক্রিয়াটাইটিস।
  • স্টেরয়েড-এর মত ওষুধগুলির কারণে ঘটা ডায়াবেটিস।
  • সিস্টিক ফাইব্রোসিস-এর মত অন্য কোন স্বাস্থ্য সমস্যা অথবা কুশিং সিনড্রোম-এর মত একটি এন্ডোক্রিন স্বাস্থ্যসমস্যার অংশ হিসেবে হওয়া ডায়াবেটিস।
  • নিওন্যাটাল ডায়াবেটিস হল একটি নির্দিষ্ট ধরনের ডায়াবেটিস যা 6 মাস বয়সের আগে হয়।
  • ল্যাটেন্ট অনসেট অটোইমিউন ডায়াবেটিস অফ অ্যাডাল্টহুড (LADA), যা টাইপ 1 ডায়াবেটিসের মতই একটি অটোইমিউন স্বাস্থ্যসমস্যা, কিন্তু এটা বেশি বয়সে দেখা দেয় এবং তুলনামূলকভাবে দ্রুত (কিন্তু অবিলম্বে নয়) ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়, সাধারণতঃ রোগনির্ণয়ের এক বছরের মধ্যেই, বা কখনও কখনও আরো দ্রুত তা হয়।

ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো


ডায়াবেটিস রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলে সহজেই চিহ্নিত করা যায় ডায়াবেটিস। আর যত আগে ডায়াবেটিস চিহ্নিত করা যাবে, তখনই নিতে হবে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ। ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো হলো:

১. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
২. তেষ্টা পাওয়া
৩. নিয়মিত খাওয়ার পরও ঘন ঘন খিদে
৪. প্রচণ্ড পরিশ্রান্ত অনুভব করা
৫. চোখে ঝাপসা দেখা
৬. শরীরের বিভিন্ন অংশের কাটাছেঁড়া সহজে সারে না
৭. খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া
৮. হাতে-পায়ে ব্যথা বা মাঝে মাঝে অবশ হয়ে যাওয়া

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের লক্ষণ শৈশব থেকেই দেখা দিতে পারে এবং বয়স বাড়ার সাথে সেটা আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে। বয়স ৪০ বছরের বেশি হওয়ার পর থেকে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে দক্ষিণ এশিয়ার লোকজনের মধ্যে এই ঝুঁকি তৈরি হয় তাদের ২৫ বছর বয়স হওয়ার পর থেকেই। যাদের পিতামাতা, ভাই বোনের ডায়াবেটিস আছে, অথবা যাদের অতিরিক্ত ওজন, দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশের মানুষ, আফ্রো-ক্যারিবিয়ান অথবা কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান তাদেরও এই ঝুঁকি বেশি থাকে।

ডায়াবেটিস এ ইন্সুলিন কি ভূমিকা পালন করে?

ইনসুলিন ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য দেওয়া হয়। ইনসুলিন হ’ল – এক ধরণের হরমোন যা আমাদের দেহের জন্য খুব উপকারী। ইনসুলিনের মাধ্যমেই রক্ত ​​কোষগুলি সুগার পান, অর্থাৎ ইনসুলিন শরীরের অন্যান্য অংশে সুগার সরবরাহ করতে কাজ করে। ইনসুলিন সরবরাহিত সুগার কোষগুলিকে শক্তি সরবরাহ করে.

ইনসুলিন নিতে হবে? ওষুধে হবে না? ওষুধ বাড়িয়ে দিন। নাহয় একটু বেশি হাঁটাহাঁটি করব! ডায়াবেটিসের রোগীরা ইনসুলিন গ্রহণ করতে বেশ অস্বস্তি ও অনীহা বোধ করেন। অবশ্য সব সময় যে ডায়াবেটিসে ইনসুলিন নিতেই হবে, তা নয়। ইনসুলিন গ্রহণের নির্দিষ্ট কারণ ও নির্দেশনা আছে। টাইপ–২ ডায়াবেটিস বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জীবনাচরণ পরিবর্তন ও নানা ধরনের ওষুধেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিছু বিশেষ রোগীর বেলায় ইনসুলিন দরকার হয়। এখন জেনে নিন কখন চিকিৎসক ইনসুলিন গ্রহণ করতে বলতে পারেন।

  • গর্ভাবস্থায় ও শিশুকে স্তন্যপান করানোর সময় সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে ইনসুলিন। তাই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে এবং আগে থেকে জানা ডায়াবেটিসের রোগী যদি মা হতে চান তবে সব ওষুধ বন্ধ করে দিয়ে ইনসুলিন দিতে হবে।
  • ডায়াবেটিসের রোগীদের যেকোনো অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেবল ঘা শুকানোকে ত্বরান্বিত করাই নয়, নানা ধরনের জটিলতা এড়াতে এ পরিস্থিতিতে সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদি ইনসুলিন লাগতে পারে।
  • বিভিন্ন গুরুতর রোগে যেমন: হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা মারাত্মক কোনো সংক্রমণে (যেমন: যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ফোড়া, গ্যাংগ্রিন ইত্যাদি) দ্রুত সেরে উঠতে ইনসুলিনই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ।
  • উচ্চ মাত্রায় কয়েকটি বা তিন ধরনের ওষুধ প্রায় সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করার পর কারও ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে একে ওরাল হাইপোগ্লাইসেমিক এজেন্ট ফেইলিওর বলে। এটা প্রমাণ করে তার ওষুধে আর কাজ হবে না, কেননা তার অগ্ন্যাশয়ে যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন হচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে তাকে ইনসুলিন–নির্ভর হয়ে যেতে হবে।
  • কিডনি ও যকৃতের জটিলতা থাকলে ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে। জন্ডিস হলে সাময়িকভাবে ওষুধ বন্ধ রেখে ইনসুলিন দিতে হতে পারে।
  • অনেকের প্রথমেই রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক বেশি ধরা পড়ে। রক্তে শর্করা ১৬.৭ মিলিমোল বা ৩০০ গ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি বা গড় শর্করা এইচবিএওয়ান সি ১০ শতাংশের বেশি হলে ইনসুলিন দিয়ে আগে কমিয়ে নিতে হবে। এ অবস্থায় ওষুধ কার্যকর নয়। বরং নানা জটিলতা ডেকে আনবে।
  • কিডনি ও যকৃতের জটিলতা থাকলে ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে। জন্ডিস হলে সাময়িকভাবে ওষুধ বন্ধ রেখে ইনসুলিন দিতে হতে পারে।
  • রক্তে শর্করা আকস্মিকভাবে অনেক বেড়ে গেলে ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস ও হাইপারঅসমলার কমা নামের জীবননাশী জটিলতা হতে পারে। এ রকম আশঙ্কা বেড়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইনের মাধ্যমে ইনসুলিন দিতে হয়।
  • টাইপ–১ ডায়াবেটিসে ওষুধ কাজ করে না। এদের ইনসুলিন–নির্ভর হয়ে বেঁচে থাকতে হয়।

 

ডায়াবেটিস কি প্রতিরোধ করা সম্ভব?

ডায়াবেটিস যদিও জেনেটিক এবং আপনার জীবন যাপনের স্টাইলের ওপর নির্ভরশীল তারপরেও আপনি চেষ্টা করলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারেন। সেজন্যে আপনাকে খাবার গ্রহণের বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে এবং আপনাকে হতে হবে অত্যন্ত সক্রিয় একজন মানুষ।

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। মৃসন শাদা আটার রুটির পরিবর্তে খেতে হবে ভুষিওয়ালা আটার রুটি। এটাই প্রথম ধাপ।
  • এড়িয়ে চলতে হবে হোয়াইট পাস্তা, প্যাস্ট্রি, ফিজি ড্রিংকস, চিনি জাতীয় পানীয়, মিষ্টি ইত্যাদি।
  • আর স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে রয়েছে শাক সব্জি, ফল, বিন্স এবং মোটা দানার খাদ্য শস্য। স্বাস্থ্যকর তেল, বাদাম খাওয়াও ভালো। ওমেগা থ্রি তেল আছে যেসব মাছে সেগুলো বেশি খেতে হবে। যেমন সারডিন, স্যামন এবং ম্যাকেরেল।
  • এক বেলা পেট ভরে না খেয়ে পরিমানে অল্প অল্প করে বিরতি দিয়ে খাওয়া দরকার।
  • শরীর চর্চ্চা বা ব্যায়াম করার মাধ্যমে রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে রখা সম্ভব। প্রতি সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টার মতো ব্যায়াম করা দরকার। তার মধ্যে দ্রুত হাঁটা এবং সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠাও রয়েছে।
  • ওজন কম রাখলেও চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যদি ওজন কমাতে হয় তাহলে সেটা ধীরে ধীরে করতে হবে। সপ্তাহে আধা কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত।
  • ধূমপান পরিহার করাও জরুরী। নজর রাখতে হবে কোলস্টেরলের মাত্রার ওপর। এর মাত্রা বেশি হলে হৃদ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ডা: সৈয়দ আসিফ আহমেদ

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

One Comment to “ডায়াবেটিস কী ? কেন হয় ? কত প্রকার ও কি কি”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *