শিলাজিতের উপকারিতা: শিলাজিত একটি প্রাকৃতিক পদার্থ যা হিমালয়ের পাথরের ফাটল থেকে নির্গত হয়। প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি একটি মূল্যবান উপাদান হিসাবে বিবেচিত। শিলাজিতের উপকারিতা এবং এর বিভিন্ন প্রয়োগের কারণেই এটি আধুনিক যুগেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
শিলাজিৎ কি – what is shilajit
এটি হল একটি কালো, আঠালো পদার্থ যা পাথরের মধ্যে থেকে নির্গত হয়। এর মধ্যে প্রায় ৮৫ ধরনের খনিজ উপাদান, হিউমিক অ্যাসিড এবং ফুলভিক অ্যাসিড রয়েছে। এগুলো শরীরের বিভিন্ন ফাংশনকে উন্নত করে এবং স্বাস্থ্যকে বর্ধিত করতে সাহায্য করে।
শিলাজিৎ গাছ – shilajit tree
এটা মূলত কোনো গাছ নয়। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাকৃতিক পদার্থ, যা হিমালয়, তিব্বত, এবং অন্যান্য পর্বত অঞ্চলে পাথরের ফাটল থেকে নির্গত হয়। শিলাজিত পাথরের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে জমে থাকা উদ্ভিদ এবং প্রাণীর জৈব পদার্থের অবক্ষয়ের ফলে তৈরি হয়। এটি একটি আঠালো এবং কালো রঙের পদার্থ, যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান এবং অর্গানিক এসিড থাকে, যেমন ফুলভিক অ্যাসিড ও হিউমিক অ্যাসিড।
শিলাজিত প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয় এবং কোনো গাছ থেকে এটি সরাসরি আসে না, বরং এটি পাহাড়ের পাথরের ফাটল থেকে সংগ্রহ করা হয়।
শিলাজিৎ এর কাজ কি
এটার প্রধান কাজ হলো শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করা। এটি মূলত নিম্নলিখিত কাজগুলো করে:
- শারীরিক শক্তি এবং স্ট্যামিনা বৃদ্ধি: শিলাজিত শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ কর্মক্ষম রাখে।
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি: এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলোকে সুরক্ষিত করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
- ইমিউন সিস্টেম উন্নত করা: শিলাজিত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
- প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করা: শিলাজিত প্রাকৃতিকভাবে পুরুষদের এবং মহিলাদের উভয়েরই প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
- অ্যান্টি-এজিং প্রভাব: এতে থাকা হিউমিক অ্যাসিড এবং ফুলভিক অ্যাসিড কোষের বার্ধক্য রোধে সাহায্য করে, যা আপনাকে দীর্ঘদিন সুস্থ ও তরুণ রাখে।
- অস্থিরতা এবং মানসিক চাপ কমানো: এটি মানসিক চাপ এবং অস্থিরতা কমাতে সহায়ক, ফলে মানসিক শান্তি এবং সুস্থতা বজায় থাকে।
শিলাজিতের এই সব কাজগুলোই প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় একে একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
শিলাজিৎ কোথায় পাওয়া যায়
এটা মূলত উচ্চ পর্বতশ্রেণীর পাথরের ফাটল থেকে সংগ্রহ করা হয়। এটি প্রধানত হিমালয়, তিব্বত, এবং মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন পর্বতশ্রেণীতে পাওয়া যায়। শিলাজিতের মূল উৎপত্তিস্থলগুলি হলো:
- হিমালয় পর্বতমালা: নেপাল, ভারত, এবং ভূটানের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে শিলাজিত প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
- তিব্বত: তিব্বতের বিভিন্ন অংশেও শিলাজিত পাওয়া যায়, বিশেষত পর্বতের উঁচু অঞ্চলে।
- আলতাই পর্বতমালা: রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের আলতাই পর্বতমালায় শিলাজিতের উপস্থিতি দেখা যায়।
- ককেশাস পর্বত: রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ককেশাস পর্বতমালায় শিলাজিত সংগ্রহ করা হয়।
শিলাজিত সাধারণত গ্রীষ্মকালে যখন তাপমাত্রা বাড়ে, তখন পাথরের ফাটল থেকে বের হয়ে আসে। এটি পরবর্তীতে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে গুঁড়ো বা ক্যাপসুল আকারে বিক্রি করা হয়।
আসল শিলাজিৎ চেনার উপায় – pure shilajit
আসল শিলাজিত চেনার কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আপনাকে নকল শিলাজিত থেকে আলাদা করতে সাহায্য করবে। আসল শিলাজিত চেনার উপায়গুলো হলো:
১. রঙ এবং আকার:
আসল শিলাজিত কালো বা গাঢ় বাদামি রঙের হয় এবং এটি আঠালো প্রকৃতির। এটি সহজে গলে যায়, বিশেষত তাপমাত্রা বাড়ালে।
২. পানিতে দ্রবণীয়তা:
আসল শিলাজিত পানিতে সম্পূর্ণভাবে দ্রবীভূত হয় এবং একটি সোনালি বা বাদামি বর্ণ ধারণ করে। যদি শিলাজিত পানিতে না মিশে বা কোনো অবশিষ্টাংশ থাকে, তবে তা নকল হতে পারে।
৩. গন্ধ:
আসল শিলাজিতের গন্ধ সাধারণত তীক্ষ্ণ এবং মাটির মতো হয়। এটি পচা গন্ধযুক্ত বা রাসায়নিক গন্ধযুক্ত হওয়া উচিত নয়।
৪. তাপের সংস্পর্শে:
আসল শিলাজিত শরীরের তাপমাত্রায় বা একটু গরম করলে সহজেই গলে যায়। নকল শিলাজিত শক্ত থেকে যায় বা গলতে সময় নেয়।
৫. স্বাদ:
আসল শিলাজিতের স্বাদ তিক্ত এবং সামান্য মাটির মতো হয়। তবে এটি অত্যন্ত শক্তিশালী গন্ধ বা অস্বাভাবিক স্বাদযুক্ত হওয়া উচিত নয়।
৬. জ্বলন পরীক্ষা:
আসল শিলাজিত আগুনের সংস্পর্শে এলে তা দ্রুত পুড়ে যায় না। যদি তা দ্রুত পুড়ে যায় এবং ধোঁয়া বা গন্ধ দেয়, তবে তা নকল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৭. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ:
নিশ্চিত হওয়ার জন্য, ভালো মানের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক বা নির্ভরযোগ্য বিক্রেতার কাছ থেকে শিলাজিত কিনতে হবে। তারা আসল শিলাজিত সরবরাহ করে তা যাচাই করতে পারবেন। শিলাজিতের বিস্তারিত তথ্য!
