মনের রোগ

মনের ১০টি রোগ, যেগুলো থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য

শেয়ার করুন

সাধারণত মন বা দিল বলতে বোঝায়, বুদ্ধি এবং বিবেকবোধের সমষ্টিগত রূপকে। যা মানুষের চিন্তা, অনুভূতি, আবেগ, ইচ্ছা এবং কল্পনার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

মন কি এবং কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে অনেক রকম তত্ত্ব প্রচলিত আছে।

তবে মানুষের মনের প্রবৃত্তির কোনো কিছুই শরীর থেকে আলাদা নয়। বরং মানুষের মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভূত শারীরবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মন গড়ে উঠে। এখান থেকেই মনে ভালো থাকা, মন্দ লাগার সূত্রপাত। সে হিসেব বলা যায়, মন একটি মূর্ত আধ্যাত্মিক ঐক্যের সম্বন্ধ। যা চিন্তা, অনুভুতি ও ইচ্ছা প্রভৃতি মানসিক প্রক্রিয়া বৈ অন্য কিছু নয়।

ইসলামি শরিয়তে মনের শুদ্ধতা ওস্বচ্ছতার বেশ গুরুত্ব রয়েছে। আধ্যাত্মিকতার চর্চা যারা করেন কিংবা সুফিবাদের অনুসারী তারা মনের নানা সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তবে, অভিজ্ঞ আলেমরা সর্বোতভাবে মনের ১০টি রোগ চিহ্নিত করে তা থেকে বেচেঁ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুসলিম উম্মাহকে।

আরও পড়ুন : ডায়াবেটিস কী ? কেন হয় ? কত প্রকার ও কি কি? এবং এর চিকিৎসা ।।

তাদের মতে, মনে রোগ তো অনেকগুলোই আছে। কিন্তু মৌলিক রোগ ১০টি। সেগুলো হলো- লোভ, দীর্ঘ আশা, রাগ, মিথ্যা বলা, গিবত, কার্পণ্য, হিংসা, হিংসা, অহঙ্কার ও কীনা

এক. লোভ- দুনিয়ার লোভ।

দুই. দীর্ঘ আশা। আরবিতে বলা হয় আমাল। একটি বাড়ির মালিক হয়েছে, চলবে না, আরেকটি বাড়ির মালিক হতে হবে। এভাবে আশাকে দীর্ঘ করা। এটা মনের রোগ বিশেষ।

তিন. রাগ। সীমাহীন গোস্বা। এতো রাগী যে, রাগলে হিতাহিত জ্ঞান শূ্ণ্য হয়ে যায়। সে মানুষ না জানোয়ার, বোঝা যায় না। এক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আল্লাহর রাসূল! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাগ করবে না। সে আবারও বলল, আল্লাহর রাসূল! আমাকে আরেকটি নসিহত করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারও বললেন, রাগ পরিত্যাগ করো। সাহাবি তৃতীয়বার অনুরোধ করার পরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই জবাব দিলেন। তো যতবারই সাহাবি নসিহতের কথা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই কথা বলেছেন- রাগ ছাড়, রাগ ছাড়।

চার. মিথ্যা বলা। মিথ্যা তো এখন অভ্যাস হয়ে গেছে আমাদের। আমরা কথায় কথায় মিথ্যা বলি। মিথ্যার আশ্রয় নিই। মিথ্যাকে বলা হয় গোনাহের জননী। ইচ্ছাকৃত মিথ্যা ও হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে মিথ্যা একই।

পাচঁ. গিবত। এটা তো এখন খুব স্বাভাবিক বিষয়। পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা গিবত প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তোমরা কী মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে?’ গিবত হলো মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো। গিবতকে স্বাভাবিক আলাপচারিতা মনে না করা। কোনো অবস্থাতেই কেউ যেন আমার সামনে গিবত করতে না পারে- প্রত্যেক মুসলমানের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। কেউ কারো সামনে গিবত করলে তাকে বলা, আমি নিয়ত করেছি, গিবত করব না। দোয়া করবেন, আমি যেন গিবত না করি, কারও গিবত না শুনি।

ছয়. কার্পণ্য, কৃপণতা। হাদিস বলা হয়েছে, কৃপণ জান্নাতে যেতে পারবে না। বড় বড় দান-খয়রাত করার দরকার নেই। ছোট ছোট দান-খয়রাত করা যেতে পারে। তবে যেন রিয়া (অহঙ্কার) না আসে।

আরও দেখুন : এলার্জি কি, কেন হয়? ও এলার্জি চিরতরে দূর করার উপায়

সাত. হিংসা। হিংসা বলে, কারও মাঝে কোনো গুণ দেখে এ কামনা করা যে, এটা নষ্ট হয়ে যাক। তবে, কারো কোনো গুণ দেখে এমন আশা করা, তার মধ্যে যে গুণ আছে থাকুক, তবে আল্লাহ আমাকেও তা দান করো। এটা হিংসা নয়, এটাকে বলা হয় ঈর্ষা। ঈর্ষা জায়েজ, হিংসা হারাম। হাদিস শরিফে আছে, হিংসুক জান্নাতে যাবে না।

আট. রিয়া। অর্থ লোক দেখানো। মানুষে দেখুক। মানুষের সামনে নামাজ পড়ার সময় যদি নিয়ত করি যে, মানুষে দেখুক তাহলে এটা হবে রিয়া। এর প্রতিকার হলো, যে কাজে রিয়া আসে তা মানুষের সামনে বেশি বেশি করা তাহলে দেখা যাবে, কাজটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আর অভ্যাস হয়ে গেলে তখন আর রিয়া থাকবে না। কাজটা থাকবে, কিন্তু রিয়া থাকবে না।

নয়. অহঙ্কার। নিজেকে বড় মনে করা। এর প্রতিকার হলো, নিজেকে সব সময় ছোট মনে করা। অহঙ্কার একমাত্র আল্লাহতায়ালার জন্য নির্ধারিত। কোনো বান্দার জন্য এটা শোভন নয়।

দশ. কীনা। কীনা হিংসার কাছাকাছি একটি বিষয়। কিনা হলো, মনে মনে জ্বলতে থাকা। কারো উন্নতি-সমৃদ্ধি দেখে এমনটা ভাবা যে, এ গুণটা তাকে কেন দেওয়া হলো? সে কেন এ জিনিসের মালিক হলো?

বর্ণিত রোগগুলোর আলেমদের অভিমত হলো, এই ১০টা রোগের চিকিৎসা করলে আল্লাহতায়ালা অন্যান্য সব রোগ থেকে মুক্তি দেবেন- ইনশাআল্লাহ।

আরও দেখুন : হেপাটাইটিস বি কি? এর লক্ষণ এবং চিকিৎসা

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *