মানসিক রোগের সমাধান
মানসিক রোগের সমাধান: সাধারণত মন বা দিল বলতে বোঝায়, বুদ্ধি এবং বিবেকবোধের সমষ্টিগত রূপকে। যা কিনা মানুষের চিন্তা, অনুভূতি, আবেগ, ইচ্ছা এবং কল্পনার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
মন কি
মন কি এবং কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে অনেক রকম তত্ত্ব প্রচলিত আছে। প্রথমে আমাদের মন বিষয়টা বুঝতে হবে।
তবে মানুষের মনের প্রবৃত্তির কোনো কিছুই শরীর থেকে আলাদা নয়। বরং মানুষের মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভূত শারীরবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মন গড়ে উঠে। এখান থেকেই মনে ভালো থাকা, মন্দ লাগার সূত্রপাত। সে হিসেব বলা যায়, মন একটি মূর্ত আধ্যাত্মিক ঐক্যের সম্বন্ধ। যা চিন্তা, অনুভুতি ও ইচ্ছা প্রভৃতি মানসিক প্রক্রিয়া বৈ অন্য কিছু নয়।
ইসলামি শরিয়তে মনের শুদ্ধতা ওস্বচ্ছতার বেশ গুরুত্ব রয়েছে। আধ্যাত্মিকতার চর্চা যারা করেন কিংবা সুফিবাদের অনুসারী তারা মনের নানা সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তবে, অভিজ্ঞ আলেমরা সর্বোতভাবে মনের ১০টি রোগ চিহ্নিত করে তা থেকে বেচেঁ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুসলিম উম্মাহকে।
মানসিক রোগী চেনার উপায়
মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকলাপ বিঘ্নিত হলে আমাদের মন ও শরীরের ওপর যে প্রভাব পড়ে, সেটিই হলো মানসিক রোগ। আর এই মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিই হলো মানসিক রোগী।
তাহলে একজন মানুষের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনে হঠাৎ অতিমাত্রায় কোনো পরিবর্তনে এসে থাকে, যার ফলে তার জীবনযাপনে মারাত্মক বিরুপ প্রভাব ফেলে তখনই আমরা বুঝতে পারি যে তিনি মানসিক রোগী।
আরও ক্লিয়ার করে বললে, একজন মানুষের স্বাভাবিক ন্যাচার হতে একেবারে বিপরীতমুখী আচরণ করতে শুরু করে অথ্যাৎ আগে যেমন আচারণ করতো সেটা এখন আর করছেনা। যেটা তার ব্যক্তিত্বের সাথে মেলে না।
মানসিক সমস্যার লক্ষণ
- নিজে নিজে কথা বলতে শুরু করবে
- নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা এমনকি সুইসাইডও চিন্তা ভাবনা হবে
- হঠাৎ করে নিজে নিজে হাসঁতে থাকা ও কাঁদা
- প্রতিদিনের দৈনন্দিন কাজ কর্ম করতে অনীহা প্রকাশ করা
- খাবারের অরুচি হওয়া অথবা খুব বেশি পরিমাণে খাবারে আগ্রহ হওয়া
- কর্মক্ষেত্রে কাজ না করার অনীহা
- হঠাৎ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়বে।
- একটানা ২ সপ্তাহ বিষন্নতায় ভোগা
- নিজেকে বদ্ধ ঘরের মধ্যে আটকে রাখা
- খিটখিটে মেজাজের হওয়া যা অগ্রহণযোগ্য
- যেকোনো স্বাভাবিক কথাতেই রেগে যাওয়া
- পরিবার বা আত্মীয়স্বজনকে নিজের শত্রু ভাবা ইত্যাদি
- সেল্ফ-কেয়ারিং কমে যাওয়া
মানসিক রোগ কত প্রকার
এই রোগ সাধারণত দুই প্রকার। নিউরোসিস ও সাইকোসিস
মানসিক রোগের চিকিৎসা
মানসিক রোগের ধরণ অনুযায়ী একেক রোগীর জন্য একেক রকম ডাক্তার বা চিকিৎসা হয়ে থাকে। এই রোগ সাধারণত দুই প্রকার।
নিউরোসিস: মৃদু মানসিক সমস্যা যেমন বিষন্নতা, অল্পতেই রেগে যাওয়া, ইত্যাদি এ জাতীয় সমস্যাগুলোই হচ্ছে নিউরোসিস। নিউরোসিস হলে সাধারণত কাউন্সেলিং এবং চারপাশের লোকজনের সহায়তায় সেরে যায়। প্রয়োজন মাফিক থেরাপিও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সাইকোসিস: এটি হলো মানসিক রোগের জটিল প্রকৃতি হয়ে থাকে। যেমন- সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, হাইপারটেনশন ইত্যাদি। এ জাতীয় রোগে অনেকক্ষেত্রে আজীবন ভুগতে হয় এবং ওষুধ খেতে হয়। ডাক্তারের পরামর্শে সবসময় থাকা উচিত এ ধরনের রোগীর। (মানসিক রোগের সমাধান)
মানসিক ব্যাধি নিয়ে আমাদের অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে এবং রয়েছে অনেক কুসংস্কারও। তাই, সময়মতো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে প্রয়োজনে হসপিটালেও ভর্তি করতে হবে।
সাইকোলজি ডাক্তার
মানসিক রোগির কয়েকজন ডাক্তারের নাম উল্লেখ করা হলো।
- অধ্যাপক ডাক্তার: মো: গোলাম রব্বানী (সাবেক পরিচালক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট)
- অধ্যাপক ডাক্তার : ওয়াজিউল আলম চৌধুরী (সাবেক পরিচালক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট)
- ডাক্তার: মেখলা সরকার (সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট)
- ডাঃ হেলাল উদ্দীন আহমেদ (সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট)
আরও পড়ুন :
ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায়
তাদের মতে, মনে রোগ তো অনেকগুলোই আছে। কিন্তু মৌলিক রোগ ১০টি। সেগুলো হলো- লোভ, দীর্ঘ আশা, রাগ, মিথ্যা বলা, গিবত, কার্পণ্য, হিংসা, হিংসা, অহঙ্কার ও কীনা
এক. লোভ- দুনিয়ার লোভ।
দুই. দীর্ঘ আশা। আরবিতে বলা হয় আমাল। একটি বাড়ির মালিক হয়েছে, চলবে না, আরেকটি বাড়ির মালিক হতে হবে। এভাবে আশাকে দীর্ঘ করা। এটা মনের রোগ বিশেষ।
তিন. রাগ। সীমাহীন গোস্বা। এতো রাগী যে, রাগলে হিতাহিত জ্ঞান শূ্ণ্য হয়ে যায়। সে মানুষ না জানোয়ার, বোঝা যায় না। এক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আল্লাহর রাসূল! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাগ করবে না।
সে আবারও বলল, আল্লাহর রাসূল! আমাকে আরেকটি নসিহত করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারও বললেন, রাগ পরিত্যাগ করো। সাহাবি তৃতীয়বার অনুরোধ করার পরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই জবাব দিলেন। তো যতবারই সাহাবি নসিহতের কথা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই কথা বলেছেন- রাগ ছাড়, রাগ ছাড়।
চার. মিথ্যা বলা। মিথ্যা তো এখন অভ্যাস হয়ে গেছে আমাদের। আমরা কথায় কথায় মিথ্যা বলি। মিথ্যার আশ্রয় নিই। মিথ্যাকে বলা হয় গোনাহের জননী। ইচ্ছাকৃত মিথ্যা ও হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে মিথ্যা একই।
পাচঁ. গিবত। এটা তো এখন খুব স্বাভাবিক বিষয়। পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা গিবত প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তোমরা কী মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে?’ গিবত হলো মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো। গিবতকে স্বাভাবিক আলাপচারিতা মনে না করা।
কোনো অবস্থাতেই কেউ যেন আমার সামনে গিবত করতে না পারে- প্রত্যেক মুসলমানের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। কেউ কারো সামনে গিবত করলে তাকে বলা, আমি নিয়ত করেছি, গিবত করব না। দোয়া করবেন, আমি যেন গিবত না করি, কারও গিবত না শুনি।
ছয়. কার্পণ্য, কৃপণতা। হাদিস বলা হয়েছে, কৃপণ জান্নাতে যেতে পারবে না। বড় বড় দান-খয়রাত করার দরকার নেই। ছোট ছোট দান-খয়রাত করা যেতে পারে। তবে যেন রিয়া (অহঙ্কার) না আসে।
আরও দেখুন :
সুগার রোগীর খাদ্য তালিকা
সাত. হিংসা। হিংসা বলে, কারও মাঝে কোনো গুণ দেখে এ কামনা করা যে, এটা নষ্ট হয়ে যাক। তবে, কারো কোনো গুণ দেখে এমন আশা করা, তার মধ্যে যে গুণ আছে থাকুক, তবে আল্লাহ আমাকেও তা দান করো। এটা হিংসা নয়, এটাকে বলা হয় ঈর্ষা। ঈর্ষা জায়েজ, হিংসা হারাম। হাদিস শরিফে আছে, হিংসুক জান্নাতে যাবে না।
আট. রিয়া। অর্থ লোক দেখানো। মানুষে দেখুক। মানুষের সামনে নামাজ পড়ার সময় যদি নিয়ত করি যে, মানুষে দেখুক তাহলে এটা হবে রিয়া। এর প্রতিকার হলো, যে কাজে রিয়া আসে তা মানুষের সামনে বেশি বেশি করা তাহলে দেখা যাবে, কাজটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আর অভ্যাস হয়ে গেলে তখন আর রিয়া থাকবে না। কাজটা থাকবে, কিন্তু রিয়া থাকবে না।
নয়. অহঙ্কার। নিজেকে বড় মনে করা। এর প্রতিকার হলো, নিজেকে সব সময় ছোট মনে করা। অহঙ্কার একমাত্র আল্লাহতায়ালার জন্য নির্ধারিত। কোনো বান্দার জন্য এটা শোভন নয়।
দশ. কীনা। কীনা হিংসার কাছাকাছি একটি বিষয়। কিনা হলো, মনে মনে জ্বলতে থাকা। কারো উন্নতি-সমৃদ্ধি দেখে এমনটা ভাবা যে, এ গুণটা তাকে কেন দেওয়া হলো? সে কেন এ জিনিসের মালিক হলো?
বর্ণিত রোগগুলোর আলেমদের অভিমত হলো, এই ১০টা রোগের চিকিৎসা করলে আল্লাহতায়ালা অন্যান্য সব রোগ থেকে মুক্তি দেবেন- ইনশাআল্লাহ।
এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!
[…] […]
[…] […]