এই উপায়গুলো ব্যবহার করে আপনি আসল শিলাজিত চিনতে সক্ষম হবেন এবং নকল শিলাজিত থেকে সতর্ক থাকতে পারবেন।
শিলাজিতের উপকারিতা – benefits of shilajit
শিলাজিতের অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা শরীর ও মনের জন্য বেশ কার্যকরী। প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় শিলাজিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শিলাজিতের কিছু প্রধান উপকারিতা হলো:
১. শক্তি এবং স্ট্যামিনা বৃদ্ধি:
শিলাজিত শরীরের ক্লান্তি দূর করতে এবং শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায় এবং দীর্ঘ সময় কর্মক্ষম রাখে।
২. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করা:
শিলাজিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সুরক্ষিত করে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি আলঝেইমারসহ বিভিন্ন স্মৃতিশক্তি কমার রোগে সহায়ক।
৩. প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি:
শিলাজিত পুরুষদের এবং মহিলাদের উভয়ের প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক, যা পুরুষদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
৪. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করা:
শিলাজিত শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৫. অ্যান্টি-এজিং প্রভাব:
শিলাজিতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে। এটি কোষের পুনর্গঠন এবং ত্বকের নমনীয়তা বাড়াতে সহায়ক।
৬. হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি:
শিলাজিত হাড়ের ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা অস্টিওপরোসিস এবং হাড়ের ক্ষয়রোধে সহায়ক।
৭. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
শিলাজিত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হার্টের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক।
৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
শিলাজিত রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কার্যকর হতে পারে।
৯. আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমায়:
শিলাজিতের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য আর্থ্রাইটিসের ব্যথা এবং ফোলাভাব কমাতে সহায়ক।
১০. শারীরিক ধৈর্য বাড়ায়:
শিলাজিত নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীরের ধৈর্য এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়, যা বিশেষত ক্রীড়াবিদদের জন্য উপকারী।
এগুলো ছাড়াও শিলাজিতের আরও বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে, যা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধানে কার্যকর হতে পারে। তবে শিলাজিত গ্রহণের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিলাজিতের অপকারিতা – shilajit side effects
শিলাজিত একটি প্রাকৃতিক ভেষজ পদার্থ যা স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে অতিরিক্ত বা ভুল ব্যবহারের কারণে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। নিচে শিলাজিতের কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
১. রক্তচাপের উপর প্রভাব:
শিলাজিত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, তবে উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপের রোগীরা এটি ব্যবহার করলে রক্তচাপের সমস্যা বাড়তে পারে।
২. লোহার পরিমাণ বৃদ্ধি:
শিলাজিত শরীরে লোহার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যারা হেমোক্রোমাটোসিস বা শরীরে অতিরিক্ত লোহা জমার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের শিলাজিত গ্রহণের ফলে সমস্যা বাড়তে পারে।
৩. অ্যালার্জি বা এলার্জিক প্রতিক্রিয়া:
কিছু লোকের মধ্যে শিলাজিতের ব্যবহারে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি, বা শ্বাসকষ্ট।
৪. অতিরিক্ত ব্যবহারজনিত সমস্যা:
অতিরিক্ত শিলাজিত সেবনের ফলে পেটে গ্যাস, ডায়রিয়া, বা পেটের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫. কিডনির সমস্যা:
যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে, তারা শিলাজিত গ্রহণ করলে তা তাদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। শিলাজিত ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
শিলাজিত ব্যবহার করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি আপনি দীর্ঘমেয়াদী কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে থাকেন।
শিলাজিৎ খাবার নিয়ম
শিলাজিত গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, যা অনুসরণ করলে এর সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। শিলাজিত সাধারণত গুঁড়ো বা ক্যাপসুল আকারে পাওয়া যায় এবং এটি সঠিক ডোজে গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে শিলাজিত খাওয়ার নিয়মগুলো তুলে ধরা হলো:
১. শিলাজিতের সঠিক ডোজ:
- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন সাধারণত ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম শিলাজিত গ্রহণ করা নিরাপদ।
- তবে ডোজ নির্ভর করে আপনার শরীরের অবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শের ওপর। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডোজ বাড়ানো ঠিক নয়।
২. খালি পেটে গ্রহণ:
শিলাজিত খালি পেটে সকালে গ্রহণ করা সবচেয়ে ভালো। এটি শরীরের শক্তি বাড়াতে এবং মেটাবলিজমকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
৩. পানি বা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে:
শিলাজিত গুঁড়ো বা পেস্ট আকারে থাকলে, এটি কুসুম গরম পানি বা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে এটি শরীরের শক্তি এবং স্ট্যামিনা বাড়াতে আরও কার্যকর হয়।
৪. ক্যাপসুল আকারে:
যদি শিলাজিত ক্যাপসুল আকারে হয়, তবে নির্দিষ্ট ডোজ অনুযায়ী প্রতিদিন একবার বা দুবার খেতে পারেন। প্রতিবার খাবারের আগে বা পরে এটি গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে খালি পেটে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ:
শিলাজিত একটি প্রাকৃতিক উপাদান হলেও, এটি ব্যবহারের আগে একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি আপনি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা বা ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন।
৬. নিয়মিত ব্যবহার:
শিলাজিতের উপকারিতা পেতে হলে নিয়মিতভাবে এক থেকে দুই মাস ধরে এটি ব্যবহার করা উচিত। তবে একটানা দীর্ঘ সময় ধরে শিলাজিত খাওয়া উচিত নয়। সাধারণত ৩-৪ মাস ব্যবহার করার পর এক-দুই মাস বিরতি নেওয়া প্রয়োজন।
৭. পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস:
শিলাজিতের সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের সাথে এটি গ্রহণ করা উচিত। এটি শরীরের কার্যক্ষমতা এবং শক্তি বাড়াতে আরও কার্যকর হবে।
সতর্কতা:
- গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের শিলাজিত গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- অতিরিক্ত ডোজ গ্রহণ করলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ বা মাথা ঘোরা।
এই নিয়মগুলো মেনে শিলাজিত গ্রহণ করলে এটি শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে।
শিলাজিৎ কিভাবে খেতে হয়
শিলাজিত খাওয়ার নিয়ম হলো:
- পাউডার বা রেজিন (পেস্ট): ২০০-৫০০ মিলিগ্রাম শিলাজিত কুসুম গরম পানি বা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খালি পেটে সকালে নিন।
- ক্যাপসুল: প্রতিদিন ১-২টি ক্যাপসুল খালি পেটে বা খাবারের আগে পানি বা দুধের সঙ্গে নিন।
- ডোজ: ১-২ মাস ধরে নিয়মিত ব্যবহার করুন, তবে দীর্ঘ সময় একটানা খাওয়া উচিত নয়।
- বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: শিলাজিত গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুন:
shilajit price in bangladesh
শিলাজিতের দাম তার গুণমান, উৎপত্তিস্থল এবং ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, বাজারে শিলাজিত গুঁড়ো, পেস্ট, ক্যাপসুল বা রেজিন (আঠালো পদার্থ) আকারে পাওয়া যায়। নিচে বিভিন্ন ধরনের শিলাজিতের দাম সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা দেওয়া হলো:
- গুঁড়ো বা পাউডার শিলাজিত: ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম।
- পেস্ট বা রেজিন শিলাজিত: ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা প্রতি ১০-২০ গ্রাম।
- ক্যাপসুল শিলাজিত: ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা প্রতি বোতল (৩০ থেকে ৬০ ক্যাপসুল)।
উল্লেখ্য, শিলাজিতের দাম এর খাঁটি অবস্থার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। বাজারে নকল শিলাজিতও পাওয়া যেতে পারে, তাই বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড বা বিক্রেতার কাছ থেকে শিলাজিত কেনা উচিত।
অনলাইনে এবং আয়ুর্বেদিক দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শিলাজিত পাওয়া যায়। দাম ব্র্যান্ড অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়, তাই কেনার আগে পণ্যের মান এবং রিভিউ দেখে কেনা ভালো।
শিলাজিৎ কোথায় পাওয়া যাবে
শিলাজিত সাধারণত নিম্নলিখিত স্থানে পাওয়া যায়:
- অনলাইন স্টোরস: বিভিন্ন স্বাস্থ্য এবং আয়ুর্বেদিক পণ্য বিক্রির সাইটে যেমন আমাজন, ফ্লিপকার্ট, ইত্যাদি।
- আয়ুর্বেদিক দোকান: স্থানীয় আয়ুর্বেদিক বা স্বাস্থ্য পণ্য বিক্রির দোকানে।
- ফার্মেসি: কিছু ফার্মেসি শিলাজিতের ক্যাপসুল বা পাউডার বিক্রি করে।
- বিশেষ আয়ুর্বেদিক ক্লিনিক: আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের অফিস বা ক্লিনিকে।
শিলাজিত কিনার সময় খাঁটি এবং বিশ্বাসযোগ্য ব্র্যান্ড থেকে কেনা নিশ্চিত করুন।
শিলাজিৎ ক্যাপসুল এর উপকারিতা – shilajeet capsule
শিলাজিত ক্যাপসুলের উপকারিতা নিম্নরূপ:
- শক্তি বৃদ্ধি: শিলাজিত ক্যাপসুল শরীরের শক্তি এবং স্ট্যামিনা বাড়াতে সাহায্য করে, ক্লান্তি কমায়।
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা: এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক।
- প্রজনন স্বাস্থ্য: পুরুষ এবং মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করে।
- ইমিউন সিস্টেম: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- অ্যান্টি-এজিং: কোষের বার্ধক্য রোধ করতে সহায়ক।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- হাড়ের স্বাস্থ্য: হাড়ের শক্তি বাড়ায় এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করে।
- মানসিক চাপ হ্রাস: মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
শিলাজিত ক্যাপসুল গ্রহণের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সেবনমাত্রা সম্পর্কে জানুন!
শিলাজিৎ ক্যাপসুল কোথায় পাওয়া যায়
শিলাজিত ক্যাপসুল সাধারণত নিম্নলিখিত স্থানে পাওয়া যায়:
- অনলাইন স্টোরস: যেমন আমাজন, ফ্লিপকার্ট, নায়কা, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য পণ্যের সাইট।
- আয়ুর্বেদিক দোকান: স্থানীয় আয়ুর্বেদিক বা স্বাস্থ্য পণ্য বিক্রির দোকানে।
- ফার্মেসি: কিছু ফার্মেসি শিলাজিত ক্যাপসুল বিক্রি করে।
- বিশেষ আয়ুর্বেদিক ক্লিনিক: আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের অফিস বা ক্লিনিকে।
কেনার সময় অবশ্যই নিশ্চিত করুন যে ব্র্যান্ডটি বিশ্বাসযোগ্য এবং পণ্যের গুণমান ভাল।
সুগার রোগীর খাদ্য তালিকা দেখুন
শিলাজিৎ গোল্ড ক্যাপসুল এর দাম কত
শিলাজিত গোল্ড ক্যাপসুলের দাম ব্র্যান্ড এবং পণ্যের গুণমানের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, দাম ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা প্রতি বোতল (৩০ থেকে ৬০ ক্যাপসুল) হতে পারে।
বিশেষ করে ভাল মানের এবং খাঁটি শিলাজিত গোল্ড ক্যাপসুলের জন্য দাম একটু বেশি হতে পারে। অনলাইনে এবং স্থানীয় দোকানে দাম পরীক্ষা করে কিনতে পারেন।
উপসংহার
শিলাজিত একটি প্রাকৃতিক পদার্থ, যা হিমালয় এবং অন্যান্য পর্বত অঞ্চলে পাথরের ফাটল থেকে উৎপন্ন হয়। প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি একটি মূল্যবান উপাদান হিসেবে পরিচিত। শিলাজিতের মধ্যে ৮৫ ধরনের খনিজ উপাদান, হিউমিক অ্যাসিড ও ফুলভিক অ্যাসিড থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক। এটি শক্তি ও স্ট্যামিনা বাড়ানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং ইমিউন সিস্টেম উন্নত করতে কার্যকর।
শিলাজিত নিয়মিত গ্রহণ করলে এটি অ্যান্টি-এজিং প্রভাবও ফেলে। তবে, এর সঠিক ডোজ এবং ব্যবহার সম্পর্কে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিলাজিত ক্যাপসুল বা পাউডার আকারে সহজে পাওয়া যায় এবং স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের জন্য এটি একটি উপকারী সম্পূরক হিসেবে বিবেচিত হয়। সঠিক ব্যবহার ও মানসম্মত পণ্য নির্বাচন করলে শিলাজিত স্বাস্থ্য উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।